Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all 222 articles
Browse latest View live

কুন্তি-জঠর থেকে কর্ণ-কুহর যাত্রা

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

কর্ণ!

যেমন অদ্ভুত তাঁর জন্মবৃত্তান্ত, তেমনই বেদনাদায়ক যেভাবে তাঁর মা তাঁকে ভেলায় ভাসালেন। কিন্তু যার বেঁচে যাওয়ার, সে বুঝি এতেও বাঁচে। তাই কর্ণ প্রতিপালিত হলেন এক সারথির কুটিরে। যুগে যুগে সঞ্চিত অবহেলা, মানুষের অপমান তাঁকে আলাদা একটা গরিমা এনে দেয়। অস্ত্রপরীক্ষার আসরে, ভরা জনসমক্ষে তাঁকে যখন ‘সূতপুত্র’ শব্দটা প্রায় একটা গালির মতো করে শুনতে হয় তখন চোখ ভিজবেই। কিন্তু তাঁর সেই চমকে দেওয়া ‘ওয়াফাদারি’! কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কুরু সেনাপতি হওয়ার পর কুন্তির থেকে জানতে পারলেন যে তিনিই আসলে জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব, তাই পান্ডবরা জয়লাভ করলে তিনিই রাজা হবেন, এমনকী দ্রোপদী-র ‘ভাগ’-ও পাবেন। কিন্তু কর্ণ ভুলে গেলেন না সুযোধনকে, যিনি মুহূর্তের সিদ্ধান্তে অঙ্গরাজ্য দান করে তাঁর সম্মানরক্ষা করেছিলেন সেদিন! তাই রক্তের সম্পর্ক নয়, গুরুত্ব দিলেন বন্ধুত্বকে। বিপদের দিনে অটল রইলেন বন্ধুর পাশে, যদিও আরও এক ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে একসময়ে গুরু পরশুরামের অভিশাপে তাঁর রথের চাকা বসে যাবে মাটিতে। বিদায় নেবেন মহাবীর! তাই কর্ণের মতো ট্র্যাজিক চরিত্র যে কোনও দেশে কিংবা যুগেই বিরল, কথাটা যতোখানি ক্লিশে, ততোখানিই সত্যি।

কর্ণের গল্প নানা ভাবে বলা যায়। সুমন সাহা বেছে নিয়েছেন খুব ক্লাসিক, ভারতীয় আঙ্গিককে। মহাকাব্যিক আবহ বজায় রেখেই কর্ণের গল্প শোনাতে চেয়েছেন। শুরুতে বন্দনা আছে, কলস-আম্রপল্লব-প্রদীপ আছে, কবিতা আছে, নাচ আছে। আছে ‘কর্ণকুন্তিসংবাদ’-ও, কিন্তু দৃশ্যায়নে হয়ে গিয়েছে এ নাটকের অংশ। রবি ঠাকুর সূক্ষ্ম শরীরে মিশে গিয়েছেন ভাসের নাটকে। বেরিয়ে আসছে কেমন করে সেই জলে ভাসিয়ে দেওয়া ছেলের সঙ্গেই নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করছেন মা, বাকি পাঁচ পুত্রকে বাঁচানোর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে। কুন্তি (সুলক্ষণা) আর কর্ণের (সুমন) কথোপকথনে এই ব্যাপারগুলো স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে।

যখন পরশুরাম ভুল বোঝেন শিষ্যকে, কষ্ট হয়। কিংবা বারংবার অর্জুনকে বাঁচানোর জন্য যেভাবে মায়াবী কুহক ব্যবহার করলেন কৃষ্ণ, সে রাজনীতিও বুক কাঁপিয়ে দেয়। আর এ নাটকে কৃষ্ণের ভূমিকায় এক নারী (ঋতুশ্রী)। নৃত্যের বিভঙ্গ, আলো কূটনীতির চেহারাকে আলাদা রং দিয়েছে। পোশাক পরিকল্পনা ভারি চমৎকার এই নাটকের। এমন একটা গ্র্যাঞ্জার রয়েছে পোশাকে যে সময়টায় মনে মনে পৌঁছে যাওয়া যায় সহজে। পাশাপাশি, লাইভ ক্ল্যাসিকাল মিউজিক এ নাটকের পরম সম্পদ। সুরে সুরে মুড গড়ে দিয়েছে। মডার্ন ইন্টারপ্রিটেশনের সময়ে দাঁড়িয়েও ভারতের নাট্যশাস্ত্র ধারায় আশ্রিত এই প্রোডাকশন।

নাটক: কথা কর্ণাভার

রচনা: ভাস এবং রবি ঠাকুর আশ্রিত

নির্দেশনা: সু্মন সাহা

দল: বেঙ্গল রেপার্টরিঅভিনয়: সুমন, ঋতুশ্রী, সৌম্য, অরিন্দম, সঞ্জয়, প্রবীর, সুলক্ষণা


সত্যের মুখোমুখি রাজনীতিক অথবা নাট্যকার

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

যদি এমন হতো। এটাই বলা যেতে পারে এই নাটক প্রসঙ্গে। একটা ফ্যানটাসিকে পরিবেশন করা হয়েছে কমেডির আঙ্গিকে। একজন উঠতি রাজনীতিককে আমরা দেখতে পাচ্ছি মঞ্চে। কিন্তু ঠিক রিয়্যালিস্টিক চেহারায় নয়। নাটকের পায়ে পায়ে চলে আমরা প্রবেশ করতে থাকি তার মনের জগতে। দেখতে থাকি তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তার ভয়, তার আশঙ্কা, তার উদ্বেগ। আপাতভাবে এক রাজনীতিককে দেখে মনে হতে পারে, বাহ্‌রে, লোকটা তো দিব্যি আছে। কাজ-কর্ম নেই, কি সুন্দর এখানে-সেখানে, এটা-ওটা নিয়ে 'বাতেলা' করেই দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? তাকেও নিজের নেতার স্ট্যাটাস ধরে রাখার জন্য দিনরাত কসরত করে যেতে হয়। নিজের চ্যালা-চামুণ্ডাদের যদি নিজের যথার্থ অনুগামী করে রাখতে হয়, তবে তাদের ন্যায্য-অন্যায্য চাহিদাগুলোও তো পূরণ করে যেতে হয়। আবার উপরতলার নেতাকে 'জবাব'ও দিতে হয়।

এই রাজনীতিক মাধব মারিক-এর চরিত্রেই রয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক। পরিচালনাও তাঁরই। অভিনেতা হিসেবে নাটকটাকে আগাগোড়া টান টান করে রেখেছেন তিনিই। আলাদীনের প্রদীপ এখানে সেই রূপকথার গপ্পের মতোই ক্ষমতাশালী এক বস্তু। কেমন করে সেটা মাধবের হাতে এল? সেও এক ফ্যানটাসি। হঠাৎ করেই মাধবের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ছোটবেলার স্কুলের বন্ধু সত্য-র। এই বন্ধু মারা গিয়েছিল পুকুরে ডুবে গিয়ে। সে দেখা দেয় সেই স্কুলের ইউনিফর্মেই। আর বন্ধুর হাতে তুলে দেয় প্রদীপ। এই প্রদীপ কারও দিকে তাক করলেই তার মনের কথা জানতে পারা যাবে।

এতএব এরপর চলতেই থাকে প্রদীপের কেরামতি। জামাই (ইন্দ্রজিৎ) আর মেয়ের (মৌলি) দিকে তাক করে মাধব বুঝতে পারে এরা তাকে মোটেই ভালোবাসে না। আসলে তার সম্পত্তি বাগাতেই ব্যাগ্র। তাকে ঘিরে থাকে যে ক্যাডাররা তারাও মনে মনে 'গুরু দাও দাও' গান গাইতে থাকে। পার্টির জন্য কাজের বিনিময়ে বিল্ডার্স সিন্ডিকেট গড়ে নিজেরাও পকেট গুছিয়ে নিতে চায়। এমনকী নিজের স্বার্থ সিদ্ধি হওয়ার পর স্রেফ কেটে পড়ার তাল আছে উপরতলার নেতারও। এভাবে প্রদীপ হাতে নিয়ে চলতে চলতে মাধব কোথায় পৌঁছায়, সে যাত্রা মঞ্চে দেখাই ভাল। তবে নিজের রাইট হ্যান্ড ম্যান (তরঙ্গ) কিংবা নিজের স্ত্রীর (সুমনা) সামনে প্রদীপ চালনার দৃশ্য কিন্তু ভারি অন্য রকম। কমেডির জ্যাকেট খুলে হঠাৎ করেই সিরিয়াস হয়ে যায় নাটক।

যেভাবে অশরীরী সত্য-র ভয়েসকে অন্যরকম করতে ল্যাপেল মাইক্রোফোন ইকো করা হয়েছে, নীল আলো ব্যবহার হয়েছে কিংবা বডি ডামি ব্যবহর করা হয়েছে তা চমৎকার। এই ভূমিকায় শান্তনুকে লেগেছেও বেশ।

দেখতে দেখতে মনে হয়েছে নাট্যকার কোথাও যেন নিজেও সূক্ষ্মভাবে মিশে রয়েছেন মাধব মারিকের মধ্যে। তাঁর আগেকার নাটকগুলোয় রাজনীতি স্পষ্ট থাকলেও তাতে যেন সিস্টেমকে বাইরে থেকে দেখা। আর এখানে চরিত্রটি নিজেই সিস্টেমের অংশ, ঠিক যেমন তিনি এখন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। চরিত্রটির মতোই হয়তো সুবিধালোভী মানুষ ঘিরে থাকেন তাঁকে। বন্ধু-শত্রুকে চিনতে হয়তো তাঁর সমস্যা হয়। হয়তো তিনি নিজের সঙ্গে একা। আর তাই কল্পনায় লেখার পাতায় নিয়ে এলেন সেই আশ্চর্য মানুষ চেনা প্রদীপকে। পিছন ফিরে প্রকৃত বন্ধু 'সত্য'-র মুখোমুখি হতে চাইলেন!

নাটক: একদিন আলাদিন
রচনা: ব্রাত্য বসু
নির্দেশনা: কাঞ্চন মল্লিক
দল পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ
অভিনয়: কাঞ্চন, তরঙ্গ, ইন্দ্রজিৎ, শান্তনু, সুমনা, মৌলি
তিন স্টার

মহাকালের রথে সওয়ার হওয়ার মতো

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

কয়েক বছর আগে লেখা হয়েছিল এ নাটক। অন্য একটি দল তখন মঞ্চস্থও করেছিল। কিন্তু যে নাটকে মহাকালকে ধরতে চাওয়া হয়েছে তার আবেদন তো ফুরিয়ে যাওয়ার নয়। তাই ফিরতেই হয় তাকে। মাঝে একবার চোখের পাতা পড়ার মতো করে কয়েকটা বছর কেটে যায়।

একদম অন্য রকম একটা সম্ভাবনার ভরটেক্সে আমাদের ফেলে দেন নাট্যকার। দর্শক আসনে বসে আমরা ঘুরপাক খেতে থাকি। যেন টাইম মেশিনে আসীন! দেখা যায় একটি ছেলে বিজ্ঞানের গবেষণা করতে করতে বানিয়ে ফেলেছে একটা মেশিন। এই মেশিনের সিটে বসলে অতীত দেখতে পাওয়া যায়। তবে সকলের নয়। কেবলমাত্র এই ছেলেটিরই বংশানুক্রমিক ইতিহাসের প্রতিফলন ঘটতে থাকে যন্ত্রের মধ্যে। মেয়েটি এসেছে ছেলেটির ঘরে। মেয়েটিকে সে এই যন্ত্রে অতীত দেখার আমন্ত্রণ জানায়। তারা দেখতে শুরু করে।

এরই পাশাপাশি আরও একটা সাব-প্লট চলতে থাকে। নীচের ঘরে বসে আছেন ছেলেটির বাবা-মা। তাঁদের টাইম-মেশিন নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁরাও কথায় কথায় ডুব দিয়েছেন স্মৃতিচারণে। একদিকে তাঁদের আলাপচারিতা চলে আর অন্যপাশে পাস্ট-মেশিন। নানা সুখ-স্মৃতি পার হয়ে ক্রমশ সামনে আসতে থাকে এক সত্য ঘটনা, যা বলা বাহুল্য অপ্রিয়।

সময়কে স্কেটিং পরিহিতা এক মেয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। অস্থির সময় কখনও থামতে পারে না। পিছলে যেতে থাকে। আর বিরাট এক ঘুড়ি শুষে নিতে থাকে বর্তমানের বাতাসকে। মঞ্চে যেভাবে নাটকটিকে ডিজাইন করা হয়েছে তাতে পরিচালক অভি চক্রবর্তীর চেষ্টাটা চোখে পড়েছে। ছেলেটি এবং মেয়েটির ভূমিকায় প্রসেনজিৎ আর অভীপ্সা/গুলশনকে সাবলীল লেগেছে।

আসলে বহিরাঙ্গে সময়-যান যন্ত্রকে নাটকে রাখা হলেও আসলে তো এ নাটক সম্পর্কের কথা বলে। সমাজের তথাকথিত বৈধ সম্পর্কগুলো দিয়েই আমরা বিচার করতে থাকি একটা মানুষকে। কিন্তু সেটাই কি সব? বোধহয় না। প্রতিদিন যে মানুষটিকে সামনে দিয়ে চলে যেতে দেখি, যার গাম্ভীর্য দেখে কল্পনাতেও আনতে পারি না যে তার জীবনে অন্য কোনও সম্পর্কের কাহিনি থাকতে পারে, এই মেশিনের মধ্য দিয়ে চললে আমরা তেমনই সব তথ্য পাই। বাবার জীবনের না জানা এক সম্পর্কের ছবি যখন ফুটে ওঠে পর্দায়, ছেলেটার মধ্যে একটা অস্থিরতা আসে। এত কষ্টে তৈরি যন্ত্র যখন তাকে সত্যিই সামনে দাঁড় করায়, সে মেনে নিতে পারে না। ও তাকে থেমে যেতে বলে। অতীত খনন যদি সত্যিই হয় তবে শুধু ভালোগুলো সামনে আসবে তাতো নয়! প্রস্তত থাকতে হবে অপ্রীতিকর যা কিছু তার জন্যও। তার চেয়ে পুরনো কাসুন্দি না ঘাঁটাই ভালো। মহাকালের সামনে নতজানু হওয়াই শ্রেয়। সময় বুঝি সবই ভুলিয়ে দেয়।

বাঁচাটাই যদি মুখ্য প্রভু নষ্ট হয়ে যাই

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

নিপাট ভদ্রলোক। স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীতে কিংবা মদ্যপানে প্রলুব্ধ হন না। এমন ইমেজ-সচেতন মানুষ আমরা চারপাশেই দেখি। কিন্তু সত্যিই কি তাই? মনের ভিতরে কোন্ তার কোমল আঙুলের ছোঁয়ায় হঠাৎ বেজে উঠবে, তা বোধহয় কেউই বলতে পারেন না। যদি সুযোগ আসে মানুষটি কি একই রকম থাকবে? মানব মনের এমনই এক গোপন কুঠুরিতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শেষের দিকের উপন্যাস ‘অথৈ জল’-এ সাঁতরেছেন। স্বাদটা আলাদা। আর সেই ভিন্ন রসকেই মঞ্চে চাড়িয়ে দিয়েছেন নাট্য নির্দেশক।

তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। শশাঙ্ক একজন কেজো গ্রামীণ ডাক্তার। গ্রামের এক হর্তা-কর্তাও বটে। চরিত্রগঠন নিয়ে উদ্যোগী শশাঙ্ক কারও বেচাল সহ্য করে না। ঘুষখোর পুলিশ থেকে শুরু করে গর্ভবতী হয়ে পড়া বিধবা তরুণী, কেউই তার ভর্ৎসনা থেকে বাঁচতে পারে না। নৈতিক জীবনের শুদ্ধতা নিয়ে সে বিশেষভাবে চিন্তিত। দুই সন্তান, স্ত্রী, রুগী আর গোটাকয়েক মোসাহেব নিয়ে তার নিস্তরঙ্গ জীবন। হঠাৎই পুকুরে ঢিল পড়ল... পান্না নামের এক খেমটাওয়ালির মুখোমুখি হল শশাঙ্ক। যে গান কিংবা নাচ অতি হীন বলে মনে হতো, সেইসব ‘ইতর’ ইঙ্গিত, লাস্য ঢলঢল বিভঙ্গ, আদিরস চলকে যাওয়া চাহনি এলোমেলো করে দিল শশাঙ্ককে। সব ভুলে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতে এগিয়ে গেল সে। ক্রমে আমরা দেখবো কেমন করে শশাঙ্ক তার অবচেতনে সায় দেয়। এমনই এক নাচনেওয়ালির সঙ্গ পাওয়ার ‘ফেটিস’ নির্ঘাৎ ছিল তার ভিতরে। গনগনে আঁচে তাই ঝাঁপ দিল সে। খেমটার আসরে অধিকারী সাজে সে। ভুলে যায় সে ডাক্তার ছিল। ভুলে যায় সংসার। কিন্তু এভাবেই কি দিন কাটবে? তা নাটকে দেখাই ভালো।

যেহেতু শশাঙ্ক চরিত্রটা আর পাঁচটা নাটকের থেকে ভিন্ন, তাই অন্য রকম কিছু করার সুযোগ পেয়েছেন দেবশংকর হালদার। ভদ্র থেকে তথাকথিত অভদ্র, জেন্টলম্যান সুলভ ব্যাপার থেকে সাবঅলটার্ন সংস্কৃতি দুটো ডাঙায়ই পা রাখতে হয়েছে অথৈ জলে ভাসতে ভাসতে। এ কাহিনি সেই সময়ের যখন কোটি কোটি এন্টারটেইনমেন্ট জাল বিস্তার করেনি আমাদের মধ্যে। দীনেশ পোদ্দারের সুন্দর আলো, পৃথ্বীশ রাণার মঞ্চ এবং মালবিকা মিত্রর পোশাক পরিকল্পনা সেই সময়টায় পৌঁছে দিতে পেরেছে দর্শকদের। খেমটা নাচ, গানও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে। পান্না হিসেবে সুপর্ণার প্রয়াসও উল্লেখ্য। কিন্তু একটা প্রশ্ন, শশাঙ্কর সঙ্গে বাড়িতে বসবাসের সময়ও কেন পান্না খেমটাসুলভ চাহনি ব্যবহার করে সেটা খটকা লাগলো। অন্তরঙ্গ সময়ে খেমটাওয়ালির মধ্যে একটা অন্য মেয়েকে খুঁজে পাওয়া গেলে বোধহয় ভালো লাগতো। আর ভদ্রলোক-শশাঙ্ককে প্রতিষ্ঠা করতেও যেন একটু বেশিই সময় ব্যয় করা হল। সম্পাদনা করে আরেকটু কমালে ঝরঝরে হতে পারতো। তবুও এত বিপুল এক উপন্যাসকে মঞ্চে আনা সহজ কাজ নয়। পরিচালক তো বটেই, সৌমিত্র মিত্র ও তাঁর দলের অভিনেতারা যে দলবদ্ধ প্রয়াস দেখালেন তা প্রশংসার। তাছাড়া, নাটকে কাটা কাটা কতগুলো দ্বন্দ্ব স্পষ্ট চোখে পড়বে। দুটো অসমবয়সী মানুষের প্রেম। তাও স্বকীয়া নয়, পরকীয়া। দু’জনের সামাজিক মর্যাদাও ভিন্ন। সামাজিক শ্রেণিগত বৈষম্যও স্পষ্ট। তবু সম্পর্ক গড়ে উঠল। শশাঙ্ক-র মতো চরম ক্লাস-কনসাস মানুষও ভেসে গেল সে অথৈ জলে। এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে মন্দ লাগে না। দর্শকের সেলফ আইডেন্টিফিকেশন? হতেও পারে!

নাটক: অথৈ জল

রচনা: উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়

নির্দেশনা: ব্রাত্য বসু

দল: পূর্ব-পশ্চিম

অভিনয়: দেবশংকর হালদার, সৌমিত্র মিত্র, সুপর্ণা, রাজেশ্বরী, প্রদীপ

কোনও এক মূল্য-বোধ মাথায় কাজ করে

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

নাটক: মূল্য
রচনা: অসিত মুখোপাধ্যায়
নির্দেশনা: দেবাশিস রায়
দল: বালিগঞ্জ ব্রাত্যজন
অভিনয়: দেবশংকর হালদার, সেঁজুতি মুখার্জি, ব্রাত্য বসু, রজত গাঙ্গুলি

মূল্য বললে বুঝি দাম-ই সবার আগে মনে আসে: পেঁয়াজ অগ্নিমূল্য কিংবা বন্যায় চাল দুর্মূল্য কিংবা কয়লা দেশের অমূল্য সম্পদ— এই রকম। কিন্তু এই কেনাকাটির দর-দস্তুরের বাইরেও আরও একটা সূক্ষ্ম অর্থেও মূল্য রয়ে গিয়েছে টিমটিম করে। এই মূল্য আমাদের বোধ-এর কাছাকাছি। মূল্যবোধ বা ভ্যালুজ। কোন পরিস্থিতিকে একটা মানুষ কেমন ভাবে ভাবছে, নিজের স্বার্থকে কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছে, কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, অন্যের সঙ্গে ব্যবহারে তার কেমন প্রভাব পড়ছে, এই সবের সঙ্গেই মূল্যবোধ জড়িয়ে রয়েছে। ‘মূল্য’ নির্ধারণ করতে গিয়ে এই গৌড়চন্দ্রিকাটুকু করতেই হল! ‘মূল্য’ হল আথার্র মিলারের ‘দ্য প্রাইস’ থেকে অসিত মুখোপাধ্যায়ের একটি অভিযোজন। তিনি বহু বছর আগে স্থানীকরণ করেছিলেন ‘নিলাম নিলাম’ নামে। সেই টেক্সট প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। তাই নতুন চেহারায় ফিরে এসেছে বিজয় মুখোপাধ্যায়-এর প্রযোজনায়, দেবাশিস রায়ের পরিচালনায়।

এই গল্পটি দু’জন বিচ্ছিন্ন ভাই বিজয় নারায়ণ এবং সঞ্জয় নারায়ণ চৌধুরীর, যারা তাদের বাবার মৃত্যুর পর একত্রিত হয়েছিল পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রির জন্য। বিজয় আসবাবপত্রের দালাল শৈলমোহন শূরের সঙ্গে একটি চুক্তিতে যেতে সম্মত হয়, যদিও তার স্ত্রী এবং ভাই দু’জনেই তাকে তাড়িত করেছিল প্রস্তাবিত মূল্যের তিন গুণ ধরে রাখতে। এই নাটকটি পারিবারিক গোপনীয়তা, তিক্ততা, অসততাকেই জোরালো করে। বিজয় এবং সঞ্জয়ের বাবা, যিনি ভীষণই সমৃদ্ধশালী ছিলেন, তিনি নিজের ব্যবসায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে লোকসান করেন। তিনি নিজের ছেলেদের উপলব্ধি করান যে তাদের সমর্থন করার মতো সামর্থ্য তাঁর নেই। বিজয় বাবার এই অসঙ্গতিকে মেনে নেয়, কলেজ ছেড়ে দেয় এবং বাবার পাশে দাঁড়ায়। সঞ্জয় কিন্তু সন্দেহ করে যে তার বাবা টাকার কারচুপি করেছে। সে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যায় এবং একসময়ে একজন সফল শল্য চিকিৎসক হয়ে ওঠে। যখন দুই ভাইয়ের আবার দেখা হয় তখন বিজয় একজন পুলিশ অফিসার, যে কীনা আঠাশ বছর ধরে তার বাহিনীর কাজে নিযুক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে সেই কথোপকথন হয় যা অনেক বছর আগেই হওয়ার কথা ছিলো। ‘মূল্য’ হল তাদের সম্পর্কের ভিতর এক অন্তর্দৃষ্টি এবং একজনের পছন্দের পরিণাম।

নাটক দেখতে ঢুকে প্রথম চমকটা লাগে যখন ব্যাকগ্রাউন্ডে তেছড়াভাগে দেখতে পাওয়া যায় কড়িকাঠ। আর অনবরত শুনতে পাওয়া যায় পায়রাদের ডাক, ডানা ঝাপটানোর শব্দ। নিজের অজান্তেই আমরা প্রবেশ করে ফেলি একটা পুরনো বাড়িতে। আর সেখানে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো রয়েছে নানা আসবাব, বাক্স-প্যাঁটরা ইত্যাদি। এই বাড়িতে তাদের মূল্য ফুরিয়েছে। সে তো বস্তুগুলোর মূল্য। তার মূল্য বিচার করতে নিলামওয়ালা তো রয়েইছেন। কিন্তু যে তথ্য, যে সত্য গোপন করে অন্য কিছু মানুষ সারাটা জীবন কাটিয়ে ফেললেন তার পরত নাটকে খুলে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। বিজয় ও সঞ্জয় দুই ভাইয়ের কথোপকথনে অসাধারণ কিছু মুহূর্ত তৈরি হয়েছে মঞ্চে। এই দুটি ভূমিকায় দেবশংকর আর ব্রাত্য-র সংলাপ ছোঁড়াছুঁড়ি উপভোগ করার মতো। সঞ্জয়ের এন্ট্রিটা তো বাস্তবিকই নাটকীয়, মুহূর্ত এবং বিভঙ্গের বিচারে। তাঁদের ঝোড়ো এক্সচেঞ্জের মাঝে বিজয়ের স্ত্রী-র ভূমিকায় সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়কে একেক সময় খানিক ঝাপসা লেগেছে (রোলটা কি এরকমই ডিমান্ড করছিল? কে জানে)! তবে যখনই মঞ্চে প্রবেশ করেছেন মাতিয়ে দিয়েছেন নিলামওয়ালারূপী রজত গাঙ্গুলী। আর বিভিন্ন আসবাবের দামও এ সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যে নিয়ে এলে বোধহয় ভাল লাগতো। প্রশংসা করতে হবে পরিচালক দেবাশিস-এর। একে তো আথার্র মিলারের নাটক, তার মধ্যে চারজন অতি সিজনড অভিনেতাকে নিয়ে কাজ করা একজন তরুণ পরিচালকের পক্ষে যথেষ্ট চাপের। সেটুকু তিনি অনেকটাই সামলেছেন সাফল্যের সঙ্গে। আগের ‘নিলাম নিলাম’ প্রসঙ্গ তুলে বেশ কিছু প্রবীণ দর্শক এ নাটকের সমালোচনা করছেন। তুলনামূলক সে আলোচনায় যোগ দিতে হলেও তো এ প্রোডাকশনটা একবার দেখে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাই না!

সেই তো কন্যার লাগিয়ারে, পাগল হইলাম আমি

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

প্রসেনিয়াম দেওয়ালের পরিধিতে অভিনয়ের নাটক নয়। কিন্তু তাকে মঞ্চস্থ করা হয়েছে প্রসেনিয়ামেই। গ্রাম্য লোককথা, রামায়ণ পাঠের ফর্ম্যাটে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশের জন্য দর্শকরা যখন সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে, তখনই মেক-আপ, কস্টিউমে সজ্জিত অভিনেতারা বেরিয়ে আসেন। সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাঁদের হাতে তুলে দেন মুড়ি এবং বাতাসা। জ্বালিয়ে নেন ধূপ-ধুনো। এভাবেই নাটক শুরুর আগেই সকলে প্রবেশ করে যান নাটকের মুডে। প্রেক্ষাগৃহের বাইরেই যেহেতু এই ইন্টারঅ্যাকশনটা হয়ে যায়, তাই ভিতরে প্রবেশ করলেও পালা-গান শুনতে এসেছি, এই ভাবটাই ভিতরে জেগে ওঠে। আর ঠিক সেই গরম লোহার উপরেই আঘাত করে শেপ গড়তে শুরু করে দেন গৌতম হালদার। গোটা প্রেক্ষাগৃহে প্রায় সমস্ত দর্শকের সামনে পৌঁছে, দাঁড়িয়ে গল্প বলা শুরু করে দেন। গান করেন। গল্পটায় সকলে ঢুকে পড়তে থাকেন স্রেফ কথায় কথায়।

গল্পটা এ রকম, এক ব্রাহ্মণের পরমা সুন্দরী এক ছ’মাসের শিশুকন্যাকে বেদের দলের নিঃসন্তান সর্দার হুমরা চুরি করে। ষোলো বছর বয়সে সেই রূপসী কন্যা মহুয়া এক তরুণ রাজকুমার নদের চাঁদের প্রেমে পড়ে। হুমরা এই প্রেম সহ্য করতে পারে না। একদিন রাতের অন্ধকারে মেয়েকে নিয়ে নদের চাঁদের গ্রাম ছেড়ে চলে যায় সে, তার দলবল সহ। নদের চাঁদওতার হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকার খোঁজে দেশ-দেশান্তর, নদ-নদী, অরণ্য-কান্তার পেরিয়ে চলতেই থাকে। একদিন সে ঠিকই খোঁজ পায় মহুয়ার। হুমরা বেদে ঝুঁকি নিতে চায় না। মহুয়ার হাতে তুলে দেয় ছুরি, বলে নদের চাঁদকে হত্যা করতে। মহুয়া তার প্রেমিককে নিয়ে পালায়। এক ব্যবসায়ী সদয় হয়ে তাদের দু’জনকে নদী পার করিয়ে দেয়। কিন্তু এই ব্যবসায়ীই পরে নদের চাঁদকে হত্যা করে মহুয়াকে হরণ করতে চায়। পারে না। অবশেষে হুমরা শিকারী কুকুরের সাহায্যে খোঁজ পায় তাদের। মহুয়াকে আদেশ করে বিষমাখা ছুরি দিয়ে নদের চাঁদকে হত্যা করতে। মহুয়া অক্লেশে ছুরি বসায় নিজেরই বুকে।

পুরনো আদলের এক কাহিনি, কিন্তু এর মধ্যেই মজুত রয়েছে ভয়ানক হিংসা, লোভ, লালসা, যার বিষ ছড়িয়ে রয়েছে আধুনিক পৃথিবীতেও। আবার পাশাপাশিই রয়েছে আকুল প্রেম, যে প্রেম সমাজ, নিয়ম, শ্রেণির বিভাজনের সঙ্গে কমপ্রোমাইজ করতে চায় না। সব বাধাপেরিয়ে এমন প্রেমে ভেসে যেতে তো আমরা আজও দেখি বহু যুগলকে। নিছক ভালোবেসে পরস্পরের সঙ্গে থাকতে চাওয়াটুকুকেই অপরাধ হিসেবে দেখেছে সমাজের একাংশ। তাদর শেষ করে দিতে চেয়েছে ভিন ধর্ম, ভিন জাতের অজুহাতে।

‘ময়মনসিংহ গীতিকা’কে এভাবে উপস্থাপন বোধহয় গৌতম হালদারের পক্ষেই সম্ভব। গোটা প্রেক্ষাগৃহ জুড়েই তিনি দাপিয়ে বেড়ান, আলো তাঁকে ফলো করতে থাকে। দেখে থমকে যেতে হয়। গল্প বলছেন, গান ধরছেন, হঠাৎ একটা চরিত্রের ভিতরে প্রবেশ করে যাচ্ছেন চোখের নিমেষে। এই তিনি প্রেমিক রাজকুমারের কণ্ঠে গান ধরছেন, পরক্ষণেই হয়ে যাচ্ছেন মহুয়া সুন্দরীর বাবা হুমরা বেদে। আর গোটা কাহিনির ন্যারেশনও তাঁর। মহুয়া সুন্দরী হিসেবে খুব ভালো লেগেছে দ্যুতিকে। তাঁর গলায় রাস্টিক গানগুলো ভালো লেগেছে। পোশাকেও তিনি মুডটা ভালো ধরেছেন। গৌতমের ধারা অবলম্বন করে নদের চাঁদের ভূমিকায় পার্থিব এবং ব্যবসায়ীর ভূমিকায় শান্তনু ভাল কাজ করেছেন।

নাটকটি দেখার পর বাংলার লোককথা নতুন করে শুনতে, তা িনয়ে গর্ব করতে ইচ্ছে হবে। দ্বিজ কানাই, জসিমু্দ্দিনেরদের নামের আগে ‘পল্লি কবি’ তকমা সরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। তাঁদের প্রান্তিক করে ফেললে, আমরাই নিজেদের সংস্কৃতি থেকে ছিন্নমূল হয়ে পড়ব।

হিন্দু না ওরা মুসলিম, ওই জিজ্ঞাসে কোন জন

$
0
0

নাটক: তমস
রচনা, নির্দেশনা: আশিস চট্টোপাধ্যায়
দল: গোবরডাঙা শিল্পায়ন
অভিনয়: দীপা, অভীক, সৌভিক, তাপস, প্রিয়েন্দু, শংকর, সুজিত
রেটিং:
নাটক: তমস
রচনা, নির্দেশনা: আশিস চট্টোপাধ্যায়
দল: গোবরডাঙা শিল্পায়ন
ভীষ্ম সাহানি ‘তমস’ উপন্যাসটি লেখেন ১৯৭৩ সালে এবং পরের বছরই তা সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পায়। যে সময়ের (অগস্ট, ১৯৪৭) পটভূমিতে এ কাহিনির বিস্তার, ভারতের ইতিহাসে তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নিছক ইতিহাস নয়, সেই ঐতিহাসিক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্মম এক সত্যকেই তুলে ধরেছেন সাহানি। রচনার চল্লিশ বছর পরে স্বাধীন ভারতে আজও যা সমান সত্য। অতীতের দর্পণে এঁরা আসলে দেখাতে চেয়েছেন বর্তমানকেই। ভারতের স্বাধীনতা লাভের ঠিক আগের মুহূর্তে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকল্পে, ভারত ভাগের ষড়যন্ত্রকে রূপায়িত করতে ব্রিটিশের প্রচ্ছন্ন মদতে পশ্চিম ভারতে যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছিল, সেই তমসাচ্ছন্ন সময়েরই দিনলিপি ‘তমস’, যার নাট্য উপস্থাপনা করেছেন আশিস চট্টোপাধ্যায়, যিনি এর আগে মার্কেজ, কামু, কোনান ডয়েলের উপন্যাসকেও মঞ্চে আনার সাহস দেখিয়েছেন।

কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে নাথু নামের এক হরিজন যুবকের কথা। তাকে কেন্দ্র করেই গল্পের সূত্রপাত। জনৈক ঠিকাদারের কথায় সামান্য টাকার বিনিময়ে নাথু একটি শুয়োরকে হত্যা করে। আর এই শুয়োরটিকেই পরদিন মসজিদ চত্বরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে শহরের আবহাওয়া। হিন্দু, মুসলমান, শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির সম্পর্ক ছিল এতদিন, তার জায়গায় পরস্পরের মধ্যে এবার দেখা দিতে থাকে সন্দেহ, অবিশ্বাস, ঘৃণা আর বিদ্বেষ। অঙ্কুরিত হতে থাকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ। অবশেষে শুরু হয় ভয়াবহ জাতি সংঘর্ষ, যা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রাম-শহরেও, যার জন্য মূলত দায়ী ইংরেজ প্রশাসনের উদাসীন ভূমিকা। নাথুর নিজেকে অপরাধী মনে হয়। শুয়োর মারার কারণে তার মনে হয় সেই বুঝি দায়ী। এক অব্যক্ত, অসহায় যন্ত্রণায় সে ছটফট করতে থাকে। আত্মরক্ষার তাগিদে ভিটেমাটি ছেড়ে যখন লোকজন পালাচ্ছে, তখন নাথুও পথে নামে তার স্ত্রীকে নিয়ে। নাথুর চরিত্র যেন অসহায় সাধারণ মানুষেরই প্রতিনিধি, যারা রাজনীতিতে থাকে না অথচ রাজনীতির শিকার হয়। সর্বস্বান্ত হয়। নাথুর ভূমিকায় অভীক, জার্নালের রোলে সৌভিক, মেহেতাজি হিসেবে প্রিয়েন্দুর অভিনয় ভালোলাগে। আর নাথুর বউয়ের ভূমিকায় দীপা ব্রহ্ম চমৎকার অভিনয় করলেন। একজন দেহাতি মহিলার যন্ত্রণা, উদ্ভূত হিংসার পরিস্থিতিতে তার ভয়ার্ত বহিঃপ্রকাশ, পাশাপাশি, অপরাধবোধে ক্লিষ্ট নাথুকে সান্ত্বনা দেওয়ার মধ্য দিয়ে কঠিন একটি রোলকে বাস্তবায়িত করেছেন তিনি।

প্রশ্ন জাগে, দেশ ভাগের সময়ে সংঘর্ষের জন্য কারা দায়ী ছিল? কার ইন্ধন ছিল? তবে, ইন্ধন যারাই যোগাক, আক্রান্ত হয় উভয় সম্প্রদায়ই। এটাই লক্ষ্য করার বিষয় এবং শিক্ষা নেওয়ারও। মানুষ শিক্ষা নেয়না বলেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে আজও দেশ মুক্ত হয়নি। শুধু তাই তাই নয়, সাম্প্রদায়িকতা আজ আর শুধু ধর্ম নামক গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ নেই। সৃষ্টি হয়েছে জাতপাত তথা বর্ণ ও ভাষা ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা, যা জন্ম দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদ নামক গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার। তাই তমস এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত এবং সাম্প্রতিক ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে অত্যন্ত জরুরিও।

---ইন্দ্রনীল শুক্লা





নিছক রাজনৈতিক নয়, আছে মানবিক মানদন্ডও

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

ভারত স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পর স্বাধীনতা আন্দোলনের একটা দিক সম্পর্কে ধারণা কেমন করে যেন উবে গিয়েছে। তা হল, কেবলমাত্র যেন অহিংস অন্দোলনেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। হাতে অস্ত্র নিয়ে বিদেশি শাসকের দিকে ধেয়ে যাওয়ার মতো দম যেন কারও ছিল না। ছিল, অবশ্যই ছিল। এবং তা বার বার ঘটেওছিল। বিশেষ করে বাংলা তো এর পথপ্রদর্শক বলা যায়। কোন আন্দোলনের পথ কেমন ছিল, তা ঠিক নাকি ভুল, ঠিকপথে বিপ্লবীরা এগিয়েছিলেন, নাকি নেতৃত্বের সমস্যায় আন্দোলন লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ব্রিটিশদের তাড়াতে একদল যুবক যে ঘর ছেড়েছিলেন বিপ্লবের চূড়ান্ত রোম্যান্টিসিজম-এ জারিত হয়ে তা ভুলে গেলে চলবে না। এ নাটকের নাট্যকারের 'বোমা'-য় বিষয়টা তীব্রভাবে উঠে এসেছিল। আর এখানে তিনি আশ্রয় করেছেন রবীন্দ্রনাথের 'চার অধ্যায়' উপন্যাসকে। একদিকে অন্ধ দেশাত্মবোধ এবং নেতার প্রতি বিচারবুদ্ধিহীন আনুগত্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়েছে এ উপন্যাসে। অন্যদিকে, সশস্ত্র বিপ্লবের নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটে চাঁদের আলোর মায়া নিয়ে জেগে থাকছে অতীন আর এলার মর্মস্পর্শী প্রেমগাথা। হতে পারে ব্রিটিশ সরকারের ধামাধারীরা একসময়ে এই উপন্যাসকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে, তেমনই স্বাধীনতার পরও এর সমালোচনা হয়েছে। তা হোক, কিছু সাহসী যুবক যে সহিংস আন্দোলনে বুক চিতিয়ে দিয়েছিলেন, সেই তথ্যও তো উঠে এসেছে। অর্থাৎ এতকিছু যেখানে রয়েছে সে উপন্যাসকে সমসময়ে মঞ্চে এনে একবার ফিরে দেখা তো অবশ্যই দরকার। সেই দাবিই পূরণ করেছে এই প্রোডাকশন।

একটা অদ্ভুত মঞ্চসজ্জা করেছেন দেবাশিস। শ'খানেক ইঁট রাখা হয়েছে মঞ্চের উপর। সময় ও ঘটনার গতিপ্রকৃতির সঙ্গে তাল রেখে ইঁটসজ্জা বদলে ফেলা হয়। আর এর মধ্যে দিয়েই তৈরি হয়ে যায় নাটকের একটি ইনকমপ্লিট ডেস্টিনি। এলা মারা যাওয়ার পর পর একটি গভীর শূন্যতার ছেয়ে যায়। আর ইন্দ্রনাথের মতো নেতার নির্দেশ মেনে উদ্দেশ্যহীন নির্মাণে হাত লাগায় প্রশ্নহীন বিপ্লবীরা। নেতা অবশ্য খোলাখুলিই জানান একটি দল আসলে একটি মানুষেরই মত। বাকিদের কাজ সেই মতকেই প্রতিষ্ঠা করা। নেতাদের মত খুব একটা পাল্টেছে কি এমনকী এ সময়েও? ১৯৩৪ সালে উপন্যাসটি লেখেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর শেষ নভেল। আসলে বন্ধন থেকে মুক্তির চেষ্টা তো চিরকালীন। আর প্রেমও হয়ে যেতে পারে এমনকী 'কলেরার দিনগুলিতে'-ও। প্রাথমিক স্তরে মানবপ্রেম আর দেশপ্রেমের মধ্যে কোনও বিরোধ না থাকলেও একটা সময়ে প্রায়ই জন্ম নেয় বাস্তব আর বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। নারীকে সরিয়ে রেখে, আবেগকে লাগাম দিয়ে বিপ্লব সংঠিত করতে চেয়েছিলেন ইন্দ্রনাথ। কিন্তু তাঁর সেই বিপ্লব এক্সপেরিমেন্টে গিনিপিগের মতোই মারা যায় কিছু তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন,প্রেম, ভালোবাসা। ডানা হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে মৃত্যু হয় এলা আর অতীন্দ্রনাথের ভালোবাসার। কড়া নেতা হিসেবে বাবু দত্তরায়কে ভালো লেগেছে। আবার অতীন আর এলার রোলে ধরে ধরে সুন্দর অভিনয় করেছেন দেবশংকর হালদার আর পৌলমী বসু। চাঁদের মতোই খুব নরম আলো ছেয়ে থেকেছে মঞ্চ। বিপ্লবের রোমাঞ্চ এবং রোম্যান্স মিলেমিশে গিয়েছে সে আলোয়। এতটুকু লাউড হওয়ার জায়গা নেই। কিছু জায়গা আবার আশ্চর্য রকমের রিয়্যালিস্টিক, যখন অতীন আত্মগোপন করে থাকার সময়ে মঞ্চের একেবারে সামনে এসে ভাতের ফ্যান গালে। আবার রবীন্দ্রনাথের গান যেভাবে নানা সময়ে মঞ্চের পাশ থেকে এসে গাওয়া হয়েছে, তাও খুব অন্য রকমের মুহূর্ত গড়ে দিয়েছে। কাঠামো এবং উপস্থাপনগত দিক দিয়ে নাটকটা অন্য রকম। শান্ত করে। ভাবায়।

নিছক রাজনৈতিক নয়, আছে মানবিক মানদন্ডও
নাটক: চার অধ্যায়
রচনা: ব্রাত্য বসু
নির্দেশনা: দেবাশিস রায়
দল: সন্দর্ভ
অভিনয়: দেবশঙ্কর হালদার, বাবু দত্তরায়, পৌলমী বসু
রেটিং: তিন স্টার


লাব-ডুবে চেতনাপ্রবাহের একুশ গ্রামীণ চলাচল

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

একটু পিছিয়ে খেই ধরতেই হচ্ছে, না হলে এ নাটকের কী এবং কেন বোঝা যাবে না। প্রখ্যাত চিকিৎসক ডানকান ম্যাকডুগাল একবার দেখিয়েছিলেন, জীবদ্দশায় মানুষের যে ওজন থাকে, মৃত্যুর ঠিক পরে যদি আবার ওজন করা যায়, তবে দেখা যাচ্ছে যে ওজন ঠিক একুশ গ্রাম কম। আর চলচ্চিত্রকার ইনারিত্তু এই তত্ত্ব থেকে প্রতিপাদ্যে পৌঁছলেন যে মানুষের সচল আত্মার ওজন একুশ গ্রাম। তিনি বানালেন ‘টোয়েন্টি ওয়ান গ্রামস’। তা থেকেই স্থানীকরণ করে গড়ে তোলা হয়েছে এ নাটক।

ছায়াছবির পল রিভার্সের কাহিনি হয়েছে তমোনাশের গল্প, স্বামীহারা ক্রিস্টিনা এখানে মৃত্তিকা, আর কয়েদি জ্যাক জর্দান এখানে ওলা-চালক জ্যাকি সাঁতরার গল্প। তমোনাশ, গণিতের অধ্যাপক (অর্ণ), কঠিন হৃদরোগে আক্রান্ত আর তাঁর শুশ্রূষাকারী স্ত্রী সুচরিতা (দ্যুতি) শুধু মা হতে চায়, তমোনাশের স্পার্ম চায়। জ্যাকি (পার্থ) এক গাড়িচালক। একসময়ে নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত ছিল। বর্তমানে ভয়ানক আস্তিক হয়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে নিরুপদ্রব জীবন কাটাতে চায়। কিন্তু জীবন ব্যাপারটা এতটাই নিষ্ঠুর যে তারই হাতে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। এক জ্যোতিষের (লোকনাথ)পাল্লায় পড়ে ভবিষ্যৎ শোধরানোর চেষ্টা করে সে। সমরেশ (সুমিত) এবং তাঁর ছেলেমেয়ে জিনা-বাবুয়ার অকাল মৃত্যু ঘটে। মৃত্তিকা স্বামী-পুত্র-কন্যা হারিয়ে একাকিত্বকে উড়িয়ে দিতে, নিজেকে নেশায় ডুবিয়ে দেয়।

এভাবে জীবন স্পন্দিত হয়, আর তমোনাশের বুকে বাসা বাঁধে সমরেশ। তমোনাশ মৃত্তিকার কোলে মাথা রেখে সমরেশ হতে চায়, আর মৃত্তিকা চায় প্রতিশোধ। এক অমোঘ ঘূর্ণায়মান লাব-ডুব ছন্দ স্পন্দিত হতে থাকে। জীবন রহস্যময়, তাতে সন্দেহই নেই। আবার আনপ্রেডিকটেবিলিটির জন্যই তা সুন্দর। অতএব কী দাঁড়াল? লাব-ডুব শব্দ-রহস্যের ওজন একুশ গ্রাম।

নির্দেশক গোটা স্টেজটাকে একসঙ্গে ব্যবহার করেছেন অতি মুন্সিয়ানায়। তিনটে ঘটনা একইসঙ্গে ঘটে যেতে থাকে তিনটে প্রান্তে। আলোর ওঠা-নামা একেকটি অংশকে স্পষ্ট করে দেয়। মনের চলন যেমন করে হয়, যেভাবে চেতনাপ্রবাহের উপন্যাস লেখা হয়, সেই স্ট্রিম অফ কনশাসনেস বয়ে গিয়েছে নাটকের গা বেয়ে। চরিত্ররা যেন কেউ কারও সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না, জীবন এক ঝটকায় চরিত্রদের বেঁচে থাকা, মরে যাওয়া, স্বপ্ন ও কল্পনাকে নানান বিভঙ্গে দেখিয়ে দেয়। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ গুলিয়ে গিয়েছে। জ্যাকি অ্যাক্সিডেন্ট করে, সমরেশ মারা যায়, সমরেশের হৃদপিণ্ড বসে মরণাপন্ন তমোনাশের বুকে। আত্মা তো থেমে রইল না। একুশ গ্রামীণ চলন বুঝি থামে না। নাটকটার চলন এমনই, যে কোনও অভিনেতাই একটানা কিছু করে দেখাতে পারবেন না। রিলে রেসের মতোই ব্যাটন ক্রমে হাতবদল হবে। না হলেই ছন্দপতনে। অর্ণ, সুমিত, দ্যুতি, পৌলমী, লোকনাথ তো বটেই, এক্সট্রোভার্ট, সাব-অলটার্ন ওলা ড্রাইভার জ্যাক হিসেবে পার্থ ভৌমিককেও আলাদা করে ভাল লাগবে। একটা গাড়ি মঞ্চে উঠে আসার চমকপ্রদ দৃশ্য আছে। খুব আকস্মিক। যেমন আকস্মিক আমাদের জীবন। জানা নেই আগামী সেকেন্ডে কী ঘটতে চলছে।

নাটক: ২১ গ্রাম

রচনা: উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়

নির্দেশনা: ব্রাত্য বসু

দল: নৈহাটি ব্রাত্যজন

অভিনয়: পৌলমী, অর্ণ, সুমিত, লোকনাথ, দ্যুতি, পার্থ ভৌমিক

কলকাতার আকাশে রজনীকান্তের ছায়া, খুঁজছেন পচা ব্রেন!

$
0
0

প্রতিটা সমস্যাই শেষ পর্যন্ত গিয়ে একটা প্রশ্ন। এখন এই প্রশ্নের সামনে দাঁড়ালেন মানে আপনি সমস্যার সামনেও দাঁড়িয়েছেন। সমস্যাকে প্রশ্ন করছেন। একাই। কারণ মানুষের অনেক ক্ষমতা।

আর, কবি বলেছেন, 'সকলে প্রত্যেকে একা।' প্রত্যেকে আলাদা, পৃথক তার নিজস্ব বড় হওয়ায়, বিচারবোধে।

এখন কোনও মানুষ ঘুষ খেলে, খুন করলে, দুর্নীতিপরায়ণ হলে সেটার দায় তার বড় হওয়ার মধ্যেও নিহিত। কাজেই অপরাধকে নির্মূল করে ফেলতে দরকার একটা 'ঝিনচ্যাক' সিস্টেম।
এবং প্রতিটি মানু্ষের সঠিক শিক্ষায় বড় হওয়া, যেখানে তার কাছে খুন করাটা অপরাধ বলে মনে হয়-- এটি কি কোনও সিস্টেম নাকি কোনও ব্যক্তির খোঁজ? দণ্ড নাকি সংশোধন?

65873736

এসবেরই খোঁজ এই নাটক। আর এসবের আয়োজন করবে কে? রজনীকান্ত।

যিনি কলকাতার আকাশে উড়ে বেড়ান, আর সিস্টেম থেকে 'পচা ব্রেনযুক্ত' স্যাম্পেল তুলে আনেন। তারপর কী করেন?

চাঞ্চল্যকর খবর এটাই যে, কলকাতার আকাশে কাকে উড়তে দেখা যাচ্ছে? গায়ে কাপড় জড়ানো লম্বা মতো কিছু!

সুপারহিরো? এলিয়েন? নাকি ফ্যাতাড়ু? নাকি কোনও নতুন ঝামেলা?

জ্ঞান মঞ্চে ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধেবেলায় ওই আকাশে উড়তে থাকা বস্তুটি ল্যান্ড করবে বলে সূত্র মারফত খবর এসেছে। আপনারা শিল্ড জোগাড় করে চলে আসুন। না দেখলেই মিস!

আড্ডা, শ্রুতি, মাইমের দিন

$
0
0

আগামী ১০ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহে নাটক নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনে মধ্যমগ্রাম ঋদ্ধি। রাখা হয়েছে নাটকের আড্ডা। নাটক থেকে নাট্য অর্থাৎ ‘প্লে টু প্রোডাকশন’ বিষয়ে আলোচনা হবে সেখানে। যোগ দিচ্ছেন পরিচালক আশিস চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস রায়-সহ নাট্য-বিশারদরা। গান গাইবেন মঞ্চ অভিনেত্রী দীপা ব্রহ্ম। মধ্যমগ্রাম ঋদ্ধি এর আগে ‘রবীন্দ্রনাথের হেঁয়ালি নাট্য’ (সঙ্গের ছবি) পরিবেশন করেছে। এদিন অবশ্য থাকছে শ্রুতি প্রযোজনা বনফুলের গল্প অবলম্বনে ‘নিমগাছ’, নাটক ও নির্দেশনায় আকাশদীপ ঘোষ। সঙ্গে গাইবেন অলকানন্দা মুখোপাধ্যায়। থাকছে শিবম মাইম সেন্টারের প্রযোজনা ‘ধকবাজ’, যার নির্দেশনায় অরবিন্দ হাজরা। আকাশদীপ আশাপ্রকাশ করেন, ‘নাট্যপ্রিয় মানুষ এই আয়োজন পছন্দ করবেন এবং সাগ্রহে যোগ দেবেন। ’---অন্য সময়

গায়ে গেরুয়া, চোখ লাল

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

দলিতরা মৃত গবাদি পশুর চামড়া ছাড়িয়েছে, এই অপরাধে গেল বছর গুজরাটে তাদের পিটিয়ে মেরেছে গো-রক্ষকরা। ফ্রিজে গোমাংস রাখার জন্যেও তো! কখনও গুলি করে, কখনও ভোজালির কোপ মেরে খুন করা হয়েছে সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ কিংবা শান্তনু ভৌমিকের মতো মুক্তবুদ্ধির নাগরিকদের। আবার শ্বাসরোধ করে খুনের চিহ্ন শরীরে স্পষ্ট দেখা গেলেও রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন জাস্টিস লোইয়া, পাছে তিনি জাতি-সংঘর্ষের যথাযথ রায় দিলে দেশের শাসক দলের শীর্ষ নেতার হাজতবাস হয়! এসব কাণ্ড ঘটেই চলেছে। তাই একদা অগ্নিগর্ভ গুজরাটের প্রেক্ষিতে লেখা নাটকটি প্রবলভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। একে মঞ্চস্থ করে সাহসের পরিচয় দিয়েছে ভর্গোনাথ ভট্টাচার্যের ‘থিয়েলাভার্স’।

২০০৩ সালে গুজরাটের পাঁচমহলা জেলা, নাটকের সময় ও ঘটনাস্থল। কিছুদিন আগে ঘটেছে বাবরি মসজিদ ধ্বংস অধ্যায়। ক্রমে গোধরা কাণ্ড ও গুজরাত সংঘর্ষ। এ সময়ে দোলাল থেকে এরলের দিকে আসা বাসে কন্ডাকটরের সঙ্গে বচসায় জড়ায় কিছু মুসলিম যুবক। সাম্প্রদায়িক কারণে তাদের মিথ্যে অভিযোগে ধর্ষক প্রতিপন্ন করার চেষ্টা শুরু হয়। থানার অফিসার-ইন-চার্জের তৎপরতায় জনতার মার থেকে বাঁচে আসিফ ও সঙ্গীরা। তাদের বিচার শুরু হয়। আর এর পরই আমরা দেখতে পাবো প্রহসন কাকে বলে!

সরকার পক্ষের উকিল পঙ্কজ পারেখ, আর অভিযুক্তদের পক্ষে রাকেশ চ্যাটার্জি। সাজানো সাক্ষী হাজির করা হয়: বাসের গুমটি মাস্টার, ড্রাইভার, কন্ডাটর এবং যাদের ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ সেই দুই মহিলার মধ্যে প্রথমজন নাথি বেন। সকলকে মিথ্যে প্রমাণ করেন রাকেশ। পরবর্তী পর্যায়ে রাকেশ নিয়ে আসেন দ্বিতীয় মহিলা চিন্তা বেনকে। সে স্বীকার করে ঘটনাটা সাজানো। তবু আসিফকে দোষী প্রমাণ করতে গোটা জেলা ফুঁসে ওঠে। এমনকী বিচারক পর্যন্ত বেআইনি কথা বলতে শুরু করেন। রাকেশ বলতে বাধ্য হন, ‘এটা বিচার হচ্ছে না ইয়োর অনার। এটা প্রহসন। এটা একটা সার্কাস।’ তবু বিচার চলে। জেতে ধর্মবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতা। আসিফ দোষী সাব্যস্ত হয়। তবু সারা দেশের বিচ্ছিন্ন শুভচিন্তক মানুষদের কোথাও এক হয়ে প্রতিবাদ করতে চাওয়ার ইঙ্গিত মেলে যখন রাকেশ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। তাঁর বিশ্বাস ক্রমে আমাদেরও বিশ্বাস যোগায়: ‘আমরাই জিতবো, আমরাই...’

রাকেশ এবং পঙ্কজের ভূমিকায় ব্রাত্য বসু আর বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই উপভোগ্য হয়েছে। নাটকটির প্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্সপেক্টিভ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে, যার ফলে এই কোর্টরুম ড্রামায় দর্শকরাই হয়ে পড়েন বিচারক। বিচারককে দর্শক আসনের মাঝে একটি উঁচু র৵াম্পে বসিয়ে রাখার মঞ্চসজ্জায়ও নতুনত্ব আছে। গেরুয়া চরমপন্থীরা যেভাবে প্রেক্ষাগৃহে অস্ত্র উঁচিয়ে নৃত্য করেন, বুকে কাঁপন ধরে! অতীতের আয়নায় ঘটমান বর্তমানকে বিচার করা, বিশ্লেষণ করা, এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু কার্যত এসে বর্তায় দর্শকের উপরেই।

অন্য কারও মধ্যে নিজেকে অমর করে রাখার চেষ্টা

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

আকিরা কুরোসাওয়ার 'ইকিরু' ছবি অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এ নাটক। একজন একাকী মানুষ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। তিনিই মৃত্যুঞ্জয়। এক প্রৌঢ়। তিরিশ বছর ধরে একটানা সরকারি চাকরি করে বিরক্ত। স্ত্রীকে হারিয়েছেন। দুই ছেলে আর এক পুত্রবধূকে নিয়ে থাকেন। তাদের অবশ্য বাবাকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাদের চিন্তা শুধু বাবার টাকা হাতানো। এমন একটা ব্যাকড্রপে বসবাসকারী প্রৌঢ় আমরা দেখেই থাকি আমাদের চারপাশে। কিন্তু হঠাৎ করেই মৃত্যুঞ্জয় জানতে পারেন তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত এবং তাঁর মেয়াদ আর এক বছর। আর তারপর থেকই কীভাবে তাঁর জীবনটা পাল্টে যায়, সেটাই নাটকের উপজীব্য।

মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে দেখা হয়ে যায় নীলমাধব নামে এক বটতলা বইয়ের লেখকের, যিনি এ নাটকের কথকও বটে। এঁর সঙ্গেই মৃত্যুঞ্জয় দেখতে যান রাতের কলকাতার আমোদ-প্রমোদের রূপ। কিন্তু অনুভব করেন এতে তাঁর শান্তি মিলবে না। এদিকে। অফিস যাওয়াও তো বন্ধ করেছেন। এদিকে, একঘেয়েমিতে বিরক্ত তাঁর অফিসের অধস্তন কর্মী মধুশ্রী এসেছে ইস্তফাপত্রে সই করানোর জন্য। পুতুল তৈরির কারখানায় কাজ নিতে চায় সে। মেয়েটির উচ্ছ্বলতা আকৃষ্ট করে মৃত্যুঞ্জয়কে। তিনি তার সঙ্গ পেতে চান। কফি টেবিলে গল্প জমে। মৃত্যুঞ্জয় জানতে পারেন, পুতুল তৈরির মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের বাচ্চাদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে মেয়েটি। সে প্রৌঢ়কে পরামর্শ দেয় তাঁরও উচিত এরকমই কোনও রাস্তা খুঁজে নেওয়া যাতে তিনি বাঁচার মতো বাঁচতে পারেন। এই কথোপকথোনের অংশগুলো দর্শকের সঙ্গে সরসরি কানেক্ট করে। কোথাও একটা যোগসূত্র গড়ে ওঠে।

দর্শক যখন নিজেও আইডেন্টিফাই করে নতুন কাজ কি করা যায় এমন ভাবছেন, তখনই আমরা মৃত্যুঞ্জয়কেও অনুপ্রাণিত হয়ে দপ্তরে নতুন করে কাজে যোগ দিতে দেখব। নোংরা, কাদার কার্যত নরকে পরিণত একটি মাঠকে পার্ক বানিয়ে দেওয়ার জন্য হন্যে হয়েও এ দপ্তর সে দপ্তরে ঘুরে দীর্ঘদিন হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছে বস্তিবাসী। সেই কাজটাকেই নিজের 'মিশন' হিসেবে 'সেট' করেন প্রৌঢ়। অফিসে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন। ছেলের বন্ধুদের হাতে প্রহৃত হন। শেষটায় জেতেন তিনিই। 'মৃত্যুঞ্জয় উদ্যান'-এর ভিতরেই অমর হয়ে থাকেন তিনি।

অভিনয়ে বহুলাংশে দুর্বলতা রয়েছে। সেটও দুর্বল। নানা দপ্তরে পার্ক বানানোর ফাইল নিয়ে ঘোরার দৃশ্যটির মধ্যে হাস্যরস মিলেছে, সমস্যাটির গভীরতা ধরা পড়েনি। নাটকটি কখনোই প্রকাশ ভট্টাচার্য পরিচালিত সেরা নাটকগুলোর মধ্যে ঠাঁই পাবে না। কিন্তু এরপরেও কিছু বলার আছে। নাটকের অন্তর্নিহিত যে দর্শন তা একটা ছাপ ফেলে মনে। দেশে কেউ অন্যের জন্য ভাবে না, পরিকাঠামো উন্নয়নে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই-এমন সব গাল-ভরা কথা বলে চায়ের কাপে তুফান তুলতে রাজি অনেকেই। কিন্তু খানিকটা ব্যক্তি উদ্যোগ নিয়ে, সত্যিকারের সহানুভূতিশীল হয়ে কোনও কাজ এমনকী এই পরিকাঠামোর মধ্যেও সম্ভব। আর হয়ত সেটুকু প্রয়াসও কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে অসহায় মানুষের মধ্যে। এই দিক দিয়ে বিচার করলে একটা অন্য রকম গুরুত্ব রয়েছে নাটকটির।

নাটক: মৃত্যুঞ্জয়

রচনা: সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়

নির্দেশনা: প্রকাশ ভট্টাচার্য

দল: দুর্গাদাস স্মৃতি সংঘ

অভিনয়: পবিত্র, সুপ্রিয়, শিবশঙ্কর, সুব্রতা

রেটিং: আড়াই

ইতিহাসের আয়নায় এই সময়কে খোঁজার প্রয়াস

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

১১৬৭-৬৮ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ মারা যান বাসবান্না। আর এর ঠিক পূর্ববর্তী সময়টায় কল্যাণ নগরীতে যে ভয়াবহ রক্তস্নান ঘটেছিল তা নিয়েই নাটকটি রচনা করেছিলেন গিরিশ কারনাড। হিন্দি অনুবাদে ‘নাটককারের বক্তব্য’ বলতে গিয়ে অত্যন্ত সচেতনভাবেই তিনি লেখেন যে সনাতনবাদীদের ভয়ানক আক্রোশে শরণ আন্দোলন এমন আতঙ্ক আর রক্তস্রোতে ডুবে গেল যে সমগ্র কল্যাণনগরী হয়ে গেল রক্তকল্যাণ। ধর্মের নামে, জাতির নামে, রাজনীতির রঙে একটা রক্তপ্রবাহের মাঝে কিন্তু এই সময়টাও দাঁড়িয়ে আছে। সেই দিক দিয়ে দেখলে নাটকটার একটা অন্যরকম তাৎপর্য রয়েছে।

কে এই বাসবান্না? দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, অন্যরকম একটা আদর্শ সামনে রেখে এগতে চেয়েছিলেন কর্ণাটকের এই সন্তকবি, যাঁর অন্য নাম বাসবেশ্বর। লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা, শৈব ধর্মের প্রখ্যাত এই কবি তাঁর শিষ্যদের বোঝাতে পেরেছিলেন যে মন্দিরের কোনও অর্থ নেই। স্থাবরের কোনও অর্থ নেই। দেবতা আছেন জঙ্গম জীবনের মধ্যে। কঠোর প্রাত্যহিক শ্রমের মধ্যেই তাঁর বাস। শ্রমের এই জীবনদর্শনেরই তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘কায়ক’। আর এই ‘কায়ক’ যাঁরা মেনে নেবেন, তাঁরাই তাঁর শিষ্য শরণ। এভাবেই সে সময়ে সব জাতে মেশানো এক মস্ত শরণ সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। জাতপাতের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ লড়াই ছিল তাঁদের। তাঁরা নারী-পুরুষকে সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত দেখতে চেয়েছিলেন। এমন বৈপ্লবিক ধারণা এমনকী আজকের পক্ষেও যথেষ্ট বিস্ময়কর। আর তা জীবনে প্রয়োগ করতে গিয়েই ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রবল রোষের মুখে পড়েন বাসবান্না। বন্ধুস্থানীয় পৃষ্ঠপোষক রাজা বিজ্জল পর্যন্ত তাঁকে সাহায্য করতে পারেননি। বরং তেমন চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেই নিহত হন।

যেটা বুঝে দেখতে হবে তা হল, কবি-দার্শনিক বাসবান্না তাঁর জীবন-উপলব্ধি দিয়ে তৈরি করেন শরণ সঙ্ঘ। সেখানে কোনও ভেদাভেদ নেই, জাত-অর্থ-ধর্ম-সংস্কারের উর্ধে পরিপূর্ণ এক সহাবস্থান। নাটকে দেখা যায়, মুচি ও ব্রাহ্মণ পরিবারের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই সঙ্ঘ পৌঁছাতে চায় প্রগতির চূড়ায়। আর তারই ফলশ্রুতিতে ধর্মীয় বিদ্বেষে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে কল্যাণ নগরী। বাসবান্নার দূরদৃষ্টি, রাজার উদারতা আটকাতে পারে না এই ভয়াবহ বর্বরতা। ইতিমধ্যে অভিষেক হয় নতুন রাজার, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠা পায় ক্ষমতার আস্ফালন। পথে পড়ে থাকে রক্তমাখা মানুষের দেহ, নতুনের স্বপ্ন, সনাতন ধর্ম স্থাপনের আকাঙ্খা। এরই মধ্যে আরও একা হয়ে যান বাসবান্না। খুঁজতে থাকেন পরমকে!

নাটকটিতে একদিকে যেমন পুরনো সময় ধরা পড়ল, তেমনই ফ্যানাটিজম-এর যুগে শান্তি, সমর্মিতার অন্বেষণও সামনে এল। সেটের দুর্বলতা, সকলের অভিনয় আপ-টু-দ্য মার্ক না হলেও নাটকের মেসেজটা স্পষ্ট এবং সমসাময়িক। দেখা দরকার।

নাটক: রক্তকল্যাণ

রচনা: গিরিশ কারনাড (শঙ্খ ঘোষ অনুদিত)

নির্দেশনা: সীমা মুখোপাধ্যায়

দল: রঙরূপ

অভিনয়: কিঞ্জল, অনন্য, দেবব্রত, সৌনাভ

পালাতে পালাতে বাঙালির সঙ্গে দেখা হল ইদিপাসের

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

ক্ল্যাসিক টেক্সটকে কি সমসময়ে নিয়ে আসা যায়? প্রাচীন নাটকেরও কি একটা বর্তমান আখ্যান হতে পারে? গ্রিক ট্র্যাজেডিতে যে যন্ত্রণা, যে খোঁজ রয়েছে, তা কি এখনকার মতো করে ব্যাখ্যা করে নেওয়া যায়? নিশ্চয়ই যায়, নাহলে সেসব নাটক পাঠের সময়ে এখনও একটা সেলফ আইডেন্টিফিকেশন হয় কেমন করে! ইডিপাস কিংবা ইলেকট্রা নিছক দুটো নাট্যচরিত্র তো আর থাকে না। আধুনিক মানুষ তো তাকে কমপ্লেক্সের নামকরণ হিসেবে দেখেছে। অতএব একজন নাট্যকারও একে দেখতে পারেন এ সময়ের দৃষ্টিকোণ থেকে। সেটাই ঘটেছে এ ক্ষেত্রে।

মূল কাহিনি গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিসের ‘ইদিপাস’, ধ্রুপদী ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি। তা চিরকালীন এবং অভিশপ্ত। বর্তমান নাটকে তা সাম্প্রতিক, প্রেক্ষাপট দেশভাগ। স্বাভাবিকভাবেই ব্যতিক্রমী ভাবনাটি ভিন্নতর মাত্রা সংযোজন কের নাটকটিতে। সফোক্লিসের ধ্রুপদী কাহিনি শুরু হয় বীরবলের রাজপ্রাসাদে এবং ক্রমে ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে ঘটে তার বিস্তার। কিন্তু এ নাটক শুরু হৃদিপাশের শৈশব থেকে। টেক্সট লিখতে গিয়ে যে গবেষণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে নাট্যকারকে, তা প্রতিনিয়ত অনুভূত হয় নানাবিধ পূর্ববঙ্গীয় জনপদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনায়, আঞ্চলক ভাষায়, দেশভাগ, ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়ার ইতিহাসে, সাঁওতাল ও কৌম জীবন-বর্ণনে। এগুলো নাটকে খুব সযত্নে রাখা হয়েছে। ইতিহাসের বিক্ষিপ্ত ঘটনাবাহুল্য থেকে এক নিটোল নাটকের অনুভূতি মিলছে দর্শকের, যা একইসঙ্গে ব্যক্তিগত এবং ব্যাপক।

এ নাটকে গল্পটা কেমন সেদিকে একবার তাকানো দরকার। হৃদয় শেখ থেকে হৃদয় ঘোষ থেকে হৃদয় লোধা---বারংবার বদলে যায় তার পরিচয়। ৪৬-এর দাঙ্গায় বিধ্বস্ত বাংলাদেশে নিজের প্রেমিকা, পরিবার, ভিটেমাটি ফেলে পালিয়ে যাওয়া এক দিশাহীন যুবকের সামনে একাকার হয়ে যায় দেশকালের গণ্ডি। আবুল পীরের কাছে জানতে পারে একদিন সেই হয়ে উঠবে পিতৃহন্তারক, মায়ের শয্যাসঙ্গী। এই অভিশাপ থেকে পালিয়ে বাঁচতে বারবার অস্তিত্ব বদলায় সে। তবু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সেই হয়ে যায় পিতৃহন্তারক। নিজের মায়ের গর্ভে জন্ম দেয় একাধিক সন্তানের। সত্য উন্মোচিত হলে মা আত্মঘাতী হয়। অভিশপ্ত জীবনের নির্মম সত্য জেনেও সে অবশ্য বেঁচে থাকে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে, সন্তানের জন্য।

কাহিনির ভিতরে একটা লোকের অথবা একটা জাতির নিজেকে খোঁজার কথা রয়েছে, পরিস্থিতির আবর্ত সে ঘর ছাড়তে, ভিটেমাটি ছাড়তে, দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। দৌড়ে পালিয়ে যেতে চাইছে সে সম্পূর্ণ নতুন একটা মানুষ হিসেবে নিজেকে দেখবে বলে। ঠিক যেন বাঙালি জাতির সেই পালাতে থাকা। যে জাতি ক্রমাগত খুঁজে চলেছে নিজের শিকড়কে, নিজের আত্মাকে। পরিচয়ের সঙ্কট তার ভিতরে। কখনও সে বুদ্ধি মাথায় ছোটে, কখনও সে অস্ত্র হাতে ছোটে। হোঁচট খায়, ভয় পায়, আবার উঠে দাঁড়ায় এবং দৌড়ায়। এই দৌড়ের বুঝি শেষ নেই। নিজের থেকে পালিয়ে যেতে সে ছুটছে, ছুটেই চলেছে...

নাটক: হৃদিপাশ

রচনা: ব্রাত্য বসু

নির্দেশনা: দেবাশিস রায়

দল: থিয়েটার প্ল্যাটফর্ম

অভিনয়: সুমিত, কৌশিক, প্রসেনজিৎ, গৌতম, ইন্দুদীপা, সুমনা, রাহুল, আম্রপালী, অপূর্ব


ইতিবাচক মনোভাবেই সাফল্যে ‘বধাই হো’

$
0
0

'বধাই হো' বলতেই হয় ছবির পরিচালক অমিত রবীন্দ্রনাথ শর্মাকে। কারণ ছবি মুক্তির দিনই তাঁর 'বধাই হো' বক্স-অফিস হিট হয়ে, আয় করে ফেলেছে ৫০.৭৫ কোটি টাকা! ছবি যে দর্শকদের এমন ভালো লাগবে, সফল হবে, ব্যবসা দেবে, তা কি তিনি আগে থাকতে কল্পনা করতে পেরেছিলেন? সম্প্রতি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অমিত জানিয়েছেন, 'সত্যি বলতে আমার এই ছবি ৫০ কোটির ব্যবসা দেবে না ১০০ কোটির, তা আমি কখনওই ভাবিনি। তবে একটা কথা বলতে পারি, আপনি যখনই কোনও ছবির গল্প লিখতে শুরু করেন বা ছবির কাজে জড়িয়ে যেতে শুরু করেন, তখনই কিন্তু জানতে পারেন না সেই ছবি ক্লিক করবে, না ফ্লপ। একটা আশার ঘোরেই তখন শুধু মেতে থাকা। তবে আমি মনে করি, ছবির গল্পই লিখুন বা ছবি পরিচালনা করুন না কেন, সেই কাজে যেন অতি অবশ্যই একটা ইতিবাচক চাহিদা এবং আবেদন থাকে। এটা না থাকলে কিন্তু সমস্যা। আর সেই পজিটিভ ডিমান্ড, অ্যাপ্রোচ নিয়েই কাজ শুরু করা উচিত। কেউ যদি ছবি ফ্লপ করবে এমন নেতিবাচক চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করেন, তা হলে বলব তাঁর কাজ করার কোনও মানে হয় না। যার জন্য আমার ছবির সঙ্গে যারাই যুক্ত, আমি তাদের সকলকেই ছবির বিষয়বস্তু সব কিছুই ইতিবাচকভাবে বিশ্লেষণ করে দিই। আমার কাছে কাজে ইতিবাচক চাহিদা, আবেদনের গুরুত্ব অনেকখানি।' সম্প্রতি আয়ুষ্মান খুরানা, নীনা গুপ্তা, সানিয়া মালহোত্রা, গজরাজ রাও অভিনীত অমিতের কমেডি-ড্রামা 'বধাই হো' দর্শক-সমালোচক মহলে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। এরপর ফের সেই ইতিবাচক আবেদন নিয়েই অমিত বানাতে চলেছেন তাঁর পরের ছবি। এক ফুটবলারের জীবনী নিয়ে। অমিতের কথায়, 'ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তারিখ নিয়ে সাময়িক একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে তা খুব শিগগিরি মিটিয়ে ফেলে, সামনের বছরের শুরুতেই শুটিং শুরু করে ফেলব।'

ফেস্টে তিন পোলিশ নাটক

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

কসবা অর্ঘ্য আয়োজিত নাট্যোৎসবে দেশ-বিদেশের মোট ২৮টি মনোলগ অভিনীত হতে চলেছে কলকাতায়। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এবং তৃপ্তি মিত্র সভাগৃহ মিলিয়ে হবে এই উৎসব। ছয় দিনের ফেস্টের অন্যতম আকর্ষণ পোল্যান্ডের তিনটি নাটক: ‘হেলেন অফ ট্রয়’, ‘মাল্টিটুড’ এবং ‘ময়া পদ্রাসদো ভেদা প্রকৃতি’। তৃতীয় নাটকটির পরিচালক মণীশ মিত্র স্বয়ং। পোলিশ অভিনেতা ভয়তেক একসময়ে ভারতে এসেছিলেন মণীশ মিত্র-র কাছে নাট্য প্রশিক্ষণ নিতে। সেই সময়ে ভয়তেকের ভারত এবং ভারতের বৈদিক জগৎ দেখার অভিজ্ঞতাকে মঞ্চে সেলিব্রেট করতেই তৈরি হয় নাটকটি। এটি পৃথিবীর নানা শহরে এবং দুটি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে অভিনীত হয়ে কলকাতায় আসছে, জানিয়েছেন মণীশ। আরও এক বিস্ময়-‘হেলেন অফ ট্রয়’কে একক অভিনয়ে মঞ্চে আনা যায় তারও সাক্ষী হতে চলেছে শহর।

এছাড়া ও থাকছে বিনোদিনী দাসীর জীবনের শৈল্পিক টানাপোড়েন ও একাকীত্ব নিয়ে বাংলাদেশের নাটক ‘আমার আমি’। থআকছে সেদেশেরই প্রযোজনা ‘গহনযাত্রা’। উৎসবে ‘পাণ্ডবাণী’ পরিবেশন করবেন তিজেন বাঈ। সঙ্গে থাকবেন তাঁর শিষ্যা সীমা ঘোষ-ও। মণীশ মিত্র পরিচালনা করছেন তিনটি মৌলিক নাটক: পূর্ব-পশ্চিম দলের হয়ে ‘একলা সম্রাট’ (অভিনয়ে সৌমিত্র মিত্র), আর তাঁর নিজের দলের পক্ষে ‘আমেরিকান ফুটবল’ ও ‘যোনি’, অনুপ্রেরণা ‘দ্য ভ্যাজাইনা মনোলগস’। এছাড়াও আসছে ‘পল গোমরা-আ ট্রান্সমাইগ্রেশন’ (দিল্লি), ‘অন্তরধারা’ (মুম্বই), ‘মনসা কি শাদি’ (পুণা), ‘ম্যায় রাহি মাসুম’ (হায়দরাবাদ), ‘ভিখারিনামা’ (বিহার), ‘প্রীতি সাম্ভ্রমাদা কানাসু’ (কর্ণাটক)। এছাড়া জেলার দলের মধ্যে ‘আঙ্গুল’ (হুগলী), অ্যান ওড টু নানা: গম্ভীরা (মালদা) দেখা যাবে। তুলিকা দাস পরিচালিত, সুকৃতি লহরী অভিনীত ‘ভাঙা ভাঙা ছবি’ দেখা যাবে। থাকছে আয়োজক দলের ‘ম্যাকবেথ বাদ্য’-ও। ‘নাট্যমোদী মানুষ উৎসব সফল করবেন’, আশাবাদী মণীশ মিত্র।

বাহুবল নয়, আসল অস্ত্র তো মগজ

$
0
0

নাটক: চন্দ্রগুপ্ত
রচনা: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও গোবিন্দ দেশপাণ্ডে
সম্পাদনা, নির্দেশনা: কৌশিক চট্টোপাধ্যায়
দল: নিভা আর্টস
অভিনয়: অধিকারী কৌশিক, সুজয়, সুজিত/পার্থ, অনির্বাণ/রাজু, গৌতম/সুজিত, সুমনা
রেটিং: তিন

ইন্দ্রনীল শুক্লা

এ নাটক ইতিহাসের গায়েই বেড়ে উঠেছে। গুপ্ত যুগের সেই আশ্চর্য অধ্যায়, কেমন করে চন্দ্রগুপ্তকে মনে তথা শরীরে শক্ত করে সিংহাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন চাণক্য, সেই সবই দানা বেঁধেছে নাটকের মধ্যে। রচনা প্রসঙ্গে দুই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করা দরকার। ডিএল রায় এবং গোবিন্দ দেশপাণ্ডে। প্রথমজনের 'চন্দ্রগুপ্ত' এবং দ্বিতীয়জনের 'চাণক্য বিষ্ণুগুপ্ত' অবলম্বনে স্ক্রিপ্টটি তৈরি করে নিয়েছেন কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। ইতিহাস যেমন আছে, তেমনই নানা মোমেন্টে আমরা দেখতে পাবো ইতিহাসের কেমন করে পুনরাবৃত্তি ঘটে। শুধু পেশিশক্তি নয়, বুদ্ধি কেমন করে জিতে নিতে পারে যুদ্ধ, সেই সবেরই সাক্ষী হতে পারেন দর্শক।

দ্রুত দেখে নেওয়া যেতে পারে ইতিহাসের সেই পথগুলো যা ধরে হেঁটে গিয়েছে নাটকের কাহিনি: দুর্নীতিগ্রস্ত রাজা ধননন্দের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মগধবাসী। এদিকে তাঁর সৎভাই চন্দ্রগুপ্ত নিজের বিপদ বুঝে রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছেন। রাজ্যের মানুষকে অত্যাচারী রাজার হাত থেকে রক্ষা করতে তিনি সঙ্কল্পবদ্ধ। কিন্তু কেমনভাবে সেটা সম্ভব হবে? আর এই সময়েই তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় চাণক্য বিষ্ণুগুপ্তের। একটি ঘটনার কারণে ধননন্দের উপর প্রতিশোধ নিতে চান চাণক্যও। চন্দ্রগুপ্তকে শিষ্য করে নেন তিনি। এরপরই শুরু হয়ে যায় খেলা! চন্দ্রগুপ্তের 'র' এনার্জিকে ঠিক পথে পরিচালনা করলেন এই ব্রাহ্মণ পণ্ডিত। এবং পতন হল ধননন্দের। এবার চন্দ্রগুপ্ত রাজা হলেন ঠিকই কিন্তু একইসঙ্গে তিনি একাও হয়ে পড়লেন। মনুষ্যত্ব এবং রাজনীতি, ভালোবাসা এবং নিষ্ঠুরতা, মগজ এবং হৃদয়ের দ্বন্দ্বের মাঝে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়লেন তিনি। কার্যত এক দুঃখী মানুষে রূপান্তরিত হলেন তিনি। তাঁর আহত হৃদয়ের খোঁজও এ নাটকের অপর উপজীব্য অংশ।

নাটকের চলনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ উপলব্ধি করবেন মগজ সবসময়ই অস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। যে কোনও যুগেই। এর জন্য আশ্চর্য একটা সাজেশন ব্যবহার করা হয়েছে। মঞ্চের কোণার দিকে ঝুলছে দোয়াতের ভিতর একটি খাগের কলম, যা ক্রমে তরোয়ালের আকার নিচ্ছে। চাণক্যের অভিনয়, স্টেজ প্রেজেন্স পোক্ত না হলে নাটকটিকে বেঁধে রাখাই সম্ভব হতো না। সেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ভাল কাজ করলেন অধিকারী কৌশিক। অন্য অভিনেতারা তাঁকে ভাল সঙ্গত করলেন। আলো কম রেখে, সামান্য প্রপ ব্যবহারে কেমন করে টেনশন তৈরি করা যেতে পারে তা সাম্প্রতিক সময়ে 'জতুগৃহ' কিংবা 'কোজাগরী'-র মতো নাটকগুলোয় তিনি ইতিমধ্যেই করে দেখিয়েছেন। আর আলোচ্য নাটকটি তো মিনার্ভা রেপার্টরির জন্য তিনি বছর কয়েক আগে তৈরিই করেছিলেন। এবার তা আরও জারিত ও পরিণত হয়েছে।

সৃষ্টি আর স্রষ্টা যখন মুখোমুখি, দ্বন্দ্ব অবশ্যম্ভাবী

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

নাটক:
কাল্পনিক বাস্তব
রচনা: লোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
নির্দেশনা: সীমা মুখোপাধ্যায়
দল: সংস্তব
অভিনয়: তুলিকা, এনাক্ষী, শেখর, পার্থ, অমৃতা, কিঞ্জল
রেটিং: তিন

সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার লড়াই তো সেই আদিকালের। যা আমরা হয়েছি, হতে চেয়েছি তা কি সমসময় মনোমতো হয়? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর উত্তর 'না'। তাহলে স্রষ্টার উপর রাগ তো হবেই। নাটক, নভেল, গল্পে চরিত্রদের ডেস্টিনির আলোচনা যদি দূরে সরিয়েও রাখা যায়, তাহলেও নিজেদের জীবনে একেক সময় তো মনেই হয় যে ইস্, কি চেয়েছিলাম আর কী হলাম। নিজের শত চেষ্টা সত্ত্বেও আফশোস বুঝি এড়ানো যায় না।

এ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র অজয় এক নিপাট নিরীহ ভালোমানুষ। যাকে ভালোবাসে তাকে মুখ ফুটে বলতে পারে না, গুন্ডাদের মুখোমুখি হতে ঘাবড়ে যায়, এমন আরও নানা ব্যাপারে সিঁটিয়েই থাকে বলা যায়। এহেন ছেলেটির জীবনে হঠাৎ করেই এক উদ্ভট কাণ্ড ঘটতে শুরু করে। সে প্রায়ই এক মহিলার কণ্ঠে তার জীবনের ধারা বিবরণী শুনতে শুরু করে। খানিক উন্মাদ হওয়ার উপক্রম। একাধিক মনোবিদের সঙ্গে দেখা করে সে। পরামর্শ শুনতে চায়। ক্রমে বুঝতে পারে যে তার জীবন নিয়ে কোথাও কেউ একটা গল্প লিখছেন, কিন্তু যিনি লিখছেন তাকে অজয় চেনেই না। সমস্যা আরও প্রকট হল যখন সেই মহিলা কণ্ঠ বলে দিলেন যে গল্পের শেষে অজয় মারা যাবে। মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত অজয় সমস্যা সুরাহার আশায় সাহিত্যের অধ্যাপক সমর পালের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

ক্রমে নাটক যতো এগোতে থাকে ততোই বিস্মিত হতে থাকেন দর্শক। দেখা যায় ঘটনাটা সত্যি। বাস্তবিকই কমলিকা সাহা নামে এক বিখ্যাত লেখিকা একটি উপন্যাস লিখছেন এবং সেটি অজয়ের জীবনের সঙ্গে মিলেও যাচ্ছে। কিন্তু এটা কেমন করে সম্ভব! আবার লেখিকাও তার গল্পের নায়ককে কিভাবে মারবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না, তাই তাকে সাহায্য করার জন্য প্রকাশক বিনতা দামকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাহলে শেষ পর্যন্ত অজয়ের গল্পের পরিণতি কি হবে? আবার অজয় রোজ রোজ কেক-পেস্ট্রির দোকানে গিয়ে কুসুম নামের একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এই সম্পর্কের পরিণতিই বা কী হবে?

একটা আশ্চর্য টানাপোড়েনের মাঝখানে অডিয়েন্স! কমেডি নয়, কিন্তু ঠিক ট্র্যাজেডিও বলা যায় কী? অজয়ের সঙ্গে কি ওই লেখিকার দেখা হবে শেষপর্যন্ত? সামনা-সামনি বসে কথা বলতে দেখা যাবে কি সৃষ্টি আর স্রষ্টাকে? সেটা প্রেক্ষাগৃহের জন্য বাঁচিয়ে রাখাই ভালো। ছেলেটির চরিত্র কিঞ্জল নন্দ তো বটেই, লেখিকা হিসেবে তুলিকা দাস কিংবা প্রেমিকার হিসেবে অমৃতাকেও ভালো লেগেছে। কিন্তু 'পাগল ভাই'-এর চরিত্রটার যেন প্রয়োজন ছিল না। অহেতুক 'রক্তকরবী' আর 'রঞ্জন এলেই বিপ্লব হবে' ধরনের রেফারেন্স বাদ দিলেও নাটকের চেহারার কোনও তফাৎ হতো না। তবুও দ্বিজেনবাবুর অকাল প্রয়াণের পর এই দলের সদস্যদের নিয়ে যে একটা পূর্ণাঙ্গ নাটক সীমা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৈরি হল, তা অবশ্যই প্রশংসার।

ভাড়াটে খুনি, তা কি নিজেকেই হত্যা করতেই

$
0
0


ইন্দ্রনীল শুক্লা: মধ্য তিরিশের এক যুবতী। ঈশানী দত্ত। এই নাটকের গল্পটা তাকে ঘিরেই। তার মধ্যে একাকীত্ব স্পষ্ট। পেল্লাই এক বাড়িতে তার বাস। আর সেই বাড়ির আসবাবপত্রগুলোর মধ্যেও পুরনো সময় আটকে রয়েছে। সেই বাঁকানো পায়ার গোল টেবিল, কাঠের কাজের সাজানো চেয়ার, সময়ের সঙ্গে জমা অনেকটা ধুলো, ঢিমে আলো... রোজ আমাদের দেখা যে ঘর-দোর তেমনটা নয়। যা দেখা যাচ্ছে তা যেন নয়। অনেক কিছু আড়ালে রয়ে গিয়েছে, যার উপস্থিতি অনুভব করা যাচ্ছে কিন্তু ঠিক ছুঁতে পারা যাচ্ছে না। অস্পষ্ট ভিস্যুয়ালের মধ্যে সবসময়ই গল্প থাকে। সে গল্প কারও মনে থাকতে পারে কিংবা দৃষ্টির আড়ালে।

ঈশানী রীতিমতো ফোন করে এক সংস্থা থেকে এক ভাড়াটে খুনিকে ডেকে পাঠায়। নিজের অতীত নিয়ে মহা ব্যতিব্যস্ত এই যুবতী। তার জীবন নষ্ট করেছে যে এমন একজনকে সে খুন করতে চায়। কিন্তু কে সে? কাকে সে খুন করতে চায়? তা কি তার নিজের কাছেও স্পষ্ট? ভাড়াটে খুনি যখন বাড়িতে এসে তার সঙ্গে দেখা করে সেও কনফিউজড দর্শকের মতো। বাড়িতে আসার পর এই যে দেখা-না দেখা, জানা-না জানার মাঝে একটা মেজাজ গড়ে উঠছে সেখানেই নাটকটার আত্মা লুকিয়ে রয়েছে। একটা কী হয় হয় ভাব গোটা নাটক জুড়ে। যে ছেলেটি খুনি, কথায় কথায় জানতে পারা যায় এটা তার জীবনে প্রথম খুনের অ্যাসাইনমেন্ট। কিন্তু তার সামনে দাঁড়িয়ে এই মহিলা কে? সে মানসিকভাবে সুস্থ তো? বিদেশি গল্প অবলম্বনে এক রুদ্ধশ্বাস নাটক ইন্দ্রাশিস লাহিড়ির। পরিচালনা করেছেন সুদীপা বসু। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি নাটক পরিচালনা করলেন তিনি। 'বহিরাগত', 'জলজ্যান্ত' কিংবা 'অঙ্গীরা বাড়ি নেই'। কিন্তু এটি যে তার মধ্যে সবচেয়ে ইনটেন্স সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহই নেই।

মাত্র দুটো চরিত্র এ নাটকে। যুবতীটি এবং ভাড়াটে খুনে। ভারি আসবাব থাকলেও মঞ্চ ফাঁকা লাগার একটা সম্ভাবনা থেকে যায় এমন ক্ষেত্রে, কিন্তু ইন্দ্রাশিস-এর স্ক্রিপ্ট তো বটেই, ঋষভ বসু এবং অন্তরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় টেনশন জিইয়ে রাখে দর্শকের মধ্যে। ঘণ্টাখানেকের এ নাটক এক রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতা। অল্প আলোর আঁধারি আমাদের মনের গভীরে স্নানে বাধ্য করে। যার উপরে রাগ তাকে যদি মারতে না পারি তবে কি বন্দুকের নল ঘুরিয়ে ফেলি নিজের দিকে? আত্মহত্যার সাহস যোগাতে না পারলে কি নিজেকে মারতেও সুপারি কিলার ডাকতে হতে পারে? প্রত্যেকে আমরা সুস্থ তো, নাকি খানিকটা করে অসুস্থতাও আছে!-


নাটক: অন্তরীক্ষে
রচনা: ইন্দ্রশিস লাহিড়ি
নির্দেশনা: সুদীপা বসু
দল: হাওড়া জোনাকি
অভিনয়: অন্তরা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋষভ বসু
রেটিং: তিন

Viewing all 222 articles
Browse latest View live


<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>