Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all 222 articles
Browse latest View live

ব্রাত্য আলোয় গৌতম

$
0
0

শিক্ষা বিষয়ে এক ফরাসি নাটক৷ কিন্ত্ত মঞ্চায়নে বাংলা নাট্যব্যক্তিত্বদের ত্র্যহস্পর্শ৷ খোঁজ নিলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

নিজেরই লেখা নাটক, নিজের পরিচালনা, নিজের অভিনয়, করেছেন৷ অন্যের লেখা নাটক, নিজের পরিচালনা, করেছেন৷ অন্যের লেখা নাটক, নিজের অভিনয়, তাও করেছেন৷ কিন্ত্ত অন্যের লেখা নাটক, অন্যের পরিচালনা, এমনকী তিনি অভিনয়েও নেই৷ অথচ তিনি লাইট আর সাউন্ড ডিজাইন করছেন৷ না এমনটা এর আগে ঘটেনি ব্রাত্য বসুর থিয়েটার কেরিয়ারে৷ অন্তত সেটাই দাবি প্রাচ্য থিয়েটার গোষ্ঠীর কর্ণধার বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়-এর৷ খ্যাতনামা ফরাসী নাট্যকার ইউজিন ইওনেস্কো-র 'দ্য লেসন' অবলম্বনে 'নীলিমা' উপস্থাপন করতে চলেছেন তিনি৷ উদয়ন ঘোষের নাট্যরূপে বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এ নাটকে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন গৌতম হালদার৷

এর আগে বিপ্লবের পরিচালনায় গৌতম অভিনীত অ্যালবেয়ার কামু-র (নাট্যরূপে রতনকুমার দাস) 'ক্যালিগুলা' বাংলা মঞ্চে প্রশংসিত হয়েছে৷ ডাক পেয়েছে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র রঙ্গমহোত্সবেও৷ আবার মিনার্ভা নাট্যচর্চা কেন্দ্রে প্রযোজিত উইলিয়াম শেক্সপিয়ার-এর 'টুয়েলভথ নাইটস' অবলম্বনে(অ্যাডাপটেশনে দেবাশিস রায়) ব্রাত্য পরিচালিত 'মুম্বই নাইটস'-এ অন্য রকম একটা ভূমিকায় অভিনয় করে নতুনভাবে পাওয়া গিয়েছে গৌতম হালদারকে৷ সে নাটকের সাফল্যও প্রশ্নাতীত৷ আরও একটু পিছিয়ে গেলে মনে পড়তে পারে, এর আগে ব্রাত্য রচিত 'সুপারি কিলার' পরিচালনা করেছেন বিপ্লব৷ তাতে অবশ্য লিড রোলে ছিলেন সুপ্রিয় দত্ত৷ কিন্ত্ত এ বার ব্রাত্য-র আলো ও শব্দ ডিজাইনে, বিপ্লবের পরিচালনায়, গৌতমের অভিনয়ে কেমন ত্র্যহস্পর্শ ঘটে তা নিয়ে নাটকমোদীদের উত্সাহ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক৷

ইউজিনের নাটকে চিরাচরিত শিক্ষাব্যবস্থার উপর আলো ফেলা হয়েছে৷ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য তো মনের সামগ্রিক বিকাশ ঘটানো৷ কিন্ত্ত বাস্তবে আমরা দেখি শিক্ষা সে উদ্দেশ্য সাধন না করে আমাদের হালকা কিছু তথ্যকে তোতাপাখির মতো মুখস্থ করতে শেখায়৷ এই থিমকে মাথায় রেখেই সুউচ্চ চেয়ারে শিক্ষক হিসেবে আসীন থাকতে দেখা যাবে গৌতমকে৷ মাথার উপর পড়বে ব্রাত্য-র ডিজাইন করা আলো৷ এ নাটক প্রথমবার মঞ্চস্থ হবে আগামী ১১ জুন, শনিবার সন্ধ্যায়, জ্ঞানমঞ্চে৷



ব্যান্ড, ‘লাইভ’ শুনবেন?

$
0
0

তাহলে নাটক দেখুন৷ লাইভ মিউজিক এখন বাংলা মঞ্চের এক্কেবারে মোস্ট ইন থিং৷ থিয়েটার পাড়ায় কেন এই ব্যান্ড-উন্মাদনা? খোঁজে ইন্দ্রনীল শুক্লা

'ব্রেশটের থেকেই নাটকে লাইভ ব্যান্ড, গান-বাজনা শিখেছে বাঙালি৷'

'মোটেই না৷ শিশিরবাবুর মতো মানুষও বলে গিয়েছেন বাংলার আদি থিয়েটার হল খোলা মাঠের যাত্রা৷ আর যাত্রা শুরুই হয় সম্মিলিত লাইভ বাজনা দিয়ে৷ তাই কারও থেকে শেখার প্রশ্নই ওঠে না৷'

অ্যাকাডেমির চায়ের দোকানের সামনে নানা বিষয়ের মতো এই ব্যাপারটা নিয়েও মাঝেমধ্যেই তক্কো বেধে যায় বটে৷ তাছাড়া নান্দীকারের 'সোজন বাঁদিয়ার ঘাট', 'নগর কীর্তন', চেতনার 'মারিচ সংবাদ', বিভাস চক্রবর্তীর 'মাধব মালঞ্চী কইন্যা'কিংবা হালে অঞ্জন দত্ত-র 'অবনী অপেরা' বা ব্রাত্য বসুর 'মুম্বই নাইটস'-এর প্রসঙ্গও এসে পড়ে লাইভ ব্যান্ড নিয়ে আলোচনায়৷ কিন্ত্ত এঁদের সকলেই তো নামী, প্রতিষ্ঠিত৷ এঁদের আপাতত আলোচনা থেকে সরিয়ে রাখলেও একটা ট্রেন্ড চোখে পড়ছে৷ তা হল নিউ জেন ডিরেক্টররা ঝুঁকে পড়েছেন লাইভ মিউজিকের দিকে৷ রেকর্ড করা আবহকে খানিক দূরে সরিয়ে রেখে কখনও মঞ্চের উপরে, কখনও এক পাশে, কখনও দর্শক আসনের প্রথম সারিতে বসে আবহ, গান পরিবেশন করছেন শিল্পীরা৷

মিনার্ভা নাট্যচর্চাকেন্দ্রের 'দেবী সর্পমস্তা'-র গান পরিচালনা করে প্রচারের আলোয় এসেছিলেন অভিজিত্ আচার্য৷ দীর্ঘদিন ধরেই লোকগানের চর্চাই করে আসছেন তিনি৷ দেশে-বিদেশে বহু জায়গায় পারফর্ম করেছেন৷ সিরিয়াল, সিনেমাতেও মিউজিকের কাজ করেছেন৷ নিজে গোটা কুড়ি ফোক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন অবলীলায়৷ নাটক ভালোবেসেই নাটকের লাইভ মিউজিকে জড়িয়ে পড়েছেন৷ নতুন পরিচালকদের মধ্যে বেশ পছন্দের তিনি৷ কৌশিক কর পরিচালিত 'হাঁসুলি বাঁকের উপকথা', বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্য পরিচালিত 'চরণদাস'-সহ বেশ কয়েকটি নাটকে লাইভ মিউজিক করছেন তিনি৷ এ ছাড়াও কাজ করেছেন 'রস', 'মা এক নির্ভীক সৈনিক' নাটকে৷ কেন তাঁকে পছন্দ করছেন নতুনরা? লাইভ মিউজিক কি তবে নতুন ট্রেন্ড? অভিজিত্ বলছেন, 'নতুন পরিচালকরা গ্রামীণ জীবন কিংবা লোককথা-র উপর নাটক করলেই আমায় ডেকে নিচ্ছেন৷ কিন্ত্ত ফোক গান রেকর্ডিংয়ের চেয়ে লাইভ হলে নাটকে একটা আলাদা মাত্রা জুড়ে দেয় বলে আমার বিশ্বাস৷ কেউ সামনে গাইছে বাজাচ্ছে দেখলে মানুষ নিজের সঙ্গে মাটির যোগাযোগটা খুঁজে পান৷' 'হাঁসুলি'-র পরিচালক কৌশিক কর বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, 'থিয়েটারের প্রতিটা শোয়ে অভিনেতারা ইম্প্রোভাইজ করতে থাকেন৷ অভিনয় বদলায়, অভিব্যক্তি বদলায়৷ মিউজিকটা লাইভ রাখলে সেটাও বদলে যায়৷ অনেক জীবন্ত হয়! প্রতিটা শোয়ের সঙ্গে যেমন অ্যাক্টিং প্যাটার্ন গ্রো করে, তেমনই গ্রো করে মিউজিকও৷'

দেবাশিস রায় কিংবা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো তরুণ-তুর্কীদেরও পছন্দ লাইভ মিউজিক৷ অনির্বাণ পরিচালিত 'চৌমাথা' কিংবা দেবাশিস পরিচালিত 'ইলা গূঢৈ়ষা' নাটকে লাইভ মিউজিক করেছেন শুভদীপ গুহ৷ নিজের পরিচালিত নতুন নাটক 'আন্ডারস্ট্যান্ডিং ম্যাকবেথ'-এও বলা বাহুল্য তাঁর লাইভ ব্যান্ড৷ 'ঘোড়ামুখো পালা', 'মুম্বই নাটইস', 'তিতাস' নাটকের লাইভ গান-বাজনাও তাঁরই৷ নাটকসূত্রেই ফ্রান্স-সহ কয়েকটি দেশে ঘুরে আসা শুভদীপ বলছেন, 'আমার মনে হয় নাটকে শুধু আবহ নয়, সাইকোলজিক্যাল মিউজিক হওয়া দরকার৷ নাটকে ব্যাপারটা রাখা হয় এ ভাবে যে, হয় গান-বাজনা চরিত্রের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে, অথবা সচেতনভাবেই খাপ খাচ্ছে না৷ দর্শক এবং অ্যাক্টরের হূদস্পন্দনের মধ্যে যোগসূত্র গড়ে তুলতেই মিউজিকও লাইভ হলে ভাল৷ অভিনয়ে সিনেমার সঙ্গে যে তফাত্টা আছে, মিউজিকেও হতে হবে!'

অনির্বাণ মনে করছেন, 'আদিকাল থেকে দেখলে নাটকের মিউজিক তো লাইভই ছিল, ব্যয়সঙ্কোচ কিংবা রেকর্ডিয়ের সুবিধার সূত্র ধরে রেকর্ডেড মিউজিক ব্যবহার শুরু হয়৷ নান্দীকারের মতো বড় দলগুলো ছাড়া অন্যরা নিজের ছেলেদের কাউকে গাওয়ার জন্য ট্রেনিং, পাখোয়াজ বাজানোর ট্রেনিং, নাচের ট্রেনিং, এ রকম করাতে পারেনি৷ কিন্ত্ত এখন সকলেই সকলের দলে কাজ করছেন৷ তাই বন্ধু-বান্ধব খুঁজে নিয়ে লাইভ মিউজিকের কাজ করার সাহসটা আবার ফিরে পাওয়া যাচ্ছে৷'

জয়রাজ ভট্টাচার্য পরিচালিত 'প্রাতঃকৃত্য' নাটকের লাইভ মিউজিকও সম্প্রতি আলোড়ন তৈরি করেছে৷ ইউনিটি-ভিলেজ নামে একটি ব্যান্ডের সদস্যরা ধুতি পরে মঞ্চের পিছন দিকটায় বসে বাজান৷ কেন লাইভ মিউজিক? জয়রাজ বলছেন, 'প্রশ্নটার মধ্যেই উত্তর রয়েছে৷ লাইভ বলে! নাটকের থেকে নাটকের মিউজিকটাকে আলাদা বলে অন্তত আমরা মনে করছি না৷ এটা নাটকেরই একটা ইন্টিগ্রাল পার্ট৷ নাটক যে রকমভাবে এগোবে, তেমন ভাবেই সঙ্গে সঙ্গে চলবে মিউজিক৷ তাছাড়া, মিউজিক লাইভ হলে প্রোডাকশনের ফ্লেক্সিবিলিটি বেশি হয়৷'

আরও একধাপ এগিয়ে দেবাশিস রায় বলছেন, 'ট্র্যাক মিউজিক একটা ডেড প্রোডাক্ট... আর লাইভ মিউজিশিয়ানরা পারফর্মার হিসেবে একটা প্রোডাকশন-এ ভ্যালু অ্যাড করেন৷ যেমন পাশ্চাত্যে গায়করা প্রায় সবাই পারফর্মার৷ লাইভ কনসার্টে যে মজা পাওয়া যায় তা কি আর কানে হেডফোন গুঁজে আমরা পেতে পারি?'

ট্রলিতে চেপে বাজাতে বাজাতে ড্রামারের মঞ্চে ঢোকা (চৌমাথা), 'কোপাই নদীর জলে'-র ছন্দে শান্তিলালদের আদিবাসী নাচ (হাঁসুলিবাঁকের উপকথা), স্যাক্সোফোন-ড্রামের গুঁতোয় দিনযাপনের ধাক্কার বার্তা (প্রাতঃকৃত্য), ঠুমরিতে তাল দিতে দিতে গৌতম হালদারের শয়তানি আঁটা (ইলা গূঢৈ়ষা)... গান-বাজনাকে দৃশ্য থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়৷

অতএব লাইভ!


মডেলকে তো চিনি, কিন্ত্ত নিজেদের ...

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

ইস্কুলের দিদিমণি হও , চলবে৷ অফিসের কেরানি হও , চলবে৷ আঁকা -গানের স্কুল চালাও , চলবে৷ এমনকী সেলস গার্লের কাজ করো , সেটাও চলতে পারে৷ কিন্ত্ত মডেলিং ! ওরে বাপস্! কোনও উঠতি বয়সী মেয়ে মডেল হতে চাইছে , এটা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো চোখে নেয়নি বাঙালি৷ বাধ সেধেছে রক্ষণশীলতা , মধ্যবিত্ততা৷ পেশাটি যে মাত্রাতিরিক্ত 'ডিম্যান্ডিং ' তাতে কোনও সন্দেহ নেই অবশ্য৷ মডেলিং মানেই জামা কমবে৷ জামা পরানোর অজুহাতে ডিজাইনার শরীর ছোঁবে৷ হাজার হাজার ওয়াটের আলোয় বিভাজিকা মেলে ধরতে হবে , ভিজতে হবে , পোশাক ত্বকে লেপ্টে থাকতে হবে , তবেই না প্রোডাক্ট বিক্রি হবে ! তাছাড়া ওই মডেলকেই যে নেওয়া হবে , তা 'ফিক্সড ' করার জন্য সংস্থার কর্তা একদিন হোটেলে দেখা করতে যেতেও তো বলবেন নিশ্চয়ই ... সব মিলিয়ে আর যাই -ই হোক , এটা 'ভালো ' মেয়েদের কাজ নয়৷

কিন্ত্ত নব্বইয়ের গোড়া থেকে কেবলে বিদেশি চ্যানেল বাড়তে শুরু করল , বিদেশি কসমেটিকক্স , কোল্ড ড্রিঙ্কস পাড়ার দোকানে চলে এল , বিদেশি টিভি -ফ্রিজ ... সব মিলে ভারতের খোলা বাজার দখলের একটা প্রতিযোগিতা হুড়মুড়িয়ে উঠল৷ আর তখনই বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সুস্মিতা সেন , রেশমী ঘোষদের চিনলাম আমরা৷ আরও কয়েকটি বিউটি পেজেন্ট থেকে পাওয়া গেল বিপাশা বসু, কোয়েনা মিত্র -দের৷ সবাই বাঙালি ! ক্রমে ক্রমে সেই আগের মতো অচ্ছুত্ সিনড্রোমটা কেটে গেল৷ মন থেকে পুরোটা মেনে নিতে না পারলেও কোনও মেয়ের মডেল হওয়ার পথে আর সে রকম জগদ্দল বাধা হতে পারলেন না মা -বাবা৷ কেউ সমালোচনা করলে বলতে শুরু করলেন , 'ভালোই তো , মডেলিং খারাপ কী !' ঠিক এই সময়কালের একটি মেয়ের মডেল হওয়ার লড়াই , চেষ্টা , ডিটারমিনেশন পাওয়া গেল গল্ফগ্রীন ঘরে -বাইরে গোষ্ঠীর 'বিজ্ঞাপন নারী ' নাটকে৷ নাটকটির রচয়িতা সত্য ভাদুড়ি৷

নির্দেশনায় শুভশ্রী রায়৷ মেয়েটি (সম্প্রীতি চক্রবর্তী ) সকালে বেরিয়ে সারাদিন কোথায় যায় , কার সঙ্গে দেখা করে , কেন রাত করে ফেরে , লিফট -এর গাড়ির ভিতরের লোকটা কে ? সব মিলে মানে ঔত্সুক্যের শেষ নেই৷ শেষটায় একটা শ্যুট এর অর্ধনগ্ন ছবি প্রকাশিত হল ম্যাগাজিনে৷ পাড়ার লোকজনের ফুসুর -ফুসুর তো শুরুই হল৷ একখানা মস্তান কাটিংয়ের ছেলে তো বাড়িতেই চলে এল সটান , নীতি -পুলিশ হয়ে৷ মানতে না পেরে হার্ট-অ্যাটাকে মারাই গেলেন মেয়েটির বাবা (সিদ্ধার্থ কর্মকার )৷ কিছুদিন পর মেয়েটিকে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখবো আমরা৷ মনে হতে পারে , মেয়েটির এই লড়াইটাই বুঝি নাটকের উপজীব্য৷ মোটেই না৷ নাটকটি ভীষণ রকমের অথার 'স প্লে৷ হঠাত্ করেই নাটকের ফোকাস উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেন নাট্যকার সত্য ভাদুড়ি৷

সেখানেই অন্য মাত্রা পায় নাটকটি৷ মেয়েটি যে জীবনযাত্রা কাটায় তাতো আমাদের সামনেই খোলা পাতার মতো৷ কিন্ত্ত ফোকাস বদলের ফলে আলো এসে পড়ল অন্য অন্য মানুষগুলোর চরিত্রের অন্ধকার অংশগুলোর উপর৷ ক্রমে আমরা মেয়েটির চাঁচাছোলা ভাষায় জানতে পারবো মাসির সঙ্গে বাবা -র অন্য রকম সম্পর্কের কথা৷ জানতে পারবো , ফ্ল্যাটবাড়ির জেঠু (অশোক বসু) কেমন করে তার শরীর ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল , সেই কথা৷ এমনকী জীবনযাত্রা স্বচ্ছল করার জন্য তার মায়ের (শুভশ্রী রায় ) মনে যে গোপন আকাঙ্খা , লোভ জমা রয়েছে , জানব সে কথাও৷ এমনকী এক প্রতিবেশী জেঠুর প্রতি মায়ের আকর্ষণের প্রসঙ্গও সামনে চলে আসবে৷

শেষটায় আমরা দেখবো রীতেশদা (শুভেন্দু তরফদার ) নামে এক আর্টিস্টের কাছে মানসিক আশ্রয় খুঁজবে মেয়েটি৷ মডেলের ভূমিকায় সম্প্রীতিকে বেশ সহজ , স্বাভাবিক মনে হয়েছে৷ মঞ্চকে প্রায় পুরোটাই ব্যবহার করে অভিনয়ের চেষ্টা করেছেন৷ মদ্যপান , শ্যুট , স্বল্প পোশাকে যথেষ্ট সাবলীলতার ছাপ রেখেছেন তিনি৷ পরিচালনার পাশাপাশি মায়ের ভূমিকায় শুভশ্রীও ভাল৷ প্রশংসা অবশ্যই প্রাপ্য সত্য ভাদুড়ির৷ এক মডেলকে সামনে রেখে , কেবলমাত্র মডেলের দিনযাপনের অন্ধকার অংশগুলোয় আলো ফেলার যে সীমাবদ্ধতায় গল্পকাররা আটকে যান , সে পথে তিনি হাঁটেন নি৷ বরং , মডেলের মুখ দিয়েই 'ভদ্রলোক '-দের দ্বিচারিতার মুখোশ খুলেছেন৷ প্রয়াসটিতে অবশ্যই নতুনত্ব রয়েছে !

ভালোবেসে সত্য, মিথ্যা সব কিছু ভুলে...

$
0
0

মাত্র মাস তিনেকের মধ্যে এক গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাঁর আব শান্তনু নাথের৷ স্বীকারোক্তির রবিবাসরের আগে একমাত্র 'অন্য সময়'-এর জন্যই কলম ধরলেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

দিনটা ছিল ২৭শে মার্চ ২০১৬৷ বিশ্ব নাট্য দিবস৷ বন্ধু রূপঙ্করের আমন্ত্রণে কৃষ্টি পটুয়া দলের দুটি নাটক দেখতে গিয়েছিলাম৷ অ্যাকাডেমিতে৷ রবিবারের সকাল৷ এমনিতেই চোখ ঢুলুঢুলু৷ বিরতির পর শুরু হল দ্বিতীয় নাটক '২৯ শে এপ্রিল'৷ নাটক এগোতে চোখে পড়ল 'দীপু' চরিত্রের অভিনেতাটির দিকে৷ নামটাও জানতাম না৷ শুধু ওর মন্দ্র কণ্ঠস্বরে জয় গোস্বামীর কবিতার অনুরণন চলল সারা মস্তিষ্ক আর হূদয় জুড়ে৷ বেশ ছিলাম শিল্প নিয়ে আত্মমগ্ন, কিছুটা স্বার্থপরও৷ হঠাত্ চকমকি পাথরে ঘষা আগুনের মত আবির্ভূত হল শান্তনু নাথ৷ আলাপের প্রথম দিন জানতে পেরেছিলাম যে ও বিবাহিত৷ সেটা আমায় ভাবায়নি৷ কারণ প্রেমে পড়াটা তো ঠিক জ্যামিতির উপপাদ্য নয়৷ আর আমার থেকে ও বছর ছয়েকের ছোটও৷ এই গত মাস তিনেকের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়েছে৷ আমি জেনেছি ওর ঘটমান অতীত ও বর্তমানের অনেক কথাই৷ তবে ওর প্রতি আমার আকর্ষণের মূল কারণটা কিন্ত্ত থিয়েটার৷ ওর 'স্টেজ প্রেজেন্স', ওর কণ্ঠের ও শরীরের অভিব্যক্তি সবটাই প্রথমে শিল্পী হিসেবে নাড়া দিয়েছে আমায়৷ ঝড়ও বয়েছে অনেক, কিন্ত্ত সামলে উঠেছি দু'জনেই৷ কারণ একটাই--- ভালোবাসা ও সম্মান৷ আমার বান্ধবী অঙ্কিতা মিত্রর আমাদের এই প্রেমে পড়ার গল্পটা খুবই অভিনব মনে হয়েছে৷ তাই নিয়েই আমাদের পরবর্তী প্রকল্প৷ এই 'লাভ, লিরিকস, লেটারস'-- যাতে যোগ দিয়েছে ইমন চক্রবর্তী ও ইন্দ্রজিত্ দে৷ আমাদের দেশে এমন 'রিয়েল টাইম লভ স্টোরি' দিয়ে শ্রীতি অভিনয় বা শিল্প উপস্থাপনার নিদর্শন খুব একটা বোধ হয় নেই৷ শান্তনু ও আমি প্রেমের গল্প বলব ২৬ শে জুন উইভার্স স্টুডিওতে৷

আমার এই কাজটি কিন্ত্ত কোনও 'গিমিক' বা 'ইন্সপায়ারড' নয়৷ আমার অনুপ্রেরণা একটাই--- ছ'বছর পর একজনকে ভালোবেসে সত্য, মিথ্যা সব কিছু ভুলে এগিয়ে যেতে পেরেছি৷ আমার নিজের লেখা একটা গদ্য থেকে একটা লাইন তুলে শেষ করতে ইচ্ছে করছে---

'ওকে বলে দিও, ভালোবাসার থেকে বড় নিশ্চয়তা পৃথিবীতে আর নেই...'


এ বার টালিগঞ্জের নাটক

$
0
0

আর্টিস্ট ফোরাম আয়োজিত নাটকের প্রতিযোগিতা৷ অভিনব এই উদ্যোগটি সম্পর্কে, নাটক-সিনেমা দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বললেন প্রসেনজিত্‍ চট্টোপাধ্যায়৷ লিখছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা



আঠারো বছরে পা দিল আর্টিস্ট ফোরাম৷ আর সেটা সামনে রেখেই আগামী ১৪ আগস্ট উত্তম মঞ্চে সারাদিনব্যাপী একটি নাট্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চলেছে তারা৷ মঞ্চস্থ হবে ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত 'পালাবার পথ নেই', শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত 'খোদার কসম জান', চৈতি ঘোষাল পরিচালিত 'সুন্দর', খেয়ালি দস্তিদার পরিচালিত 'কাটা-ছেঁড়া' এবং অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় (রাহুল) পরিচালিত 'সত্যসন্ধ'৷ সামগ্রিক তত্ত্ববধানে রয়েছেন চন্দন সেন৷ অভিনয় করবেন নতুন বা স্বল্প পরিচিত অভিনেতারা৷ তাঁদের প্রচারে আলোয় আনাই এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য বলে ফোরামের তরফে জানানো হয়েছে৷ নাটকের বিচারকমন্ডলীদের মধ্যে থাকছেন সন্দীপ রায়, গৌতম ঘোষ, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অরুণ মুখোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও সাহানা দত্ত৷ অতিথি হিসেবে থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-সহ চলচ্চিত্র, মঞ্চ ও দূরদর্শনের নামী শিল্পীরা৷



এমন এক উদ্যোগের প্রচারে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা প্রসেনজিত্‍ চট্টোপাধ্যায়৷ নিঃসন্দেহে অভিনব! তাঁর কাছে স্বাভাবিক কারণেই জানতে ইচ্ছে হল, হঠাত্‍ এমন একটা উদ্যোগ নিলেন কেন? বললেন, 'আমি একা উদ্যোগ নিইনি৷ আর্টিস্ট ফোরাম নিয়েছে৷ আমি আছি৷ সৌমিত্রবাবুর মতো প্রবীণ সদস্যরাও আছেন৷ আরও অনেকে আছেন৷ হতে পারে হয়তো সবসময় আসতে পারেন না, কিন্ত্ত কী হচ্ছে না হচ্ছে সে সম্পর্কে তিনি খুব ভালোই ওয়াকিবহাল৷ অনেক সময়েই রবিবার আমরা অনেকে মিলে বসে ফোরামের নানা বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করি৷ আর কী করা যায় প্ল্যান করি৷ সকলে মিলে প্ল্যান করেই এই আয়োজন হয়েছে৷ বাংলা থিয়েটারের ভীষণ গুণী শিল্পী, পরিচালকরা এ কাজে এগিয়ে এসেছেন৷ এটা নতুনদের উত্‍সাহ দেবে৷ '
কিন্ত্ত তবুও তাঁর এভাবে সামনের সারিতে থেকে ব্যাপারটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসটা কি আলাদা রকমের প্রচার এনে দিচ্ছে না? 'আজকের দিনে প্রচার খুব জরুরি৷ ভালো একটা কাজ করলেই তো হবে না৷ সকলকে তো সেটা জানাতে হবে, দেখাতে হবে৷ তাই না? ফোরামের তরফে চেষ্টা করা হয় নতুন শিল্পীদের প্রোফাইল যেন প্রযোজকরা, পরিচালকরা দেখতে পান৷ তো এই নাটকের আয়োজনও তার একটা অঙ্গ', বললেন প্রসেনজিত্‍৷



কেরিয়ারের গোড়ায় নাটকের একজন ভালো অভিনেতা ফিল্মে সুযোগ পাওয়ার পর দ্বন্দ্বে ভুগছে যে নাটকের পরিচালক, শিক্ষাগুরু ব্যাপারটা কেমনভাবে নেবেন, এই দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা অনেক বাংলা ছবিতেই রয়েছে৷ সত্যজিত্‍ রায় পরিচালিত, উত্তমকুমার অভিনীত ছবি 'নায়ক'-এ ছিল৷ ছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত, প্রসেনজিত্‍ অভিনীত 'অটোগ্রাফ' ছবিতেও৷ তাহলে আর্টিস্ট ফোরাম যে এ রকম একটা ব্যাপার করছে, সে ক্ষেত্রে কি থিয়েটার বনাম মঞ্চ এই দ্বন্দ্বটা আর কাজ করছে না বলা যায়? মানে আদান-প্রদান আরও বাড়বে এ বার? প্রসেনজিত্‍ বললেন, 'এ রকম নাটক থেকে ফিল্মে আসার ব্যাপারে দ্বন্দ্বটার কথা আমার সিরিয়াল 'মহানায়ক'-এর চরিত্রটার মধ্যেও রয়েছে৷ কিন্ত্ত আমি এটা বলতে চাই যে ওই দ্বন্দ্বটা একটা সময় পর্যন্ত ছিল৷ কিন্তু এখন আদান-প্রদান তো বেড়েইছে৷ অনেকখানি মিলেমিশে গিয়েছে৷ (সামনে দাঁড়ানো ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়কে দেখিয়ে বললেন) এই যেমন উনি, সিরিয়াল, ফিল্মে কাজ করেন, আবার নাটকও করেন চুটিয়ে৷ সুতরাং আর কোথায় দ্বন্দ্ব!'

তবু? আরেকটু বুঝিয়ে বললেন, ''নায়ক' যখন হয়েছিল তখন সত্যিই নাটক আর সিনেমার মধ্যে অনেকখানি দূরত্ব ছিল৷ তখন বলাই হত, 'নাটকের মতো অভিনয়'৷ মানে নাটকে অভিনয়ের প্যাটার্নটা তখন অনেকটাই আলাদা ছিল৷ সেটা এখন চলে গিয়েছে৷ দেবশংকর হালদারের মতো অসাধারণ অভিনেতারা রয়েছেন এখন নাটকে৷ ব্রাত্য বসু একজন দারুন অভিনেতা৷ এঁরা সিনেমাতেও সমান ভালো অভিনয় করেন৷ এখন সিনেমার প্রায় আশি শতাংশ ভালো অভিনেতাই তো থিয়েটার থেকে এসেছেন৷'



তেমন আদান-প্রদান তবে আরও বাড়বে বলে মনে হয়? বা সে রকম চেষ্টা করা হবে? 'মহানায়ক' বলেন, 'আমি নিজে তো প্রায়ই নাটক দেখি৷ আমার টিমের অনেকেই নাটক দেখেন৷ নাটকে যে ছেলেমেয়েরা ভালো কাজ করছেন তাঁদের ছবিতে নিয়ে আসার চেষ্টা আমরা করি৷ এ প্রসঙ্গে বলতে পারি আমার প্রোডাকশনের যে ২২টা ছবি তৈরি করা হয়েছে তার বড় অংশতেই কিন্ত্ত কাজ করেছেন থিয়েটার থেকে আসা অভিনেতারা৷'



নিজে তবে কোন কোন নাটক দেখেছেন বা দেখেন? জানালেন, 'অনেক, অনেক নাটক দেখেছি৷ দেখি সময় পেলেই৷ ব্রাত্য-র প্রায় সব নাটক দেখেছি৷ বাবানের (কৌশিক সেন) প্রায় সব দেখেছি৷ আরও অনেক দেখেছি৷' নিজের নাটক করার কথা মনে হয়নি? 'হ্যাঁ, হয়েছে৷ একটু সময় বের করতে পারলেই নাটক করব৷ নিজের স্যাটিসফ্যাকশনের জন্যই করব৷'



'মিস্টার টালিগঞ্জ' থাকবেন, আর ফিল্মের কথা হবে না, হয় নাকী! এখনও পর্যন্ত এ বছর তিনটে ছবি তাঁর রিলিজ করেছে৷ গৌতম ঘোষের 'শঙ্খচিল', নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের 'প্রাক্তন', কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের 'ক্ষত'৷ ছবিগুলো ভাল চলেছে৷ একটি তো সুপারহিট৷ 'মহানায়ক' সিরিয়ালটি চলছে৷ পুজোয় আসছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'জুলফিকর'৷ তাহলে এই বছরটা কি তাঁরই, এমন কথা বলা যায়? আর বাংলা ছবির খুব ভালো সময় চলছে, এটাও কি বলা চলে? প্রসেনজিত্‍ বলেন, 'না, আমার বছর এমন কথা বলতে চাই না৷ অবশ্যই বলতে চাই যে বাংলা ছবির জন্য খুব ভালো একটা বছর৷

ইতিমধ্যেই কয়েকটা ছবি খুব ভালো চলেছে৷ অনেকগুলো ভালো ছবি সামনে আসছে৷ তবে শুধুমাত্র বাংলা ছবি, এ রকমভাবে বলতে চাই না৷ সামগ্রিকভাবে বলা ভাল আমরা ভারতীয় ছবি করছি, যার সাফল্য আসছে!'

এবার সমকামীরা মঞ্চে, নাটকে

$
0
0

নাটকের কেন্দ্রে এবার দুই মেয়েরে প্রেম৷ আর কোন, কোন মুখোশে আসে নীতিপুলিশ? আজকের মিনার্ভা তারই খোঁজ দেবে৷ লিখছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

আরও অনেক কিছুর সঙ্গেই কিছু বাঁধা গত-ও আছে সমাজের৷ তার বাইরে পা ফেলে একটু এদিক-ওদিক হলেই ব্যস্্৷ মানুষ চোখ পাকাবেন৷ রে রে করে তেড়ে আসবেন৷ আর এই নীতি পুলিশ হতে চাওয়াটা কিন্ত্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বেশ সক্রিয়৷ ছেলের সঙ্গেই মেয়ের প্রেম৷ তবেই ঠিকঠাক৷ ছেলের সঙ্গে ছেলে কিংবা মেয়ের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক শোনা গেলেই সর্বনাশ! কিন্ত্ত এই যে বহু যুগ থেকে লালিত রেফারেন্স ফ্রেম, যে এই সম্পর্কটা 'ঠিক', আর ওই সম্পর্কটা 'ভুল', এটা তো আপেক্ষিক৷ একজনের ঠিক-ভুলের মাপকাঠি তো অন্যের কাছে অচল মনে হতেই পারে৷ আর নিয়ম থেকে যায় নিয়মের মনে৷ সম্পর্ক কি আর কপিবুক পড়ে গড়ে ওঠা সম্ভব? এই যে দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কবাদ তাতেই আলো ফেলতে চলেছে সাম্পান নাট্যগোষ্ঠীর নাটক 'চুপকথা...আর'৷ প্রথমবার মঞ্চস্থ হবে ৪ অগস্ট সন্ধ্যায়৷ মিনার্ভা থিয়েটারে৷ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই বিষয় নিয়ে গড়া নাটকে অংশগ্রহণকারীরাও অনেকে এলজিবিটি আন্দোলনে যুক্ত৷ বেশ কয়েকজনই অন্য রকম সম্পর্কে বিশ্বাসী৷

নাটকের পরিচালক পিঙ্কি-র সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই নাটকে কাহিনি দু'টি মেয়ের ভালোবাসার সম্পর্ক ঘিরেই আবর্তিত হয়৷ পিঙ্কি বলেন, 'এই সম্পর্ককে আলাদা রকমের একটা সম্পর্ক বলতে রাজি নই৷ একটি ছেলে যেমন একটি মেয়েকে ভালোবাসে, কিংবা একটি মেয়ে যেমন একটি ছেলেকে ভালোবাসে, এও তেমনই এক ভালোবাসা৷ অর্থাত্ এটা একটা ভালোবাসার গল্প৷ কিন্ত্ত তাদের ভালোবাসা নিয়ে সমাজ কেমন করে রিঅ্যাক্ট করল, বা সাধারনত করে থাকে সেটা আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি নাটকে৷'

নাটক যে দু'টি মেয়েকে নিয়ে চলে, সেই চরিত্রদুটির কোনও নাম রাখা হয়নি৷ পিঙ্কি বললেন, 'ইচ্ছে করেই নাম রাখা হয়নি৷ তারা যে কোনও মানুষ হতে পারে এটা বোঝানোর জন্য৷ কিন্ত্ত এমন একটা সম্পর্কের কারণে সমাজ তাদের উপর কতখানি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তারই রেশ রয়েছে নাটকের পরতে পরতে৷'

নাটকটি বিশেষ একটি স্টোরি টেলিং প্যাটার্ন নিয়ে চলেছে৷ মেয়ে দু'টি মারা যাওয়ার পরে অর্থাত্ মৃতু্য পরবর্তী সময়ে মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে বসে৷ যেন এক স্বপ্নের মৃতু্য উপত্যকা৷ কেমন করে তাদের স্বপ্নের মৃতু্য ঘটেছে তা-ই রোমন্থন করে চলে তারা৷ আমরা জানতে পারি, সমাজ কখনও বাবা-মায়ের মুখোশে, কখনও দাদার মুখোশে, কখনও সমকামিতাকে 'অসুখ' বলে মনে করা ডাক্তারের মুখোশ পরে রক্তচক্ষু দেখায়৷ তবু মৃতু্য উপত্যকায় বসে মেয়েদুটি স্বপ্নের কথা ভেবেই শান্তি পেতে চায়৷ স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় প্রাণপণ৷ একটা ড্রিম সিকোয়েন্স শেষটায় আগলে নেয় নাটককে৷ এমন একটা সময় যখন তৃতীয় লিঙ্গের ক্রীড়াবিদ পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলেন কিংবা একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যখন সমকামিতাকে 'রোগ' বলে বর্ণনা করেন, তখন এমন একটি নাটক যে তাত্পর্যপূর্ণ, তাতে সন্দেহ নেই৷


মৃত্যু, ঈশ্বর, যৌনতার বিস্ময়

$
0
0

নাটক: মৃতু্য, ঈশ্বর, যৌনতা

নাট্যকার: ব্রাত্য বসু

প্রযোজনা: অশোকনগর ব্রাত্যজন

পরিচালনা: অভি চক্রবর্তী

অভিনয়: শেখর সমাদ্দার, তথাগত চক্রবর্তী, অনির্বাণ ঘোষ, লোকনাথ দে, দ্বীপাণ্বিতা আচার্য, অচিন্ত্য দত্ত, সঙ্গীতা চক্রবর্তী প্রমুখ

লিখতে গিয়ে প্রথমেই যে কথা বলতে ইচ্ছে করছে তা হল, এটি এমন এক নাটক, যা ঠিক নাটকের মতো নয়৷ তাই টিপিক্যাল নাট্যসমালোচনার পথে এগোনোটাই হবে বিলকুল এক ভুল৷ একটি দীর্ঘ কবিতা পড়ে কেমন লেগেছে তা আমরা যেমনভাবে বলি, সেভাবে আলোচনা করাই অন্তত এই নাটকের পক্ষে হবে যথাযথ৷ আসলে, এর চলন দেখলে মনে হবে বুঝি বা কোনও একজন মানুষ একা একা কিছু কথা বলে চলেছে৷ একটি গভীর মনোলগ৷ আর সে মনোলগটি ভীষণই কাব্যিক৷ পদ্যের মতো অথচ গদ্যে লেখা৷ আমরা সাধারণত নাটকের যে ভাষার সঙ্গে পরিচিত, তার থেকে অনেকখানি দূরে এর অবস্থান৷ স্পষ্ট তিনটি স্তরে বিন্যস্ত এ নাটক৷ রয়েছে মৃতু্য সম্পর্কিত ভাবনার প্রকাশ৷ রয়েছে যৌনতা নিয়ে মতামত৷ আর আছে ঈশ্বর নিয়ে ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা৷

ভাবনার তিনটি পর্বকে তিনটি তিনটি রঙের মধ্যে দিয়ে ধরতে চেয়েছেন পরিচালক অভি চক্রবর্তী৷ যৌনতা বোধের রঙ লাল৷ ঈশ্বর চেতনার রঙ নীল৷ আর মৃতু্যর চাহনি কালো৷ তিনটি পর্ব তিন জন আলাদা আলাদা অভিনেতার মাধ্যমে আমাদের সামনে ধরা দেয়৷ এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, নাট্যকার ব্রাত্য বসু টেক্সট-এ যৌনতাকে সকাল, ঈশ্বরকে বিকেল এবং মৃতু্যকে রাত্রি হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ আলাদা করে কোনও চরিত্রের নাম নেই৷ কারণ বিশেষ কোনও মানুষের বিশেষ গল্প তো এটা নয়৷ এক জনের৷ অথবা আলাদা আলাদা করে সকলেরই৷

এ নাটক কিন্ত্ত ভীষণ রকমের অথার-স প্লে৷ টেক্সটই নাটককে টেনে নিয়ে চলে৷ এমন নাটক মঞ্চস্থ করার চ্যালেঞ্জটা যে কঠিন ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ অনুভূতি কিংবা বোধকে মঞ্চে উপস্থাপন করা রীতিমতো জটিল কাজ৷ একটা জায়গায় নাটকটিকে পেঁৗছে দিতে পেরেছেন অভি৷ দেবাশিস দত্তের শিল্প নির্দেশনা, সুদীপ সান্যালের আলো, রূপম ইসলামের গান উপযুক্ত সঙ্গত করে গিয়েছে৷

যৌনতা-বোধের আগমন বড় রহস্যের এবং ব্যক্তিগত৷ আমরা যা বলছি, তাতো আসলে ভাবছি না৷ ইস্কুলে পড়ার সময় অঙ্ক শেখার বাহানায় বন্ধুর বাড়ি যে ছুটছি, তা তো আসলে এক মহিলাকে দেখার জন্য৷ একটা শরীর অন্য শরীরে প্রবেশ করতে পারে এই ভাবনাই তোলপাড় করে দিচ্ছে শরীর যৌবন আসার প্রথম বছরগুলোয়৷ লালিপপ চোষার মাঝে, সিগারেটে টানের মাঝে এক অন্য কিছুকে টেনে নেওয়ার বাসনায় মন ছটফট৷

তেমন আশ্চর্যের ঈশ্বরবোধ৷ তার সঙ্গে আদৌ কি যোগ আছে বিশেষ কোনও দিকে মুখ করে , বিশেষ কোনও মন্ত্রোচ্চারণ করার? ফুলের মালা, ধোঁয়া-ধুনোর ধোঁয়াশার কি আদৌ থাকেন ঈশ্বর? সেতো বহিরাঙ্গ৷ ঈশ্বরকে নিজের মতো করে যে অনুভব করতে পারল সে কিন্ত্ত বলবে, 'শুধু তাঁকে অনুভব করতে হবে৷ না না কোনও সময়ের কারণে নয়, কোনও পালিয়ে গিয়ে নয়৷ জীবনের মুখোমুখি হয়ে তুমি অনুভব করবে...৷'

মৃতু্যও রহস্যময়৷ তা অমোঘ৷ তা ঘটবেই৷ কিন্ত্ত কখন তা অজানা৷ মাতৃজঠরে থাকার সময়েও জন্ম কবে হবে তার এক কাউন্টডাউন চলে৷ কারণ 'জন্মের ধরন একটাই৷ কিন্ত্ত মৃতু্যর ধরন অনেক রকম৷' সত্যিই তো৷ স্বাভাবিক মৃতু্য, অস্বাভাবিক মৃতু্য, অপঘাতে মৃতু্য, রাজনৈতিক মৃতু্য, গণপ্রহারে মৃতু্য, দুর্ভিক্ষে মৃতু্য, খুন-হত্যা-সংঘর্ষ...৷ তাই সাদা চাদড়ে মুড়ে রাখা, ধূপ জ্বালানো, শ্রাদ্ধ-শান্তির বাইরে মৃতু্য এক গভীর বিস্ময়ও জাগিয়ে যায় আমাদের মধ্যে৷

নাটক শুরু হয় নিতান্তই জনৈকের একোক্তির মধ্য দিয়ে৷ বহিরাঙ্গে সে কথা বলে চলে দর্শকের সঙ্গে৷ স্বেচ্ছাকৃতভাবেই সে গুলিয়ে দিতে থাকে বাস্তব আর অবাস্তব, অবাস্তব আর পরাবাস্তব৷ কিন্ত্ত মনে হয় যেন সে কথা বলছে নিজেরই সঙ্গে, ঠিক যে ভাবে ফাঁসির আগের রাতে অন্ধকারে নতজানু হয়ে বসে কোনও দন্ডিত অপরাধী৷ ঠিক সেই রকমভাবে অনধিকার প্রবেশকারীর মতো, ঠায় বসে থাকেন দর্শক৷ আর শুনে নেন নেতি-নেতি করতে করতে কেমনভাবে একজন দীর্ণ মানুষ পৌঁছে যেতে চাইছে ইতির কাছে৷ -ইন্দ্রনীল শুক্লা


নাটকের পঞ্চনামায় মিনার্ভা

$
0
0

নাটকপুঞ্জ : পাঁচের পাঁচালি

প্রযোজনা: মিনার্ভা নাট্যচর্চাকেন্দ্র

পরিচালক: পার্থ, মৃণ্ময়, অর্পণ, সৈকত, পৃথ্বীশ

অভিনয়: রেপার্টরির নাট্যশিল্পীরা

তত্ত্বাবধান: পৃথ্বীশ রাণা, প্রসেনজিত্ বর্ধন

প্রথমেই বলা দরকার, 'পাঁচের পাঁচালি' কোনও একটি নাটক নয়৷ পাঁচটি একাঙ্ক নাটক পর পর অভিনয়৷ কিন্ত্ত পাঁচই কেন? এ কথার উত্তর নানা ভাবে নানা জন দেবেন৷ এককথায় উত্তর যখন নেই, তখন নিজের মতো করে উত্তর খোঁজার একটা চেষ্টা করতে অসুবিধাও তো নেই৷ আমার যেমন মনে হচ্ছে, পাঁচ একটি ম্যাজিক নাম্বার৷ যেমন, বাংলার পাঁচ, হাতের পাঁচ, পাঁচমেশালি, কথা পাঁচ কান না করা, পাঁচ তরকারি, পাঁচ ফোড়ন, পাঁচ তারা হোটেল, পাঁচ নদীর দেশ পাঞ্জাব৷ আবার, পঞ্চ ধরলে পঞ্চ পান্ডব, পঞ্চমুন্ডির আসর, পঞ্চ ইন্দ্রিয়, পঞ্চ সায়র...একদম এক রকম নয়, কিন্ত্ত রয়েছে একসঙ্গে৷ তেমনই একসঙ্গে পাঁচ নাটক!

যাক, পাঁচ নিয়ে আর প্যাঁচাল না পেড়ে নাটকে আসা যাক৷ সব ভাল যার শেষ ভাল৷ এ নাটকের আলোচনা শুরু করব শেষ নাটক 'মহাবিদ্যা' দিয়ে৷ মনোজ মিত্র রচিত এই একাঙ্ক নাটকটি পরিচালনা করেছেন পৃথ্বীশ রাণা৷ দেশশাসনের আবহমান সিস্টেমের ফাঁকফোকর আর সিঁধেল চোরেদের নিয়ে মহাব্যঙ্গের নাটকটি দেখে চমত্কার লাগলো৷ মঞ্চসজ্জা সরল এবং বোধগম্য৷ লম্বালম্বি দাঁড় করানো তিনটি চৌকিই তৈরি করেছে গেরস্থর ঘর৷ আর সেখানে সিঁদ কেটে গৃহিণী-র গয়না চুরিতে একে একে প্রবৃত্ত পেয়াদা, পুলিশ, মন্ত্রী আর শেষটায় কিনা স্বয়ং রাজা! 'বিদেশি ঋণ', কর্মচারিদের মাইনে দিতে না পারার সরকারি অপদার্থতাগুলো কথায় কথায় প্রকাশিত৷ আর শিশুসুলভ নাগরিককে ফিডিং বোতলে মদ পুরে বুঁদ করে রাখা হয়েছে৷ নইলে চুরির দায় তার উপর চাপানো যাবে কেমন করে! সমসাময়িকতাকে ধরতে চেয়েছেন পৃথ্বীশ৷ ভাবনার জায়গায় দর্শককে উস্কে দিয়েছেন৷

'পোকামাকড়ের কুটুম'-ও পুরনো নাটক৷ মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা৷ মঞ্চে প্রয়োগ করেছেন সৈকত ঘোষ৷ এ নাটক প্রান্তিক, অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষের কথা বলে৷ হাতুড়ি, টিনের কৌটো, বোতল ইত্যাদির শব্দের সাউন্ড কোলাজের মধ্য দিয়ে নাটক শুরু৷ কাগজ কুড়ুনি যুবকের সঙ্গে হঠাত্ দেখা হয় নোংরা ঘাঁটা হাসি-র৷ জঞ্জালে পাওয়া একটি খেলনা মোবাইল হঠাত্ করে তাদের বিপদ-অত্যাচারের থেকে বাঁচাতে শুরু করে৷ কিন্ত্ত বাস্তবে তারা এমন পার্টি গড়তে পারবে কি একদিন, যা তাদের জোটবদ্ধ করবে, শোষণের মুক্তি ঘটাবে? প্রশ্নটা উঠে আসে নাটকে৷

এই শোষিত, নিপীড়িত মানুষের কথাই উঠে এসেছে 'ফটিচার' নাটকেও৷ সমরেশ বসুর গল্প থেকে সুপ্রিয় সুরের নাট্যরূপে মঞ্চপ্রয়োগ করেছেন মৃণ্ময় নাগ৷ একটি সাইকেল ও রিক্সা সারাইয়ের দোকানের মালিক রতনলাল পাঠক কোনও এক জমানায় শ্রমিক আন্দোলন করে জেল খেটেছেন৷ কিন্ত্ত দোকান খুলে মালিক হওয়ার পর পুরোপুরি এক 'মালিক'-এই রূপান্তরিত৷ হাতে ঘিয়ের গন্ধের মতো 'সাচ্চা মজদুর' কথাটা লেগে থাকলেও সে আদতে বিশ্রী ব্যবহার করে রিক্সাওলাদের সঙ্গে৷ একদিন এক ঘটনার পর তত্ত্বকথা না জেনেই স্রেফ চাক্কা-বন্্ধে নামে রিক্সাওলারা৷ এবং জেতে৷ সাচ্চা আন্দোলন কাকে বলে আরও একবার শিখতে হয় রতনকে৷ মঞ্চের উপর সত্যিকারের রিক্সা নিয়ে এসে কম আলোয়, বিড়ির ধোঁয়ায় এক্কেবারে জমাজমাট নাটক৷

কিছুটা কমিক রিলিফের মতো এসে পড়ে অর্পণ গড়াইয়ের 'চুহা, বিল্লি অউর হাম' নাটকটি৷ ইঁদুরের বেড়াল ধরার খেলা, ইঁদুর-বেড়ালের গোপন আঁতাত! এদের জ্বালায় অতিষ্ঠ স্ত্রী-র ফোন কর্মসূত্রে বিদেশে থাকা স্বামীকে৷ তাঁর পাঠিয়ে দেওয়া গায়ে আলো জ্বলা রোবট, আর সেই রোবটের বারোটা বাজানোর জন্য চুহা-বিল্লির ষড়যন্ত্র! সব মিলে দমফাটা হাসি৷

বিপরীত পথে চলে আমরা পৌঁছে গিয়েছি প্রথম নাটকে৷ অথবা গত জন্মে৷ নাটকের নাম 'জাতিস্বর'৷ পরিচালক পার্থ সিনহা৷ এখানে ছ'জন মহিলা মনোলগ বলে চলেছে একে একে, রোজকার কাজ করতে করতে৷ গতজন্মে তারা এক একজন নেগেটিভ শেডের বিখ্যাত চরিত্র ছিল৷ যেমন, মীরজাফর, শকুনি, ফিরোজ শাহ, দুর্যোধন, রাবণ, ওয়াজিদ আলি শাহ৷ প্রত্যেকটি চরিত্র নিজের নিজের কাজের পক্ষে যুক্তি দেখান৷ বিচু্যতি, অপরাধবোধও ধরা পড়ে৷ শেষটায় রাষ্ট্রনেতার স্বর মিলে যায় এ সময়ের স্টেটসম্যানদের ভাষণে!

আলো, মঞ্চায়ন, পোশাক, গান এবং সর্বোপরি অভিনয়ে পাঁচ নাটকের একটা সুন্দর প্যাকেজ উপহার দিলেন মিনার্ভা রেপার্টরির নাট্যশিল্পীরা৷ আগেই বলেছিলাম কীনা, পাঁচ একটা জাদু সংখ্যা! ---ইন্দ্রনীল শুক্লা



কাস্ত্রোর সঙ্গে সলিলের তক্কো

$
0
0

এমনটাই রয়েছে রূপঙ্কর বাগচির লেখা, সুরারোপ করা নাটকে৷ খোঁজ নিলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

রূপঙ্কর বাগচি যে একজন খ্যাতনামা গায়ক, তা সবাই জানেন! 'জাতিস্মর'-এর সেই গান 'এ তুমি কেমন তুমি'তো তাঁকে জাতীয় পুরস্কারও এনে দিয়েছে৷ মঞ্চে তাঁর পারফরম্যান্সও বেশ তাক লাগানো৷ মঞ্চের সঙ্গে তাঁর একটা অন্য যোগও কিন্ত্ত আছে৷ সে তথ্যটা অবশ্য কম সংখ্যক মানুষের জানা৷ তা হল, একটা সময়ে নিয়মিত থিয়েটারে কাজ করতেন তিনি৷ নিয়মিত যাতায়াত ছিল নান্দীপট নাট্যগোষ্ঠীতে৷ বিভাস চক্রবর্তী পরিচালিত 'তীর্থযাত্রা'নাটকে কাজ করেছেন৷ ছিলেন'শ্বেতসন্ত্রাস'নাটকেও৷ গান তখনও করতেন৷ কিন্ত্ত পরে ধীরে ধীরে গানকেই সর্বক্ষণের সঙ্গী করে নিলেন৷ মানুষও সেভাবেই তাঁকে নিলেন৷ কিন্ত্ত নাটক যিনি একবার করেছেন, তাঁকে তো ফিরে ফিরে আসতেই হয়৷ তেমনটাই ঘটেছে রূপঙ্করের বেলাতেও৷ ২০১২ সালে স্ত্রী চৈতালিকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেন নাট্যদল কৃষ্টিপটুয়া৷ ইতিমধ্যেই মঞ্চস্থ হয়েছে 'মেঘ রৌদ্রের পালা', '২৯ এপ্রিল'এবং 'কেস ডিসমিস'৷ আর এ বার আসতে চলেছে চতুর্থ প্রোডাকশন'জেহাদ'৷

রূপঙ্কর বললেন,'কৃষ্টিপটুয়ার নাটকে গান একটা বড় ভূমিকা নেয়৷ বেশ কিছু গান থাকে৷ এ ক্ষেত্রেও সেই অপেরাসুলভ ব্যাপারটা রাখা হচ্ছে৷ ঘটনাপ্রবাহয় মনে হবে যদি এমন হতো!'কেমন হওয়ার কথা বলছেন রূপঙ্কর? তাঁর কাছ থেকেই শুনে নেওয়া গেল নতুন এই প্রোডাকশনের কাঠামোর কথা৷

বর্ণবিদ্বেষের চিরন্তন সমস্যাটি রয়েছে এ নাটকের কেন্দ্রে৷ নাটকে একটি ঘটনা দেখা যায় যেখানে প্রায় কোনও কারণ ছাড়াই স্রেফ ইচ্ছার বশে তক্কাতক্কির পর এক কালো কিশোরকে গুলি করে মেরে ফেলে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ৷ কাহিনি এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে এক সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনের দুই নেতা মার্টিন লুথার কিং এবং নেলসন ম্যান্ডেলার দেখা হয়৷ কিন্ত্ত কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনকে এই নতুন সময়ে কেমন করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার পরিবর্তে তাঁরা হঠাত্‍ তর্ক জুড়ে ফেলেন৷ কে বান্ধবীকে ঠকিয়েছেন, কে ক'টা বিয়ে করেছেন, কে স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে পরিত্যাগ করেছেন, এসব নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি হয়৷ তারপর দু'জনেরই সম্বিত্‍ ফেরে৷ এ তাঁরা কী করছেন! ইতিমধ্যে চৈতন্যদেবের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় লালন ফকিরের৷ চৈতন্য লালনকে বোঝান, পরজন্ম বলে কিছু হয়, এমন তিনি বিশ্বাস করেন না৷ তাঁর বিশ্বাস এই জন্মই সত্যি৷ যা হওয়ার তা এই জন্মেই হবে৷ ঠিক তেমনই সাদা-কালো মানুষে তফাত্‍ গড়ে লাভ নেই৷ সকলেই সমান৷ সেই তত্ত্বই গানে প্রচার শুরু করেন লালন৷

এমন চমকপ্রদ দেখা হওয়ার পালা আরও রয়েছে৷ ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা হয় সলিল চৌধুরীর৷ সলিল ফিদেলকে আক্রমণ করে বলেন, ফিদেলের সঙ্গে হিটলারের একনায়কতন্ত্রের কোনও তফাত্‍ নেই৷ ফিদেল জবাব দেন, বামপন্থী গান গাইতে গাইতে হঠাত্‍ বোম্বাই গিয়ে সেখানকার ফিল্মি গানে সুর দেওয়ার 'বাম'কারণটিও তিনি বুঝতে পারেননি!

রূপঙ্কর জানালেন,'সারা পৃথিবীতেই বর্ণবিদ্বেষের অপ্রীতিকর ঘটনা পর পর ঘটে চলেছে৷ মাঝে মাঝেই খবর আসছে৷ আপাতভাবে বর্ণবিদ্বেষ আর নেই মনে করলেও বাস্তবে ছবিটা তা নয়৷ আর আমাদের দেশেও কিন্ত্ত যে কোনও ভালো কিছুর মানক হচ্ছে সাদা, ফর্সা৷ কালো মেয়ের বিয়ে হতে এখনও সমস্যা হয়৷ এটা তো বাস্তব৷ মনে হল এমন একটা বিষয় নিয়েই নাটক করা যাক৷'

প্রসঙ্গত এ নাটক নিজেই লিখেছেন রূপঙ্কর৷ আটটি মৌলিক গানও তৈরি করেছেন নাটকের জন্য৷ তাঁর সঙ্গেই নাটকে অভিনয় ও গান করছেন গায়ক সমীক সিনহা৷ থাকবেন রূপঙ্করের স্ত্রী চৈতালিও, যিনি একসময়ে নান্দীপটের 'আইনস্টাইন ও ইন্দুমতী'নাটকে কাজ করেছেন৷ মোট ১৩ জনকে পাওয়া যাবে মঞ্চে৷ মৌলিক গানগুলি ছাড়াও আলাদা আলাদা সিকোয়েন্সে পরিবেশন করা হচ্ছে লালনের গান, সলিল চৌধুরীর গান, বব ডিলানের গান, স্করপিয়নের গান৷ এই অভিনব অপেরাধর্মী নাটকটি প্রথমবার অভিনীত হবে ১৪ অগস্ট সকালে অ্যাকাডেমিতে৷

সোফায় হোমস, পর্দায় সত্যজিত্

$
0
0

নাটক: হোমসের দাদাগিরি

প্রযোজনা: গোবরডাঙা শিল্পায়ন

নাটক, নির্দেশনা: আশিস চট্টোপাধ্যায়

অভিনয়: দীপা ব্রহ্ম, প্রিয়েন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহেব আলি মন্ডল, প্রসূন মু্খোপাধ্যায়, দেবপ্রিয় পাল, শৌভিক সরকার প্রমুখ

শার্লক হোমসের হাতে এসে পড়ল একটি জটিল কেস। আর তার সমাধানে পাইপ ধরিয়ে বসে পড়লেন তিনি। শুরু হল কেসের তদন্ত। একটা সময় এল সমাধান। এই নিয়েই একটি নাটক। হোমসের নাম শুনলে গোয়েন্দা কাহিনি প্রিয় বাঙালি চিরকালই শিরদাঁড়া সোজা করে বসে৷ তাই এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না আন্দাজ করা যায়৷ কোন গল্প থেকে এই নাটক তৈরি করা হয়েছে, গপ্পোটা কেমন ছিল, সেসব দিকে আগে যাচ্ছি না৷ বরং চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক শার্লক হোমস বলতে আমাদের সামনে যা যা ভেসে ওঠে, সেই সবকিছুর দিকে৷

আসলে শার্লক হোমসের পুরো চেহারাটা পেতে হলে, ফ্লেভারটা চাখতে হলে তো কেবলমাত্র একটি গল্প বা উপন্যাস পড়ে বোঝা সম্ভব নয়৷ কারণ, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই প্রাইভেট ডিটেকটিভের চরিত্রটির ব্যান্তি, বৈচিত্র ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য লেখার পাতায় পাতায়৷ হোমস মানে কেবল একজন বিচ্ছিন্ন গোয়েন্দা তো নয়৷ হোমস মানে লন্ডন শহর, সে শহরের কুয়াশা, বৃষ্টি, আর আবছায়ায় ঢাকা রহস্য৷ হোমস মানে পাইপ, ড্রেসিং গাউন, লং কোট৷ হোমস মানে বেহালা বাদন, ম্যানড্রেক হ্যাট, ছাতা, লাঠি, ফায়ার প্লেস, পিস্তল, আতস কাঁচ৷ এই সবকিছু মিলেই গড়ে ওঠা হোমসিয়ানায় আচ্ছন্ন হই আমরা৷ এই আনুষাঙ্গিক হোমসীয় মেজাজটা ধরা পড়ল আশিস চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত এই নাটকটিতে৷ ছোট ছোট টুকিটাকি প্রপস, ঘরের আসবাব, একটুকরো গানের ফিরে ফিরে আসা, সঙ্গে নাচ, আলো-ছায়ার খেলা ইত্যাদি মিলে হোমসের সময়টাকে ধরতে পারা যায়৷ এইসব অংশের কথা সাধারণত নাটকের আলোচনায় শেষের দিকে আসে৷ কিন্ত্ত এক্ষেত্রে কথাগুলো গোড়াতেই বলা প্রয়োজনীয় মনে হল, কারণ গোয়েন্দা গল্পে মেজাজটাই কিন্ত্ত আসল রাজা!

ডয়েলের একটা ছোটগল্প 'আ কেস অফ আইডেন্টিটি' অবলম্বনে এই নাটক রচিত হয়েছে৷ গল্পের চলন মোটামুটি একই রকম রাখা হয়েছে৷ অর্থলোলুপ ডঃ উইন্ডিব্যাঙ্ক বয়স্কা মহিলা লুসিকে বিবাহ করেন স্রেফ টাকা হাতানোর জন্য৷ এদিকে লুসির একটি মেয়ে রয়েছে৷ মিস মেরি সাদারল্যান্ড নামে সেই মেয়েটির নামে তার কাকা সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন৷ এ টাকার বিপুল সুদ সত্ বাবা দিব্যি ভোগ করছে৷ কিন্ত্ত মেয়েটি হঠাত্ বিয়ের জন্য ক্ষেপে উঠল৷ টাকা হাতছাড়া হয়ে যাবে এই চিন্তায় প্রথমে বিয়ে দিতে অরাজি হলেও পরে সত্বাবা-মা রাজি হয়ে গেলেন৷ নিজেরা বিয়ের পাত্রও যোগাড় করে ফেললেন৷ কিন্ত্ত একসময়ে সে পাত্র বেপাত্তা! হলটা কী? সে রহস্যের জট খুলবে নাটকে৷

লুসির ভূমিকায় দীপা ব্রহ্ম ভাল অভিনয় করলেন৷ হোমসের চেনা গালভাঙা চেহারা সঙ্গে অদ্ভুত মিল পাওয়া গেল শৌভিক সরকারের৷ পরিচালক আশিস চট্টোপাধ্যায় একটা অন্য রকমের থিয়ে-মুহূর্ত তৈরি করেছেন যা আলাদা করে উল্লেখ করা একান্তই প্রয়োজন৷ নাটকে দেখা যায় পাইপ টানতে টানতে পর্দায় সত্যজিত্ রায়ের কথা মন দিয়ে শুনছেন হোমস৷ সত্যজিত্ বলছেন, তিনি ফেলুদা চরিত্রটি তৈরির সময়ে কেমনভাবে হোমস চরিত্রটির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন৷ আর শুনে মুচকি হাসছেন হোমস! পরিচালক হিসেবে বারবারই নতুন নতুন বিষয় ও চরিত্রকে নিয়ে কাজ করেছেন আশিস৷ তাঁর নাটকে আমরা মার্কেজকে (কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না) পেয়েছি, তাঁর নাটকে লালন ফকির এসেছেন, কখনও বা চে গুয়েভারার সঙ্গে মিশে গিয়েছেন চৈতন্যদেব, আর এ বার সত্যজিতের থেকে ফেলুদা প্রসঙ্গ শুনলেন হোমস! ---ইন্দ্রনীল শুক্লা

স্বপনকুমারের গোয়েন্দারূপে মঞ্চে সমদর্শী

$
0
0

স্বপনকুমারের লেখা তিনটি গল্প নিয়ে মঞ্চে আসছে অ্যাকশন প্যাকড 'পাল্প -নাটক '৷ উসকে দেবে ছোটবেলার থ্রিলার -পাঠ৷ খোঁজ দিচ্ছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা।

রবি ঠাকুরকে নিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের তথ্যচিত্র 'জীবনস্মৃতি 'তে তরুণ রবীন্দ্রনাথ হিসেবে তাঁকে পাওয়া গিয়েছিল৷ শুরু করেছিলেন নন্দিতা রায় -শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি 'ইচ্ছে ' দিয়ে৷ সমদর্শী দত্ত৷ পরে পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু ছবিতেও৷ সম্প্রতি তাঁর অভিনীত শর্ট ফিল্ম 'অ্যান আফটারনুন উইথ জুলিয়া ' তো কান ফেস্টিভ্যালে দর্শকের প্রশংসাও কুঁড়িয়েছে৷ আর এ বার তিনি আসছেন নতুন অবতার -এ৷ স্বপন কুমার সৃষ্ট গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জির ভূমিকায় তাঁকে দেখা যাবে অশোকনগর নাট্যমুখ প্রযোজিত অভি চক্রবর্তীর নাটক 'রাতবিরেতে রক্তপিশাচ '-এ৷ এ নাটকের প্রস্ত্ততি চলছে জোরকদমে৷ মঞ্চস্থ হবে ১লা সেপ্টেম্বর মিনার্ভা-য়৷ তারই আগে একবার তাঁর মুখোমুখি হওয়া গেল৷

প্রাথমিকভাবে যে প্রশ্নটা আসবেই সেটাই জানতে ইচ্ছে হল , পর্দা থেকে মঞ্চে সরে আসার কারণ কী ? সমদর্শী বললেন , 'না না , হঠাত্ করে মঞ্চে এসে পড়া একেবারেই নয়৷ আমি তো থিয়েটারেরই লোক৷ একসময়ে 'মণিরথ ' থিয়েটার গ্রুপে নিয়মিত কাজ করেছি৷ প্রায় এগারো বারো বছর আগের কথা বলছি সেটা৷ হিন্দিতে 'অন্ধা যুগ ' করেছি৷ গিরিশ কারনাডের 'বলি '-তে অভিনয় করেছি৷ বাদল সরকারের 'বাকি ইতিহাস '-এ কাজ করেছি৷ আরও বেশ কয়েকটা নাটকে কাজ করেছি৷ ' তারপর ছবির দিকে চলে আসাটা কেমনভাবে ? সমদর্শী বললেন , 'আমি এফটিআই -তে চান্স পাওয়ার পর পুণায় চলে যাই৷ সেখানে অভিনয়ের ক্লাস হতো৷ কিন্ত্ত তাতেও তো থিয়েটারের সঙ্গে সম্পর্ক ফুরোয়নি৷ বরং বেড়েছে৷ অভিনয়ের ট্রেনিংয়ের জন্য আমাদের নিয়মিত নাটক করতে হতো৷ 'দীপক চ্যাটার্জির গপ্পোগুলো তো ঠিক চেনা পরিচিত ধরনের নয়৷

টিপিক্যাল ইন্টেলেকচ্যুায়ল গোত্রের তো নয়ই , কমার্শিয়াল গল্পের সঙ্গেও এর মাইল মাইল ফারাক৷ নিজেকে দীপক চ্যাটার্জি হিসেবে তৈরি করতে স্বপনকুমারের গল্পগুলো পড়েছেন নিশ্চয়ই ... সমদর্শী বলেন , 'আমি আগে স্বপনকুমার পড়িনি৷ এই নাটক করার জন্য যে যে গল্পগুলো প্রয়োজন সেগুলো অভি -র থেকে নিয়ে পড়েছি৷ পড়তে খুব এক্সাইটিং লেগেছে৷ এই ধরনের গল্পকে মঞ্চে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে দারুণ এক্সপেরিমেন্টাল ব্যাপার৷ অভি আর আমি প্রায় সমবয়সী৷ তাই দীপক চ্যাটার্জির মঞ্চ -রূপটা নিয়ে আমাদের অনেক কথা হয়েছে৷ মেকিং প্রসেসটা এনজয় করেছি৷ '

নাটকটির পরিচালক তথা নাট্যকার অভি চক্রবর্তীর মধ্যেও এ নাটক তৈরি নিয়ে বেশ একটা বিস্ফোরক উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেল৷ এর আগে রবি ঠাকুরের গল্প নিয়ে 'কন্যা তোর ', মপাসাঁ-র গল্প নিয়ে 'তিতলি ', রবিশংকর বলের উপন্যাস থেকে 'নেমেসিস ' নাটক মঞ্চস্থ করেছে তাঁর দল৷ এ নাটকে তেমন গম্ভীর বিষয় থেকে কি অনেকখানি সরে আসা হল না ? অভি বললেন , 'হ্যাঁ এটা সত্যি যে আগে অনেকগুলো ভারি ভারি সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছি৷ সেগুলো মানুষ পছন্দ করেছেন৷ কিন্ত্ত এ বার দল থেকেই সকলে চাইছিলেন একটু জনপ্রিয় অথচ অন্য রকম কিছু নিয়ে যদি কাজ করা যায়৷ আমার বন্ধু কৌশিকের (মজুমদার ) সঙ্গে কথা বলে স্বপনকুমারকে মঞ্চে নিয়ে আসাটাই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিলাম৷ মাস দুই স্বপনকুমারের গল্পগুলোয় ডুব দিলাম ছোটবেলার মতো৷ চটপট নাটকটা লিখেও ফেললাম৷ নামকরণ করে দিলেন ব্রাত্য বসু৷ 'স্বপনকুমার সিরিজের তিনটে গল্প 'বাজপাখির রণহুঙ্কার ', 'কালনাগিনীর হত্যালীলা ' আর 'বাজপাখির রহস্যজাল ' নিয়ে নাটক তৈরি করা হয়েছে৷ তৃতীয় গল্পটিতে বাজপাখির চরিত্রটিকে স্বপনকুমারের আরও এক ভিলেন ড্রাগনের আদলে গড়ে নেওয়া হয়েছে৷ অর্থাত্ দীপক চ্যাটার্জি আর তাঁর সহযোগী রতনলাল তো থাকছেনই , সঙ্গে বাজপাখি , কালনাগিনী , ড্রাগন তিনটি ভিলেনকেই আলাদা আলাদা সময়ে পাওয়া যাবে নাটকে৷ প্রথম গল্পটি কলকাতায় , যেখানে এক জমিদারের বাড়ি থেকে ডাকাতি করে বাজপাখি৷ অল্পের জন্য তাকে ধরতে পারে না দীপক৷ দ্বিতীয় কাহিনির ঘটনাস্থল বৌদ্ধ মঠ৷ গুম্ফায় রক্ষিত সম্পদ লুঠের চেষ্টা করে কালনাগিনী৷

আর তৃতীয় গল্পে এক নির্জন দ্বীপে এক বিজ্ঞানীকে আটকে রাখে ড্রাগন৷ তাকে দিয়ে রোবট তৈরি করায়৷ চেষ্টা করে মানব সভ্যতার অপসারণ ঘটিয়ে রোবট -সভ্যতা পত্তনের৷ নাটকে কিন্ত্ত স্বপনকুমারও এক চরিত্র হিসেবে উপস্থিত , যিনি ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেডিক্যাল পড়া শেষ করতে পারেননি , যাঁকে টাকার জন্য বিজ্ঞানের -ডাক্তারির বই অনুবাদ করতে হয়েছে , যিনি শ্রীভৃগু নামে হাত দেখতে বসেন ! তাঁর সঙ্গেই দেখা করে যায় দীপক চ্যাটার্জি৷ স্বপনকুমারের ভূমিকায় রয়েছেন অভি চক্রবর্তী৷ বাজপাখি , ড্রাগন ও কালনাগিনীর ভূমিকায় রয়েছেন যথাক্রমে লোকনাথ দে , মুরারী মুখোপাধ্যায় ও আম্রপালি মিত্র৷ মিসেস ঘোষ ও মিস ডরোথি হিসেবে যথাক্রমে সংগীতা চক্রবর্তী ও দীপান্বিতা আচার্য৷ পাল্প ফিকশনের মেজাজে এক্বেবারে অ্যাকশন প্যাকড ! জাহাজে সংঘর্ষ৷ একটি হেলিকপ্টার থেকে ফায়ার করে অন্য হেলিকপ্টার উড়িয়ে দেওয়া৷

প্যারাস্যুটে করে নেমে আসা৷ কী নেই ! ওই তো ... ক্রিং ক্রিং ক্রিং ! ফোন বাজছে , লাল আলোটা দপদপ করছে , সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে , ড্রাগন আসছে৷ দীপকের হাতে ধরা পিস্তল৷ সকলে রেডি তো !

অথৈ জল, দোনা-মোনা, অনঙ্গ অন্ধকার

$
0
0

নাটক: অথৈ

প্রযোজনা: নটধা

নাট্যরূপ, পরিচালনা: অর্ণ মুখোপাধ্যায়

অভিনয়: অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তূর্ণা দাশ, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, জয়দেব ঘোষ প্রমুখ

গত শীতে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা-র একটি উত্সবে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার সুযোগ হয়েছিল রতন থিয়ামের সঙ্গে৷ তার কিছুদিন আগেই তাঁর 'ম্যাকবেথ'-এর শো হয়ে গিয়েছে কলকাতায়৷ নাটকটিতে তাঁর মণিপুরী ফর্ম ব্যবহারে মুগ্ধ নগরবাসী৷ জানতে চেয়েছিলাম এখন শেক্সপিয়ারের নাটক মঞ্চস্থ করলে কি কি মাথায় রাখা উচিত? রতনের উত্তর ছিল, 'ওঁর নাটক করার সময় মনে রাখতে হবে যে আমি যেন শেক্সপিয়ারকেই নাটকটা দেখতে বসিয়ে বলতে পারি যে আমার সময়ে আমি আপনার নাটকটাকে এ ভাবে দেখতে পাচ্ছি...আপনি কি বলেন?'

এই সময়ে দাঁড়িয়ে শেক্সপিয়ারের নাটক মঞ্চস্থ করার কারণ এবং তাত্পর্যের এটাই যদি মানদন্ড হয়, তবে 'অথৈ' কোথায় দাঁড়িয়ে তা দেখে নেওয়া যাক৷ এ নাটক শেক্সপিয়ারের অন্যতম জনপ্রিয় ট্র্যাজেডি 'ওথেলো' অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে৷ কিন্ত্ত, মূল নাটক থেকে কেবলমাত্র কাঠামোটাই নেওয়া হয়েছে৷ সেই ব্যারন, সেনাপতি, ব্যারনকন্যার গপ্পো আর নেই৷ ওথেলো হয়ে গিয়েছে অথৈ লোধা৷ দলিতদের মধ্যে থেকেই পড়াশোনা করে ডাক্তার হয়েছে সে৷ আর আছে তার বন্ধু অনঙ্গ চ্যাটার্জি৷ গ্রামের মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তার জন্য সে অথৈকে হিংসে করে৷ না একেবারেই সামনা-সামনি নয়৷ এক্কেবারে 'ইয়াগো' স্টাইলে৷ আর ডেসডিমোনা এখানে দিয়ামোনা মুখার্জি৷ জাত-পাতে বিশ্বাস করে না৷ স্রেফ ভালোবেসে বিয়ে করে ফেলেছে অথৈকে৷ গল্পটা ওথেলোরই৷ কিন্ত্ত এই যে প্রেক্ষিতটা দলিত অধু্যষিত গ্রামে এনে ফেলা হল, সঙ্গে সঙ্গে আমার দেশে এবং আমার সময়ে ওথেলো-পাঠ অনেকখানি সহজ হল৷ অথবা ভাবার একটা অন্য জানলা খুলে গেল৷ শেক্ষপীরের সেই ইংলন্ডের আকাশ আর আমার দেশের আকাশ যে একই তা বুঝতে সুবিধা হল৷ কেন এই সময়ে দাঁড়িয়ে ১৬০৯ সালে লেখা নাটকটা তাত্পর্য হারায়নি তা বোঝা গেল৷

দলিত সমস্যার ঘন মেঘ ছেয়ে রয়েছে এ নাটকে৷ অপ্রিয় অথচ ঘোর বাস্তব প্রসঙ্গগুলো উঠে এসেছে নাটকের শরীর বেয়ে... দলিতদের পুড়িয়ে মারা, উচ্চবর্ণের সঙ্গে তক্কো করায় সপরিবারে উলঙ্গ করে গ্রামের পথে ঘোরানো, মিড-ডে মিল কান্ড, দলিত ছাত্রকে প্রহার, গাছে ঝুলিয়ে রেখে অত্যাচার... সব মনে পড়ে গেল এক লহমায়৷ সরাসরি উচ্চারণ করে অথবা অস্ফুটে৷ অতি যোগ্য, অসম্ভব শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও 'ব্ল্যাক মুর'-এর শরীরে লেগে থাকে যে অপমানের চটচটে আঠা, সেটাই সেঁটে গেল দলিত অথৈ-এর গায়ে৷ তার সরল মনের সুযোগে বুনে দেওয়া গেল সন্দেহের চারাগাছ৷ তাকে নিঃশেষ করা গেল৷ আসলে, মুখে যতই দলিত উন্নয়ন টেনে আনা হোক, তথাকথিত সভ্য-সুশীল সমাজের মধ্যেই কিন্ত্ত দলিতের উত্থান নিয়ে একটা 'ইনসিকিওরিটি' কাজ করতেই থাকে৷ দলিত ততোটাই ওপরে উঠবে, যতটা উঠলে সভ্য-সমাজ নিজেকে 'প্রগতিশীল' হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে৷ দলিত ডাক্তার যখন বলে 'এটা আমার গ্রাম', তখন মানতে কষ্ট হয়৷ দলিতের আবার নিজের গ্রাম কী! কিংবা দলিত ডাক্তার যখন দুঃস্থ দলিতদের সেবা করতে চাইছে, তাকে ঘিরে ধরছে শহুরে ডাক্তাররা, তাকে নার্সিংহোম কালচারে আনতে চাইছে--- যেখানে পেশেন্ট হয়ে যায় 'পার্টি' কিংবা 'ক্লায়েন্ট'!

অথৈ লোধার ওথেলোসুলভ সারল্য আর প্যাশনের পাশেই রয়ে গিয়েছে সভ্য সমাজের অবচেতন শয়তানি, ইয়াগো- এখানে অনঙ্গ৷ জমি হারানোর ভয়, প্রেমে-সেক্সে হেরে যাওয়ার বোধ তাকে এক অচেনা ভয়াবহতায় নিয়ে যায়৷ একটা মুখোশকে সে যখন চুমু খায়, এক ঝটকায় যাবতীয় কামনার-ইচ্ছার অন্ধকারে চাপা পড়া একরাশ শরীর বেরিয়ে আসে৷ সে-ই দিয়ামোনা আর অথৈয়ের বিছানা পেতে দেয়৷ আবার দু পায়ের ফাঁকে দু'জনের বালিশ পিষে দেয়৷ এই প্রসঙ্গে বলে নেওয়া যেতে পারে, এ নাটকের প্রতিটি সিন-চেঞ্জও নাটকের অভ্যন্তরীণ অংশ৷ আর তাতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা অনঙ্গ-র৷ সে-ই তিলে তিলে সাজিয়ে দেয় সর্বনাশের জতুগৃহ৷ 'এই দেখ্্, মুড়ি খাচ্ছি, তোদের খাবার'! এমন মন্তব্যে খুব সূক্ষ্মভাবে সে অপমানও করে অথৈকে৷ অনঙ্গ দর্শকাসনে বসে যখন গেয়ে ওঠে 'চিঙ্গারি কোই ভরকে... সাওন যো আগ লাগায়ে, উসে কোন বুঝায়ে', তখনই নাটক শুরু হয়৷ বাকি নাটক সেই আগ লাগানো দেখতে থাকা৷ 'পেয়ারা হামে কিস মোড় পে লে আয়া' কিংবা 'বাবুজি ধীরে চলনা, পেয়ার মে জরা সামহালনা' গানটাও এখানে অন্য অন্য অর্থ নিয়ে হাজির৷ অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে এতখানি ভিলেন-রোলে এর আগে দেখা যায়নি৷ দাপিয়ে বেড়ালেন তিনি৷ সাঙ্ঘাতিক ডার্ক! তাঁকে এভাবে ব্যবহারের জন্য প্রশংসা প্রাপ্য পরিচালক অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের৷ অথৈ এর ভূমিকাতেও তিনি চমত্কার৷ শহুরে, শান্ত, শিক্ষিত মেয়ে দিয়ামোনা হিসেবে তূর্ণা-ও ভাল৷

বাংলা থিয়েটারের নিউ-জেন তাহলে এই সময়ে, এভাবে দেখছে 'ওথেলো'কে৷ এবার শেক্ষপীর বলুন... আপনার কেমন লাগলো!---ইন্দ্রনীল শুক্লা


অভিনেতা চাই, বলিউডি ছাপটা অবান্তর

$
0
0

সুনীল শানবাগের নামটা থিয়েটার মহলে সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয়৷ কিন্তু শুক্রবাসরীয় শহরে তাঁর নাটক 'লোরেটা' দেখে হলভর্তি কলামন্দিরের 'স্ট্যান্ডিং ওভেশন'টি ছিল দেখার মতো৷ শম্ভু মিত্র আর শ্যামানন্দ জালানের ভক্তটির সঙ্গে শোয়ের আগেই বসেছিলেন শতরূপা বসু

অনুপম খেরের 'সবজান্তা' মনোভাব থেকে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ছাত্র আন্দোলন' থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'প্রতিবাদী' মনোভাব৷ দিদির 'বঙ্গ' থেকে সেন্সর বোডের্র কাঁচি - সুনীল শানবাগের শাণিত থিয়েটারের ফলায় ২৬ অগস্ট কলামন্দিরের সন্ধ্যায় বাদ গেল না কিছুই৷ যখন তিনি তীব্র ব্যঙ্গ আর ফেটে পড়া হাততালির মধ্যে ছুঁড়ে দিচ্ছেন - 'আরে বঙ্গ কেন জানেন? যে কোনও সরকারই তো বঙ্গ বজিয়ে চলে যায়!' - তার তিন দিনের মাথায় রাজ্যের নাম অবশ্য 'বাংলা' হওয়ার সিদ্ধান্ত হল!

এই প্রেক্ষিতে তাঁকে আবার ফোন করাতে, খুব হাসছেন সুনীল৷ 'শুনলাম খবরটা৷ আমি এটুকুই বলব যে আমাদের নাটকটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক৷ এর থেকে বেশি কিছু বলব না,' বলছেন তিনি৷
সঙ্গীত কলা মন্দির আর আদ্যম-এর যৌথ উদ্যোগে সুনীল করে গেলেন তাঁর নতুন নাটক 'লোরেটা'৷ তাঁর সিগনেচার স্টাইল মেনে এ নাটকেও এসেছে ভাষা, সংস্কৃতি, আইডেন্টিটির প্রসঙ্গ৷ গোয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় 'তিয়াত্রা' ফর্ম মেনে 'লোরেটা'য় ব্যবহৃত হল আঁকা পর্দা, লাইভ মিউজিক, গান, নাচ আর ব্যঙ্গ৷ অর্থাত্‍ বাংলার যাত্রা-র গোয়ান রূপ৷ সত্তরের দশকের গোয়ায় সেন্ট বার্থোলোমিও দ্বীপের পটভূমিকায় তৈরি নাটক৷ রাফ্যেল নামে এক তরুণের গল্প৷ নিজের জন্মভূমি সেই দ্বীপে তার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বান্ধবী লোরেটাকে নিয়ে ফিরে আসে৷ দ্বীপের মালিক তার বাবা৷ যিনি নিজের কোঙ্কনি ভাষা, সম্প্রদায় সম্বন্ধে অত্যন্ত সচেতন৷ বেধে যায় দুই প্রজন্মের ভাষার, সংস্কৃতির সংঘর্ষ৷ যা হয়ে ওঠে সেই সময়েরই ভাষা, সংস্কৃতি, আইডেন্টিটির দলিল৷
কয়েক বছর আগে কলকাতাতেই প্রিমিয়ার করেছিল তাঁর পরিচালনায় রবি ঠাকুরের 'ডাকঘর' অবলম্বনে তৈরি থিয়েটার 'ওয়াকিং টু দ্য সান'৷ পোল্যান্ড-এর 'ঘেটো'র প্রেক্ষিতে বানানো৷ 'স্কুলে থাকতে 'ডাকঘর' করেছিলাম, সেটা মনে থেকে গিয়েছিল৷ মুশকিল হল, টেগোরের কাজ এত বিপুল যে কোথা থেকে শুরু করব ভেবে ওঠাটাই মুশকিল৷ সেই জন্যই 'ডাকঘর' বেছেছিলাম৷ কিন্ত্ত সেখানেও মুশকিল৷ থিয়েটারে সবাই 'ডাকঘর' করেছে৷ রিসার্চ করতে করতে পড়লাম পোল্যান্ডের এক ইহুদি ডাক্তার করচ্যাক-এর গল্প৷ সে ইহুদি অনাথদের দেখাশোনা করত৷ তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার মুখে৷ সমস্ত ইহুদিদের ঘেটো-বন্দী করে রাখা হয়েছে৷ বাচ্চাগুলো অপুষ্টিতে ভুগছে৷ চারদিকে মৃত্যুর গন্ধ৷ করচ্যাকের মাথায় তখন একটাই চিন্তা৷ কী করে বাচ্চগুলোকে মৃত্যুর সঙ্গে মোকাবিলা করার শক্তি দেওয়া যায়৷ তখন তিনি ওদের নিয়ে 'ডাকঘর' করেন৷ তারপর যখন মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হল, দেখা গেল চারদিকের চিত্কা র, চেঁচামেচির মধ্যে এই বাচ্চাগুলোই একমাত্র ধীর-স্থির, শান্ত, সমাহিত৷ মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্তত৷ মানে, ১৯৪০-এ 'ডাকঘর' পোল্যান্ডে যে শুধু পৌঁছেই যায়নি, তার একটা অনুবাদও হয়েছিল৷ এই পারফরম্যান্স সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ্যদর্শীর লেখাও আছে,' বলছেন সুনীল৷

ফর্ম তাঁর নাটকে গুরুত্বপূর্ণ, যা বারবার ফিরে আসে৷ 'ঐতিহাসিক আর সামাজিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ আমার নাটকে৷ তাই ক্ল্যাসিক টেক্সট বাছলেও সমসাময়িক পটভূমিকায় ফেলতেই ভালোবাসি৷ আসলে টেক্সটই তার ফর্ম বেছে নেয়৷ আমিও তেমনভাবেই এগোই৷ 'সেক্স মরালিটি সেন্সরশিপ'-এ যেমন তামাশা ছিল৷ তবে 'লোরেটা' অন্যরকম৷ যেটার ফর্ম আগে আসে৷ সেই অনুযায়ী একটা গল্প বেছেছিলাম,' বলছেন সুনীল৷

জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর নন-ফিকশনের জন্য৷ কাজ করেছেন শ্যাম বেনেগলের সঙ্গে৷ কিন্ত্ত সিনেমাকে বেছে নেননি৷ 'থিয়েটার পরিচালক হিসেবে সিনেমা আমাকে কোনওদিনই সেভাবে টানেনি৷ আমি ছবি দেখিও না৷' শেষ কবে কোন ছবি দেখেছেন মনে করতে পারেন না৷ 'মারাঠি শিল্পী মিলিন্দ ধেমড়ের নাটক থেকেই তৈরি করা 'তু হ্যায় মেরা সানডে' দেখলাম৷ ইন্ডি ছবি৷ তবে 'সাইরাত' এখনও দেখা হয়নি,' বলছেন তিনি৷

কিন্ত্ত কেন সিনেমার ব্যাপারে এই অনীহা? 'আসলে আমার মনে হয় এতগুলো মিডিয়াম নিয়ে কাজ করাটা কঠিন৷ বিশেষ করে বছর ২০ পরে যখন আমি উপলব্ধি করেছি যে থিয়েটারটাই ঠিকঠাক বুঝি৷ দ্বিতীয়ত, সিনেমার বাণিজ্যটা সম্পূর্ণ অন্যরকম৷ যেটায় আমার বেশ ভয় লাগে৷ তিন বছর ধরে নিজেকে প্রায় মেরে ফেলার জোগাড় করে একটা ছবি বানাবো৷ যেটা চলবে তিন দিন! তারপর পুরোটাই ব্যবসা৷ কাকে বিক্রি করব, কত টাকা দিয়ে বিক্রি করব? তুলনায় থিয়েটারে আমরা নিজেরাই নিজের মর্জির মলিক৷ বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও কোনও না কোনওভাবে এটাকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব৷ কারণ, আমি সেই শিল্পটায় বিশ্বাস রাখি৷ টাকাপয়সার ক্ষতি করেও ২০-২৫টা পারফরম্যান্স টেনে দিতে পারব৷ কিন্ত্ত যে মুহূর্তে কোটি টাকায় ব্যাপারটা উঠে যাবে সেই মুহূর্তে শিল্পের কোমরটাও ভেঙে যাবে টাকা তুলতে গিয়ে৷ তা না হলে বড় প্রডাকশন কম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে হবে৷ সম্পূর্ণ অন্য খেলায় চলে যাবে বিষয়টা,' স্পষ্ট যুক্তি সুনীলের৷

বলিউডের বহু অভিনেতা উঠে এসেছেন থিয়েটার থেকে৷ যেমন শাহরুখ খান স্বয়ং৷ তাঁদের নিয়ে কাজ করবেন না? 'আমি অভিনেতা নিয়ে কাজ করি৷ বলিউড কি না, সেটা অবান্তর৷ সে শাহরুখই হোক বা অন্য কেউ৷ থিয়েটারের দরকার নেই তাদের৷ আরও বড় কথা, এটা করলেই প্যাকেজ্ড থিয়েটার হয়ে যাবে৷ আমি প্যাকেজ্ড থিয়েটার করি না,' মাঠের বাইরে বল বের করে দেন সুনীল শানবাগ৷

যদিও আক্ষেপ বাংলা থিয়েটার বিশেষ দেখার সুযোগ পান না৷ 'মুশকিল হল, বাংলা থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল ছাড়া ট্র্যাভেল করে না৷ তাই বিশেষ দেখতে পাই না৷ ভারত ভবন যখন নির্মাণ হয় তখন পিটার ব্রুকের সঙ্গে একটা ওয়ার্কশপ হয়৷ সেখানে
শম্ভুদার (শম্ভু মিত্র) থিয়েটার দেখেছিলাম৷ কিন্ত্ত সমকালের থিয়েটার দেখা হয়না৷ শ্যামানন্দ (জালান) চলে যাওয়ার পর সুতোটা আরও ক্ষীণ হয়ে যায়,' বলছেন শানবাগ৷

তবে কলকাতা ছাড়ার আগে সর্ষের তেল দেওয়া ঝালমুড়িটা মাস্ট৷ আর বিটনুন দেওয়া কলা আর পেয়ারা৷ 'আসলে কলকাতায় পুরোনো স্থাপত্য এখনও অনেকটাই আছে৷ যেটা খুব স্বস্তি দেয়,' বলে শেষ করেন তিনি৷

মামা-ভাগ্নে পাহাড়, সাক্ষী মধুসূদন

$
0
0

শম্ভু মিত্র তো আগেই সেজেছেন৷ এ বার মাইকেল মধুসূদন দত্ত রূপে সরাসরি যাত্রার সুপারস্টার মামা স্বপনকুমারের পাদুকায় পা রাখলেন সুরজিত্ বাঁড়ুজ্যে৷ খবর দিচ্ছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

'তুমি এ বার নির্ঘাত ডুববে স্বপন৷ যাত্রায় মাইকেল!' স্বপনকুমারের পরিকল্পনা শুনে বহু প্রতিভাবান মানুষই এই কথাগুলো তাঁকে বলতেন৷ কিন্ত্ত যিনি সমানেই অভয় দিতেন তিনি হলেন নাট্যকার বিধায়ক ভট্টাচার্য৷ তিনিই স্বপনকুমারের জন্য ১৯৬৬ সালে লেখেন 'মাইকেল মধুসূদন' পালা৷ মনে রাখতে হবে, সে সময়ে স্বপনকুমারের মারাত্মক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও কিন্ত্ত কোনও যাত্রাগোষ্ঠী 'মাইকেল মধুসূদন' পালা মঞ্চস্থ করতে রাজি হয়নি৷ কিন্ত্ত স্বপনকুমারও জেদ ধরে বসেছিলেন মাইকেলকে নিয়ে পালা না হলে তিনি অভিনয়ই করবেন না৷ শেষটায় নবরঞ্জন অপেরার কর্ণধার জীবনকৃষ্ণ দাশ এগিয়ে এলেন৷ আর এগিয়ে এলেন ওই দলের ম্যানেজার শম্ভুনাথ ঘোষ৷ পালাটি প্রথম খোলা হয় যৌনকর্মীদের পাড়ায়৷ অ্যালেন মার্কেটের কাছে একটি জায়গায়৷ শোনা যায়, অভিনয়ের পর তাঁরা তাঁদের আঁচল বিছিয়ে স্বপনকুমারকে বলেছিলেন, 'রাস্তায় তোমার পা পড়তে দেব না!' টানা তিন বছর সেই পালা চলেছিল৷ এককথায় রেকর্ড৷ কখনও কখনও দিনে তিনটে করে শো হয়৷ স্বপনকুমার মেক-আপ নিতেন সন্ধে ছ'টায়৷ আর মেক-আপ তুলতেন পরদিন ভোর ছ'টায়৷


এইসব তো ১৯৬৬ সালের ঘটনা৷ আর এটা ২০১৬ সাল৷ কেটে গিয়েছে পঞ্চাশ বছর৷ সেইসব ঘটনার কথা শুরু করা হল কেন? অবশ্যই কারণ আছে৷ বিধায়ক ভট্টাচার্যের সেই পান্ডুলিপিকে আকর গ্রন্থ করেই 'শ্রী মধুসূদন' নাটক মঞ্চে এনেছে নাট্যরঙ্গ নাট্যগোষ্ঠী৷ আর এ বার নামভূমিকায় অভিনয় করছেন সুরজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি সম্পর্কে স্বপনকুমারের ভাগ্নে৷ জানতে চাওয়ার নিজেকে 'ছোটমামার একলব্য শিষ্য' হিসেবে বর্ণনা করলেন সুরজিত্৷


তাঁর থেকেই জানা গেল, একবার রবীন্দ্র সদনেও এই পালা মঞ্চস্থ হয়৷ আর দেখতে আসেন স্বয়ং উত্তম কুমার৷ তারপর থেকেই তিনি স্বপনকুমারের গুণমুগ্ধ হয়ে যান৷ একটা দৃশ্য ছিল যেখানে মধুসূদন স্বপ্ন দেখছেন, তাঁর মা যেন আগুনের বেড়াজালের মধ্যে পড়ে গিয়েছেন৷ শোনা যায়, সে দৃশ্য উত্তমকুমারকে এতটাই তাড়িত করেছিল যে তিনি স্টুডিও ফ্লোরে নিজে স্বপনের অভিনয়টা করে করে দেখাতেন অনেককে! উত্তমকুমার শিল্পী সংসদের সভাপতি ছিলেন৷ তাঁর আগ্রহেই স্বপনকুমার সহ-সভাপতি হন৷


মনে রাখতে হবে 'মাইকেল মধুসূদন' পালার প্রভাব ছিল বহুদূর বিস্তৃত৷ এই পালাই তৃপ্তি মিত্র থেকে কেয়া চক্রবর্তীকে যাত্রার আসরে নিয়ে আসে৷ নিয়ে আসে বিকাশ রায় থেকে অসিতবরণকে৷ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷
স্বপনকুমার তাঁর অভিনয় জীবনের মাঝে মাঝেই 'মাইকেল মধুসূদন'কে নিয়ে এসেছেন৷ ১৯৬৬ সালে মধু'র প্রেমিকা দেবকী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জ্যোত্স্না দত্ত৷ ১৯৭৬-এ দেবকী করলেন স্বপ্নাকুমারী৷ ১৯৭৯-তে স্বপ্নাকুমারী হলেন হেনরিয়েটা৷ স্বপ্নাকুমারীর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরবর্তী স্মরণসভায় এসে উত্পল দত্ত জানিয়েছিলেন, মঞ্চে নয়, তবে দূরদর্শনের পর্দায় তিনি স্বপনকুমারের মাইকেল দেখে মুগ্ধ হন৷
স্বপনকুমার ১৯৯৪ সালে শেষ অভিনয় ঘোষণা করেন মাইকেল-পালা করেই৷ সেবার যে মহম্মদ আলি স্বপনকুমারকে মাইকেল সাজিয়ে ছিলেন, তিনিই সুরজিত্কে মাইকেল সাজানোর দায়িত্বে৷ স্বপনকুমারের শেষ অভিনয় বছরে উপদেষ্টা ছিলেন যাত্রার প্রখ্যাত অভিনেতা অভয় হালদার (দেবশংকর হালদারের পিতা)৷ আর এই নতুন প্রযোজনায় বিদ্যাসাগরের চরিত্রে অভিনয় করছেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র অমিয়শংকর হালদার৷ এর আগে দীর্ঘদিন বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীতে কাজ করেছেন অমিয়৷ হেনরিয়েটা করছেন অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দেবকীর চরিত্রে রোকেয়া রায়৷ নাটকটি তৈরি করেছেন সুরজিত্৷


কিন্ত্ত এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ায় বললেন, 'আমি নিজেকে রচয়িতা বলতে নারাজ৷ সে জন্যই নামের পাশে 'গ্রন্থনা' লেখা হয়েছে৷ অর্থাত্ উত্পল দত্ত, বনফুল সবের থেকেই গ্রহণ-বর্জন করা হয়েছে৷ তবে আকরটি বিধায়কের সেই রচনা৷' ১৯৬৬ সালে মামা স্বপনকুমারের বলা বেশ কিছু সংলাপও ২০১৬ তে বলছেন সুরজিত্৷ এ প্রসঙ্গে সুরজিত্ বলছেন, 'বোঝা যাচ্ছে কতটা আধুনিক ছিলেন নাট্যকার বিধায়ক, আর কতটা আধুনিক ছিলেন ছোটমামা স্বপনকুমার!'


বিশেষ করে দেবকীকে জড়িয়ে ধরে সেই সংলাপ, সেই মুহূর্ত, 'জীবনে যা চেয়েছি, তাই পেয়েছি, পাইনি শুধু তোমাকে- এই একটিমাত্র চাওয়া আমার পূর্ণ হয়নি, সে হচ্ছ তুমি'৷ এই একই দৃশ্যে ভিন্ন ভঙ্গিতে মামা ও ভাগ্নে৷ স্বপন ও সুরজিত্৷ অতীত ও বর্তমান৷ দেখা যাবে ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে অ্যাকাডেমিতে৷

এক কন্যা স্বীকৃতি চান , এক কন্যা প্রাণ

$
0
0


ইন্দ্রনীল শুক্লা

‘একদিন সকালে একটা মেয়ে এল৷ মুখের গড়ন অনেকটা আমারই মত৷ অথবা আমার বাবার মতো৷ কিন্ত্ত ব্লন্ড চুল৷ কোনও কথা বলল না৷ বাবাকে টেনে নিয়ে একটা ঘরে ঢুকে পড়ল৷ তারপর ভীষণ চিত্কার৷ ঝগড়া -ঝাঁটি৷

শেষে কান্না৷ একসময়ে সে বাইরে এল৷ পিয়ানো বাজিয়ে সকলকে গান শোনালো৷ তার চোখে তখনও জল৷ অপূর্ব সে গান !’ অনুষ্কা শঙ্করের লেখা আত্মজীবনীতে এ রকমই পড়েছিলাম দেড় দশক আগে৷ বাবা তো রবিশঙ্কর৷ আর এই ব্লন্ডকে পরে আমরা সকলেই চিনবো ‘কাম অ্যাওয়ে উইথ মি ’ অ্যালবামের জন্য দু’হাতে গ্রামি অ্যাওয়ার্ড হাতে৷ নোরা জোনস৷ বাবার রাখা গীতালি নাম যিনি কখনও ব্যবহার করেননি৷ বাবার প্রতি অভিমান যাঁকে দীর্ঘদিন গুমরে মেরেছে৷ মেমসাহেব মা তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ নাই -ই রাখতে পারেন৷ কিন্ত্ত তাঁব বাবা কেন মেয়ের খোঁজ নেবেন না ?! শঙ্কর মহাদেব আর তাঁর মানসকন্যা মনসা -র সম্পর্ক, অভিমান প্রসঙ্গে হঠাত্ বাস্তবের এক শঙ্করের কথা মনে পড়ল৷ এই নাটকে মনসার , তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসার দৃশ্যটা এমনই৷ অভিমানে ভরা৷ শঙ্করের বীর্য ‘কেমন করে যেন ’ পাতালে পৌঁছেছিল , আর বাসুকীর কোল আলো করে এসেছিলেন মনসা৷ কিন্ত্ত মনসাকে দেবী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাননি দেবতারা৷ মনসা বাবার সঙ্গে দেখা করতে এল৷ মেয়ের স্বীকৃতি চাইল৷ আর মা চন্ডীর আঘাতে একটা চোখ কানা হয়ে গেল৷ ‘কানি ’ গালি দিয়ে তাকে পরে সে জন্যই তো অপমান করেন চাঁদ সওদাগর৷ বেচারি ! তার ভিতরে সত্যিই কী বিষ ছিল ? নাকি সে বিষ উগরে নিয়ে এল পারিপার্শ্বিক! শিবের ভক্তের শেষ নেই৷ অথচ তাঁর কন্যার ঠাঁই মেলে না স্বর্গে৷ নাটকটি বড় চমত্কারভাবে বেঁধেছেন উজ্জ্বলবাবু৷ এটি মধ্যযুগের মনসামঙ্গলের ভিত্তিতেই তৈরি৷ কিন্ত্ত স্বাদে আধুনিক৷ মঙ্গলকাব্যের মেজাজটা অটুট রেখেই তাকে পরিচালনায় , পরিবেশনায় সমসাময়িকতায় মুড়ে দিয়েছেন প্রকাশবাবু৷ মনে পড়তে বাধ্য , শম্ভু মিত্রের ‘চাঁদ বণিকের পালা ’-র কথা৷ সেখানে কিন্ত্ত চাঁদ এক উন্নত চরিত্রের মানুষ৷ তখনকার সমাজের অচল -শক্তির বিরুদ্ধে তিনি সন্তডিঙা মধুকর ভাসান৷ কিন্ত্ত এ নাটকে চাঁদ তো নানা দোষে দুষ্ট৷ মনসা অতি সহজেই লাস্যময়ী নারীর বেশে চাঁদের সামনে আসেন৷ কামের তাড়নায় মহাজ্ঞান হারান চাঁদ৷ এ নাটকে মনসা ‘রেকগনিশন ’ চান ৷ তাঁর দেবত্ব , তিনি যে শিবের কন্যা এই ব্যাপারটা মানুষ যেন সম্মানের সঙ্গে দেখেন৷ আর তা প্রতিষ্ঠা করতেই তাঁর বিষপন্থার অনুসরণ৷ আর চাঁদ সেঁটে আছেন নিজের জেদে : যে হাতে তিনি শূলপাণিকে পুজো করেন , সে হাতে ‘কানি ’কে ফুল দিতে পারবেন না৷ চাঁদ আর মনসার ‘ইগো ’-র লড়াইয়ের মাঝে প্রাণ যায় চাঁদের সন্তানদের৷ এমনটাই ঘটে জগতে৷ রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় , আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায় !কিন্ত্ত এই যে অহেতুক লড়াই আর তার মাঝে পড়ে অকারণ মৃত্যু , তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নারীই এখানে বেহুলা৷ তিনি প্রাণরক্ষার তাগিদে সন্ধির পথ নেন৷ জেদ আঁকড়ে থাকলে বুঝি ক্ষতি ছাড়া আর কিছু হয় না৷ কিন্ত্ত মাথায় হাত বুলিয়ে আপন করে নিলে আর সংঘাত থাকে না৷ সেই পথই নেয় ‘আধুনিকা ’ বেহুলা৷ স্বীকৃতির আনন্দে বেহুলাকে বুকে জড়িয়ে নেয় মনসা৷ নাটকটা কোথায় যেন বেহুলার নাটক হয়ে যায়৷ চাঁদের চরিত্রে বিমল চক্রবর্তী তো বটেই , বেহুলার ভূমিকায় মোনালিসা এবং মনসা হিসেবে সঞ্জিতা দর্শককে বেঁধে রাখেন সিটে৷ মঞ্চের উঁচু-নিচু ঘাট, আলোর পরিবর্তনের পর হঠাত্ ঝড়ে পড়া সন্তডিঙা মধুকর , ভেলায় ভাসতে থাকা বেহুলা -লখিন্দর আশ্চর্য একটা জগতে নিয়ে ফেলে আমাদের৷ স্টেজক্রাফট এবং কোরিওগ্রাফির কথাও তাই আলাদা করে বলতেই হবে৷ পটচিত্র সহযোগে মঞ্চকে সাজানোয় একটা এথনিক লুক চলে এসেছে৷

দুই বড় শক্তির ইগোর এনকাউন্টারের মাঝে পড়ে ক্ষত -বিক্ষত হতে থাকি তো আমরাও৷ বার বার৷ তাই অথৈ জলে ভেসে প্রাণভিক্ষার হাহাকার আর বুঝি বেহুলার একার থাকে না৷ ইন্টারনাল হেমারেজ শুরু হয় আমাদেরও !

নাটক : মনসামঙ্গল প্রযোজনা : নান্দীপট নাট্যকার : উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় পরিচালক : প্রকাশ ভট্টাচার্য অভিনয় : বিমল চক্রবর্তী , সর্বানী , ত্রিগুণা শঙ্কর , মোনালিসা , সঞ্জিতা প্রমুখ৷


জাতীয় মঞ্চে মুন্ডা, হো, ওঁরাও

$
0
0

ঝাড়খণ্ডের চাইবাসায় আদিবাসী সংস্কতি উত্সব 'আদিবাসী আদিবিম্ব'-র আয়োজন করেছে এনএসডি৷ সারা ভারতের আদিবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি পারফর্ম করবেন মুন্ডা, হো এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের শিল্পীরাও৷ খোঁজ নিলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

রাজ্যের নামটার মধ্যেই একখণ্ড বিভাজন ইঙ্গিত রয়েছে৷ নিন্দুকেরা বলেন, 'বিহারের ঝাড় হয়ে যাওয়া খণ্ড৷' ঝাড়খণ্ড! আর এ রাজ্যের রাজধানীর নামটা করলে বাঙালি অন্তত খানিক মুচকি হাসবেই৷ 'পাগলা গারদ কোথায় আছে নেই কি তোমার জানা!' ষোলো বছর আগে বিহার ভাগ হয়ে তৈরি হয়েছিল এই রাজ্য, যার রাজধানী রাঁচি৷ রাজ্য তৈরিই হয়েছিল বহু বছরের আন্দোলনে৷ আর তৈরি হওয়ার পর গত দেড় দশকে নানান আলাদা আলাদা কারণে খবরে এসেছে ঝাড়খণ্ড৷ বার বার সরকারের পতন ঘটেছে৷ অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনে যেতে হয়েছে৷ রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে৷ মাওবাদী আন্দোলন ভয়াবহ রকমের মাথাচাড়া দিয়েছে৷ আবার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বাবাদের ঘুম ছুটে গিয়েছে শিশু অপহরণের বর্ধিত হার লক্ষ্য করে৷ এইসবের আবর্তে পড়ে ঝাড়খণ্ডের আসল চার্ম বোধ করি হারিয়ে গিয়েছে অনেকের মন থেকেই৷ বাঙালির পছন্দের প্রিয় পশ্চিমের দেশ-এর বেশিরভাগটাই তো অধুনা ঝাড়খণ্ডে৷ চমত্কার এক মালভূমি৷ মাইলের পর মাইল টেবিলল্যান্ড, গর্ভে আকরিক নিয়ে ঘুমিয়ে আছে বছরের পর বছর৷ আছে দিগন্ত বিস্তত সবুজ বনভূমি৷ মনে হয় যেন কয়েক হাজার বছর আগে পৃথিবীটা এমনই ছিল৷ আর বনের ভিতরে আছে অসংখ্য ঝিরঝির স্বতোয়া ঝরনা৷ বাঘ আছেন৷ হাতি আছেন৷ পাখি-রা রয়েছেন৷ আর হ্যাঁ, অবশ্যই আছেন বনভূমির মানুষ৷ ধামসা মাদলের দ্রিমি ছন্দ, মহুয়ার গন্ধ সে অরণ্যেরই অঙ্গ৷ এখানে পৌঁছে গুপী-বাঘার মতোই বিস্ময়ে সুর বেরিয়ে আসে: 'এ যে দৃশ্য, দেখি অন্য/ এ যে বন্য, এ অরণ্য/ হেথা দিনেতে অন্ধকার/ হেথা ঊর্ধ্বে উঠায়ে মাথা দিল ঘুম/ যত আদিম মহাদ্রুম!' এই ভুলতে বসা ঝাড়খণ্ড চার্মকে উসকে দিয়েই সে রাজ্যের চাইবাসায় আদিবাসী সংস্কতি উত্সব 'আদিবিম্ব' আয়োজন করতে চলেছে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয়)৷ অনুষ্ঠানের সূচনা ১৫ নভেম্বর৷ উত্সব চলবে ১৭ তারিখ পর্যন্ত৷ ১৫ নভেম্বর ঝাড়খণ্ডের স্থাপনা দিবস৷ আবার বীরসা মুণ্ডার জন্মদিনও বটে৷ তিনিই তো একমাত্র আদিবাসী নেতা, যাঁর ছবি টাঙানো আছে পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে৷ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আদিবাসী আন্দোলন সংগঠিত করে জেলে যিনি প্রাণ দিয়েছিলেন মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে৷ তিনদিনের এই উত্সবটি উত্সর্গ করা হয়েছে তাঁকে ও তাঁর প্রিয় আদিবাসীদেরই৷

এনএসডি-র চেয়ারম্যান রতন থিয়ামের থেকে জানা গেল উত্সবে অসমের খামতি সম্প্রদায়, ত্রিপুরার মগ সম্প্রদায়, মিজোরামের মিজো সম্প্রদায়, মণিপুরের কম ও থাঙ্কুল সম্প্রদায়, পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা পারফর্ম করবেন৷ আসছেন ওড়িশা, বিহার, মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীরাও৷ এ ছাড়াও বিশেষ আকর্ষণ ঝাড়খণ্ডের মুন্ডা, হো এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের শিল্পীরা৷ এতদিন তাঁদের গান-বাজনা-নাটক সংস্কতি সীমাবদ্ধ ছিল নিজেদের মধ্যেই৷ জঙ্গলে নিজেদের উত্সবে তাঁরা মেতে উঠেছেন বার বার৷ কিন্ত্ত এমন একটি জাতীয় মঞ্চে তাঁদের দেখা মেলেনি৷ সেদিক দিয়ে এ উত্সব এক বড় সুযোগ৷ এছাড়াও ঝাড়খন্ডের আদিবাসীদের নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ হবে উষা মিশ্র-র পরিচালনায়৷ সুবোধ পট্টনায়েকের ওড়িয়া থিয়েটার গ্রুপ নাট্যচেতনা পরিবেশন করবে 'নিয়ান' নাটকটি৷ অসমের হাজং নাট্যগোষ্ঠী অভিনয় করবে 'সংঘাত' নাটকটি৷ পরিচালনায় প্রবীণ হাজং৷

কেন ঝাড়খণ্ডকে এ বারের উত্সবস্থল করা হল? প্রশ্নের উত্তরে রতন থিয়াম বললেন, 'ভারতের সংস্কতির একটা বড় অংশকে ধরে রেখেছেন তো আদিবাসীরাই৷ তাঁদের বাদ দিয়ে ভারতীয় কালচারকে বোঝানো তো সম্ভব নয়৷ আর ঝাড়খণ্ড রাজ্যটা তো আদিবাসীদেরই জায়গা৷ নিজেদের সংস্কতি বাঁচিয়ে রাখার তাগিদেই তাঁদের গান-নাচ-নাটক প্রমোট করা দরকার৷'

রাজ্যে আদিবাসীরা কি অবহেলিত বলে তিনি মনে করেন? রতন বলেন, 'এটা একটা ইয়াং স্টেট৷ কয়েক বছর হল তৈরি হয়েছে৷ রাজ্যের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে গভর্নমেন্ট ইজ ট্রায়িং হার্ড৷ আমি দেখেছি৷ একটু সময় তো লাগবেই৷ কিন্ত্ত আমার যেটা মনে হয়েছে যে রাজ্যের আর্ট অ্যান্ড কালচার প্রিজার্ভ করার উপর আরেকটু জোর দেওয়া দরকার৷'

সে ব্যাপারটা কেমন? রতন বুঝিয়ে বলেন, 'এ রাজ্যের শিল্প-সংস্কতি খুব উচ্চ মানের৷ নারচার করলে এর একটা ব্রাইট ফিউচার আছে৷ সেটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগ তো লাগবেই৷ আমরা এনএসডি-র তরফ থেকে একটা চেষ্টা করছি৷ আমি কিছুদিন আগে এখানকার একটা আর্ট একজিবিশন দেখলাম৷ ট্রাইবাল লাইফ-স্টাইল, ইনস্পিরেশন এর উপর ভিত্তি করে আসাধারণ কাজ! এসব তো দেশের মানুষের দেখা দরকার৷ আমরা সবসময়ে একটা এক্সপেকটেশন নিয়ে থাকি যে ওরা আমাদের কাছে আসবে৷ এই অ্যাপ্রোচটা বদলাতে চাইছি৷ বরং আমরাই আদিবাসীদের কাছে যাবো৷ তাদের চেনা জানা পরিবেশের মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে বসে কাজ দেখবো৷ আদিবাসী শিল্প-সংস্কতিকে অন্তরে উপলব্ধি করব৷ এটাও তো হতে পারে৷ এই উত্সব সেটাই৷'


মাওবাদের পর নাটকের পদধ্বনি

$
0
0

চাইবাসায় হয়ে গেল এনএসডি আয়োজিত আদিবাসী-আদিবিম্ব উত্সব৷ তার মধ্যেই মিজো মেয়ের সঙ্গে সাঁওতাল ছেলের সেলফি পরিচয়, আর বন্দুকের মতো দোতারা খুঁজে পেলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

একটা ছোট্ট ব্যাঙ্ক চাইবাসা স্টেশনের কাছাকাছি৷ আর তার বাইরে দীর্ঘ এক লাইন৷ দাঁড়িয়ে অসংখ্য আদিবাসী মানুষ৷ হো, মুন্ডা, ওঁরাও৷ আছেন আরও অনেক মানুষ, যাঁদের দেখতে এই মানুষগুলোর মতো নয়৷ কেউ কেউ বেশ খানিকটা লম্বা৷ কেউ অসম্ভব কৃষ্ণবর্ণ৷ আবার পীতবর্ণের, প্রোটোমোঙ্গোলয়েড চেহারার মিজো, মণিপুরীরাও রয়েছেন৷ এখানেই লাইনটা আলাদা হয়ে গিয়েছে বাকি দেশের থেকে৷ পাঁচশো-হাজার কাণ্ডে ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় তো সারা ভারতের জাতীয় চিত্র৷ কিন্ত্ত লাইনটাতে ভারতের নানা প্রদেশের আদিবাসী, উপজাতি মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন, এমনটা তো হয়নি! ঝাড়খণ্ডী আদিবাসীদের বাদ দিলে বাকিরা অন্যান্য প্রদেশ থেকে আসা নাচ-গান-নাটকের ফোক শিল্পী, যোগ দিতে এসেছেন এনএসডি আয়োজিত 'আদিবাসী আদিবিম্ব' উত্সবে৷ শীতে সূর্য ফিকে হয়ে যায় বড় তাড়াতাড়ি৷ ব্যাঙ্ক তো এক্সট্রা টাইম খোলা৷ প্রকান্ড এক গোল্লা হলুদ রঙের চাঁদ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে টিলা পাহাড়ের মাথায়৷ সেদিকে কারও খেয়ালই নেই৷ এক আদিবাসী বলছেন, 'আজ টাকা না তুলে রাখতে পারলে কাল চলবে কেমন করে!' পূর্ণিমার চাঁদ অতএব ঝলসানো রুটি, তা সে চাঁদ যতোই পৃথিবীর কাছাকাছি আসুক না কেন!

১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর চাইবাসার যে স্কুল মাঠে বিপুল উত্সবটি হল, তার চারপাশটা কিন্ত্ত একেবারেই ফাঁকা ফাঁকা৷ উত্সব না হলে রোজ রাত্তিরে একাকী গায়ে কালো চাদর টেনে শুয়ে থাকে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ৷ জোরে কয়েক পা চালালেই পৌঁছে যাওয়া যায় লাপাংঘুটু নদী৷ নিরাসক্তভাবে বয়ে চলেছে জল৷ নদী পেরোলেই ঘন জঙ্গল৷ আর একটা দিকে রুরু নদী৷ তার উপরে বাঁধ দেখাশোনার কয়েকজন লোক ছাড়া মানুষ খুঁজে পাওয়াই কঠিন৷ এহেন অঞ্চলে জেলা স্কুলের মাঠটি উত্সবের কারণে রাতারাতি সরগরম৷

এনএসডি-র চেয়ারম্যান রতন থিয়াম এবং চাইবাসার প্রশাসনিক কর্তারা উদ্বোধন করে যাওয়ার পর টানা তিন দিন বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা উপজাতি, বাংলার সাঁওতালি মানুষ এসে পারফর্ম করে গেলেন মাঠে৷ কেউ পাহাড়ী গ্রামে থাকেন, কারও বাস অতিবৃষ্টির পাহাড়ে, কেউ কালাহান্ডির শস্যবিহীন অঞ্চলের মানুষ, কারও গ্রামে খুব শীত, কারও গ্রাম রোদে পুড়ে রুক্ষ! দেশের নানা প্রান্তের প্রান্তিক শিল্পীদের এক বিরল সমাবেশ ঘটে গেল এক আকাশের নীচে৷ বাঁশের নৃত্য, ছৌ নৃত্য, মুখোশ নাচ, শিকারের নাচ, মহিলার সাজে পুরুষ--- অদেখা, কম দেখা ভারতীয় সংস্কতি৷ কিন্ত্ত যা ছিল৷ এবং দৃশ্যত আছেও৷

ফুলবণির আঁচলে চোখ মুছছেন লাপসাং

এই যে বিপুল মেলামেশা, সেখানে আদান-প্রদান তো ঘটবেই৷ মনমরা হয়ে রোগা সাইকেলে প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতে যাদের দিন কেটে যায় বৈচিত্র্যহীনতায়, সেই চাইবাসার সদ্য যুবকদের সামনে হঠাত্ করেই প্রচুর উজ্জ্বল রঙ৷ এলাকায় ঘুরে ঘুরে সেলফি তুলছেন, ছবি তুলছেন, খাবার খাচ্ছেন নৃত্যশিল্পীরা৷ সেলফি-রত মিজো মেয়ের কাছে দাঁড়িয়ে 'দারুন লাগলো তোমার নাচ' বলছেন অনেকেই৷ (আহা, বাহানা তৈরি করতেও বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে না)৷ তারপরই ছবি তুলতে চাইছেন সেই কন্যার৷ তিনিও পোজ বিলোচ্ছেন অকাতরে৷ চাইবাসা যুবক হাঁ৷ এত সহজেও কেউ ছবি তুলতে দেয়! আবার ওড়িশার মেয়ের সঙ্গে ভাব জমিয়ে 'তিখা মারকে' ফুচকা চেখে নিচ্ছেন পীতবর্ণা৷ ঝালে গাল লাল করে ফুলবণির আঁচলে চোখ মুছছেন লাপসাং৷

গরম 'ধুসরা' 'কাখরাল' ঠান্ডা

ফুচকার কথা তো উঠেই গেল৷ সুতরাং উত্সব প্রাঙ্গণ ঘিরে যে খাবারের আয়োজন সেদিকেও চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক৷ বিপুল পরিমাণে বিক্রি হয়েছে 'ধুসরা'৷ এটা চাল আর ডাল বেটে তৈরি এক ধরনের বড়া৷ ডালবড়া আর ধোসার মাঝমাঝি স্বাদের একটি সুখাদ্য৷ পুদিনার চাটনি সহযোগে পরিবেশিত হয়েছে৷ আর পাওয়া যাচ্ছে 'কাখরাল'৷ সুজির পুর দিয়ে তৈরি এই বিশেষ বড়ার স্বাদটি মিষ্টি৷ গরম গরম খেতে হবে 'ধুসরা', ঠান্ডা হলে বিস্বাদ ও শক্ত৷ 'কাখরাল' অবশ্য ঠান্ডা অবস্থাতেই খেয়ে মজা৷ এ ছাড়া কলকাতাবাসী বিহারীদের কারণে পরিচিত মিষ্টি 'ঠেকুয়া'-ও মিলেছে৷ আর আছে ঘুগনি, আলুর চপ ইত্যাদি পরিচিত খাবার৷ এই তিন দিনের জন্য মুমফলি নিয়ে বেচতে বসেছে পাশের গ্রামের ছুটকি৷

সংস্কৃতি ধরে রাখা দূরের ব্যাপার

ছবি তুলতে দিলেন না৷ নাম বললেন না৷ কারণ, যেহেতু তাঁর কথাগুলো প্রশাসনের বিরুদ্ধে, তাই মুখটা সামনে এলে তাঁর বিপদ হতে পারে৷ তবে তিনি মুন্ডা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ধামসা বাজান৷ বয়স হয়েছে৷ এই বয়েসে আর নতুন ঝামেলা নিতে চান না৷ জানা গেল, রাঁচি থেকে পঁচিশ কিলোমিটার মতো গেলেই খুঁটি বলে একটা জায়গায় পৌঁছনো যায়৷ খুঁটি থেকে দশ বারো কিলোমিটার গেলেই সাইকো মোড়৷ সেখান থেকেই চলে গিয়েছে ভাঙাচোরা রাস্তা৷ সে রাস্তায় পৌঁছানো যায় উলাহাতু গ্রামে, অর্থাত্ বীরসা মুন্ডার গ্রাম৷ বীরসার জন্মদিনে এই রাজ্যের স্থাপনা দিবস, এ রাজ্যে বীরসার নামের আগে ভগবান লেখা নিয়ম, অথচ তাঁর গ্রামের মানুষরা দিন কাটাচ্ছেন অবর্ণনীয় দারিদ্র্যে৷ ওই গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে বর্তমান সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও৷ প্রতিবার পরিদর্শনের সময়ে তড়িঘড়ি রাস্তা সাফ হয়েছে, ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে৷ কিন্ত্ত মন্ত্রী ফিরলেন তো গ্রামের হাল যে কে সেই৷ বললেন, 'সংস্কতি ধরে রাখা তো অনেক দূরের ব্যাপার৷ মানুষ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই কঠিন৷ চারদিকে রোগ, ব্যাধি, অনাহার!'

বীরসা মনে-প্রাণে অহিংস ছিলেন

সাঁওতাল, মুন্ডা, হো, ওঁরাও উপজাতির মানুষকে এক ছাতায় তলায় এনে বীরসা মুন্ডার উপর একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক পরিবেশন করেছেন উষা মিশ্র৷ নাটকের নাম 'উলগুলান'৷ উষা চাইবাসারই মেয়ে৷ পড়াশোনা করেছেন জামশেদপুরে৷ বিবাহসূত্রে উত্তরপ্রদেশে গিয়েছেন৷ পরে আবার কার্যসূত্রে এসেছেন কলকাতায়৷ বললেন, 'বীরসা নিজেকে তৈরি করার জন্য কেমনভাবে পড়াশোনা করেছিলেন, তিনি যে মনে-প্রাণে অহিংস ছিলেন, কিন্ত্ত ব্রিটিশদের অত্যাচারেই অস্ত্র ধরতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেটাই দেখাতে চেয়েছি৷'

বন্দুক অথবা দোতারা

ইনিও নাম লিখতে বারণ করলেন৷ ছবি তুলতে দিলেন, তবে পিঠের দিক করে৷ ইনি হো সম্প্রদায়ের মানুষ৷ পিঠে ঝোলানো দোতারা-র ভঙ্গিটা দেখে নেহাত মজা করেই বলেছিলাম, যেন একখানা বন্দুক! আর যুবকের চোখটা মুহূর্তে বদলে গেল তাতেই৷ জানালেন, তাঁর বাপ-ঠাকুর্দা চাষের কাজের ফাঁকে দোতারা বাজিয়ে গানই করতেন৷ কিন্ত্ত দশ বছর আগে তাঁদের গ্রামে 'রেড-পার্টি' (পড়ুন মাওবাদী) আসে৷ তারা এলাকার যুবকদের বেছে নিয়ে দলে যোগ দেওয়ায়৷ সেই সময়েই ওই দলে ব্যাপারটা ভাল করে না বুঝে জুটে গিয়েছিলেন তিনিও৷ বছর তিনেক তাদের সঙ্গে ছিলেন৷ তখন সত্যিই এমন বিভঙ্গে বন্দুক ঝোলাতে হয়েছে কাঁধে৷ মাও-রা অল্প কিছু টাকা মাস মাইনের মতো দিত৷ একটা সময়ের পর পালিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন৷ বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েও ছিলেন৷ এলাকায় মাওদের শক্তি খানিক কমে যাওয়ার পর সমাজের মূলস্রোতে আবার মিশে যান৷ বললেন, 'গ্রামের মানুষের অপুষ্টি এখনও আছে, জানেন৷ যাহোক দোতারাটা তো ফিরে পেয়েছি৷'

খোয়া চাঁদ

উত্সবের শেষ দিনে চাঁদ আর অত বড় নেই৷ উত্সবের সঙ্গে সঙ্গে তার ক্ষয় হয়েছে৷ চার দিন কি চাঁদনি! চাঁদের আলো তো কমছেই, সেই সঙ্গে খুলে ফেলা হচ্ছে এই ক'দিনের জন্য লাগানো বৈদু্যতিক আলোগুলো-ও৷ এই মাঠ, এই গাছ, ধামসা-মাদল আবার অন্ধকারে মিশে যাবে দূরের পাহাড়ের সঙ্গে৷

তীব্র হুইসল দিয়ে ছুটে গেল রাতের ট্রেন...!

(assamese girl selfie pics, mijo girls in red pics available)

(mumfali girl, dhusra, kakhral pics available)

(usha mishra pics available)

(dotara on back pic available)


গিরিশ এবং গিরিশ

$
0
0

নাটক: এক মঞ্চ এক জীবন

প্রযোজনা: পূর্ব-পশ্চিম

নাট্যকার: উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়

পরিচালনা: সৌমিত্র মিত্র

নামভূমিকায়: দেবশংকর হালদার

নাটক: আশার নেশায়

প্রযোজনা: আভাষ

নাটক, পরিচালনা ও নামভূমিকায়: শেখর সমাদ্দার

গিরিশ কারনাডের একই নাটক থেকে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় যখন 'হয়বদন' করলেন, আর সঞ্জীব রায় কিছুুদিন পরে করলেন 'ঘোড়ামুখো পালা', অবন্তী চক্রবর্তী ধরলেন কারনাডের অন্য নাটক 'নাগমন্ডলা', তখন এই নাট্যকারের সঙ্গে কথা হয়েছিল৷ জানতে চেয়েছিলাম গিরিশ ঘোষের শহর কি এ বার তবে অন্য গিরিশ দখল করে নিল! খুব হেসে কারনাড বলেছিলেন, 'আরে নানা, উনি তো লেজেন্ড৷ তবে আমার মনে হয় ওঁর নিজের জীবনটাও খুব ইন্টারেস্টিং ছিল৷ সেটাও একটা ভাল নাটকের বিষয় হতে পারে৷' সত্যিই তো, নটী বিনোদিনীকে নিয়ে বাঙালি অনেক নাটক করেছে, কিন্ত্ত তাঁর গুরু গিরিশ ঘোষের নামে কি 'পার্ক' আর 'মঞ্চ' বানিয়েই ক্ষান্ত হবে? বায়ো-প্লে হতে পারে না? ভাবতে ভাবতেই শহরবাসীর সামনে দু'টি নাটক৷ গিরিশবাবুর জীবন নিয়ে 'আশার নেশায়' তৈরি করেছেন শেখর সমাদ্দার৷ তাঁর রচিত, নির্দেশিত নাটকে গিরিশবাবুর ভূমিকাতে শেখর নিজে৷ অন্যদিকে, সৌমিত্র মিত্র-র পরিচালনায় চলছে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়-এর নাটক 'এক মঞ্চ এক জীবন'৷ গিরিশবাবুর ভূমিকায় দেবশংকর হালদার৷ উল্লেখ্য, 'নিঃসঙ্গ সম্রাট'-এ শিশিরবাবুর ভূমিকায়ও ছিলেন তিনিই৷

গত কয়েক বছরে একের পর এক নাটকে বাস্তব চরিত্র হিসেবে মঞ্চে আসতে দেখা গিয়েছে বাংলার স্বনামধন্য নাট্যব্যক্তিত্বদের৷ 'শ্রী শম্ভু মিত্র' নাটকে শম্ভুবাবুর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে সুরজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত 'নিঃসঙ্গ সম্রাট' নাটকে দেবশংকর হালদার অভিনয় করেছেন শিশির ভাদুড়ির ভূমিকায়৷ সম্প্রতি উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় রচিত, ব্রাত্য বসু পরিচালিত 'অদ্য শেষ রজনী' নাটকে 'বারবধূ'-খ্যাত অসীম চক্রবর্তীর ভূমিকায় অভিনয় করেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য৷ আর এ বার পালা গিরিশ ঘোষের৷ তাঁকে নিয়ে গড়া দুটি নাটকের আলোচনা করতে গিয়ে তাঁর সময়, তাঁর সমস্যা, তাঁর চেষ্টা, তাঁর লড়াই-এর প্রসঙ্গগুলো ফিরে দেখা বড্ডই জরুরি৷ কারণ, সেসব কথাই ঘুরে ফিরে এসেছে নাটক দু'টিতে৷ দুটি নাটকের প্রকাশভঙ্গি আলাদা, অভিনেতা আলাদা কিন্ত্ত কেন্দ্রে তো সেই নাট্যাচার্য৷

গিরিশ ঘোষ প্রতিটি সামাজিক নাটকেই সমকালীন সমাজের ভিতরকার দ্বন্দ্ব-সমস্যাগুলিকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গিয়েছেন৷ সেটা তিনি পেরেছিলেন কারণ, যাত্রা-কথকতার মতো ফর্মগুলোর সঙ্গে তিনি ছোটবেলা থেকেই পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন৷ সাহেবি ধাঁচের থিয়েটার কোনও দিনই প্রতিষ্ঠা করতে চাননি গিরিশ৷ বাঙালি নাট্য-দর্শককে তিনিবুঝতে পেরেছিলেন৷ তাঁদের জন্য তিনি যাত্রা আর থিয়েটারের মাঝমাঝি একটা ফর্ম খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন৷ এক বিলিতি অভিনেত্রীর জুড়ি গাড়িতে চেপে বেড়াতে বেড়াতে তিনি ইংলিশ অভিনয়ের সম্পর্কে শুনতেন৷ কিন্ত্ত সেটার দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত হয়ে যাননি৷ বাংলার নাটক বানিয়েছেন বাংলার পাল্স বুঝে৷ মনে রাখতে হবে রবি ঠাকুর বলেছিলেন, গিরিশবাবু একজন বড় নাট্যকার এ সম্পর্কে তাঁর দ্বিমত আছে, কিন্ত্ত তাঁর হাতেই যে বাংলার রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এতে তিনি একমত৷ অভিনেতার মানকে গড়ে তুলতে, প্রতিষ্ঠা করতে আজীবন চেষ্টা করে গিয়েছেন গিরিশ৷

বিনোদিনী অধ্যায়টি গিরিশবাবুর সম্পর্কে একটা কালো ছাপ হিসেবেই আমাদের সামনে রয়ে গিয়েছে৷ থিয়েটারের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে গুর্মূখ রায়ের রক্ষিতা হিসেবে বিনোদিনীকে ঠেলে দেওয়াটা খুব যে অনৈতিক হয়নি, এমনটা মনে করা মানুষও কিন্ত্ত আছেন অনেক৷ বিনোদিনীর আত্মকথায় গিরিশবাবুর সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা কিন্ত্ত নেই৷ উপরন্ত্ত তিনি বইটি উত্সর্গ করেছিলেন তাঁর গুরুকে৷ তাছাড়া, তারাসুন্দরী, তিনকড়ির মতো মেয়েদের অভিনেতা হিসেবে গড়ার একটা আপ্রাণ লড়াইও তো তিনিই করেছিলেন৷ গিরিশবাবুর নাটক কিংবা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে শিশির ভাদুড়ির কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ: 'গিরিশবাবুকে তাঁর যুগ দিয়ে বুঝতে হবে!' গিরিশচন্দ্র না থাকলে থিয়েটার বাবুবিলাসিতার পথ ছেড়ে নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলতে পারত কিনা তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷

রামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্যও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার৷ আলোচকদের মধ্যে কিন্ত্ত অনেক রকমের মতামত প্রচলিত রয়েছে৷ একটা অংশ মনে করেন ধর্মশিক্ষা, নীতি শিক্ষা ইত্যাদিকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই তিনি গিরিশের সঙ্গে সম্পর্ককে মজবুত করেন৷ তিনি সকলকে বলতেনও যে 'থ্যাটারে লোকশিক্খে হয়৷' তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, থিয়েটারের স্থান, কাল, পাত্র সবই কাল্পনিক৷ গল্পে যা বলা হচ্ছে তাই-ই মানুষ বিশ্বাস করে নিচ্ছে৷ তাঁর মতে এই বিশ্বাস করে নেওয়াটাই খুব বড় ব্যাপার৷ যে কোনও কিছু করতে গেলেই বিশ্বাসের জোর থাকা চাই৷ থিয়েটার অতএব সেই বিশ্বাস গড়ে দিতে পারে৷ সে জন্যই থিয়েটারের প্রসার প্রয়োজন৷ অনেকে আবার মনে করেন, গিরিশবাবু নিজেও ভীষণভাবে চেয়েছিলেন রামকৃষ্ণদেব তাঁর থিয়েটার দেখতে আসুন৷ তাহলে তাঁর সঙ্গে সঙ্গেই বেশ বড় সংখ্যক মানুষকে থিয়েটারমুখী করে তোলা যাবে৷ তা না হলে পেশাদারি থিয়েটার চলবে কেমন করে? সুতরাং কোথায় যেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিরাজ করেছেন৷ তবে তাঁদের মধ্যে সম্পর্কটি যে অত্যন্ত আন্তরিক ও মানবিক ছিল, তা অস্বীকার করা হচ্ছে না৷

এই যে বিপুল ঘটনা, পার্শ্বঘটনা, বিতর্ক, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নাট্যাচার্যের জীবন ঘিরে, তা অবশ্যই নাটকের বিষয় হওয়ার প্রয়োজন ছিল৷ আর বাঙালির অন্তত তা একবার ফিরে দেখা অবশ্যই জরুরি৷ সেই প্রয়োজন মিটিয়েছে নাটকদু'টি৷ দুটি নাটকের উপস্থাপনা আলাদা আলাদা রকমের৷ উজ্জ্বলবাবুর স্ক্রিপ্ট চমত্কার৷ আর এমন স্ক্রিপ্টকে মঞ্চে কেমন করে জমিয়ে তুলতে হয় সে ক্রাফটে সৌমিত্রবাবুর সিদ্ধহস্ত৷ স্টেজ জুড়ে ছোটাছু্টি করে তো বটেই, বেশ কিছু জায়গায় স্রেফ চোখের দৃষ্টিতে, শরীরের সামান্য মোচড়েও অসামান্য মুহূর্ত গড়ে দিয়েছেন দেবশংকর হালদার৷ নাটক রচনা, পরিচালনা ও কেন্দ্রীয় চরিত্রের যে বিপুল ভার তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছেন সে জন্যও তাঁকেও সাধুবাদ জানাতে হবে৷ বাংলা নাটকের অভিনেতারা গিরিশবাবুর ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে যে নিজেদের সঙ্গে কোথাও একটা আইডেন্টিফাই করতে পারবেন তা বলাই বাহুল্য৷ সেটাই ঘটেছে৷ দেবশংকর তাঁর নিজস্ব স্টাইলে তো বটেই, শেখরও ভাল অভিনয় করেছেন ভারি গলার উপযুক্ত ব্যবহারে৷ শেখরের নাটকটি তথ্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ, আর গ্রাঞ্জারে এগিয়ে সৌমিত্রবাবুর নাটক৷ গিরিশে তথা নাটকে উত্সাহী বাঙালি দর্শক দুটো নাটকেই সার্বিকভাবে গিরিশ যুগের রস আস্বাদন করতে পারবেন বলে আশা করা যায়৷---ইন্দ্রনীল শুক্লা


বর্ধমানে মণিপুরের শেক্ষপীর

$
0
0

বর্ধমানে থিয়েটার ভিলেজের উত্সবে দেখতে পাওয়া যাবে রতন থিয়ামের 'ম্যাকবেথ'৷ খোঁজ দিচ্ছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

বার বার 'ম্যাকবেথ' হয়েছে নগর কলকাতায়৷ নানা দল, নানা মতে একই নাটক৷ সেই চেনা কাহিনিটাই অন্যভাবে পরিবেশিত হয়েছে৷ ইন্টারপ্রিটেশনে আলাদা আলাদা তাত্পর্য নিয়ে ধরা পড়েছে শেক্ষপীরের 'সুপারহিট' নাটক৷ কিন্ত্ত এ বার বর্ধমান সাক্ষী হতে চলেছে এক অন্য রকম নাটক অভিজ্ঞতার৷ রতন থিয়ামের কোরাস রেপার্টরির 'ম্যাকবেথ' অভিনীত হবে বর্ধমানের তেপান্তর গ্রামে৷ কলকাতা থেকে পৌঁছাতে সময় লাগবে ঘন্টা তিনেক৷ 'এবং আমরা' আয়োজিত উত্সবের হাত ধরে মণিপুরী ইন্টারপ্রিটেশনের 'ম্যাকবেথ'-এর দেখা মিলবে৷ কলকাতায় এই নাটক হয়েছে৷ প্রশংসার ঢল নেমেছে৷ কিন্ত্ত জেলায় বসে এ নাটক দেখার সুযোগ আসেনি৷

থিয়েটার ভিলেজ তেপান্তর-এর কর্ণধার কল্লোল ভট্টাচার্য জানালেন, আগামী ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্সব চলবে৷ তাঁদের নতুন অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন হবে ৫ তারিখ৷ এতে ২০০ জন দর্শক বসে নাটক দেখতে পারবেন৷ সাউন্ড, লাইট সহ সমস্ত রকম আধুুনিক ব্যবস্থা থাকছে নাটক পরিবেশনার জন্য৷ শুধু তাই নয়, হলের বিশেষ ডিজাইনের কারণে সমস্ত রকম ফর্মেই নাটক মঞ্চস্থ করা সম্ভব হবে৷ এই হলটির ডিজাইন করেছেন এনএসডি-র টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সৌতি চক্রবর্তী৷ আর সমগ্র কনসেপ্টটি দিয়েছেন এনএসডি চেয়ারম্যান রতন থিয়াম৷ সেখানেই উত্সবের শেষ দিনে দেখা যাবে 'ম্যাকবেথ'৷ উত্সবের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে এবং আমরা গোষ্ঠীর 'অন্ধ যুগ' ও 'অয়েদিপাউস' দেখা যাবে৷ এছাড়া স্পন্দন বেঙ্গালুরু ও উহিনী কলকাতার নাটকও অডিটোরিয়ামেই হবে৷

গত পাঁচ বছর ধরেই নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের গোড়ায় উত্সব করে আসছেন কল্লোলবাবুরা৷ তখন উত্সব হতো থিয়েটার ভিলেজের মাঝে থাকা আটচালায়৷ নতুন অডিটোরিয়ামটি হয়েছে সেই আটচালারই সামনে বিস্তত মাঠটিতে৷ মনে পড়ে যেতে পারে এই আটচালা আর সামনের মাঠেই সারা রাতব্যাপী 'উরুভঙ্গম' উপস্থাপন করে গিয়েছিলেন মণীশ মিত্র৷ কল্লোলবাবু জানালেন, এই উত্সবেই তাঁদের 'মহাভারত ইন ম্যাঙ্গো অর্চার্ড'-ও উপস্থাপিত হবে আটচালা এবং আমবাগানেই৷ এই হল উদ্বোধন হওয়ার পর প্রত্যেক মাসের শেষ সন্তাহে দু'টি করে দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে অভিনয়ের জন্য৷

এমনিতে এই থিয়েটার ভিলেজের ভিতরে আমবাগান আছে, ফিসারি আছে, পোলট্রি আছে৷ কিছু কটেজ রয়েছে৷ তৈরি করা হচ্ছে ১২০ জনের থাকার মতো জায়গা৷ কল্লোলবাবুর থেকে জানা গেল তাঁরা থিয়েটার ভিলেজটিতে থিয়েটারের সঙ্গে টু্যরিজিমের একটা মেলবন্ধন ঘটাতে চাইছেন৷ মানে দু'দিন থাকা এবং নাটক-গান-বাজনা শোনা৷ এই থিয়েটার ভিলেজে বিচ্ছিন্নভাবে উত্সব হয় বটে, যেমন দোলের সময়ে মেলা হয়৷ হস্তশিল্পীরা আসেন৷ ফোক আর্টিস্টরা পারফর্ম করেন৷ কিন্ত্ত এ বার থেকে প্রতি মাসেই কিছু না কিছু হবে৷ নাটক তো হবেই৷ ছৌ, ভারতনাট্যম নৃত্য, গুটিপোয়া নৃত্য থেকে , বাউল-ঝুমুর গান, কনটেম্পোরারি ডান্স--- সবই পরিবেশিত হবে৷ এমনিতে ২৫ জন নাট্যশিল্পী কাজ করেন এই নাট্যগ্রামে৷ এঁদের মধ্যে ১৫ জন হোলটাইমার৷ উত্সহ হতে থাকলে নাটক টিকিয়ে রাখা সহজ হবে বলে মনে করছেন তাঁরা৷

জেলায় এমন থিয়েটার ভিলেজের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় রতন থিয়াম বলেন, 'গ্রামে এভাবে থিয়েটার ভিলেজ তৈরি করাটা খুব জরুরি৷ তার অনেকগুলো কারণ আছে৷ গ্রামে থাকলে আদিবাসী-উপজাতি মানুষদের কাছাকাছি থাকা যায়৷ তাদের প্রাচীন পুরনো ফর্মগুলোর চর্চা করা যায়৷ দেশের সেসব আদি অকৃত্রিম ফর্ম থিয়েটারে না এলে থিয়েটার 'রিচ' হবে কেমন করে? দেশীয় থিয়েটারের নিজস্বতা ধরে রাখতেই এসব ফর্ম দরকার৷'

নাট্যকর্মীদের জন্য থিয়েটার ভিলেজের গুরুত্ব প্রসঙ্গে রতন থিয়াম বলেন, 'থিয়েটার কর্মীদের তো খেয়েপরে বাঁচতে হবে৷ পোলট্রি করলে, চাষ করলে নিজেদের খাওয়াও হবে আবার সেসব বিক্রি করে রোজগারও করা যাবে৷ দিনের বেলা ক্ষেতের কাজ করে বিকেলে নাট্যচর্চা করা যাবে৷ এই ব্যাপারটা গ্রামে না হলে তো করা সম্ভব নয়৷ বর্ধমানে ওরা সেই চেষ্টাটা করছে৷ খুব ভালো এফর্ট আমি বলবো৷'

রতন বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, 'গ্রামে কাজ করার আরও একটা মস্ত সুবিধে হল নির্জনতা, নিস্তব্ধতা৷ পরিবেশ শান্ত না হলে, মনে শান্তি না থাকলে সৃষ্টিশীল কাজ করা যায় না৷ গ্রামীণ পরিবেশে কাজে মনোযোগ দেওয়া অনেক সহজ হয়৷ শহরের ফাস্ট লাইফ, শব্দের ক্যাকোফোনি-র মধ্যে কনসেনট্রেট করাই কঠিন!'

বর্ধমানের শোয়ের জন্য কি আলাদা কোনও চেঞ্জ আনা হচ্ছে 'ম্যাকবেথ'-এ? রতন হেসে বলেন, 'সত্যি কথা বলবো? পুরনো কাজ নিয়ে আর নতুন করে ভাবি না৷ নতুন কিছু মাথায় ঘুরতে থাকে৷ যতক্ষণ প্রস্ত্ততিপর্ব চলে দিনরাত খাটি৷ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি৷ কাটি-জুড়ি৷ একটা নাটক বানাতে অনেকটা সময় লেগে যায়৷ কিন্ত্ত প্রিমিয়ার পারফরম্যান্স হয়ে গেলে আর রিহার্সাল পর্যন্ত দেখতে যাই না৷ ভয় লাগে, যদি নিজেকে রিপিট করে ফেলি! প্রথম পারফরম্যান্স পর্যন্তই আমার কাজ৷ ওটার কাজ ওখানেই শেষ৷ নতুন নাটকের সঙ্গে সঙ্গে আবার নতুন নাটকের গর্ভে জন্মাতে চাই৷ আয়নায় তো সারাক্ষণ নিজেকে দেখা যায় না৷ বার বার পুরনো নাটকের পারফরম্যান্স দেখলে তো বোর হয়ে যাব!'


নুরুলদীন, এক অগ্নিশলাকার নাম

$
0
0

কিশোর ছেলেটিকে তার কৃষক বাবা জানালো আজ আর স্কুল যেতে হবে৷ মাঠে গিয়ে তাঁরা দু'জনে মিলে চাষ করবেন৷ ছেলেটি আত্মহারা৷ দারুন মজায় কাটবে তবে দিনটা৷ কিন্ত্ত মাঠে গিয়ে বোঝা গেল ব্যাপারটা৷ তাদের সে বলদ উধাও৷ দেনার দায়ে, খাজনা মেটানোর দায়ে বলদ বিক্রি করে দিয়েছেন বাবা৷ এখন বলদের মতো ঘাড়ে লাঙল নিয়ে টানছেন বাবা৷ আর মাথার উপরে সূর্য তেজের লাভা ঢালছে৷ রাগের আগুনটা তখনই লেগে গেল কিশোরের মধ্যে৷ এ অভাব তখন সকলের ঘরে৷ ক্রমে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ল তার গ্রামের মানুষের মধ্যে৷ ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়ে নুরুলদীনের জয় হল কীনা সেটা বড় কথা নয়, একবার জ্বলে উঠতে পারাটাই তো একজন মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।

আসলে, কিশোর সেনগুপ্ত পরিচালিত এ নাটকটিকে বুঝতে হলে প্রেক্ষাপটটা জানা বড্ড জরুরি৷ কারণ, এ নাটকে মানুষকে প্রতিবাদে উজ্জীবিত করার উপকরণগুলি সমসাময়িক হলেও, আদতে তা ইতিহাস আশ্রিত৷ ইতিহাসের তথ্য ফিরে এসেছে নাটকে৷ দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার রাজস্ব আদায়ের অধিকার পেলেও নানা কারণে তা সংগ্রহে তেমন সাফল্য পায় না৷ ফলে ১৭৭০ নাগাদ কোম্পানি এক ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ে৷ এই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের জন্য অমানবিক শোষণ শুরু করে কোম্পানি৷ ফলে ওই বছরই ঘটে যায় বাংলার প্রথম মন্বন্তর (বাংলা ১১৭৬) যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত৷ তুমুল সমালোচিত হয় ইংল্যান্ডের হাউস অফ লর্ডস-এ কোম্পানির ভূমিকা৷ এবং কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্রিটিশ রাজের হস্তক্ষেপে লাগু হয় এক নিয়ন্ত্রণমূলক আইন৷ লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২-৭৩ থেকে কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের স্বত্ব চুক্তিতে বিক্রি করতে শুরু করে, পূর্বে নবাবী আমলে রাজস্ব আদায়ে নিযুক্ত কিছু ব্যক্তির কাছে৷ রাজপুত বংশজাত রাজা দেবীপ্রসাদ সিং এভাবেই ১৭৮১-৮৩ খ্রিষ্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার রঙ্গপুরে রাজস্ব আদায়ের স্বত্ব পান৷ ডিমলার জমিদার গৌরমোহন চৌধুরীকে দোসর করে রাজস্ব আদায়ের নামে দেবী সিং কৃষকদের উপর ভয়ঙ্কর অত্যাচার শুরু করেন৷ হতদরিদ্র প্রজারা গরু-বাছুর-সম্পত্তি এমনকী স্ত্রী-পুত্র বিক্রি করেও দেবী সিংয়ের নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায় না৷



অবশেষে আসে বিদ্রোহ৷ জাত-পাত নির্বিশেষে রঙ্গপুরের কাজিরহাট, কাকিনা, ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি স্থানের গরিব মানুষরা নদুরদীনের নেতৃত্বে ১৭৮৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টেপায় মিলিত হয়ে দেবী সিংয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন৷ মানুষ নুরুলদীনকে নবাব ও দয়ারাম শীলকে দেওয়ান নির্বাচন করে রঙ্গপুরে গঠন করেন এক পাল্টা প্রশাসন৷ এই মারাত্মক বিদ্রোহ টিকেছিল মাত্রই পাঁচ সপ্তাহ৷ মোগলহাট ও পাটগ্রামের অসম লড়াইয়ে লেফটেন্যান্ট ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে কোম্পানি বাহিনীর হাতে ২১ ফেব্রুয়ারি নিহত হন নুরুলদীন৷ শেষ হয় বিদ্রোহ৷

নাটকে সময়টার একটা সার্বিক ছবি পাওয়া গিয়েছে৷ নুরুলদীনের ভূমিকায় দীপঙ্কর দাস একেবারে অনবদ্য৷ গোটা স্টেজ জুড়ে লাফিয়ে, ঝাঁপিয়ে, লাঠিখেলা দেখিয়ে অসম্ভব ফিজিক্যাল অ্যাক্টিংয়ের পাশাপাশি রঙ্গপুরের ওই অঞ্চলটির ডায়ালেক্ট বলে গিয়েছেন অনর্গল৷ যা মোটেই সহজ কাজ নয়৷ প্রবীণদের পাশাপাশি দলের নবীনরাও খুব ভাল সঙ্গত করেছেন দীপঙ্করের সঙ্গে৷ নুরুল যখন ডাক দেন, 'ধৈর্য সবে, ধৈর্য ধরি করো আন্দোলন/ লাগে না লাগুক, বাহে, এক দুই তিন কিংবা কয়েক জীবন', সর্বহারার চিরন্তন বিপ্লবের দামামা বেজে ওঠে৷ এখানেই নাটকটি সমসাময়িক৷ নাটকে নুরুলের পাশাপাশি আমরা দেখি কোম্পানির অফিসাররা নানা প্রোজেক্টের টাকা আত্মসাত্ করছেন, তার জন্য যুক্তি খাড়া করছেন, কামতাড়িত হয়ে 'নেটিভ মেয়েমানুষ'-এর সঙ্গে বিছানা ভাগ করেছেন, আধুনিকা মহিলাকে বাগে না পেয়ে বদনামের চেষ্টা করছেন! আর বাকি সময়টা শোষণ এবং অত্যাচার৷ বিদ্রোহের বারুদ অতএব তৈরি৷ নুরুল এক যথার্থ অগ্নিশলাকা!

---ইন্দ্রনীল শুক্লা

Viewing all 222 articles
Browse latest View live


<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>