Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all 222 articles
Browse latest View live

নন্দীগ্রাম থেকে কাটোয়া- সবই তো আসলে থেবাই--এর গৃহযুদ্ধ

$
0
0

স্বপ্নসন্ধানীর 'আন্তিগোনে' নাটককটি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেখেছিলেন৷ দেখে তাঁর মনে কোথাও খচখচানি শুরু হয়েছিল৷ সেই অস্বস্তিতে ইন্ধন জোগালো সারা দেশে পরপর ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা৷ তারপর আমাদের দপ্তরে এল এই লেখা



অনেকগুলো ছবি সামনে আসতে লাগল - দৃশ্যপট৷ অয়েদিপাউস, ক্রেয়ন, আন্তিগোনে৷ স্বপ্নসন্ধানীর 'আন্তিগোনে'৷ নাটকটা দেখে কিছু গোলমেলে ব্যাপার লেগেছিল৷ আমি যে আন্তিগোনেকে জানতাম, গ্রিসের থেবাই-এর আন্তিগোনে ---অনেক দিনের কথা৷ নাটকটা দেখে প্রশ্ন করলাম বারবার নিজেকে, নিজের মনকে৷ কেন এখন আন্তিগোনে? এই আন্তিগোনে শিশিরকুমার দাসের অনুবাদ৷ নাটক দেখার পর আরও অনেক অনুষঙ্গ সামনে এলো৷ বাদল সরকারের 'স্পার্টাকাস', জর্জ অরওয়েল-এর '১৯৮৪' থেকে 'বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ', আমার দেখা সাম্প্রতিক সিনেমা আবদেররহমানে সিসাকোর 'টিমবাকটু' --- কখনও আবার সমরেশ মজুমদারের 'আত্মপক্ষ', শঙ্খ ঘোষের 'ইতালিতে কবি'; যেখানে শঙ্খ বাবু বলছেন 'চোখে যা দেখছেন সেটা সবখানি নয়৷ শুধু বলি, রাজনীতি নিয়ে কিছু না বলাই ভালো৷ এখানে কথার কোনও স্বাধীনতা নেই৷ তাছাড়া চারিদিকে গুমখুন৷' নাটকের শুরুতেই প্রহরী ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ আবার দর্শকদের শাসাচ্ছে৷ এক মুহূর্তে চিরন্তন বিরোধ ঘুচলো৷ প্রসেনিয়াম আর থার্ড থিয়েটার৷ মনে এল বাদল সরকারের 'স্পার্টাকাস'৷ অভিনেতারা দর্শকের মধ্যে থেকেই বলছেন, 'স্পার্টাকাস বেঁচে আছে৷ স্পার্টাকাস বেঁচে আছে৷' হঠাত্‍‌ দেখলাম মঞ্চের ওপর থেকে, দর্শক আসনের একদম পাশ থেকে, টর্চের আলো চোখে আসছে অনেকটা সার্চলাইটের মতো৷ আপনাকে স্ক্যান করা হচ্ছে৷ এ নাটক দেখতে আসার যথার্থ পরিবেশ তৈরি হল৷ নাটক শুরুর আগে, আপনি মনে করবেন আন্তিগোনের মত আমরা সকলেই 'অধীন'৷ আন্তিগোনে মৃতদেহ সমাধিস্থ করতে পারেনি আর আমরা ছবি আঁকতে পারব না, আমরা স্লোগান দিতে পারব না, নিজেদের মত মৌনমিছিল করতে পারব না৷ কিংবা 'টিমবাকটু' সিনেমার মতো আমরা সিগারেটও খেতে পারব না৷ ফুটবল খেলতে পারব না৷ গান গাইতেও পারবো না৷ 'হে দুর্লঙ্ঘ ভবিতব্য, এখন তুমিও ঠিক ওইভাবে আমার গলা চেপে ধরে আছো৷ মাথা কাটা গেছে, আমি শুধু রক্তটুকু বেরতে দেখার স্বাধীনতা চাইছি --- পাচ্ছিনা৷' ('অধীন', জয় গোস্বামী )৷

নাটকে ব্যবহার করা হয়েছে মৃতদেহকে৷ মৃতদেহের স্তূপ৷ এত মৃতদেহ! এত মৃতদেহ! এত মৃতদেহ! ভয় করছিল৷

আমি যে সময় বসে এই লেখাটা লিখছি, সেই সময়ে সংবাদের প্রথম পাতাটা ভাবুন তো! মা মেয়েকে কাটছে, প্রেমিক প্রেমিকাকে কাটছে, ভাই বোনকে কাটছে --- রক্তাক্ত, বিধ্বস্ত, ভয়ঙ্কর এ চারপাশ৷ আন্তিগোনের থেবে আর আমার -আপনার ভারতবর্ষ, এমনকি পশ্চিমবঙ্গও --- কি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে? নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক সংঘর্ষ, নানুর, কাটোয়া, সবং, জঙ্গলমহল --- এ সব সংঘর্ষ আসলে থেবাইয়ের গৃহযুদ্ধই তো৷ যেখানে পলিনাইক্লেস আর ইথিওক্লেস লড়ছে, দুজনেই মারা যাচ্ছে৷ তাদের মধ্যে একজনকে বানানো হচ্ছে শহীদ আর অন্যজনকে তকমা দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহীর৷

'আন্তিগোনে' সবসময়ের নাটক৷ 'আন্তিগোনে' আমার প্রিয় নাটকের একটি৷ সেদিন যখন দেখলাম হাম্পির প্রফেসরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, কিংবা কিছুদিন আগে বাংলাদেশের ব্লগারদের মারা হচ্ছে তখন মনে হল এই নাটক অন্তত বছরে একবার কোথাও না কোথাও অভিনীত হওয়া দরকার৷ কৌশিক সেনকে অনুরোধ করব উনি যেন সেটা করেন৷আন্তিগোনে ক্রেয়নের কাছে জানতে চেয়েছিল, সুখ মানে কী? ক্রেয়ন বলেছিল, 'সুখ মানে সুখ, আন্তিগোনে! এ একটা কেমন প্রশ্ন করলে?' আর আমি বলবো, সুখের মানে যে আমি এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছি আন্তিগোনে৷ যার উত্তর কোন রাষ্ট্রনায়কই এখনও আমাদের দিতে পারেননি৷


জরা বাঁচকে, জরা হটকে, ইয়ে হ্যায় 'মুম্বাই' মেরি জান

$
0
0

ছিল 'টুয়েলফস নাইট'৷ নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার৷ সময় ষোড়শ শতাব্দীর ইংল্যান্ড৷ ব্রাত্য বসুর হাতে পড়ে তাই হয়ে গেল 'মুম্বাই নাইটস'৷ সময়, এ সময়ের মুম্বই৷ আজই মিনার্ভা থিয়েটারে প্রথম অভিনয়৷ তার আগে বন্ধ কপাটের পিছনে সেই নাটক দেখে ফেললেন ইন্দ্রনীল শুক্লা



উত্‍পল দত্ত সরণিতে ঢুকে পড়লেন শেক্ষপীর৷ তবে যেভাবে আগে ঢুকেছিলেন এ তল্লাটে, সেভাবে নয়৷ তল্লাটের নামও তখন অন্য ছিল৷ গায়ে তাঁর লারেলাপ্পা টাপোরি জামা৷ বলিউডি পোস্টারের নায়িকা চোখ টিপে তাঁকে স্বাগত জানালেন৷ ফ্লাইং কিস উড়ে এল ফিল্মি ইশারায়৷ স্যাক্স, গিটার, ড্রাম, বেজে উঠল ঝমাঝম৷ বাজলো গান, 'পিয়া তু আব তো আজা'৷ সিটি ছুঁড়ে দিলেন তিনি... হেঁয়ালি মনে হচ্ছে? কিন্ত্ত ব্যাপারটা খানিক এ রকমই৷ ষোড়শ শতকের ইংলন্ডে তৈরি কমেডি 'টুয়েলফথ নাইট'কে নতুন এক আঙ্গিকে উপস্থাপনা করতে চলেছে মিনার্ভা নাট্যচর্চাকেন্দ্র৷ সেই হারিয়ে যাওয়া ভাইবোন সেবাস্টিয়ান, ভায়োলার গল্প৷ সেই ইলিরিয়ার ডিউক, তাঁর হার্টথ্রব অলিভিয়া, সেই বিটকেল মামা স্যর টোবি বেলচ, আর তাঁর পিছনে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকা স্যার অ্যান্ড্রূ, সকলেই আছেন৷ কিন্ত্ত তাঁদের নাম বদলে বদলে গিয়েছে৷ বিহেভিহেরাল প্যাটার্ন বদলে গিয়েছে৷ সেতো হতেই হবে৷ প্রেক্ষিতটাও যে বদলে গিয়েছে নাটকে৷ এ তো অ্যাড্রিয়াটিক সাগরতীরের ইলিরিয়া শহর নয়৷ আর জাহাজডুবির পর ভাইবোন আলাদা হয়েছেন, এমনও নয়৷ এ তো আরব সাগরতীরের মুম্বই৷ যেখানে ভাগ্যসন্ধানে এসে এক বিস্ফোরণের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন যমজ ভাইবোন (হুমা আর আসগর)৷ তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন? সে শহরের নাম করাচি, যাকে মুম্বইয়ের টুইন শহরও বলা হয়৷ কাজেই মায়ানগরীতে তো ডিউক নন, প্রোডিউসার (আলিশান কুলকার্নি) ক্ষমতাশালী মানুষ৷

তিনি কামনা করতে পারেন কোনও অনিন্দ্যসুন্দরী নায়িকাকে (উষ্ণতা)৷ আর তাঁর অ্যাসিস্টান্ট হিসেবে ছেলে সেজে কাজে যোগ দিতে পারেন বিচ্ছিন্ন হওয়া বোন৷ আছেন মদে ডুবে থাকা মামা৷ আর আছেন নায়িকাকে বিয়ে করতে চেয়ে ঘ্যানঘ্যান করা পুলিশকর্তা৷ সকলের টিকি বাঁধা আছে আরও অনেক অনেক বড় কোনও ডনের কাছে৷ এ ভাবেই তৈরি হয়েছে 'মুম্বাই নাইটস'৷

এমন অ্যাডাপটেশনের ব্যাপারটা... পরিচালক ব্রাত্য বসু বললেন, 'মুম্বইতে 'ম্যাকবেথ' থেকে 'মকবুল হয়েছে, 'ওথেলো' থেকে 'ওংকারা' হয়েছে, 'হ্যামলেট' থেকে 'হায়দর' হয়েছে৷ কিন্ত্ত কমেডি থেকে অ্যাডাপটেশন সেভাবে হয়নি৷ বাংলাতেও হয়নি৷ সেটারই একটা চেষ্টা করেছি আমরা৷' আরও খানিক ব্যাখ্যা করে বললেন, 'আসলে শেক্সপিয়ারের কমেডি-র মধ্যে একটা কার্নিভ্যাল আছে৷ উত্‍সব আছে৷ সেখানে নানা কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত নানা শ্রেণির মানুষ থাকেন৷ ব্যারন থেকে ভিখিরি, ডিউক থেকে বেশ্যা সবাই উপস্থিত৷ নানা পুরুষ, নানা রমণী এখানে মিলেমিশে যান৷ এমন ব্যাপ্তিসম্পন্ন প্রেক্ষাপটকে মিলিয়ে নিতেই আমরা মুম্বইকে বেছে নিয়েছি৷ যেখানে বলিউড আছে, ক্রিকেট আছে, বেটিং আছে, আন্ডারওয়ার্ল্ড আছে!' উল্লেখ্য, এ নাটকে ছোটা রাজন, ছোটা শাকিল, দাউদ ইব্রাহিম, অরুণ গাউলি, আদিত্য পাঞ্চোলি, অমিতাভ, অভিষেক, ঐশ্বর্যা, তারান্নুম খানসবাই কোনও না কোনওভাবে এসেছেন৷ এমনকী আসারাম বাপু পর্যন্ত বাদ যাননি লিস্ট থেকে৷
ওই কমেডিকে অ্যাডাপ্ট করে স্ক্রিপ্ট গড়েছেন যিনি, সেই দেবাশিস রায়ের থেকে জানা গেল, হুসেন জায়েদি-র 'ডোঙ্গরি টু দুবাই', 'মাফিয়া কুইন অফ মুম্বই', রোহিত খিল্লানি-র 'আই হেট বলিউড', সুকেত মেহতা-র 'ম্যাক্সিমাম সিটি'-র মতো বইগুলো পড়ে তাঁর মনে হয় এমন একটা জায়গায় 'টুয়েলফথ নাইট'কে ফেলে দেখা যেতে পারে৷ শুনে রাজি হয়ে গেলেন ব্রাত্য?

দেবাশিস হেসে বললেন, 'হ্যাঁ, ব্রাত্যদা আমায় বলেছিলেন শেক্সপিয়ারের কোনও রোম্যান্টিক কমেডি নিয়ে কাজ করতে৷ আমি এই আইডিয়াটা শোনাই৷ আমি নিজেও ভাবছিলাম উনি সম্মতি দেবেন কিনা৷ কিন্ত্ত দেখলাম ওঁর দারুন ভালো লেগে গেল৷' ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া উত্‍সব বারোতম দিনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যেত ইউরোপে৷ সে সময়ে কোনও যুক্তি, তক্কো কাজ করে না৷ মানুষ উত্‍সবে ভেসে যেতে চান৷ একটা ইলিউশন, হ্যালুসিনেশন-এর মধ্যে চলতে থাকে সময়৷ সেই মধ্যযুগীয় ক্রুর অথচ রঙ্গীন, লাল অথচ কলাপাতা সবুজ এনার্জিকেই কমেডিতে ঢেলে দিতে চেয়েছিলেন শেক্সপিয়র৷ চারশো বছর আগের কমেডি-র এই মোডটা মাথায় রেখেই গড়া হয়েছে 'মুম্বাই নাইটস'৷ নেচে, গেয়ে, লাফিয়ে, ঝাঁপিয়ে, মাতলামি করে, হুমড়ি খেয়ে পড়ে একেবারে পূর্ণশক্তিতে ঝাঁপ দিয়েছেন রেপার্টরির অভিনেতারা৷ সুমনা, সুমিত, প্রসেনজিতের মতো পুরনোরা তো রয়েইছেন, তাক লাগিয়ে দেবেন রায়তী, সৈকত, অনন্যা, পার্থসারথি, পার্থ সিনহা, মধুমিতা, সন্দীপনরাও৷ আর গৌতম হালদারকে এ নাটকে লুক থেকে শুরু করে ডায়ালগ থ্রোয়িংয়ে, একেবারে অন্যরূপে পাওয়া যাবে৷ দেবাশিস বলছেন, 'রেপার্টরি ছাড়া এই প্রোডাকশন করাই যেত না৷ অনেকখানি করে সময় প্রত্যেককে দিতে হয়েছে৷ ১৪-১৫ ঘণ্টা করেও রিসার্হাস হয়েছে একেক দিন৷'

প্রসঙ্গত, এ নাটকে কস্টিউম বেশ সাহসী৷ বেশ রিভিলিং পোশাকও আছে! টিপিক্যাল বলিউডকে চোখের সামনে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে সেটা তো করতেও হতো, তাই না? কস্টিউম ডিজাইনার সঙ্গীতা পাল বললেন, 'হ্যাঁ, আর এইসব পোশাক পরতে হলে টানটান চেহারাও ধরে রাখতে হবে, নাহলে ভালগার লাগবে৷ তাই এক্সারসাইজ করে নিজেদের লুক পারফেক্ট করতে হয়েছে অনেককে৷ বার ডান্সার, আইটেম নাচিয়ে, ডন, নায়িকা, পুলিশ, ভাগ্যান্বেষী, ভিখিরি কে না আছেন এ নাটকে? তাই পোশাকও ডিজাইন করতে হয়েছে নানা রকমের৷' নাটকে নাচ-গানও উল্লেখ করার মতো৷ ডান্স ডিরেকশনে মুম্বই স্টাইলকে চাক্ষুখ করাচ্ছেন সঞ্জয় রায়৷ লাইভ মিউজিকে স্যাক্সোফোন, ড্রামস, ইলেকট্রিক গিটারে শোনা যায় 'মনিকা মাই ডার্লিং', 'ডন', 'যব ছায়ে তেরা জাদু' থেকে শুরু করে 'কিছুখন আরও নাহয় রহিলে কাছে'-র মতো গান৷ কিন্ত্ত অ্যারেঞ্জমেন্ট পাল্টে৷ রিদম বদলে৷ এই লাইভ মিউজিকের দায়িত্বে থাকা শুভদীপ গুহ বললেন, 'নাটকের মিউজিক ছাড়াও বছর তিনেক কলকাতার কিছু ক্লাব, পাব-এ গেয়েছি৷ দেখেছি, পাব-এ একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়, আমরা গেয়ে চলেছি, মানুষ শুনছেনও, কিন্ত্ত কানেক্ট হচ্ছে না৷ এখানেও এই ব্যাপারটা আছে৷ গানগুলো রানিং কমেন্ট্রির মতো৷ কিন্ত্ত আলাদা করে শোনা যাচ্ছে না৷ কখনোই ব্যান্ডকে আর্টিফিশিয়াল মনে হবে না৷ এঁরা নাটকের মূল অংশের সঙ্গেই মিশে রয়েছেন৷ কাজটায় দিশারী আমায় খুব সাহায্য করেছে৷' দীনেশ পোদ্দারের আলো একেবারে ভাসিয়ে দেয় মঞ্চকে, সে আলোয় মায়ানগরীর বুদবুদ অলীকতাও ধরা দেয়৷ কিন্ত্ত এত ধুমধাম, নাচ-গানের মধ্যেও কোথাও একটা কোমল স্বরও কি নেই?
ব্রাত্য বলছেন, 'হ্যাঁ, তাতো রয়েইছে৷ একটা ব্যাপার খেয়াল করতে হবে, বিস্ফোরণ, আন্ডারওয়ার্ল্ড সবের মধ্যেও কিন্ত্ত প্রতিটা মানুষ ভালোবাসার খোঁজ করছে৷ মনের মানুষকে খুঁজছে৷' একটা রাজ্যে নির্বাচনে হেরে গেলে পাশের দেশে বাজি ফাটবে বলে যখন প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করতে পারেন এক অতি প্রভাবশালী রাজনীতিক, তখন করাচি থেকে মুম্বই এসে ভালোবাসার সন্ধান করা, সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া তাত্‍পর্যপূর্ণ বৈকী! তবু সে 'মন্মানী', 'মনমরজিয়া'কে ছাপিয়ে উত্‍সব আমাদের ছেয়ে ফেলে৷ নেশায় হাত ফসকে যায়, 'জাম' চলকে যায়, দৃষ্টি ঝাপসা হয়! ওমা! ওই তো মিনার্ভার সামনে, দীপাবলির আলো মেখে, গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছেন শেক্ষপীর! সঙ্গে গলা জড়িয়ে মিউজিকে তাল দিচ্ছেন ব্রেখট! নিশ্চয়ই ভুল দেখছি! নির্ঘাত্‍ নেশা হয়ে গিয়েছে!

মিনার্ভা রেপার্টরির 'মুম্বাই নাইটস' আপনার কেমন লাগল? লিখুন আপনার মত...

'বেবি' ঋ, খান কী?

$
0
0

উত্তর পেট্রোল। নবারুণ ভট্টাচার্যের পাঁচ খানা গল্প একসুতোয় বেঁধে একটা নাটক৷ কেন্দ্রীয় চরিত্রে এক পতিতার ভূমিকায় ঋ৷ সঙ্গে শুভাশিষ 'হারবার্ট' মুখোপাধ্যায়৷ নাটকপাড়ায় খোঁজ নিলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

জিজ্ঞাসা করলে হয়তো অনেকেই সরাসরি 'না' বলবেন৷ কিন্ত্ত পেনড্রাইভে 'গাণ্ডু' ছবিটা সেভ করে রেখেছেন, নিজে দেখেছেন, বন্ধুদের দেখিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাটা বোধহয় খুব কম নয়৷ সেই ফ্রন্টাল ন্যুডিটি, ব্লো-জব, ক্যাটি চাহনি তো ভোলার নয়৷ তাই এমন ছবি রিলিজ না হলেও 'ভিউয়ার'-এর অভাব হয়নি৷ সেই ছবির সেই যে নায়িকা ঋ, তাঁকেই এ বার পাওয়া যাবে মঞ্চে৷ এই প্রথমবার৷ স্যাবোট্যুর আর্ট প্রোডাকশন প্রযোজিত নাটক 'বেবী k'-তে৷ নাটকের নামভূমিকাতেই আছেন ঋ৷ নবারুণ ভট্টাচার্যের কাহিনি অবলম্বনে এ নাটক রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন সুপ্রতিম রায়৷ অভিনয়ে ঋ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন শুভাশিষ মুখোপাধ্যায়৷ এছাড়াও ফায়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ম্যান হিসেবে আছেন যথাক্রমে বিশ্বজিত্‍ দাস ও তরঙ্গ সরকার, যাঁরা থিয়েটারের যথেষ্ট পরিচিত অভিনেতা৷ মিউজিক করেছেন নীল অধিকারী৷

হঠাত্‍ নাটকে? ঋ বললেন, 'থিয়েটার আমার খুব ভালো লাগে৷ প্রায়ই নাটক দেখি৷ আরও আগেই আমার থিয়েটারে আসা উচিত ছিল৷ এর আগে বেশ কয়েকবার মঞ্চে অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছি৷ কিন্ত্ত বেবী-k চরিত্রটায় অভিনয় করার সুযোগটা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম৷ নবারুণদার লেখার সঙ্গে অনেকদিনই পরিচয় আছে৷ সেটাও আমায় রোলটা করতে অনুপ্রাণিত করেছে৷ আর একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি তো সব মিডিয়ামেই কাজ করতে চাই৷ শুধু সিনেমাই কেন!' উল্লেখ্য, নবারুণ ভট্টাচার্যের উপর কিউ নির্মিত তথ্যচিত্রটিতেও কাজ করেছিলেন ঋ৷ তাঁকে পাওয়া গিয়েছিল মেঘমালা-র রোলে৷ আবার ওই ডকু সম্পাদনার কাজে যুক্ত ছিলেন সুপ্রতিম, যিনি নিয়মিতভাবে নবারুণের বাড়ি যাতায়াত করতেন৷ এবং এর আগে ফ্যাতাড়ুদের নিয়ে 'ফ্যাতাড়ুর কিস্্সা' মঞ্চস্থও করেন৷

নাটকের অপর গুরুত্বপূর্ণ রোল পারিজাত হিসেবে যাঁকে পাওয়া যাচ্ছে, সেই শুভাশিষ মুখোপাধ্যায়ও নবারুণে অভিজ্ঞ৷ তিনি নিজেও বললেন, 'নবারুণদা-র সৃষ্ট হারবার্ট চরিত্রে সিনেমায় কাজ করাটা আমার অভিনয়ের জীবনে একটা অন্য দিক খুলে দিয়েছে৷ তাই এই নাটকে কাজ করাটা অনেকটা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য বলা চলে৷ তাছাড়া তরুণ পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে আমার ভাল লাগে৷ তাদের ভাবনায়, চিন্তায় নতুনত্ব থাকে৷'

সুপ্রতিম জানালেন, নবারুণের মোট পাঁচটি গল্প বুনে এই নাটক তৈরি করা হয়েছে৷ সেগুলি হল, 'বেবী k', 'পারিজাত ও বেবী k', 'আমেরিকান পেট্রোম্যাক্স', 'ফায়ার ফাইট', 'বেবী k, পারিজাত, পঙ্গপাল ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ'৷ এই প্রসঙ্গে বলে নেওয়া দরকার নবারুণের কাহিনি 'বেবী k'-র পুরো কথাটা হল বেবী খা*কি৷ সুপ্রতিম বলেন, 'নাটকটা অবশ্যই পলিটিক্যাল৷ তবে শুধুমাত্র কোনও স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না৷ ওয়ার্ল্ড পলিটিক্সকে যেভাবে লেখার মধ্যে নিয়ে আসতেন নবারুণদা, তেমনটাই রাখার চেষ্টা হয়েছে নাটকে৷' নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র বেবী k সারাদিন পেট্রোল খেয়ে কাটায়৷ তার চক্কড়ে পড়ে যায় পারিজাত৷ বাড়িঘর উচ্ছন্নে পাঠিয়ে তার পিছনেই টাকা খরচ করতে থাকে৷ তাকে বিস্ফোরণের ব্যাপারে আগাম ভয় দেখায় ফায়ারম্যান৷ মধ্যস্থতার চেষ্টা করে মিউচ্যুয়াল ম্যান৷ এক ফাঁকে ফ্যাতাড়ু সিরিজের মদনও ঘুরে যায় মঞ্চে৷ দেখা মেলে সেই 'খেলনানগর'-এর সেই হাই-এন্ড গুপ্তচর উইন্ডচিটারেরও৷ কতখানি পাওয়া গেল সে নবারুণি মেজাজ তা প্রথমবার দেখা যাবে আগামী ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়, তপন থিয়েটারে৷







নজরে নান্দীকার উত্‍‌সব

$
0
0

শীত পড়ুক বা না পড়ুক, আবার এসে পড়ল নান্দীকার উত্‍সব৷ নেতৃত্বে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত৷ স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর কথা, সুরে, সঙ্গীতায়োজনে সোহিনীর গাওয়া নান্দীকার উত্‍সবের এই থিম-গান ইতিমধ্যেই 'হিট' ইউটিউবে: 'আকাশেতে চাঁদের বুড়ি/ মাথায় পাকা চুল/ তারারা সব তাকে ঘিরে/ নেচেই মশগুল'৷ শুরু হয়েছে টিকিটের খোঁজ৷ ১০ দিনে (অ্যাকাডেমি, ১৬-২৫ ডিসেম্বর)২২ নাটকের উত্‍সব৷ ভিন রাজ্যের কয়েকটি নাটক সম্পর্কে জানাচ্ছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

হেলেন (উইংগস থিয়েটার, অসম)

১৮ ডিসেম্বর, ৩টে


হেলেন কেলারের জীবন অবলম্বনে তৈরি এ নাটকের স্রষ্টা ও পরিচালক কিসমত বানো৷ কেমন করে সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে হেলেনের মুখোমুখি হলেন তাঁর শিক্ষক অ্যানি৷ কেমন করে জন্মান্ধ এই শিশুকে স্পর্শের মাধ্যমে জগতকে চেনাতে লাগলেন৷ আলোর ছোঁয়া, অন্ধকারের অনুভূতির তফাত্‍ বোঝালেন৷ কল চালিয়ে হাতের উপর বয়ে যাওয়া তরলকে চেনালেন 'জল' বলে৷ অবাক হল সে শিশু৷ একে একে পরিচয় ঘটল বাড়ির আসবাবপত্র, টেবিল-চেয়ার, খাট-বিছানা ইত্যাদির সঙ্গে৷ এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার শেষে অ্যানি নিজের সঙ্গেও হেলেনের পরিচয় করালেন 'শিক্ষক' হিসেবে!

আবু (নাট্যচেতনা, ওড়িশা)

২০ ডিসেম্বর, ৩টে


সুবোধ পট্টনায়ক রচিত, পরিচালিত এ নাটক শুরু হয় এক স্কুলছাত্রকে কেন্দ্র করে৷ ছেলেটি পড়াশোনায় ভাল, কিন্ত্ত মাথায় রয়েছে মস্ত টিউমার৷ তাই তার পিছনে লাগে বন্ধুরা৷ এক ডাক্তার জানান এটি পৃথিবীর বৃহত্তম টিউমার৷ ছেলেটি ততদিনে বড় হয়েছে৷ তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মিডিয়া৷ হঠাত্‍ করেই অ্যাড দুনিয়া তাকে নিয়ে উত্তাল৷ রাজনীতিকরাও চাইছে তাকে দলে টানতে৷ বিরোধীরা চাইছে তার মাথার টিউমার খসিয়ে দিতে, যাতে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে৷ কি হবে তার পরিণতি!

গজব তেরি আদা (এনএসডি, দিল্লি)

২১ ডিসেম্বর, সাড়ে ৬টা


অ্যারিস্টোফেনিসের 'লিয়াস্ট্রাটা' অবলম্বনে এ নাটক রচনা করেছেন ওয়ামান কেন্দ্রে৷ পরিচালনাও তাঁরই৷ স্থান, কালের এক কাল্পনিক সমতলে চলে এ নাটকের ঘটনাবর্ত৷ নাটক শুরু হয় একশোতম যুদ্ধের অবসানে৷ নিহত সৈনিকদের চিরবিদায় জানাতে শোকে আকুল আত্মীয়-পরিজন৷ আর যুদ্ধ চান না রাজ্যের মহিলারা৷ তাঁরা একজোট হন যুদ্ধ থামাতে৷ সকল স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে, দেহ দিতে নারাজ গণিকা, এমনকী রানিও রাজার বিরুদ্ধে৷ থামবে যুদ্ধ? ফিরবে শান্তি?

ঘাসিরাম কোতয়াল (এনএসডি, দিল্লি)

২২ ডিসেম্বর, সন্ধে সাড়ে ৬টা


বিজয় তেন্ডুলকর রচিত এ নাটক পরিচালনা করছেন রাজিন্দর নাথ৷ আপাতভাবে এ নাটককে মনে হবে ঐতিহাসিক নাটক৷ একটা সময়কাল আমাদের সামনে আসে৷ মহারাষ্ট্রের শাসন যখন নানা ফরনবীশের হাতে৷ রাজপুরুষদের দাপাদাপি৷ প্রেক্ষাপট এমন ঐতিহাসিক হলেও নাটকের আড়ালে অন্য এক বীজ বপন করে রেখেছেন নাট্যকার৷ আমরা দেখতে পাই কেমন করে আঞ্চলিক দল গড়ে ওঠে৷ দেখতে পাই নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কেমন করে অলীক আদর্শকে সামনে তুলে আনেন রাজনীতিকরা৷ স্বার্থ ফুরোলে সেসব খতমও করেন!

আষাধাটিল এক দিবস (শ্রী সিদ্ধিবিনায়ক, মহারাষ্ট্র)

২৪ ডিসেম্বর, সকাল ১০টা


মোহন রাকেশের একটি হিন্দি নাটক অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে এই মারাঠি নাটক৷ পরিচালনায় অতুল পেঠে৷ কবি কালিদাস আর তাঁর প্রেয়সী মল্লিকাকে নিয়ে রচিত এ নাটক৷ সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের তরফে রাজসভাকবি হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও মল্লিকাকে ছেড়ে উজ্জ্বয়িনী যেতে দ্বিধাগ্রস্ত৷ কালিদাসের 'বন্ধু' ভিলোম চাইছে এই সুযোগে মল্লিকার মন জয় করে নিতে৷ উজ্জ্বয়িনীতে পরিস্থিতির চাপে সম্রাটের কন্যাকে বিয়ে করেন কালিদাস৷ একসময়ে গ্রামে ফিরেও আসেন৷ মল্লিকার মুখোমুখি হওয়ার পর দারুণ মোড় নেয় নাটক!

স্ত্রী সুবোধিনী (ওরজা, দিল্লি)

২৪ ডিসেম্বর, দুপুর ৩টে


শ্রীমতী মানু ভান্ডারির গল্প অবলম্বনে তৈরি এ নাটকের পরিচালনায় ত্রিপুরারি শর্মা৷ এ নাটকে এক বিবাহিত পুুুরুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা বলতে শুরু করেন এক অবিবাহিত মহিলা৷ কিন্ত্ত এটা তো আর পাঁচটা গতানুগতিক, সমাজসম্মত সম্পর্কের মধ্যে পড়ে না৷ তাই এইরকম একটা সম্পর্কে জড়ালে কী অবস্থার মধ্যে পড়তে হতে পারে সে সম্পর্কে তরুণীদের সচেতন করতে থাকেন ওই মহিলা৷ ওই ভদ্রলোক অর্থাত্‍ ইনকাম ট্যাক্স অফিসার সিন্ডে সাহেব নিজের বিয়ের ব্যাপারটা কি একেবারে চেপেই গিয়েছিলেন এই মহিলার কাছে? গল্পটা শুনতেই হবে!

নাটকের স্পনসর নেই, পকেটমানি তো আছে

$
0
0

তাই পিছু হঠারও প্রশ্ন নেই৷ এমনটাই মত আশুতোষ কলেজের নাটকের দলের৷ লিখছেন দেবলীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায়

দলের নাম 'অভিশ্রী'৷ তাদের নতুন প্রজেক্ট 'তাসের দেশ'৷ তবে এবার শুধু দলের নাট্যকর্মীরাই অভিনয় করবেন না৷ সঙ্গে থাকবে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফসেরিব্রাল পালসির কচিকাঁচারাও৷ হঠাত্‍ এরকম উদ্যোগ কেন? দলের অন্যতম প্রধান অভিনেতা রুদ্রাণী কাঞ্জিলাল জানাচ্ছেন, 'আমরা সব সময়ই এমন নাটক করি যেখানে সমাজের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা ফুটে ওঠে৷ আমাদের শেষ নাটকটাও ছিল দলিতদের নিয়ে৷ সেটা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে৷ পুরস্কারও পেয়েছি৷ তাই ভাবলাম সেরিব্রাল পালসির বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করলে ওদের ভালো লাগবে আর আমরাও অনেক কিছু শিখতে পারব৷'

এর জন্যে তো রীতিমতো ট্রেনিং দরকার৷ 'আমরা অনেক পড়াশোনা করছি ওদের নিয়ে৷ কী করে ওদের সঙ্গে কমিউনিকেট করা যায় সেটাও শিখছি৷ বিষয়টা সহজ নয়৷ কিন্ত্ত আমরাও হাল ছাড়ছি না৷ আপাতত ছয় থেকে আঠারো বছর বয়সীদের নিয়ে আমরা কাজ করব৷ সামনের দু'মাস আমরা ওয়ার্কশপ করব৷ দেখব ওদের কার কোন দিকে আগ্রহ৷ যে গান ভালোবাসবে তাকে দিয়ে গান করাব, নাচ ভালোবাসলে নাচ৷ বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও কোনও সমস্যা নেই৷ পুরো ওয়ার্কশপটা আমরা ভিডিও রেকর্ডিং করে একটা ডকুমেন্টরিও বানাব৷ 'তাসের দেশ' করার ইচ্ছে রয়েছে৷ কিন্ত্ত ওদের কমফর্ট জোনের ভিতরে রাখার চেষ্টা করব৷ তাই কিছুটা ইমপ্রোভাইজ করতে হলেও কোনও ক্ষতি নেই৷ '-জানাচ্ছেন রুদ্রাণী৷

সবই তো হল৷ কিন্ত্ত খরচ আসবে কোথা থেকে? রুদ্রাণী জানাচ্ছেন, 'আমরা অনেককেই অফিসিয়াল চিঠি পাঠিয়েছি৷ কিন্ত্ত কোনও উত্তর পাইনি এখনও৷ কলেজ স্টুডেন্ট বলে হয়তো কেউ সিরিয়াসলি নিচ্ছে না৷ ভাবছে এরকম একটা প্রজেক্ট আমরা সামলাতে পারব না৷ তবে স্পনসর পাই আর না পাই এই প্রজেক্ট বাতিল হবে না৷ আমরা প্রত্যেকেই টাকা জমিয়েছি৷ নিজেদের সব পুঁজি লাগিয়ে দেব৷ কিন্ত্ত নাটকটা করবই৷'

‘আমাকে এমন প্রযোজক খুঁজতে হয় যিনি যথেষ্ট শিক্ষিত’

$
0
0

আর তাই নাকি প্রোডিউসার পান না৷ কলকাতায় নাটক করতে এসে বললেন রজত কাপুর৷ শুনলেন দেবলীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায়

কলকাতা আর থিয়েটার

কলকাতার থিয়েটার সম্বন্ধে আমি সত্যি কিছু জানি না৷ শুধু এটুকু বলতে পারি আজ ১০ বছর ধরে আমরা কলকাতায় থিয়েটার করছি৷ কেন? উত্তরটা খুব সোজা৷ অডিয়েন্স পাই বলে৷ তবে সঙ্গে এটাও বলবো বেঙ্গালুরু বা মুম্বইয়ের থেকে বেশি নয়৷ তবে হ্যাঁ, কলকাতার মানুষ নাটক বোঝেন ---এটুকু বলতে পারি৷ তাই তো আমাদের এই নতুন নাটক 'হোয়াট ডান ইজ ডান'-এর প্রথম শো কলকাতায় করলাম৷ এটা শেক্সপিয়ারের 'ম্যাকবেথ' অনুপ্রাণিত৷ তবে এখানে লেডি ম্যাকবেথ, ম্যাকবেথ আর থ্রি উইচেস নেই৷ অন্যভাবে প্রেজেন্ট করেছি পুরো জিনিসটাকে৷ দর্শকদের ভালো লেগেছে৷ এবার আমরা নিশ্চিন্তে আরও শো করতে পারব৷

'আঁখো দেখি'র পর

আমি পরপর ফিল্ম করি না৷ বলা ভালো, করতে পারি না৷ কারণ সমস্যা একটাই৷ প্রোডিউসার পাই না৷ প্রতিবার আমাকে এমন একজন প্রযোজক খুঁজতে হয় যিনি শেষ পর্যন্ত ফিল্মটার সঙ্গে লেগে থাকবেন আর যথেষ্ট শিক্ষিতও হবেন৷ না-হলে আমি তাঁকে আমার ফিল্মের কনসেপ্ট বোঝাতেই পারব না৷ আমার কাছে এই মুহূর্তে তিনটে স্ক্রিপ্ট রয়েছে৷ তিনটে নিয়েই আমি খুব উত্সাহী৷ আগামী ৪ -৫ বছরের মধ্যে ফিল্মগুলো বানিয়ে ফেলার ইচ্ছে রয়েছে৷ কিন্ত্ত টাকা নেই৷ প্রযোজক আসে, নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেয় তারপর উবে যায়৷ আবার নতুন কেউ আসে, আবার একই ঘটনা ঘটে৷ কখনও কখনও বিষয়টা খুব হতাশাজনক হয়ে যায়৷ কিন্ত্ত কিছু করার নেই৷ আমি যে ধরনের ছবি বানাতে চাই তার জন্যে এর জন্যে মানসিক প্রস্ত্ততি রাখতেই হবে৷ তাই যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করি৷ তাই অপেক্ষা করছি৷ আশাকরি ২০১৬ -য় কোনও প্রডিউসার পাবো৷

বাণিজ্যিক ছবি আর ভিন্ন ধারার ছবি

দুটো ব্যালেন্স করা খুবই সোজা৷ আমি যখন অভিনয় করি তখন স্ক্রিপ্ট আর আমার চরিত্রটা কেমন তা দেখি৷ যদি দেখি চিত্রনাট্যটা ভালো আর আমার চরিত্রটার কিছু করার আছে ছবিতে, তাহলে করি৷ কোন জনারের তা ভেবে দেখি না৷ বাজেট কীরকম তাও দেখি না৷ কত বড় প্রযোজক-পরিচালক রয়েছেন সেটাও ভাবি না৷ তবে পরিচালক হিসেবে আমি এক্কেবারে অন্যরকম৷ নিজের পছন্দ থেকে এক চুল সরি না৷ আমি শুধু আমার মনের মতো ছবি বানাই৷ এমন একটা ফিল্ম যা খুব সংবেদনশীল আর ভালোভাবে তৈরি করা হবে৷ এসথেটিকালি খুব রিচ হবে৷ এমন একটা ছবি যা বানিয়ে সারা জীবন গর্ব করতে পারব৷ এই ধরনের ফিল্মকে যদি বানিজ্যিক বলেন তো বাণিজ্যিক, অন্য ধারার বললে তাই৷ আমি আলাদা করে বিভাগ বানাতে পারব না৷

নতুনদের জন্য

কখনও স্বপ্ন দেখা থামাবেন না৷ ঘুমিয়ে-জেগে স্বপ্ন দেখাটা চালিয়ে যাবেন৷ ওটাই সব৷ আমাকে দেখুন৷ প্রযোজক নেই৷ তবু তিনটে স্ক্রিপ্ট তৈরি৷ আমি পারলে আপনারাও পারবেন৷

আগুনের মাঝে এক রাজা

$
0
0

সেই রোম সাম্রাজ্য৷ সেই পুড়তে থাকা রাজধানী৷ আর এক একাকী সম্রাট৷ যাঁর হাতে লাইয়ার এবং রক্তের দাগ! মঞ্চে নিরোকে চাক্ষুষ করলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

'এভাবেই আমি নির্বাচন করতে পারি আমার মৃত্যু, আমার অভিপ্রায়৷ জীবন নির্গমনের, সে তো প্রসারিত অজস্র দিকে৷ আমি তো নির্বাচন করতেই পারি যে কোনও একটা পথ৷ সেখানেই আমার স্বাধীনতা, সেখানেই আমার মুক্তি ...৷'

একথা বলতে পারেন যিনি , তিনি সম্রাট নিরো৷ আশ্চর্য রকমের অহংকারী রোম সম্রাট৷ আর অহংকার থেকেই তিনি নির্দেশ দেন নিজেকে হত্যা করার ! আসলে তিনি মানুষটাই বড় অদ্ভুত৷ কবিতা , সঙ্গীত , কলা যেমন তাঁর ভিতরে বয়ে চলে , তেমনই বয়ে যায় প্রতিহিংসার লাভাও৷ সিংহাসন , ক্ষমতা কোথাও একটা ছিন্নভিন্ন করে দেয় ভিতরে ভিতরে৷ তিনি নিজেকে যেমন পোড়াতে থাকেন , তেমনই ওই আগুনে পুড়ে যায় রোম , আর শতাব্দীর জমা হওয়া সভ্যতা , আভিজাত্য৷ আগুনের স্তম্ভের মাঝে দাঁড়িয়ে , অক্টেভিয়া আর রোমবাসীর প্রতিরোধের মুখে দাঁড়িয়ে , অভিভাবক তথা শিক্ষক সেনেকার নিরাসক্ত ঐতিহাসিক দর্শকের সকাশে দাঁড়িয়েও নিরো নিজেকে ক্ষমতার শিখর থেকে বিচ্যুত হতে দিতে চান না৷

মনে পড়বে সেই অল্প বয়সে মারা যাওয়া প্রবল সম্ভাবনাময় কবি তুষার রায়ের কবিতা , 'গন গনে আঁচের মধ্যে শুয়ে এই শিখার রুমাল নাড়ছি / নিভে গেলে ছাই ঘেঁটে দেখে নেবেন পাপ ছিল কিনা !' বহুরূপী প্রযোজিত নতুন নাটক 'নিরো ' মনে অদ্ভুত এক দহনের জন্ম দেয়৷ রতন দাসের মেদবর্জিত স্ক্রিপ্ট এবং তুলিকা দাসের স্মার্ট পরিচালনা নাটকটিকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে৷ সেনেকার ভূমিকায় 'ভিন্টেজ ' দেবেশ রায়চৌধুরী তো বটেই , নিরো হিসেবে তরুণ অভিনেতা ঋষভ বসুও এক আবিষ্কার৷ সুমিতা (অ্যাগ্রিপ্পিনা ), সৌমিতা (অ্যাক্টে ), ঝিনুক (অক্টেভিয়া )-রাও চমত্কার সঙ্গত করেছেন৷ কিছু পর্দা, কিছু পিলার -এ নির্মিত সেট , আধো অন্ধকারের আলো আর দেবজ্যোতি মিশ্রের আবহ রোম সাম্রাজ্যের সেই সময়টায় আমাদের পৌঁছে দেয় অতি সাবলীলভাবে৷

কোন সময়টায় ? পিছিয়ে যেতে হবে অনেকখানি৷ খ্রিষ্টাব্দ ৬২৷ কিশোর নিরো সিংহাসনে বসেছেন কয়েক বছর হয়েছে৷ নিরোর মা অ্যাগ্রিপ্পনাই তখন সম্রাটের অভিভাবক৷ রাষ্ট্রেরও৷ এই মা কিন্ত্ত চড়ান্ত ক্ষমতালোভী৷ নিরোকে সামনে রেখে তিনি শাসনক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে চান৷ আর সেনেকা নিযুক্ত হয়েছেন সম্রাটের শিক্ষক , অভিভাবক হিসেবে৷ নিজেকে সিংহাসনের সঙ্গে অনেকখানি অভ্যস্ত করে ফেলেছেন নিরো৷ সেই সঙ্গেই শুরু যৌবন আর ক্ষমতার উত্থানের৷ ৷ ক্ষমতার লোভ সর্বকালেই সর্বগ্রাসী৷ যেদিন সম্রাট ক্লডিয়াস তাঁর স্ত্রী মেসালিনাকে হত্যা করে অ্যাগ্রিপ্পিনাকে গ্রহণ করেছিলেন চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে , সেই দিনই নিরো সম্মানের সঙ্গে সঙ্গেই অসম্মানকেও ধারণ করতে বাধ্য হন৷

নিরো কবিতা ভালোবাসেন৷ লাইয়ার বাজাতে জানেন৷ কিন্ত্ত এর পাশে পাশেই তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার লোভে খুন করেন মা অ্যাগ্রিপ্পিনাকে৷ স্ত্রী তথা সত্ বোন অক্টেভিয়াও রেহাই পান না৷ নির্যাতনে ছিন্নভিন্ন হন৷ নিজেকে ঈশ্বর প্রমাণে উন্মত্ত সম্রাট ! এই যে একই দেহে কবিতা -গান এবং প্রতিহিংসার দ্বিমুখী প্রবাহ , এর সঙ্গে কোথায় যেন মিলে যায় পৃথিবীর গভীর অসুখের ধারা , যা আমাদের মধ্যে দিয়েই বয়ে চলে৷ সুর মাখা লাইয়ারের পাশাপাশি রক্তমাখা তলোয়ারও কি তবে অনিবার্য? এ ভাবেই বুঝি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে ? এই সময়ে প্রশ্নটা নিজের ভিতরে জারিয়ে নিতে একবার প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করাটা কিন্ত্ত জরুরি৷ ৷

উত্‍সব, মাটি, মানুষ

$
0
0

শুধু আদিবাসীদের নাচ, গান, নাটক নিয়ে আস্ত একটা উত্‍সব করল ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা৷ দেখে এলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

বীরভূমের ইলামবাজার যাওয়ার পথে একটা মাঝারি আকারের রাস্তা ঢুকে গিয়েছে বাঁ দিকে৷ দ্বারোন্দা গ্রাম৷ সেখানেই এক বিস্তীর্ণ মাঠ৷ যতদূর চোখ যায়, গাছ আর মাঠ৷ তেপান্তরের মাঠ যেন৷

সেখানেই বসেছিল এক আদিবাসী নাচ-গান-নাটক উত্‍সব৷ ২৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর৷ 'আদিবাসী আদিবিম্ব' শীর্ষক সে উত্‍সবের আয়োজনে ছিল দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা৷ অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অপর্ণা সেন এবং আয়োজক সংস্থার চেয়ারম্যান রতন থিয়াম৷

শহুরে মানুষ যে রকম নাটক বা নাচ বা গানের উত্‍সব শুনে বা দেখে অভ্যস্ত, তার সঙ্গে এ উত্‍সবের যোজন যোজন দূরত্ব৷ ভারত ভূখণ্ডের যা কিছু আদি সেই সবকিছুর সঙ্গেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে এই উত্‍সব৷ অসম, মেঘালয়, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা থেকে শিল্পীরা এসেছিলেন৷ ঘাড়ে পাউডার, মুখে মেক-আপ করা সাজানো কোনও পরিবেশনা নয়, একেবারে আকরিক চেহারায় দেশের প্রাচীন ফর্মগুলো একে একে মঞ্চে পরিবেশন করলেন তাঁরা৷ মাটির গন্ধ, ফুলের গন্ধ, ধানের গন্ধ লেগে রয়েছে সে পরিবেশনায়৷

নাগরিক সভ্যতার ধাক্কায় এইসব শিল্প প্রান্তিক অবস্থানে পৌঁছেছে৷ চাইলেই আর চট করে এসবের দেখা মেলে না৷ মেঘালয়ের ওয়াঙ্গালা নাচ, অসমের দেউরি-বিহু, ঝাড়খন্ডের খারসাওয়ান ছৌ, পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতাল নাচ-গান, বিহারের দং, ওড়িশার গুবুকুড়ু নাচ তো আর চাইলেই দেখা যায় না৷ একটা ছাতার তলায় এতকিছু দেখতে হলে তাই এমন উত্‍সবের কোনও বিকল্প হতে পারে না৷

তৃতীয় বর্ষে পড়ল এ বারের উত্‍সব৷ আয়োজকরাও জানালেন প্রত্যেক বছরই ভিড় বাড়ছে৷ দূর থেকে মানুষ আসছেন ভিন্ন স্বাদের এমন উত্‍সবের গন্ধ পেয়ে৷ হোটেলে থাকার ঘর পাওয়াই মুশকিল! তিনদিনের উত্‍সবের প্রত্যেক দিনই শুরুতে আদিবাসী নৃত্য পরিবেশিত হয়েছে৷ দ্বিতীয় পর্বে গান৷ আর তৃতীয় পর্বে নাটক৷ কিন্ত্ত নাচের পর গান, গানের পর নাটক শুরু হতে হলে যে অনুষ্ঠানের প্রস্ত্ততি পর্বের জন্য সময় লাগার কথা তার কিন্ত্ত প্রয়োজন পড়েনি৷ কারণ, নাচ, গান আর নাটকের জন্য তৈরি করা হয়েছিল তিনটি পৃথক মঞ্চ৷ এক প্রান্তে নাচ, অপর প্রান্তে গান, আর অন্য দিকে নাটক৷ চতুর্থ দিকটিই হল প্রশস্ত ও সুসজ্জিত প্রবেশপথ৷ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল মাটি লেপে! শোলা কেটে, মাটি লেপে গড়া স্তম্ভ, স্টেজের ব্যাকড্রপ-এ নানা আদিবাসী মোটিফ- পাখি, মানুষ, গাছ!
নাচ-গানের শেষে প্রত্যেক দিনই নাটক ঘিরে অন্য রকম একটা উদ্দীপনা জমা হয়েছিল মাঠে৷ প্রথম দিন নাটক পরিবেশন করে অসমের মিসসিং থিয়েটার গ্রুপের নাটক৷ মিসসিং উপজাতির বাস মূলত নদীর পাশে৷ নদীর কথা, নদীর সঙ্গে এলাকার মানুষের সম্পর্ক, তাদের সংস্কৃতি, জীবন-যাপন এই সবই উঠে আসে নাটকে৷ দ্বিতীয় দিন ছিল মণিপুরের স্টার রেপার্টরির নাটক 'ব্ল্যাক অর্কিড'৷ এখানে ধরা পড়েছে আতঙ্ক৷ আফস্পার মতো ভয়ানক আইনের জেরে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে মানুষ কেমন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, মন এক মুহূর্তের জন্য শান্তির খোঁজ করলেও তা ভঙ্গ হচ্ছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দে, সেসবই ছড়িয়ে রয়েছে নাটকের নানা মুহূর্তে৷

শেষ দিনের নাটক ঘিরে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে৷ রবি ঠাকুরের 'রক্তকরবী' যদি আদিবাসী অভিনীত সাঁওতাল নাটকের রূপ নেয়, তাকে ঘিরে মানুষের উত্‍সাহ তো স্বাভাবিক৷ আর মানুষের প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি সক্ষম হয়েছেন পরিচালক পার্থ গুপ্ত৷ বীরভূম ব্লসম থিয়েটার অভিনীত 'আরা বাহা' নাটকে টেক্সটের থেকেও অনেকখানি বেশি জোর দেওয়া হয়েছে থিমের উপর, কনটেন্টের উপর৷ নন্দিনী এখানে এক সাঁওতালি মেয়ে, গলায় লাল মালা৷ যক্ষপুরীর রাজার শাসন থেকে মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখে সে৷ রঞ্জন সে মুক্তি আনবে, এমন স্বপ্ন দেখে সে৷ লোভের উপরে, খননের উপরে শেষটায় বুঝি প্রকৃতিই জেতে! খেটো ধুতি, লালপেড়ে সাদা শাড়ি-র সাঁওতালি পোশাকে, আঞ্চলিক টুকরিতে আদিবাসী ফ্লেভারটা মারাত্মক ধরা পড়েছে৷ সঙ্গে আগাগোড়া বাঁশি, মাদলও সঙ্গ দিয়েছে৷ এ এক অন্যরকম রক্তকরবী৷ শহুরে বৌদ্ধিক, 'ইন্টেলেকচ্যুয়াল' রক্তকরবী নয়৷ আরও অনেক গভীরে পোঁতা এই পরিবেশনার ভিত৷ তাই সাঁওতালি ভাষা না বুঝেও রবি ঠাকুরের কথা বুঝতে অসুবিধা হয় না৷ কলকাতায় তো কত নাটকের উত্‍সব হয়৷ আয়োজকরা এই নাটকটিকে আনার উদ্যোগ নিলে কিন্ত্ত পারেন৷

উত্‍সব শেষে মাঠের মাঝে প্রকান্ড বনফায়ার জ্বলে উঠলো৷ 'চিরপ্রণম্য অগ্নি'৷ মানুষের প্রথম আবিষ্কার! সভ্যতার শুরু!শহুরে মানুষ যেন ভুলে না যান!






শেক্সপিয়রের শিকড়ে দুই বাংলার কেরামতি

$
0
0


শেক্সপিয়রের মৃত্যুর ৪০০ বছর৷ 'টাইটাস অ্যানড্রনিকাস 'নিয়ে ইংরেজি -হিন্দি স্ক্রিপ্ট৷ ট্যুইকেনহ্যাম -এ পোস্ট প্রোডাকশন৷ বর্ণিলা চট্টোপাধ্যায় আর তানাজি দাশগুপ্তর মাছের তেলে ফিশ অ্যান্ডচিপস ভাজার রেসিপিটা জানলেন শতরূপা বসু।

স্কুলে থাকতে শেক্সপিয়রের নাটকই গড়ে দিয়েছিল দু'জনের দৃঢ় বন্ধুত্বের ভিত৷ ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বর্ণিলা চট্টোপাধ্যায় আর সেন্ট জেভিয়ার্সের তানাজি দাশগুপ্ত ইন্টারস্কুল ড্রামা প্রতিযোগিতায় নিজেদের স্কুলের জন্য তুলেছিলেন পুরস্কার৷ নাটকের বিষয় ছিল শেক্সপিয়র৷ তারপর দু'জনে গিয়েছেন দু'দিকে --- বর্ণিলা চলে চান নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ফিল্ম স্কুল 'টিশ '-এ পড়তে৷ আর তানাজি কলকাতায় শুরু করেন ইংরেজি থিয়েটার গ্রুপ 'টিন ক্যান '৷ তারপর সিনেমা৷ এবার সেই শেক্সপিয়রই তাঁদের নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব মানচিত্রে৷ এ বছর শেক্সপিয়রের মৃত্যুর ৪০০ বছরে দুই বাঙালি করছেন ইন্দো -ব্রিটিশ সংস্থার যৌথ প্রযোজনায় শেক্সপিয়রের 'টাইটাস অ্যানড্রনিকাস ' নাটক অবলম্বনে ভারতীয় পটভূমিকায় 'দ্য হাংরি '৷ যার পোস্ট -প্রোডাকশন হবে লন্ডনের বিশ্ববিখ্যাত টুইকেনহ্যাম স্টুডিয়োয়৷

অন্য সময় : কেমন করে প্রোজেক্টটা হাতে এল ? তানাজি : কাকতালীয়ভাবে৷ নিউ ইয়র্কে থাকাকলীন 'নিউক্লিয়ার হাটস ' বলে একটা চিত্রনাট্য লেখে বর্নিলা৷ কলকাতা -কেন্দ্রীক গল্প৷ পরিচালনা ওর , প্রযোজনা আমার৷ এটা নিয়ে আমরা এনএফডিসি -র ফিল্ম বাজারে গিয়েছিলাম৷ সেখানে এক বন্ধু বলে , ইউকে -র ফিল্ম লন্ডন একটা 'শেক্সপিয়র ৪০০ বছর ' করছে৷ ওরা ভারতীয়দের লেখা শেক্সপিয়রের কাজের ভারতীয় অ্যাডাপটেশন প্রযোজনা করতে চাইছে৷ আমাদের হাতে জাস্ট দু'মাস ছিল৷ মনে হল , 'করতেই হবে '৷ তারপরই 'টাইটাস ' বাছলাম৷ কোনওক্রমে চিত্রনাট্য লিখে পাঠানো হল৷ সব মিলিয়ে ওরা ছ'টা চিত্রনাট্য বেছেছে৷ লন্ডনে ওয়ার্কশপ হল৷ ফিল্ম লন্ডন আর ভারতের সিনেস্তান -এর যৌথ উদ্যোগে হচ্ছে প্রোডাকশনটা৷ ছ'টা টিমের মধ্যে তিনটে ভারতীয় , তিনটে বিলিতি৷সাত্যকি ভট্টাচার্য কম বাজেটে গ্লোবালি অ্যাপিলিং ছবি করার ব্যাপারটা নাড়া দেয়৷ তাই শুধু ভারতীয় আর ইউকে মুক্তি নিয়ে ভাবছি না৷ সারা পৃথিবীকেই তো দেখাতে চাই৷আমাদের সঙ্গে একজন ব্রিটিশ প্রযোজকও আছেন , কুরবান কসম৷ এখনও পর্যন্ত এটাই আমাদের জীবনে সবথেকে বড় ব্রেক৷

অন্য সময় : 'টাইটাস অ্যানড্রনিকাস ' কেন বাছলেন ? বর্ণিলা : এটা শেক্সপিয়ারের লেখা প্রথম দিকের ট্র্যাজেডিগুলোর মধ্যে একটা৷ রিসার্চ বলে ওঁর ২৪ -২৫ বছর বয়সে লেখা৷ এই রিভেঞ্জ ড্রামাটার মধ্যে একটা পাগলামো আছে৷ তানাজি : খুব ইউনিক একটা লেখা৷ আমি জানতাম না যে এটাই ওঁর দ্বিতীয় লেখা৷ পড়লে বোঝা যায় 'হ্যামলেট ', 'ম্যাকবেথ ', বা 'ওথেলো ' --- যেগুলো উনি পরে লিখবেন --- সেগুলোর বীজ ওখানেই পোঁতা হয়ে যাচ্ছে৷ খুব আনইনহিবিটেড , এক্সট্রিম৷ যা মাথায় এসেছে তাই লিখেছেন৷ যাঁরা শেক্সপিয়র নিয়ে কাজ করেন তাঁরাও এড়িয়েই চলেন এটাকে৷ অথচ ঠিক এই কারণেই আমাদের আকৃষ্ট করেছে লেখাটা৷ এখনও পর্যন্ত একটাই সিনেমা হয়েছে এটা নিয়ে --- জুলি টেইমর পরিচালিত অ্যান্থনি হপকিন্স অভিনীত 'টাইটাস '৷ এ জন্যও বেছেছি কারণ আমাদের মনে হয়েছিল যে ছবিটাকে ভারতীয় পটভূমিকায় ফেলা যায়৷ অন্য সময় : কোন ভারতীয় পটভূমিকা বাছলেন ? বর্ণিলা : ভারতীয় এলিমেন্ট বলতে ভারতে যে পরিবারের এলিমেন্টটা গুরুত্ব পায় সেটা আছে৷ সম্পর্ক বলতে পরিবারের প্রতি আমাদের যে লয়্যালটি থাকে সেটাও থাকবে৷ তানাজি : মূল গল্পের পটভূমিকা মধ্যযুগীয় রোম৷ ক্ষমতার খেলা যেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটা মাথায় রেখে আধুনিক সময়ের দিল্লিতে ফেলেছি গল্পটাকে৷ কারণ , দিল্লি এখানকার ক্ষমতার রাজধানী৷ সব ক্ষমতাবান আর পয়সাওয়ালা লোকজনের কারবার৷ বর্ণিলা : যারা বড় বড় কর্পোরেশন চালায়৷ বিশ্বাস করে তারা যা খুশি করে ঠিক বেরিয়ে যেতে পারবে৷ কাউকে একটা খুন করে দিলেও তার যথেষ্ট কানেকশন আছে যার জন্য সে বেরিয়ে যেতে পারবে৷ তানাজি : একে অন্যের বিরুদ্ধে দুটো যুদ্ধরত পরিবার৷ মুলত ইংরিজি আর হিন্দিতে করছি৷ সে জন্য মূলত ভারতীয় আর ইংলিশ অভিনেতাদেরই নিয়েছি৷

অন্য সময় : অভিনেতা -অভিনেত্রী ? তানাজি : এখনও বার বার ড্রাফট পাল্টাচ্ছে৷ দিল্লি থেকে রেকি করে ফিরলাম৷ তিনটে মূল চরিত্র --- টাইটাস , ট্যামোরা , অ্যারন৷ আমাদের গল্পের টাইটাস ৬০ বছরের প্যাট্রিয়ার্ক৷ নাসিরুদ্দিন শাহ -কে মাথায় আছে৷ অন্য সময় : ভারতে প্রচুর শেক্সপিয়র হয়েছে৷ বলিউডে যার সব থেকে জনপ্রিয় সংস্করণ বিশাল ভরদ্বাজের ছবিগুলো৷ আপনাদের ছবি কোনও পার্টিকুলার ধারার হবে ? তানাজি : আমরা নিজেরা শেক্সপিয়রের বহু নাটক করেছি৷ বিশাল ভরদ্বাজের তিনটে ছবি খুব পছন্দের হলেও সব থেকে প্রিয় 'মকবুল '৷ তাছাড়া , টিম সাপল -এর নাটক আছে৷ আছে বহু বিদেশি নাটক আর সিনেমার ইন্টারপ্রিটেশন৷ সমস্ত অনুপ্রেরণা ছেঁচেই তৈরি হবে 'দ্য হাংরি '৷

অন্য সময় : বাজেট কেমন ? তানজি : ফিল্ম লন্ডনের একটা কনসেপ্ট আছে মাইক্রোওয়েভ ফিল্মস বলে৷ গত আট -দশ বছর থেকে চালু হয়েছে৷ এরা খুব কম বাজেটে --- এক থেকে দেড় কোটির মধ্যে ছবি বানায়৷ আমাদের এখানেই এখন এক কোটি প্রায় কিছুই নয়৷ মাইক্রোওয়েভ ফিল্মস ইয়ং ফিল্মমেকারদের ছবি বানানোরও একটা প্ল্যাটফর্ম, যে ছবি হয়তো ওরা এমনিতে বানাতেই পারত না৷ কয়েকটা খুব ভালো ছবি বেরিয়েছে ওখান থেকে , যেমন ব্রিটিশ ছবি 'শিফটি ' --- রিজ খানের প্রথম ছবি৷ যেটা থেকে রিজ 'রিজ আহমেদ ' হয় , যে পরে 'দ্য রিলাকট্যান্ট ফানডামেন্টালিস্ট ' করে৷ আমাদের ছবিটা মাইক্রোওয়েভ -এর প্রথম আন্তর্জাতিক ছবি৷ বাজেট তিন কোটি৷ তার মধ্যেই সমস্তটা করতে হবে৷ বুঝেশুনে এগোতে হচ্ছে৷ স্বস্তির ব্যাপার হল আমাদের পোস্ট -প্রোডাকশন করছে ওখানাকার বিশ্ববিখ্যাত টুইকেনহ্যাম স্টুডিয়ো --- যারা 'রেসিডেন্ট ইভেল --- অ্যাপোক্যালিপ্স ', 'ইঙ্কহার্ট', 'কিকঅ্যাস ', 'লজ অফ অ্যাট্র্যাকশন ', 'মাই উইক উইথ মেরিলিন ', 'ওয়ার্ল্ড ওয়ার জেড '-এর মতো ছবি করেছে৷ এখন আমাদের কাছে এটা অবিশ্বাস্যরকম বড় ফ্ল্যাটফর্ম৷ আমাদের কাজ একটাই --- ছবিটা ভালো করে বানাতে হবে৷ বাকিটা ওরাই করে দেবে৷

অন্য সময় : আর মুক্তি ? তানাজি : এই দুটো ছবি ('দ্য হাংরি ', 'নিউক্লিয়ার হাটস ') প্রযোজনা করছি বলে একটা সংস্থা খুলেছি --- ফ্রি র্যাডিক্যালস৷ 'দ্য জাপানিজ ওয়াইফ ', 'দ্য ওয়েটিং সিটি ', 'চিটাগং ' এ অপর্ণা সেন , বেদব্রত পাইনদের অ্যাসিস্ট করা বা কিউ -এর 'তাসের দেশ '-এ কার্যনির্বাহি প্রযোজক হওয়া , টুকটাক অভিনয় করার ফলে অনেক কিছু শিখেছি৷ আর 'তাসের দেশ '-এ একজিকিউটিভ প্রোডিউসার থাকার পর ছবির টাকা তোলা , ছবি বিক্রির কথা --- সব মাথায় রাখতে হচ্ছে৷ সারা পৃথিবী যে পারসেপশনে চলুক না কেন , আমি বিশ্বাস করি (হাসতে হাসতে ) যে প্রযোজকই আসল৷ আর কিউ -এর সঙ্গে কাজ করতে গিয়েই কম বাজেটে গ্লোবালি অ্যাপিলিং ছবি করার ব্যাপারটা নাড়া দেয়৷ গ্লোবালি অ্যাপিলিং হলে পৃথিবীর নানা প্লাটফর্মে ছবি দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া যায়৷ তাই শুধু ভারতীয় আর ইউকে মুক্তি নিয়ে ভাবছি না৷ সারা পৃথিবীকেই তো দেখাতে চাই৷ কে বলতে পারে এই বঙ্গসন্তানদের তৈরি 'দ্য হাংরি ' থেকেই উঠে আসবে না আরেকটা রিজ আহমেদ ? যে করবে আরেকটা 'দ্য রিলাকট্যান্ট ফানডামেনটালিস্ট '? দুই বাঙালির কেরামতি৷





ছয় কলেজ , এক দল , পকেট মানি -ই সম্বলছবি

$
0
0

ইন্টার কলেজ ড্রামা সোসাইটি৷ স্কটিশ চার্চ, শ্রী শিক্ষায়তন , বেথুন , লেডি ব্র্যাবোর্ন, গোখেল মেমোরিয়াল আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জয়েন্ট নাট্যদল৷ তাদের প্রথম প্রযোজনা আগামী ২৮শে৷ সম্বল কেবল পকেট মানি৷ লিখছেন দেবলীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায়

কলেজের সংখ্যা অনেক৷ কিন্ত্ত নাটকের দল একটাই৷ নাম ইন্টার কলেজ ড্রামা সোসাইটি৷ এতে অংশ নেবেন স্কটিশ চার্চ, শ্রী শিক্ষায়তন , বেথুন , লেডি ব্র্যাবোর্ন, গোখেল মেমোরিয়াল আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা৷ সবাই একসঙ্গে পারফর্ম করবেন স্টেজে৷ অভিনয়ও করবেন একে অপরের লেখা নাটকে৷ একে অন্যের পরিচালনায়৷ প্রথম উদ্যোগটা এসেছিল স্কটিশ চার্চ কলেজের তরফ থেকেই৷ এই কলেজের দেবাশিস হালদার কলেজেরই অর্ঘ্যদীপ দাসকে নিয়ে একটি পথনাটিকার দল খোলেন৷ নাম 'বিট দ্য স্ট্রিট '৷ এই দল প্রথম পারফর্ম করে আইআইএইচএম -এর সল্টলেক শাখায়৷ সেখানে প্রশংসিত হওয়ার পর অংশ নেয় বিভিন্ন কলেজ ফেস্টের নুক্কড় কম্পিটিশনে৷ মাত্র দু' মাস বয়েস হলেও লেডি ব্র্যাবোর্ন-এর ফেস্টে এই দল হয় দ্বিতীয়৷ আর ভবানীপুর এড়ুকেশনাল সোসাইটির ফেস্টে তৃতীয়৷ সেই সময়ই আলাপ হয় অন্যান্য কলেজের ড্রামা গ্রুপের সঙ্গে৷ নিজেদের মধ্যে আড্ডা থেকে তাঁরা বুঝতে পারেন সবাই একই ধরনের কথা বলতে চাইছেন৷ সমাজের একই গলদ গুলো তুলে ধরা তাঁদের লক্ষ্য৷ তাই কাজটা একসঙ্গে করলে সুবিধে হবে অনেক বেশি৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ৷

এই ইন্টার কলেজ ড্রামা সোসাইটির প্রথম নাটক হতে চলেছে এই মাসেরই ২৮ তারিখে৷ স্কটিশ চার্চের দুটো আর লেডি ব্রেবোর্ন-এর একটা নাটক নিয়ে ৩০ মিনিটের স্লটে মোট তিনটি নাটক অভিনীত হবে এই দিন৷ প্রত্যেকটির সময়সীমা ১০ মিনিট করে৷ বাকি কলেজগুলোর নাটক নেই কেন ? স্কটিশের অর্ঘ্যদীপ জানাচ্ছেন , 'আমাদের প্রত্যেকের পরীক্ষাই শুরু হচ্ছে ফ্রেবুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তাহ থেকে৷ তাই এমন নাটক করতে হবে যার স্ক্রিপ্টটা তৈরি আছে৷ বেশি কাজ করতে হবে না৷ তাই সবাই মিলেই এই তিনটে নাটকই বেছেছি আমরা৷ ' প্রথমিকভাবে প্রেসিডেন্সি কলেজের ক্যাম্পাসেই নাটক তিনটি অভিনীত হবে বলে স্থির হয়েছে৷ এর মধ্যে একটি নাটকের বিষয় 'মেল অবিউজ '৷ এটা একটা সচেতনতা মূলতক নাটক৷



সংবিধানে যে পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আইন নেই , সেটাই বলার চেষ্টা হয়েছে স্ক্রিপ্টে৷ সঙ্গে হেল্পলাইন নম্বর আর পুরুষ নির্যাতনের বিভিন্ন স্যাটিকটিক্সও তুলে ধরা হয়েছে৷ অন্য দু'টি নাটক সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে৷ প্রথম অনুষ্ঠানের জন্য কোনও টিকিট বিক্রি করছেন না তাঁরা৷ প্রত্যেকে পাঁচজন করে বন্ধু আনবেন৷ যাতে নাটক অন্তত তিনটি মানুষের কাছে পৌঁছোয়৷ এরপর বড় প্রোডাকশনের কথা ভাববেন তাঁরা৷ কিন্ত্ত বড় প্রোডাকশনের জন্যে তো ফান্ডিং লাগবে৷ অর্ঘ্যদীপ জানাচ্ছেন , 'আপাতত আমরা পকেটমানি দিয়েই নাটক করব৷ কোনও কোম্পানির স্পনসরশিপ নিলেই তাদের হয়ে কিছু কথা বলতেই হবে৷ আমরা প্রথমেই সেটা চাই না৷ কিছুদিন নিজেরা করে দেখি না কী হয়৷ ' শুধু নাটক নয় , যে কোনও সোশ্যাল মুভমেন্টেও একসঙ্গে অংশ নেবে এই কলেজগুলো৷ সেই সব অংশগ্রহণের ছবি তুলে ডকুমেন্টরি বানানোরও ইচ্ছে রয়েছে তাঁদের৷ প্রাথমিকভাবে ইউটিউবে দেখা যাবে সেই শর্ট ফিল্ম বা ডকুমেন্টরিগুলো৷ তবে পরবর্তীকালে এই সব ইস্যু নিয়ে বড় কোনও প্রোডাকশন করলে তখন এই ক্লিপিংস বিজ্ঞাপন হিসেবেও ব্যবহার করা ইচ্ছে রয়েছে ইন্টার কলেজ ড্রামা সোসাইটির৷ debleena.ghosh@timesgroup.com৷





বহুরূপে তাঁর ইচ্ছাশক্তি

$
0
0

পর পর পাঁচদিন মঞ্চাভিনয়৷ ৮২ বছর বয়সেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কী ভাবে এমন ধকল নেন? তাঁকে সেই প্রশ্নই করলেন ভাস্বতী ঘোষ

বুধবার থেকে শুরু হয়েছে এমন একটি অনুষ্ঠান, যেখানে সারাদিনের ব্যস্ততার পরও সন্ধ্যাবেলা থেকে মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ এবংস প্রত্যেকদিনই তিনি হয় পাঠ না হয় অভিনয়, কোনও একটা কিছু করবেন৷ তারমধ্যে এমনকি একদিন আছেস 'হোমাপাখি'র মত নাটকও, যেখানে সৌমিত্রর শরীরী অভিনয় আবশ্যিক৷ এ ছাড়াও থাকবে 'দ্য টাইপিস্ট'৷ পর দিন থাকছে 'ফেরা'৷ তারপরের দিন 'গাছ'৷ তবে শেষ সেখানেই নয়৷ সঙ্গে থাকছে 'বষ্টমী'৷ তার পর দিন 'হোমাপাখি'৷ এবং শেষ দিন 'প্রতিদিন তব গাথা'৷

৮২ বছর বয়সে এ ভাবে পর পর পাঁচদিন মঞ্চে ওঠার ধকল হয়তো অনেক বাঙালিই কল্পনাতেও আনতে পারবেন না৷ কিন্ত্ত চরিত্রটি যেহেতু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তাই সুদূর কল্পনাটাও তাঁর গ্রহে হয়তো স্বাভাবিক৷ সেই প্রশ্নটাই করা গেল প্রথমে তাঁকে৷ বেহালা শরত্‍সদনে আয়োজিত'বহুরূপে সৌমিত্র'র এই প্রস্তাবে রাডি হলেন কী করে তিনি? ফোনের ওপারে সৌমিত্রর গলা কিন্ত্ত স্বাভাবিক৷ বলছেন, 'আমি তো এই কাজের জন্যই নিজেকে চিরকাল প্রস্ত্তত রেখেছি৷ এটা আমার পেশা বলতে পারেন৷ তাই নিজেকে বলি, পারতে হবেই৷'

কিন্তু ধকল? 'ধকলের কথা যদি বলেন, একটা সময় ছিল, পুজো বা কোনও ছুটি, এক টানা চার দিন রোজ দুটো করে শো পড়লো৷ সেই তুলনায় এতো কিছুই নয়৷'

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনে অনেক দিন ধরেই অভ্যস্ত৷ তার মানে বহু বছর ধরে করা ডায়েট আর মর্নিং ওয়াক কাজে এল? সৌমিত্র বলছেন, 'ডায়েট তো আমি কোনওদিনও করিনি৷ হ্যাঁ, আমার শরীরের নানা জায়গায় অনেক ব্যাথা৷ সে কথা জানেন সকলেই৷ সেই ব্যাথাটাকে কমিয়ে রাখতে কিছু ব্যায়াম করি৷ সবই অর্থোপেডিক ব্যায়াম৷ আর খাওয়াদাওয়ায় বহু কিছু মেনে চলতে হয়৷ তবে সেটা চিকিত্‍সকের বারণ বলে৷ ফিট থাকতে নয়৷' তাঁর সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, ইচ্ছেশক্তির কাছে সহজেই হার মানে শারীরিক ক্লান্তি৷

আপনার কি ভয় করছে না? পাঁচদিন একসঙ্গে মঞ্চে? সৌমিত্র বলছেন, ''হোমাপাখি' নিয়ে একটু শঙ্কায় আছি, এ কথা অস্বীকার করব না৷ আর এত বছর ধরে করছি এই 'হোমাপাখি', একই ভাবে করতে যেন পারি, সেটা মাথায় আছে৷ তবে মঞ্চে পুরোটাই যে শারীরিক পরিশ্রমের তা তো নয়, অনেক সময় শুধুই পাঠ৷ তাই মনে হয় না, কোনও অসুবিধা হবে৷' কিন্তু এই যে পাঁচদিন পাঁচ রকমের পাঁচটি নাটক হচ্ছে, এর মধ্যে আপনার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের প্রোডাকশন কোনটা?

সৌমিত্র বলছেন, 'সব ক'টাই৷ কোনওটাকেই এগিয়ে অন্যটাকে পিছতে পারব না৷' আর প্রস্তুতি পর্ব? সৌমিত্রর উত্তর, 'মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি৷ আশা করি দর্শক নিরাশ হবেন না৷' এ কথা যখন উচ্চারণ করছেন, শুনে মনে হচ্ছে, আরও একবার নিজেকেই নিজে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন তিনি... আর মনে মনে এটাও জানেন, এবারেও জয় আসবে৷



অন্ধকারের উত্স হতে

$
0
0

বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রাগ শহরে ইহুদি নিধন পর্বের মাঝে একটুকরো প্রেম৷ লিখছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

এক্কেবারে ভুলে যেতে চাই ... কিছুতেই মনে রাখতে চাই না ... এমন কথাগুলো আমরা যা যা কিছু সম্পর্কে বলি , সেই সবকিছু সত্যিই ভুলে যেতে পারি কি ? বোধহয় না৷ আর পারি না বলেই বার বার নিজেকে ঠকাতে ঘোষণা করতে থাকি বিস্মৃতির অঙ্গীকার৷ আদপে হয় না তা৷ কারণ , ভয় এবং অত্যাচারের স্মৃতি কোনও ভাবেই বিদায় নিতে চায় না আমাদের মন থেকে৷ এক চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে যায়৷ কোনও দিনই কি ভুলতে পারবো বিমানের ঘায়ে টুইন টাওয়ার ভেঙে পড়ার দৃশ্য ? একবার দেখে থাকলে মাথা থেকে কোনও দিনই যাবে না সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের মাথা কেটে নেওয়ার ভিডিও ? ভোলা যায় এই কিছুদিন আগে দেখা সমুদ্রসৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা মৃত শিশুর ছবি ?

তাই যতই বলি না কেন পালিয়ে যেতে চাই , স্মৃতি ধাওয়া করে যেতেই থাকে৷ আর সেই ট্রমা , আতঙ্ক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যে রকম সাফল্যের সঙ্গে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল হিটলারের নাত্সি বাহিনী , তারও বুঝি কোনও তুলনা নেই৷ সেই ভয়ানক , স্নায়ু চিনচিন করা সময়টাই ধরা পড়েছে বছর কুড়ি পরে গোষ্ঠী প্রযোজিত 'এবং অন্ধকার ' নাটকে৷ এ নাটকের সময়কাল ১৯৪২ সাল৷ ঘটনাস্থল চেকস্লোভাকিয়ার প্রাগ শহরের একটি ছোট বাড়ি৷ এ শহরের মগজে তখন কার্ফু৷ রাজপথে , গলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শক্ত চোয়ালের নাত্সি সেনা অফিসাররা৷ মৃত্যু সেখানে স্বাভাবিক ঘটনা৷ বেঁচে থাকাটাই হাঁটতে গেলে পা পিছলে যেতে পারে রক্তে ! কারণ , ইহুদিদের মেরে ফেলতে কোনও অনুমতির প্রয়োজন নেই৷ পছন্দ না হলেই গুলি চালানো যেতে পারে৷ ইহুদি বলে চিনে নিতে কোনও অসুবিধাও নেই৷ কারণ , ফরমান জারি করে হলুদ -ব্যাজ ঝুলিয়েই রাখা হয়েছে তাদের গলায়৷ এই যখন পরিস্থিতি , তখনই প্রাগ শহরের এক কলেজছাত্র পলের (কিঞ্জল নন্দ ) সঙ্গে দেখা হয়ে যায় পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো ইহুদি মেয়ে এস্তারের (বিন্দিয়া ঘোষ )৷

বাবার (বিশ্বরূপ পুরকায়স্থ ) টেলারিংয়ের দোকানের পিছনে একটা ঘুপচি ঘরে সে লুকিয়ে রাখে মেয়েটিকে৷ মাকেও (এণাক্ষী সেন ) জানায় না সে কথা৷ মাকে লুকিয়ে মেয়েটিকে খাবার এনে দেয়৷ গল্পের বই এনে দেয়৷ গান শোনায়৷ মেয়েটি জানায় সে নৃত্যশিল্পী হতে চায়৷ আবার ছেলেটি জানায় তার জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার ইচ্ছার কথা৷ জাত -পাত -ইহুদি -আরিয়ান এইসব দ্বন্দ্ব কোথায় হারিয়ে যায় ! ইতিমধ্যেই বিপ্লবী হামলায় এক নাত্সি অফিসার খুনের প্রতিশোধে নয়া হত্যা ফরমান জারি হয়৷ তাতে কোনও ইহুদিকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মৃত্যুর সাজা ঘোষণা হয়৷ কিন্ত্ত ততদিনে যে ছেলেটি আর মেয়েটি পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেছে৷ 'লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা '! ছেলেটির বাবার দোকানে নানা রকম মানুষ আসেন৷ রাগে ফুঁসতে থাকা কাপড় ব্যবসায়ী চিপেক (শ্যামল চক্রবর্তী ) যেমন আসেন , তেমনই আসেন নাত্সিদের চর হিসেবে কাজ করতে থাকা রেঝসেক (প্রবীর দত্ত )৷ দু'জনের বাকবিতন্ডা যে মাঝেমধ্যেই লেগে যায় তা তো স্বাভাবিক৷ আর আসেন এই বাড়িতেই ভাড়াটে হিসেবে থাকা চিত্রশিল্পী জাভো (সুরজিত্ সেনগুপ্ত )৷

যুদ্ধে যৌবনের , সভ্যতার অপচয় তাঁকে ব্যাকুল করে৷ আর মাঝে মাঝে এসএস বাহিনীর ভয়াবহ জল্লাদসম অফিসারদের (সুদীপ মুখোপাধ্যায় , সৌরভ ঘোষ ) মুখ দেখাটাও দুঃস্বপ্নের মতো৷ এই অন্ধকার সময়ে বেঁচে থাকতে পারলো কি পল -এস্তারের প্রেম ? জয় হল কি মনুষ্যত্বের ? সেটা প্রেক্ষাগৃহে দেখাই ভালো৷ প্রায় প্রত্যেকেই চমত্কার অভিনয় করেছেন৷ গোটা উপস্থাপনাটি ভারি মুন্সিয়ানার সঙ্গে সামলেছেন পরিচালক পৃথুনন্দন ঘোষ৷ আলাদা করে প্রশংসা প্রাপ্য তাঁর৷ তবে নাটকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল ভয়৷ তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ আর তার জন্য প্রয়োজন ছিল যে রকম আধো অন্ধকার আলো তা ফিরে ফিরে এসেছে৷ মঞ্চসজ্জা এবং কস্টিউম আমাদের সেই সময়টাতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে সফলভাবে৷ গানের ব্যবহারও করা হয়েছে বেশ পরিশীলিতভাবে৷ পিছনে বেজে উঠেছে পিয়ানো৷ কথক এসে আমাদের গান শুনিয়েছেন গল্প বলার ঢঙে৷ আবার একই রকমভাবে গান গেয়েছেন চরিত্রেরাও৷ জন লেননের 'ইমাজিন ' গানটির ভাবানুবাদ করে অন্যরকম সুরে প্রয়োগ করা হয়েছে৷ মৃত্যুর নিসর্গের মধ্যেও হারায়নি বেঁচে থাকার কল্পনা !বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রাগ শহরে ইহুদি নিধন পর্বের মাঝে একটুকরো প্রেম৷ লিখছেন ইন্দ্রনীল শুক্লাঅন্ধকারের উত্স হতে ৷

সবুজ দ্বীপের শিক্ষাগুলো

$
0
0

দেশের নানা প্রান্তের আদিবাসী, উপজাতির মানুষ নাচলেন, গাইলেন, নাটক করলেন একই ময়দানে৷ আন্দামানে এনএসডি আয়োজিত তিন দিনের আদিবাসী উত্‍সব৷ দেখে, ফিরে, লিখছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

উত্‍সবের প্রথম দিন৷ সমুদ্রের দিক থেকে হঠাত্‍ কতগুলো কালো মেঘ এসে পোর্ট ব্লেয়ারের আকাশ ঢেকে ফেলেছে৷ নষ্ট হয়ে যাবে না তো উত্‍সব! রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয়ের (এনএসডি) উদ্যোক্তারা সকলের কপালেই তখন ভাঁজ স্পষ্ট হচ্ছে৷ এলাকার মানুষ অবশ্য বলছেন, এই সময়টা এ রকম হয়৷ বৃষ্টি হবে না৷ সত্যিই বৃষ্টি হল না৷ কী পূর্বাভাস! ভাগ্যিস এঁরা শহুরে আবহাওয়া দপ্তরের কথা বিশেষ শোনেন না, তাই রক্ষে!

মঞ্চে তখন রংমেই নাচ পরিবেশন করছিলেন কাবুই নাগা'রা৷ এঁরা মণিপুর থেকে এসেছেন৷ দর্শকাসনে পাশে বসে থাকা অমুকে প্রশ্নটা না করে পারলাম না৷ বলতে বাধ্যই হলাম, হতে পারে আপনি আন্দামানের কারিন উপজাতির মানুষ, কিন্ত্ত আপনার মুখের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের মুখের আশ্চর্য মিলটা লক্ষ্য করেছেন?

কথাটা শুনে একটুও অবাক না হয়ে হাসলেন অমু৷ একটু আগেই তাঁদের পারফরম্যান্স শেষ হয়েছে৷ ঘাম মুছে নিয়ে মহিলা বললেন, 'আপনি ঠিকই ধরেছেন৷ মিল তো থাকবেই৷ আমি শুনেছি আমাদের পূর্বপুরুষরা একসময়ে ব্রহ্মদেশে থাকতেন৷ কেউ কেউ কাজের সূত্রে এসেছিলেন৷ আবার ব্রিটিশ জমানায় শাস্তি পেয়েও এসেছিলেন এখানে৷ তারপর এখানে সবার সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছেন৷ এখানকারই মানুষ হয়ে গিয়েছেন৷ কিন্ত্ত কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য তো থেকেই যায়!'

নিজের অরিজিন সম্পর্কে এমন সচেতনতা অবাক করে বৈকী৷ আসলে শহুরে মানুষের থেকে আদিবাসী মানুষ, উপজাতি মানুষ বোধহয় নিজের শেকড় সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন৷ আর সে জন্যই তো ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ, মাল্টিপ্লেক্স, ল্যাপটপের ঝাঁপিয়ে পড়া নাগরিক সভ্যতার মধ্যেও নিজেদের বাম্বু ড্যান্সকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন তাঁরা৷ এই প্রশ্নটাই তো উদ্বোধনী ভাষণেও তুলে ধরেছেন এনএসডি চেয়ারম্যান রতন থিয়াম, 'আধুনিক বিজ্ঞানের সুযোগ-সুবিধার মধ্যে আমরা নিজেদের অরিজিনটাকেই ভুলে যাচ্ছি নাতো?'

অমু অপলক তাকিয়ে ছিলেন মঞ্চের দিকে৷ নাগা-নৃত্য তখন শেষ হয়েছে৷ মঞ্চে দাপিয়ে বিরাট, বিপুল ঘেরের ঘাগরায় নাচ করছেন রাজস্থানের উপজাতি মানুষ৷ উজ্জ্বল রঙের সমাহার৷ 'কালার রায়ট'-ও কী চমত্‍কার লাগতে পারে! রোদে রঙ পুড়ে যাওয়া গায়িকা চড়া সুরে গাইছেন, 'সারারারা... ও ছোড়ি/ গরম কচৌরি!'ঢোলে, নাকাড়ায় তুমুল এক তালবাদ্য৷ আর তার সঙ্গে চক্কড় দিয়ে দিয়ে নাচ৷ যে কারণে এই নাচের নাম 'চক্রী'৷ নীল চক্রাকার জলে বন্দী এক দ্বীপের অধিবাসিনী তাকিয়ে দেখছেন নির্জলা মরুভূমির মেয়ের নাচ৷ বিস্ময়কর বৈপরীত্যের সমাহার!

বিচ্ছিন্ন অথচ যুক্ত৷ মূল আন্দামানের সংস্কৃতিও তো এমনই৷ নীল-সবুজ জলের উপর ভেসে রয়েছে সাড়ে পাঁচশোর উপর ছোট-বড় দ্বীপ৷ যার মাত্র ৩৮টিতে তথাকথিত 'সভ্য' মানুষ বসবাস করেন৷ বাকিগুলো আজও রহস্য! সেই দ্বীপপুঞ্জে এই স্কেলের নাট্যোত্‍সব এই প্রথম৷ আদও যার তটে জাপানিদের বানানো বাঙ্কার পড়ে আছে৷ রাতে মাঝে মাঝে শোনা যায় সেনা হেলিকপ্টারের উড়ে যাওয়ার ফটফট আওয়াজ৷ দলের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের গুদুমবাজা নৃত্য পরিবেশন করতে এসেছেন শ্যামলাল ঘাসি৷ তাঁদের নাচে লাফিয়ে, ঝাঁপিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি থাকে, যা লড়াইয়েরই দ্যোতক৷ শ্যামলাল মন দিয়ে হেলিকপ্টার দেখছেন দেখে জানতে ইচ্ছে হল এই দ্বীপের লড়াইয়ের ইতিহাস সম্পর্কে তিনি সচেতন কীনা৷ সোজা 'না' বললেন তিনি৷ শহুরে মানুষের মতো ইনিয়ে-বিনিয়ে নয়৷ বললেন, 'নাচ করে তো পেট চলে না৷ বছরের বেশিরভাগ সময় তো চাষ করি৷

নাচ-গান করি অবসরে৷ এখানে এসে অন্য রাজ্যের আদিবাসীদের নাচ দেখে ভালো লাগছে৷ সাঁওতাল নাচ-গানের কথা শুনেছিলাম৷ এখানে এসে দেখা হল৷' অসমের বিহু, বাজাশাল নাচেও বসে থাকতে দেখেছি তাঁকে৷ বাংলায় রক্তকরবী 'আরা-বাহা', অসমিয়া নাটকও দেখেছেন৷ বললেন, 'ভাষা বুঝতে পারিনি৷ উপস্থাপনা ভাল লেগেছে৷'নানা উত্‍সবে-অনুষ্ঠানে মাঠে-পথের ওপর নানা অত্যাচার হয় বলেই দেখে এসেছি৷ কিন্ত্ত সে ব্যাপারটি এখানে আশ্চর্য রকমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে৷ ডাব বিক্রি হচ্ছে৷ ডাবওয়ালার ভ্যান ভর্তি হয়ে আছে ডাবের খোলায়৷ তিনি ডাব এনেছেন৷ বেচেছেন৷ খোলাও তাঁকেই সরিয়ে দিতে হবে৷ একই রকমভাবে বিরাট ঝোলা নিয়ে ঘুরছেন ঝালমুড়িওলা, চানাচুরওয়ালা, চাওয়ালা৷ ঠোঙা কিংবা কাপ মাঠে ফেলা যাবে না৷ ফেলতে হবে ওই ঝোলার ভিতরেই৷ দুম করে একখানা সিগারেট ধরিয়ে

ফেললে ছুটে আসছেন নিরাপত্তাকর্মী৷ 'পাবলিক প্লেসে ধূমপান এখানে নিষিদ্ধ', সতর্ক করে দিয়ে যাচ্ছেন৷কলকাতা কি এই বোধ আনতে পারে না তার বুকে অনুষিঠিত হওয়া অগুন্তি উত্‍সবে?

আদান প্রদান

কেট ফিত্‍জারল্যান্ড৷ পেশায় আর্ট কিউরেটর৷ বছরে আট মাস কাজ করেন, বাকি চার মাস নানা দেশে ঘোরেন৷ সঙ্গী শন পেন৷ আদিবাসী সংস্কৃতি, গান-বাজনা তাঁর বিশেষ উত্‍সাহের ক্ষেত্র৷ গত দু'মাস ধরে ভারতে রয়েছেন৷ তিন সপ্তাহ ধরে আন্দামানে৷ সঙ্গী আইরিশ পার্টনার শন পেন৷ পেশায় আইনজীবী৷ পোর্ট ব্লেয়ারে সারা দেশের আদিবাসীদের নিয়ে উত্‍সব হচ্ছে শুনে ছুটে এসেছেন হ্যাভলক দ্বীপ থেকে৷ কেট বললেন, 'রাজস্থানের চক্রী নাচের সঙ্গে একটি স্প্যানিশ সম্প্রদায়ের নাচের অদ্ভুত মিল রয়েছে৷ আবার সাঁওতাল নাচের সঙ্গে সাযুজ্য রয়েছে ব্রাজিলের উপজাতি নাচের!' বছর দু'য়েক আগে যখন ভারতে আসেন তখন কলকাতা এসেছিলেন৷ ভালো লেগেছিলো৷ আবার আসার ইচ্ছে আছে৷

আয়োজক

নরেশচন্দর লাল৷ আদ্যোপান্ত ছটফটে এক মানুষ৷ তাঁর গতিময়তা ছাড়া আন্দামানে এমন একটা উত্‍সব করাই যেত না হয়তো৷ তিনিই আন্দামানের একমাত্র মানুষ যিনি দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় নাটকের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১৯৯০ নাগাদ৷ কিন্ত্ত যা কিছু সৃষ্টিশীল কাজ, তা তিনি করেছেন দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে থেকেই৷ আন্দামান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাপটা) তৈরি করেছেন৷ বহু নাটক উপস্থাপন করেছেন৷ কয়েকটি ছবিও বানিয়েছেন৷ যার মধ্যে 'গান্ধী দ্য মহাত্মা' বেশ সমাদৃত৷ ড্রাগ, এইডস, ফ্যামিলি প্ল্যানিং ইত্যাদি সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়তে তিনি নুক্কড় নাটক করেছেন৷ এ বছর মনোনীত হয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য৷ নরেশের কিন্ত্ত কলকাতা কানেকশনও রয়েছে৷ বঙ্গবাসী কলেজে পড়ার সময় টানা তিন বছর এই শহরেই কাটিয়েছেন তিনি৷

রামকৃষ্ণের ডাক্তারবাবু

$
0
0

রঙরূপ গোষ্ঠীর 'অব্যক্ত ' নাটকে মানুষটিকে অন্য চেহারায় খুঁজে পেলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

এমনিতে বাঙালি ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারকে রামকৃষ্ণদেবের 'ডাক্তারবাবু' বলেই চেনে৷ কিন্ত্ত সেটাই আমাদের সীমাবদ্ধতা৷ একটি মাত্র জানলা দিয়েই তাঁকে দেখে গেলাম৷ অবদানগুলো মনে রাখলাম না৷ সেই না মনে রাখা অংশগুলোর উপরেই আলো ফেলেছে এই নাটকটি৷ নাটকের সূত্র ধরে আমরা পৌঁছে যাই ১৮৮৪ থেকে ১৮৯৯ সময়কালটায়৷ এই সময়েই বাঙালিকে প্রায় ঝাঁকিয়ে দিতে চেয়েছিলে ডাক্তারবাবু৷ এমনিতে ভিজিট দিতে অপারগ রোগীকে দু'কথা শুনিয়ে দিতেও দ্বিধা করেন না৷ কিন্ত্ত নাটকের সঙ্গে চলে আমরা দেখতে পাই , এতখানি শক্ত নারকেলি খোলসের ভিতরেও রয়েছে সাদা শাঁস আর জল৷ অন্তরটা তাঁর পরিশুদ্ধ৷ এই মানুষটাই কিন্ত্ত সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরির জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন৷ অর্থ সংগ্রহ করেন৷

ডাক্তারবাবু স্বপ্ন দেখেন ভারতবাসীর হাত ধরে বিশ্বে বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত সূচিত হবে৷ তাঁর সেই স্বপ্ন কিন্ত্ত অনেক পরে সফল হতে দেখবো আমরা৷ তাঁর অবর্তমানে এই সায়েন্স অ্যাসেসিয়েশনের গবেষণা করেই সফল হবেন সি ভি রমণ৷ 'রমণ এফেক্ট 'কে স্বাগত জানাবে বিশ্ব !ডাক্তারবাবুর স্বপ্ন ভাইঝি অবলাকে ডাক্তারি পড়াবেন৷ মেয়েদের চিকিত্সা মেয়েরাই করবে৷ তবেই না স্ত্রী শক্তির সত্যিকারের বিকাশ ঘটবে৷ কিন্ত্ত ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে মেয়েদের জন্য সিট নেই৷ অবলাকে পাঠিয়ে দিলেন ম্যাড্রাস মেডিক্যাল স্কুলে৷ কিন্ত্ত ভাইঝিও যে জ্যাঠামশাইয়ের মতোই একগুঁয়ে৷ প্রেমে পড়ে ডাক্তারির পাঠ অসমান্ত করে ফিরে এলেন বাড়ি৷ নাটকে শুরু হল নতুন একটা অধ্যায়৷ চমকে উঠে মহেন্দ্রলাল এবং দর্শকরা দেখলেন অবলার প্রেমিক যুবকটি তরুণ বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র বসু৷

তাঁকে নিয়ে তখন রীতিমতো সরগরম চলছে৷ তাছাড়া শুধু বিজ্ঞানসাধনাই তো নয় , নেটিভ অধ্যাপকরা কম বেতন পাবেন এই নিয়মের বিরুদ্ধেও যে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে এই যুবক৷ প্রতিবাদ হিসেবে বেতন নেওয়াই বন্ধ করে দিলেন৷ এমন যুবকের সঙ্গে সম্পর্কের পথে কেমন করে তিনি বাধা হতে পারেন ! তবে অবলাও জ্যাঠামশাইয়ের মন বুঝে নিজের উদ্যোগে মেয়েদের জন্য স্কুল তৈরি করলেন৷ সারা জীবন নানা লড়াইয়ে শামিল হওয়া আগাগোড়া নাস্তিক ডাক্তারবাবু কিন্ত্ত রামকৃষ্ণদেবের চিকিত্সা করতে গিয়ে , তাঁর সংস্পর্শে এসে অনেকখানি শান্ত হয়ে গেলেন৷ নাকি দীর্ঘ সাধনার পর ঋষি যেমন সমাহিত হন , তেমনটা হলেন ? প্রশ্নটা রয়ে গেল আমাদের জন্য৷ তিনি চিরঘুমে চলে গেলেন কাজের টেবিলটিতে মাথায় হাত রেখে !

মনে রাখার মতো দৃশ্য৷ পরিচালক সীমা মুখোপাধ্যায় তাঁর মুন্সিয়ানায় একটা নিজস্ব ঘরানা ইতিমধ্যেই গড়ে নিয়েছেন৷ এ নাটকেও তাঁর ছাপ আরও উজ্জ্বল হয়েছে৷ স্ক্রিপ্টে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছেন সৌনাভ বসু৷ এটি যে তরুণ নাট্যকারের লেখা প্রথম নাটক তা না বলে দিলে বিশ্বাস করা কঠিন৷ ভাল অভিনয়ও করলেন সকলে৷ ছিমছাম স্টেজ , ঠিক যতটুকু প্রয়োজন৷ আর একেবারে শেষে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হবে মহেন্দ্রলালের ভূমিকায় বিমল চক্রবর্তী র কথা৷ পক্ক কেশ৷ মোটা গোঁফ৷ তীক্ষ্ণ চোখ৷ তাঁর অভিনয়ের সঙ্গী হয়ে আমরা ফিরে যাই একটা অন্য সময়ে৷ যখন বাঙালির মেরুদন্ড ছিল ইস্পাতে গড়া৷ ভয়শূন্য চিত্ত৷ ছিল মাথা উঁচু করে রাখার সাহস৷ ঘুরে দাঁড়ানোর জেদ৷ একবার ঝালিয়ে নেওয়া একান্ত জরুরি !

বিপদ, নিরাপদ, চর্যাপদ

$
0
0

চারটে গল্প মিলে যায় মোড়ের মাথায় এসে৷ অন্যরকম এক নাটকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

মুলকরাজ আনন্দ সম্পর্কে এক জায়গায় পড়েছিলাম৷ শেষদিকটায় বয়স বেড়ে যাওয়ায়, শরীর অসুস্থ হওয়ায় আর যখন বেশি ঘুরে বেড়াতে পারতেন না, বাড়ি থেকে সামান্য হেঁটে চারমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন তিনি৷ মানুষ দেখতেন৷ তাঁদের কথা শুনতেন৷ হয়তো মাথায় নানা কাহিনির রসদ চলে আসতো৷ তেমন ফর্ম্যাটে নাটক হচ্ছে শুনলে হয়তো পৌঁছেই যেতেন তিনি, সঙ্ঘারাম গোষ্ঠীর 'চৌমাথা' দেখতে! এখানেও হাজির চারটে আলাদা আলাদা গল্প৷ আলাদা ঠিকই৷ কিন্ত্ত চৌমাথায় পেঁৗছে তারা মিলেও কি যায় না! নাটকের যাত্রা সেটাই৷

চারটি গল্পের দু'টি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের (মশা ও লুলু), একটি ঋত্মিক ঘটকের (কমরেড)৷ একটি গল্প পারমিতা সেনগুপ্ত-র (অলি ও আলি)৷ প্রতি গল্পেই মানব জীবনের কোনও না কোনও সমস্যার কথা বলা হয়েছে৷ আর সেই সূত্রেই গল্প চারটে একটি সুতোয় বাঁধা পড়েছে৷ সমস্যাগুলো খুব মূলগত৷ মানে সভ্যতার প্রারম্ভ থেকেই চলে আসছে৷ শুধু স্থান, কাল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বিবর্তন আর উদবর্তনের তালে তালে সমস্যার বহিরাঙ্গটা পাল্টেছে৷ বাকিটা এক...একই৷

কখনও কোনও নাগরিক তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় হাতড়ে মরে, যদিও সে অধিকার আসলে কতখানি সে সম্পর্কেও সে ওয়াকিবহাল নয়৷ চারপাশের যা কিছুর উপর সে নাগরিকের রাগ, সেইসব কিছুকে তেড়ে খিস্তি দিতেও তার ভদ্রতায় বেধে যায়! কখনও ভিড়ের মধ্যে, স্লোগানের মধ্যে ঘিরে থেকেও নিজের সঙ্গে নিজের লড়াইটায় দীর্ণ হয় ইউনিয়ন লিডার৷

বিড়ির ধোঁয়ার বাড়তে থাকে কাশি আর সন্দেহ৷ 'সকলেই সকলকে আড়চোখে দেখে'৷ কখনও প্রেমিকাকে কলেজ ইউনিয়নের দাদাদের লালসার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ যায় তাজা যুবকের৷ নাগরিক জীবনের এতে কিছু যায় আসে না৷ স্রেফ টিভির একটা ব্রেকিং নিউজ হয়েই থেকে যায়৷ কিম্বা বিপত্নীক এক বুড়ো৷ চোখের সামনে দাপুটে বৌ-মার হাতে বাড়ির নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে দেখেও যার কিছুই করার থাকে না৷ কেননা ছেলেকেও যে কড়া নিয়ন্ত্রণে বেঁধে ফেলেছে 'মোটা গিন্নি'৷ এ সবের মধ্যে যা খুব নিষ্ঠুরভাবে চোখে পড়ে যায়, তা হল আমরা সকলেই নিজের নিজের মতো করে একা, নিজের সঙ্গে৷ ভিড়ের মধ্যে থেকেও৷ পালিয়ে যাওয়ার পথও নেই৷ অথচ আর যে পারাও যাচ্ছে না!

উপায়? আছে একটা উপায়৷ উদাসীনতা৷ কিছুই শুনিনি৷ কিছুই জানি না৷ অতএব কিছুই বলবো না৷ ব্যস, তাহলেই তো আর অশান্তি থাকে না৷ তাই মধ্য পথটাই আঁকড়ে ধরি আমরা৷ চলে মধ্যবিত্ততার উপাসনা৷ চলে মধ্যমেধার সাধনা৷ আপনা বাঁচলে তবে না বাপের নাম! তাই 'বাকস্বাধীনতা নিয়ে তুমি করবেটা কী?' 'নাগরিক অধিকার বলতে তুমি কি বোঝ?' -এইসব প্রশ্ন যখন মিস্টার লুলু তোলেন আমাদের মুখে উত্তর জোটে না৷ ঠিক যেমন কারখানায় ধর্মঘট আরও কতদিন চালানো যাবে সে প্রশ্নেরও উত্তর মেলে না৷ কিংবা একটি তরতাজা যুবককে কারা খুন করল এটা প্রকাশ্যে আনতে আমরা ভীত৷ কারণ, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তাও যে প্রশ্নের মুখে৷ তাই ভয় হোক সহায়, হোক ভীরুতারই জয়৷ এ সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়নি নাটকে৷ কেবল সবকিছুর বিপ্রতীপে আয়না বসিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ বিপুল, বিরাট সেট যে ব্যবহার করা হয়েছে তাও নয়৷ চাকাওলা চেয়ার, একফালি দরজা, উপর থেকে নেমে আসা মশারি, আলোছায়া অদ্ভুত দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে আলাদা আলাদা কাহিনিতে৷ রোহিত (লুলু), প্রতীক (জাব্বু), তথাগত (রিপোর্টার), অরিত্রপ্রতিম (গণেশ), রবিন (ফালতু লোক), মধুরিমা (মোটা গিন্নি)-সহ গোট টিমের অভিনয়ই ভালো লেগেছে৷ ছিঁচকে চোর নফরের রোলে অন্যরকমভাবে পাওয়া গিয়েছে অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে৷ 'চৌমাথা'কে এক করার অধিনায়কও তো তিনিই৷ আর হ্যাঁ, 'হুলিগান'! যার নেতৃত্বে শুভদীপ গুহ৷ একঢোক রাম খেয়ে গিটার বাজিয়ে নাটক শুরু করেন তিনিই৷ তারপর ফিরে ফিরে আসেন প্রতিটি গল্পের শেষে৷ স্যাক্স, ড্রামের ধুন্ধুমার ব্যান্ড-কান্ড৷ বাংলা মঞ্চের এক জেন-এক্স পরিবেশনা৷ অতএব, 'মরুক মরুক মরুক, যত শুকনো পাতা ঝরুক...!'


সময়ের সঙ্গে আরও একবার

$
0
0

গৌতম হালদারের পরিচালনায় 'রক্তকরবী ' মঞ্চে নিয়ে এসেছে সন্দর্ভ নাট্যগোষ্ঠী৷ দেখলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

'রক্তকরবী ' মঞ্চস্থ হচ্ছে শুনলে প্রথমে অবাক লাগে৷ তারপর জাগে বিস্ময়৷ সেই ১৯২৩ সালে নাটকটা লিখেছিলেন রবি ঠাকুর৷ কিন্ত্ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা , যেন নতুন করে ফিরে ফিরে আসছে আমাদের সামনে৷ যখন কবি নাটকটি লেখেন , তখনকার মতো করে তা অর্থবহ ছিল৷ আবার , এই সমসময়ে নাটকটিকে পড়লেও তার আলাদা মানেগুলো সামনে আসে৷ যেখানেই রাষ্ট্রের নিপীড়ন সামনে এসেছে , যন্ত্রের অমানবিক পেষণে মানুষ পিষ্ট হয়েছে , অব্যর্থ তাত্পর্য নিয়ে ধরা দিয়েছে এ নাটক৷ মুক্তির পথ হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ নন্দিনী নিজেই বিপ্লব -এর রূপ৷ রঞ্জন মুক্তির প্রতীক , মৃত্যুতেও যা ফুরিয়ে যায় না৷ এই কথাগুলো ক্লিশে হয়ে পড়লেও আজও সত্য৷ আর দেশ , কাল , সময়ের বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলাই তো ক্ল্যাসিকের বৈশিষ্ট্য !

আবার , নাটকের পরিচালক সম্পর্কেও একটা বিষয় খেয়াল করার মতো৷ বছর কয়েক আগে পূর্ব-পশ্চিম নাট্যগোষ্ঠীর জন্যও এই নাটকটাই মঞ্চস্থ করেছিলেন গৌতম হালদার৷ অর্থাত্ সারা পৃথিবীতে নানা সময়ে , নানা ভাষায় 'রক্তকরবী ' মঞ্চস্থ হওয়ার আলোচনা দূরে সরিয়ে রাখলেও দেখা যাচ্ছে খোদ গৌতমও সময়টাকে ধরবার জন্য আরও একবার মাধ্যম হিসেবে আঁকড়ে ধরছেন এই নাটককেই৷ নতুন করে উপস্থাপন করার জন্য সেট ডিজাইন , কস্টিউম , সাউন্ড ডিজাইনে অনেকখানি করে পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন পরিচালক৷ টুকরো টুকরো পরিসরে পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী , উস্তাদ রশিদ খান , কৌশিকী চক্রবর্তীদের কন্ঠ, কিংবা আমান আলি খান ও আয়ান আলি খানের সরোদ যেভাবে জুড়ে নেওয়া হয়েছে নাটকে তা অত্যন্ত প্রশংশনীয়৷

ফেরা যাক নাটকে৷ যেখানে নন্দিনী বলছে , 'পৃথিবী আপনার প্রাণের জিনিস আপনি খুশি হয়ে দেয়৷ কিন্ত্ত যখন তার বুক চিরে মড়া হাড়গুলোকে ঐশ্বর্য বলে ছিনিয়ে নিয়ে আসে , তখন অন্ধকার থেকে একটা কানা রাক্ষসের অভিসম্পাত নিয়ে আসে৷ দেখছ না ? এখানে সবাই কেমন রেগে আছে , সন্দেহ করছে , কিংবা ভয় পাচ্ছে !' এমন কথার কোনও দেশ -কাল তো হয় না৷ খাবার আসে মাটি থেকে৷ উদ্ভিদজীবী প্রাণী থেকে৷ আবার গাছ থেকেই তো শ্বাস গ্রহণের অক্সিজেনও পাই আমরা৷ কিন্ত্ত মাটি খুঁড়ে কয়লা , পেট্রল , ডিজেল কিংবা সোনা যখন আমরা তুলে নিয়ে আসি , তা প্রকৃতির স্বাভাবিক দান নয়৷

তাই তখনই আমরা টেনে আনি হিংসা , ঝগড়া , দোষারোপ অথবা 'রাক্ষসের অভিসম্পাত '৷ নাট্যকার আমাদের দেখান প্রেম প্রতিদান চায়৷ নিঃস্বার্থ হতে পারাটাই সত্যিকারের প্রেমের বৈশিষ্ট্য৷ তাই কিশোর রক্ষীদের হাতে মার খেয়েও নন্দিনীর জন্য রক্তকরবী নিয়ে আসে৷ কিংবা বিশু পাগল তার নিজের গান শোনায়৷ সেটাই তার প্রেমের প্রকাশ৷ এর মধ্যে কৃত্রিমতা নেই৷ আছে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া ! হিরে কিনে দিলে নাকি চকোলেট কিনে দিলে ভালোবাসার সত্যিকারের প্রকাশ দেখানো যাবে , এই নিয়ে বিজ্ঞাপনী হইচই সময়ের মাঝে তাই 'রক্তকরবী ' নতুন অর্থ নিয়ে ধরা দেয় আমাদের কাছে৷

এমন আরও আছে৷ ধরা যাক , গোঁসাইয়ের দেওয়া সেই 'মন্ত্র ' যাতে বাহ্যিক জ্ঞান লোপ পাবে ! দিনরাত ফেসবুক আর ওয়াটসঅ্যাপে চোখ রাখা কিংবা কোনে হেডফোন গুঁজে রাখা সময়টায় গোঁসাইয়ের মন্ত্র চিনতে ভুল হয় না৷ আলাদা করে বলা দরকার নন্দিনী চরিত্রে চৈতি ঘোষালের কথা৷ ভাল লাগবে বিশু পাগল (শোভন চক্রবর্তী ), অধ্যাপক (অশোক মজুমদার ), ফাগুলাল (সুকেশ মৈত্র ) , গোঁসাই (সুব্রত চক্রবর্তী ) প্রমুখকেও৷ এ নাটকের সমসাময়িকতা কখনোই হারাবে না৷ তাই বার বার এ নাটক নিয়ে ফিরে আসতে হবে গৌতম হালদারকে !

এ নাটকও এক রুদ্ধসংগীত

$
0
0

কিছু কিছু আলোচনা থাকে, যার ফাঁকে ছোটরা এসে পড়লে, 'বড়দের কথা' বলে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ এই তালিকায় কখনও ছিল 'বারবধূ' নাটক৷ বড় হয়ে জেনেছি সুবোধ ঘোষের গল্প থেকে এ নাটক করতে গিয়ে একঘরে হন নাট্যব্যক্তিত্ব অসীম চক্রবর্তী৷ কিন্তু প্রায় দু'হাজার শো সফল নাটকের স্রষ্টাকে কেন একঘরে হতে হয়েছিল সে উত্তর মেলেনি৷ অথচ তিনিই প্রথম বাংলায় আর্থার মিলার করেন, ব্রেশট করেন! কিন্তু এখন তিনি বিস্মৃতপ্রায়৷ তাঁর শেষ আশ্রয় প্রতাপমঞ্চ-ও বন্ধ৷ এই অসীমই যদি অমিয় হয়ে, মঞ্চে সাদা চাদর সরিয়ে, চোখের ফুল ঝেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েন! 'রেজারেক্সন' চমকে দিতে বাধ্য৷

আর সেটাই ঘটিয়েছে পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ প্রযোজিত নাটক 'অদ্য শেষ রজনী'৷ শ্যামল গাঙ্গুলির উপন্যাস অবলম্বনে এটি লিখেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়৷ নির্দেশনা ও পরিমার্জনার মাধ্যমে এক অতি আধুনিক উপস্থাপন ঘটিয়েছেন ব্রাত্য বসু৷বহু কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই নাটক৷ বহু পরত৷ নাটকের সঙ্গে সঙ্গে আলগা হয়েছে পেঁয়াজ খোসা৷ প্রাথমিকভাবে যা সামনে আসে তা হল গ্রুপ থিয়েটারের ব্যবসামুখী হতে চাওয়া সমর্থনযোগ্য, নাকি নয় সেই প্রশ্ন৷ প্রোডাকশন চালাতে একটা গ্রুপকে যে কতটা আর্থিক ঝুঁকি নিতে হয় তা এই জগতের সঙ্গে সামান্য যোগাযোগ রাখা মানুষও জানেন৷ কিন্তু তা থেকে যাবে কি এ রকম ভাবেই? তাহলে 'হলে টর্চ দেখায় যে ছেলেটা সে কী খাবে?' পয়সা পাওয়া যাবে না জেনেও শিল্পের কোন দাবি মেটাতে সস্তার টিকিটে, পলেস্তরা খসা, ভাঙা সিটওলা হলে থিয়েটার করে যেতে হবে? এ প্রশ্ন তুলতে চেয়েছিলেন অসীম৷
নাটকটা অসীমের জীবনকে হুবহু অনুসরণ করেনি৷ কিন্তু তাঁর ব্যতিক্রমী চিন্তাটাই সাব-টেক্সট হিসেবে অন্তঃসলিলার মতো বয়ে গিয়েছে নাটকে৷ নাটকে অমিয়-র সাফল্যই তাঁকে অপ্রিয় করেছে৷ মেকি সভ্যতার ভন্ডামি সরিয়ে ব্লাউজ টেনে ছিঁড়েছেন তিনি একের পর এক শোয়ে৷ ব্যস৷ অতএব তিনি অশ্লীল৷ এ নাটক অ্যাকাডেমিতে চালানো নিয়ে মামলা হয়, তাতেও তিনিই জেতেন৷ তবুও নাটক বন্ধের জন্য তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রকের থেকে চলে আসে 'সমাজসচেতনতা'মূলক চিঠি৷ অথচ শোয়ে শ্রোতার ঢল৷ পরিসংখ্যান বলছে, কম করে ২০ লক্ষ মানুষ 'বারবধূ' দেখেন৷ তাঁরা অতএব অপসংস্কৃতির বাহক! এ নাটককে একটি সময়ের দিকে বয়ে নিয়ে যায় ট্রাম৷ দুরন্ত মঞ্চভাবনা দেবাশিস রায়ের৷ ট্রামে চেপে সত্তরে এসে আলোর রকমফেরে, শব্দের তারতম্যে, ক্যাবারে নাচে ট্রামের শরীর বেয়েই আমরা পৌঁছাই কখনও নাটকপাড়ায়, কখনও গ্রিন রুমে, কখনও অমিয়-র (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)বাড়িতে৷ সঙ্গী এক সাংবাদিক (সত্রাজিত্ সরকার)৷ ট্রামের মরচের গায়ে ঘষা খায় অমিয়-র শিল্পীমন৷

ট্রামের সিঁড়িতেই সফল অভিনেত্রী কেতকী দত্ত থুড়ি রজনীকে (দেবযানী চট্টোপাধ্যায়) প্রস্তাব দেন নাটকে অভিনয়ের৷ আবার সফল সময়ে সিঁড়িতে পিছলেও পড়তে হয়! সাপোর্টিভ শিক্ষিকা গৃহিণীর (অঙ্কিতা মাঝি) সঙ্গে সঙ্গে মন কি পিছলে যায় না বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়ানো নামী অভিনেত্রীর প্রতিও৷ এখানেই নাটকের ভিতরে নাটক৷ 'বারবধূ'-র সেই পতিতা মেয়েটি, যে স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে তার মনও তো পুরুষটিকে নিজের করে পেতে চায়! নিজেকে ভেঙেচুরে, শব্দ ডেলিভারির উত্থান পতন ঘটিয়ে নিংড়ে দিয়েছেন অনির্বাণ৷ দেবযানী, সত্রাজিত্, অঙ্কিতাদের সাপোর্টটাও দুরন্ত! আরও পরত আছে৷ 'বারবধূ'-র সাফল্যের সময়ে মানুষ অসীম চক্রবর্তীর বিপুল নাট্য কোম্পানি দেখেছেন৷ কিন্তু তখন অভিনেত্রীর সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে কী কী কথা হতে পারতো তাঁর, সেদিকে আমাদের কল্পনাকে এগিয়ে দেয় নাটক৷ আবার নিজের কাজের সমর্থনে যে যুক্তি খাড়া করতে চেয়েছিলেন অসীম, এখানে তিনি তা বলার জন্য মাউথপিস খুঁজে পান যাতে দর্শক 'ছাই ঘেঁটে দেখে নিতে পারে, সত্যি থিয়েটার ছিল কিনা'৷ আরও একটু বলার রয়ে গেল৷ এ নাটক নিয়ম করে অভিনীত হচ্ছে পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে৷ অর্থাত্ অসীম চক্রবর্তীর পাড়ায়৷ আবার তিনি আলোচনায়৷ কী বলা যায়? 'রেজারেক্সন'! - ইন্দ্রনীল শুক্লা৷

মঞ্চে আঁকা সময়ের বাঁক

$
0
0

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উপন্যাসটি লিখেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পরে ছবিও তৈরি করেন তপন সিংহ৷ কিন্ত্ত তার পর তো কয়েক দশক কেটে গিয়েছে৷ আর এ বার সৌমিত্র মিত্রের পূর্ব-পশ্চিম নাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনায় মঞ্চে 'হাঁসুলি বাঁকের উপকথা'৷ হঠাত্‍? প্রশ্ন উঠতেই পারে৷ উত্তর কিন্ত্ত ঝপ করে দেওয়া যাবে না৷ নাটকটির উপস্থাপন নিয়ে আলোচনা ছাড়াও অন্য কয়েকটা কৌণিক বিশ্লেষণও খুব জরুরি৷ ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে পাশাপাশি দেখতে হবে নাটকটা এই সময়ের প্রেক্ষিতে কতটা প্রাসঙ্গিক৷

মহাযুদ্ধের সময়ে বহু ছোট ছোট উপজাতি কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বড়বড় শক্তির চাপে৷ বীরভূমের কোপাই নদীর পাড়ে বসবাসকারী তেমনই এক উপজাতি ছিল কাহার৷ চাষবাস করে, পালকি বয়ে দিব্যি দিন কাটতো তাদের৷ দারিদ্র নিত্যসঙ্গী ঠিকই৷ কিন্ত্ত নবান্ন, গাজন এসবও তো আছে৷ আছে বাবাঠাকুরের আরাধনা৷ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি অন্যের বৌয়ের সঙ্গে গাছের আড়ালে দেখা করা৷ হিংসা আছে৷ তাই আছে প্রতিশোধও৷ আছে তাদের নেতা বনওয়াড়ির প্রভাব৷ তেমনই আছে মাইতো ঘোষের মতো বড়লোকের প্রতিপত্তি৷ আর আছে করালী-র মতো নবযুবা, যে বহুযুগ ধরে লালিত উপজাতি কানুনকে উপেক্ষা করে চন্দনপুরে যায় শ্রমিকের কাজ করতে৷ উপন্যাসের আলোচনা নিষ্প্রয়োজন৷ কিন্ত্ত প্রেক্ষিতের মধ্যে আমরা বুঝে ফেলতে পারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব৷ যার ধাক্কায় ভেঙে পড়ছে উপজাতির অনুশাসন৷ দ্বন্দ্ব বেধে যাচ্ছে আদি বনাম আধুনিকের৷ একটা পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছি আমরা৷ দেখতে পাচ্ছি কেমন করে স্বাধীন এক উপজাতির মানুষ কারখানার শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে৷ দেখতে পাচ্ছি কেমন করে যুদ্ধের সুযোগে কালোবাজারি করছে মাইতো ঘোষের মতো মানুষরা৷ বনওয়াড়ি যেমন ট্র্যাডিশনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, তেমনই করালীও কিন্ত্ত তার জাতির মানুষকে বাঁচাতে চাইছে৷ তাই তাদের রোজগারের ব্যবস্থা করছে কারখানায়৷ আবার ঝড় আসতে পারে এই খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামে৷ তাই বনওয়াড়ি বনাম করালীর সংঘাত যেমন আছে৷ তেমনই পুরনোকে যে নতুনের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে, সেটাও তো ভবিতব্য৷ তাই ভাঙন আসে, দুর্যোগ আসে এবং এক সময়ে কাহারপাড়ায় ফিরতেই হয় করালীকে!

তাকানো যাক, এ সময়ে এ নাটকের তাত্‍পর্যের দিকে৷ যদি যুদ্ধ ভুলে যাই, যদি কাহারদের কথা ভুলে যাই, তাহলেও এটা তো সত্যি যে ভুবনায়নের কল্যাণে গ্রামীণ সভ্যতা, সংস্কৃতি, উপজাতি-আদিবাসী শিল্প তলানিতে ঠেকেছে৷ এই প্রকান্ড শক্তির সঙ্গে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না৷ সে শিল্পের বাহকদের চুম্বকের মতো, নাকি 'হ্যামলিনের বাশিওয়ালা'র মতো টেনে নিচ্ছে বিশ্বায়ন৷ একক দোকান, একক চাষাবাদ, একক ব্যবসা এসবের সামনে দেওয়াল তুলে দাঁড়িয়ে পড়ছে সিন্ডিকেট, মল ইত্যাদি ইত্যাদি৷ বড় অসম এ লড়াই৷ একটা পরিবর্তনের সময়, যখন বড় মাছ গিলে খেয়ে ফেলছে ছোট মাছকে৷ স্বাধীন চাষা পরিণত হচ্ছে দিনমজুরে৷ চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে যেতেও কেমন করে যেন একটা উল্টো শক্তি সিস্টেমের ভিতর থেকেই জন্মও নিচ্ছে৷

এমন একটা কঠিন উপন্যাসের নাট্যরূপ ও পরিচালনার যে চ্যালেঞ্জ কৌশিক কর নিয়েছেন তার প্রশংসা করতেই হবে৷ সাদা-কালোই এই নাটকের মূল রঙ৷ শাড়ি, ধুতি, জামা, প্যান্ট সবই ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট কম্বিনেশনে৷ আলোও সাদা৷ শেষ দৃশ্যে হঠাত্‍ সব রঙিন! বনওয়াড়ি (শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়), মাইতো ঘোষ (সৌমিত্র মিত্র), করালী (কৌশিক কর), সুচাঁদ (সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত) নসুবালা (গম্ভীরা ভট্টাচার্য), কালোশশী( অঙ্কিতা মাঝি), পাখি (তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস)-সহ প্রায় সকলেই চমত্‍কার অভিনয় করেছেন৷ নাটকটা এমনভাবে বাঁধা হয়েছে যে পরস্পরকে একটা নির্দিষ্ট সুর ধরে এগোতেই হবে৷ নাহলে তাল কেটে যাবে৷ আর লাইভ-সুর তালের দায়িত্বে থাকা অভিজিত্‍ আচার্যও চমত্‍কার৷ 'গতরে পিরিতের ফুল ফোটে', 'কোপাই নদীর জলে,'হাঁসুলি বাঁকের কথা'-র মতো গানগুলো দিয়ে পরম মমতায় মাখিয়ে দিয়েছেন নাটকীয় মুহূর্তগুলোকে৷ গানের রেশ থেকে যায় প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরনোর পরেও৷ -ইন্দ্রনীল শুক্লা

হারাধনের শেষ ছেলেও ডুবল

$
0
0

হাতিবাগান নাটক পাড়ার শেষ থিয়েটার হল, বিজন থিয়েটারও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে৷ এটাই কি ভবিতব্য? লিখছেন পৃথা মুখোপাধ্যায়



নীরবতা পালন করুন৷ মঞ্চে নাটক চলছে৷

যুগের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে আধুনিক বাসস্থান, আধুনিক রেস্তোরাঁ, আধুনিক সিনেমা৷ সম্প্রতি 'সিনেমাওয়ালা' ছবিটি দেখে বাঙালি চোখের জল ফেলেছে কিংবা কফি কাপে চুমুক দিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে যে ঠিক কিভাবে সিনেমা হলগুলির ঝাঁপ বন্ধ করে মাল্টিপ্লেক্সগুলি মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে৷ এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক, নস্টালজিয়ার অন্ত নেই৷ সিঙ্গল স্ক্রিনের বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে যেমন চর্চা হয় আজকাল, তেমন চর্চা কিন্ত্ত থিয়েটার হলগুলো বিক্রি হয়ে যাওয়া নিয়ে হয় না৷
আর সেই হাতিবাগানী থিয়েটার পাড়ার শেষ নিদর্শন বিজন থিয়েটার সম্ভাব্য ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হতে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ ১৯৭৭ সালে তৈরি প্রেক্ষাগৃহটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ছিল মেঘনাদ ভট্টাচার্যের 'সায়ক' নাট্যদলের৷ কার্যত অনুন্নয়নের ফলেই এই হলে দর্শক কমতে শুরু করে৷ যদিও এখনও সায়ক পরিচালিত নাট্য প্রতিযোগিতা এবং তিনটি দলের রিহার্সাল এই প্রেক্ষাগৃহেই হয়৷

তবে ২০০২ সালের জুলাই মাসে তত্‍কালীন তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে পরামর্শে পাঁচটি দল মিলে 'সমবায় প্রয়াস' নামে একটি বোর্ড গঠন করে যার সদস্য ছিল পাঁচটি গ্রুপ থিয়েটার দল- সায়ক, শোহন, অন্য থিয়েটার, থিয়েটার ওয়ার্কশপ এবং সমকালীন শিল্পীদল৷ এই দল গঠিত হয় যাতে সরকার এই হলের দায়িত্বভার নেয় এবং প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত হয় হলটি৷ আর্জিও জমা পড়ে৷ কিন্ত্ত কথা রাখেননি মন্ত্রিমশাই৷ ২০০৭ সালে সমকালীন শিল্পীদল সদস্যপদ ত্যাগ করে৷ পরবর্তীতে থিয়েটার ওয়ার্কশপও৷ বর্তমানে সায়ক, শোহন ও অন্য থিয়েটারের তত্ত্বাবধান করে এই প্রেক্ষাগৃহের৷

মেঘনাদবাবু অবশ্য এই মুহূর্তে কলকাতার বাইরে৷ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'এটা সত্যি যে আমরা হল আর চালাতে পারছি না৷ তবে এই মুহূর্তে, বিক্রির সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারবো না৷' তবে শোহন এর নির্দেশক অনীশ ঘোষের সঙ্গে মেঘনাদবাবুর বক্তব্যের খানিক অমিল পাওয়া যাচ্ছে৷ তাঁর মতে, 'একবার স্বপ্নভঙ্গের পর আমরা আর নতুন করে বিশ্বাস করতে চাই না, তাছাড়া গত ১৪ বছরে প্রতিটি দলের প্রায় ৬০,০০০টাকা করে প্রতি বছর খরচ হয় এর পেছনে৷ তাই আমরা আমাদের মূল টাকা ফেরত পাওয়ার জন্যই প্রমোটিং এ দিয়ে দিতে চলেছি হলটা'৷

প্রায় একই বক্তব্য অন্য থিয়েটারের নির্দেশক বিভাস চক্রবর্তীর৷ তিনি বলছেন, 'সমাজ এগুলো চায় না, রাষ্ট্র যারা চালাচ্ছে তারা চায় না, মূল্যই বোঝে না এখন কেউ, আমরা কী করে চালাব এটা? গিরিশ বাবু, শিশির বাবুর মতো লোক ভালবাসতেন থিয়েটার তাই হলগুলো তৈরি হয়েছিল'৷ কিন্ত্ত বিজন থিয়েটার তো তাঁদের অনেক পরে তৈরি হয়েছে৷ উত্তরে তিনি বলছেন, 'বিজন থিয়েটার নিয়ে উত্তেজিত হওয়ার তো কিছু নেই৷ রঙ্গনা তো সমসাময়িক, রঙ্গনার কী হল? সারকারিনার কী হল? রঙমহলের কী হল? বিশ্বরূপার কী হল?' আর নতুন সরকারের কাছে অনুরোধ কেন করা হল না? তাঁর অভিমান ভরা উত্তর, 'আমরা কেন আবেদন করতে যাব? ঐ হল বাঁচিয়ে আমাদের কী হবে! ২০০২ থেকে টাকা গুনে গেলাম, সমাজের দায়িত্ব নেই? আমাদের অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে, তবে ীাঁরা জানবেন এখানে একটা হল ছিল!' তাই বিজন থিয়েটার ভেঙে হাইরাইজ ওঠার প্রসঙ্গে বিভাসবাবুর বক্তব্য, 'দুর্ভিক্ষে মানুষ মারা গেল এটাই বড় কথা৷ শেষ কে মারা গেল তার হিসেব নিয়ে লাভ নেই তো কিছু৷ অনেকের মধ্যে এটাও একটা৷'

কোম্পানি থিয়েটার নিয়ে বহুদিন ধরেই চিন্তাভাবনা করছেন ব্রাত্য বসু৷ গবেষণা মূলক একটি ছোট বইও লিখেছেন৷ শহরেরই দুটি মুমুর্ষূ থিয়েটার হলকে আবার বাঁচিয়ে তোলার ব্যবস্তাও করেছেন, যার দুটিতেই এখন নিয়মিত নাটক অভিনীত হয়৷ বিজন থিয়েটারের বিক্রি হয়ে যাওয়ার তোড়জোড় সম্বন্ধে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, 'বিজনের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল৷ মেঘনাদ-দা একটা ড্রাইভ নিয়েছিলেন হলটাকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য৷ কিন্ত্ত এটা তো মনে রাখতে হবে, যে আজকের দর্শকদেরও কিছু চাহিদা আছে৷ তার প্রায় কিছুই তো বিজনে ছিল না৷ এটাই তো হওয়ার ছিল৷ তাই হচ্ছে৷'

হাতিবাগান থেকে রাজা রাজকৃষ্ণ স্ট্রিট ধরে এগোলে দেখা যাবে একটি বিশাল ঘেরা জায়গায় উঠছে চকচকে হাইরাইস বিল্ডিং৷ ২-এ, রাজা রাজকৃষ্ণ স্ট্রিট৷ ঠিকানাটা গুগল করলেই বোঝা যাবে এখানেই ছিল 'বিশ্বরূপা থিয়েটার', যেখানে দর্শকের ভিড়ে হাউসফুল যেত নুন শো-ও৷ সেই প্রেক্ষাগৃহের কোনও চিহ্নই আর নেই৷ ঐ রাস্তা ধরে আরেকটু এগোলেই দেখা যাবে 'রঙ্গনা থিয়েটার'৷ যার তালায় জং পড়েছে দীর্ঘদিনের৷ রঙমহলের ইটও ভাঙতে শুরু করেছে বুলডোজার৷ থিয়েটার পাড়ার অতীতের স্মৃতি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু 'স্টার থিয়েটার', যার থিয়েটার হিসেবে পরিচিতি বিলুপ্ত হতে বসেছে৷ থিয়েটার পাড়া থিয়েটারহীন হয়ে পড়েছে৷

এখন প্রশ্ন উঠবে কেন এই পরিস্থিতি, নাট্যপ্রেম কি মরে গেছে মানুষের মনে? প্রতিপ্রশ্ন- তাহলে কেন নিত্যনতুন দল তৈরি হচ্ছে? কেনই বা নামজাদা দলগুলিতে নতুন প্রজন্ম অভিনয়ের আশায় সেট বইছে? অ্যাকাডেমি, রবীন্দ্র সদনে ভিড় জমছে শনি রোববারে? একটু বিশদে গেলেই জানা যাবে কারন৷ নির্দেশক অনীশ ঘোষের মতে 'রূপোলী পর্দার শিল্পীদের থিয়েটারে নিয়ে আসা এবং প্রযুক্তিগত অনুন্নতির ফলেই এই অবস্থা'৷ উপরিউক্ত প্রতিটি হলই ছিল বেসরকারি এবং থিয়েটারে ব্যবসা করার প্রবনতাই ধীরে ধীরে প্রযোজক বা হল মালিকদের পথে বসায়৷ আগে থিয়েটার এর শিল্পীদের অভিনয় এবং হলের নন্দনতত্ত্ব দেখতে আসত দর্শক কিন্ত্ত সিনেমার শিল্পীদের আসার পর তাদের দেখতেই দর্শক ভিড় জমায়, ফলে সাহিত্য মূল্য কমতে শুরু করে এখান থেকে জন্মায় ওয়ান ওয়াল থিয়েটার৷ কার্যত বন্ধ হয় হলের প্রয়োজনীয়তা৷ যদিও শহরের নাট্যপ্রেমীদের জন্য গিরিশ মঞ্চ, স্টার প্রভৃতি একাধিক হলে মঞ্চস্থ হয় নাটক৷ ফলে পুরনো থিয়েটারগুলোয় ভিড় কমতে থাকে৷ যার ফলে বর্তমান অবস্থা৷
আর কিছুদিনের মধ্যেই ভাঙতে চলেছে এই এলাকার শেষ রঙিন স্বপ্নটি, যাকে হয়তো আমরা এবার থেকে পাব শুধুই ইতিহাসের পাতায়৷ তাই বুলডোজারের অপেক্ষায় শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে বিজন থিয়েটার৷ মঞ্চে আর নাটক চলবে না৷ বিজনের সাজঘরে তাও আজও লাগানো আছে, 'মঞ্চে নাটক চলছে৷ সাজঘরে নীরবতা রক্ষা করুন৷'
তাই এবার নীরবতাই পালন হোক৷

বিজন বিতর্ক

'এটা সত্যি যে আমরা হল আর চালাতে পারছি না৷ তবে এই মুহূর্তে, বিক্রির সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারবো না৷' মেঘনাদ ভট্টাচার্য, সায়ক

২০০২ থেকে টাকা গুনে গেলাম, সমাজের দায়িত্ব নেই? আমাদের অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে, তবে ওঁরা জানবেন এখানে একটা হল ছিল! দুর্ভিক্ষে মানুষ মারা গেল এটাই বড় কথা৷ শেষ কে মারা গেল তার হিসেব নিয়ে লাভ নেই তো কিছু৷ অনেকের মধ্যে এটাও একটা৷

বিভাস চক্রবর্তী, অন্য থিয়েটার

একবার স্বপ্নভঙ্গের পর আমরা আর নতুন করে বিশ্বাস করতে চাই না, তাছাড়া গত ১৪ বছরে প্রতিটি দলের প্রায় ৬০,০০০ টাকা করে প্রতি বছর খরচ হয় এর পেছনে৷ তাই আমরা আমাদের মূল টাকা ফেরত পাওয়ার জন্যই প্রমোটিং এ দিয়ে দিতে চলেছি হলটা৷ অনীশ ঘোষ, শোহন

বিজন জন্ম

১৯৭৭ সালে তৈরি৷ নামকরণ নাট্যকার-পরিচালক-অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্যের নামে৷ কোম্পানি বা বাণিজ্যিক থিয়েটারের শেষ পর্বের শুরুতে এই হলটি তৈরিই হয়েছিল প্রধাণত হাতিবাগানী থিয়েটার পাড়ায় বাংলা গ্রুপ থিয়েটারের পদার্পনক্ষেত্র হিসেবে৷ বিজন ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য এবং সায়ক নাট্যগোষ্ঠী৷ তারই প্রকাশ ঘটল বিজন থিয়েটারের মাধ্যমে৷

বিনিময় মূল্য হিসেবে যে সম্ভাব্য অঙ্কের কথা শোনা যাচ্ছে: ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা

রাজকৃষ্ণের পট পরিবর্তন

রংমহল: ভেঙে গিয়েছে৷ এখন ফাঁকা জমি৷ সারকারিনা: ভাঙেনি৷ বন্ধ দরজায় তালা৷ তাতেও জং ধরে গিয়েছে৷ তবে কলকাতার প্রথম ঘূর্ণায়মান মঞ্চ, যা মাটির তলায় চলে যেতে পারতো, তা এখনও আছে৷ যেমন আছে বসার গ্যালারি৷ ভাঙা৷ রঙ্গনা: বন্ধ৷ তালা ঝুলছে৷ হয়তো খরিদ্দারের অপেক্ষায়৷ বিশ্বরূপা: বহুতলের কাজ শুরু হয়েছে৷

'বিজনের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল৷ মেঘনাদ-দা একটা ড্রাইভ নিয়েছিলেন হলটাকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য৷ কিন্ত্ত এটা তো মনে রাখতে হবে, যে আজকের দর্শকদেরও কিছু চাহিদা আছে৷ তার প্রায় কিছুই তো বিজনে ছিল না৷ এটাই তো হওয়ার ছিল৷ তাই হচ্ছে৷' ব্রাত্য বসু, কোম্পানি থিয়েটার সভ্যতাকে ফিরিয়ে আনায় বিশ্বাসী নাট্যকার





মাতৃত্বের ছুটিতে বিন্দিয়া

$
0
0

কিন্তু বাংলা মঞ্চের ডজন খানেক নাটক তো তাঁরই মুখ চেয়ে রয়েছে৷ তাদের ভবিষ্যত্ কী?নাকি অন্য কেউ করবেন? খোঁজ নিলেন ইন্দ্রনীল শুক্লা

'হিরোইন' ছবির কথা মনে পড়ছে৷ ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ঐশ্বর্য রাইয়ের অভিনয়ের কথা ঘোষণা করে দিলেন পরিচালক মধুর ভান্ডারকর৷ কিন্ত্ত কয়েক দিন পরই ঐশ্বর্য জানালেন তিনি সন্তানসম্ভবা৷ কাজ করা সম্ভব নয়৷ এমন অনেক উদাহরণ ছবির জগতে রয়েছে৷ মাতৃত্বের ছুটিতে যাওয়ার জন্য দ্রুত 'দেবদাস'-এর শু্যট শেষ করে দিয়েছেন এমনটা হয়েছে মাধুরী দীক্ষিতের বেলায়৷ কিন্ত্ত সেখানেই তো ছবির সঙ্গে নাটকের তফাত্৷ নাটক তো 'পেরিশেবল৷' প্রতিদিন সাজতে হয়, মঞ্চে উঠতে হয়, অভিনয় করতে হয়৷ 'লাইভ'৷ তাই আগে কাজ সেরে দেওয়ার অপশনও নেই৷ আগামী ১২ জুন 'ইপ্সা' নাটকের জন্য আপাতত শেষবার মঞ্চে উঠবেন বিন্দিয়া ঘোষ, বাংলা মঞ্চের এই মুহূর্তের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেত্রী৷ সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে আবার তাঁকে মঞ্চে দেখা যাবে আগামী বছর এপ্রিল-মে নাগাদ৷ সেই ২০০৮ সালে গৌতম হালদারের বিপরীতে 'মেয়েটি'-তে কাজ করে ভূয়সী প্রশংসা কুড়নোর পর এতদিন একটানা মঞ্চে তাঁকে না দেখতে পাওয়ার ঘটনা কখনওই ঘটেনি৷

খবরটা পাওয়ার পর দলগুলো কেমনভাবে রিঅ্যাক্ট করছে? নিজেরই বা কেমন মনের অবস্থা? বিন্দিয়া বলছেন, 'প্রতিটি অভিনয়ই আমার কাছে সন্তানের মতোই৷ তবে এক্ষেত্রে তো কিছু করার নেই৷ কয়েকটি দলের সাময়িক অসুবিধা হয়তো হবে৷ কেউ কেউ অন্য কাউকে দিয়ে অভিনয় করাচ্ছেন আপাতত৷ আবার অনেকে অপেক্ষা করছেন আমার ফিরে আসার জন্য৷'

কেউ রাগ করেনি? হল বুকিং হয়ে গিয়েছে, কল শো আসছে৷ এ রকম সময়ে এমন একটা খবর! বিন্দিয়া হেসে বললেন, 'একদম না৷ সকলেই খুব কো-অপারেট করছেন৷ আর 'ইপ্সা'-র রিহার্সালে তো দেবশংকরদা নিজেই অনেক ডিজাইন অদল-বদল ঘটাচ্ছেন যাতে শেষের শো গুলোয় আমার স্ট্রেস না হয়৷' হযবরল গোষ্ঠী প্রযোজিত, চন্দন সেন রচিত ও নির্দেশিত 'ইপ্সা' তো বটেই, 'জাহানারা জাহানারা'তেও লিড রোলে বিন্দিয়া৷ চন্দন সেন জানালেন, 'বিন্দিয়ার মতো অভিনেত্রীর বিকল্প ঠিক করা ভীষণ কঠিন কাজ৷ 'জাহানারা'-র কিছু কল শো এসে থাকলেও তা আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে৷ তবু শো তো চালাতেই হবে৷ 'ইপ্সা'-র শো চলবে৷'

'ইপ্সা'-র জন্য পরিবর্ত হিসেবে ভাবা হয়েছে ন্যান্সি রায়ের কথা৷ 'এবং অন্ধকার' নাটকে বিন্দিয়ার জায়গায় কাজ শুরু করেছেন মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অমিতাভ দত্ত পরিচালিত নতুন নাটক 'তোমার আমি'-তে কাজ করবেন সোমা দত্ত৷ অশোক মুখোপাধ্যায় পরিচালিত থিয়েটার ওয়ার্কশপের নাটক 'বিয়ে গাউনি কাঁদনচাপা'-য় থাকবেন কথাকলি৷ 'এফএম মহানগর' নাটকে বিন্দিয়ার ভূমিকা দুই অভিনেত্রীর মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হবে৷ 'মরণ রে' নাটকের জন্য মধুমিতা সেনগুন্ত অভিনয় করবেন বলে জানালের নাটকওয়ালা-র কর্ণধার শ্যামল চক্রবর্তী৷ ওই দলেরই 'অন্তক্ষরণ'-এর শো এখন হচ্ছে না৷ কথাকৃতি-র পরিচালক সঞ্জীব রায় জানিয়েছেন, 'ঘোড়ামুখো পালা' নাটকে তন্বিষ্ঠা অথবা আম্রপালী কাজ করবেন৷ ও দিকে, বিন্দিয়ার নিজের দল কোরাস-এর 'বন্ধের দশ দিন' আপাতত বন্ধ রাখতে হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, এ নাটকে অভিনয় করেন রজতাভ দত্ত৷ বিন্দিয়া বলছেন, 'রনিদা খুব ব্যস্ত অভিনেতা৷ অন্য কারও সঙ্গে রিহার্স করে আবার তৈরি করে নেওয়া সম্ভব নয়৷ তাই আমার ফেরা পর্যন্ত বন্ধ৷' বন্ধ থাকছে রঙরূপ গোষ্ঠীর সীমা মুখোপাধ্যায় পরিচালিত 'ছায়াপথ'৷ আট বছর ধরে টানা চলছে কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের 'মেয়েটি'৷ এই প্রথম বেশ কিছুদিনের জন্য শো বন্ধ থাকবে৷ পরিচালক কিশোর সেনগুন্ত বলছেন, 'এই নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই৷ প্রত্যেকের জীবনেই এই সময়টা আসে৷ তবে 'মেয়েটি'-র জন্য বিন্দিয়ার কোনও বিকল্প হয় না৷ ও ফিরে এলে আবার শো হবে৷ আমরা অপেক্ষা করব৷'


Viewing all 222 articles
Browse latest View live


<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>