Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 222

সিনেমাকে গোল দিল এ নাটক

$
0
0

ইন্দ্রনীল শুক্লা

নাটক : গয়নার বাক্স
রচনা , নির্দেশনা : পার্থপ্রতিম দেব
দল : বাঘাযতীন আলাপ
অভিনয় : সোহিনী , রূপা , উদিতা , শিপ্রা , অনিন্দিতা , পূরবী , তিথি , কৃষ্ণা , জয়শ্রী



সেটা ১৯৯৩ সাল৷ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘গয়নার বাক্স ’ উপন্যাস৷ তা থেকে সিনেমা তো আগেই তৈরি হয়েছে৷ এবার তৈরি হল নাটক -ও৷ পার্থপ্রতিমের থেকেই জানা গিয়েছে তিনি কিন্ত এ কাহিনিকে মঞ্চে উপস্থাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেক আগে৷ তিনি নাটকের চেহারাটা খাড়া করে ফেলেছিলেন সেই ১৯৯৬ সালেই৷ অতএব সেদিক দিয়ে দেখলে প্রায় দু’দশক পর তাঁর স্বপ্নপূরণ ঘটল৷ সময় অনেকখানি বয়ে গেলে কি ভাবনায় ভাটা পড়ে যায় ? হয়তো নয়৷ বরং মনে লালন -পালন করতে করতে তা আরও রসে জারিত হয়৷ কেমন সে জারণ সে আলোচনায় প্রবেশের আগে নাটকে কাহিনিটি যে চেহারায় রয়েছে তা একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক৷

সাত বছরে বিয়ে আর বারো বছরে বিধবা ! অতএব , একশো ভরি গয়না নিয়ে পিসিমা ফিরে এলেন পড়তি বনেদি মিত্রচৌধুরী পরিবারে৷ একে বাল্যবিধবা , তায় আবার একশো ভরি গয়না৷ দেখতে দেখতে একসময়ে তিনিই বাড়ির সর্বময় কর্ত্রী হয়ে উঠলেন৷ একাত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধ হলেও তাঁর গায়ের রঙ , চাল -চলন দেখে আন্দাজ করা যায় যে একসময়ে বহু পুরুষ তাঁর জন্য পাগল ছিলেন৷ মারা যাওয়ার ঠিক আগে তিনি গয়নার বাক্স দিয়েগেলেন ছোটবউ সোমলতার হাতে (আগে দিলেন নাকি পরে সেটা অবশ্য সোমলতার গুলিয়ে গিয়েছে )! পিসিমার থেকে সোমলতা যা শিখতে পেরেছে তা হল একজন মহিলা যদি সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে চান তবে চাই শক্তপোক্ত একটা আইডেন্টিটি , চাই অর্থনৈতিক শক্তির অংশীদারিত্ব৷ সেজন্যই পিসিমা বেছে নিয়েছিলেন গয়নার বাক্স -কে৷ এই বাক্সটার জোরেই তিনি পঁচিশ বছর ধরে কার্যত সংসারের মাথা হয়ে বেঁচে থাকতে পেরেছেন৷ আর সেই শিক্ষাই ক্রমে চারিত হয় সোমলতা -র মধ্যে৷



অর্থাৎ ঘটনাটি আপাতভাবে এক কমেডি হলেও মূলগতভাবে এটি আমাদের সমাজের এক দুঃখজনক দিকের উপরেই আলো ফেলে৷ পার্থপ্রতিম -এর সাম্প্রতিক কাজের মধ্যে নান্দীকারের ব্যানারে ‘নাচনি ’ কিংবা ‘পাঞ্চজন্য ’ মানুষ পছন্দ করেছেন৷ কিন্ত যা আলাদা করে বলা দরকার তা হল এই নাটকের ক্ষেত্রে তিনি গ্রুপ থিয়েটারি যে নিজস্ব প্যাটার্ন সেটা থেকে নিজেকে অনেকখানি সরিয়ে নিয়ে এসেছেন প্রয়োগে বা আঙ্গিকে৷ প্রোডাকশনটি উস্কে দিতে পারে একসময়ের হাতিবাগান পাড়ার বোর্ড থিয়েটারের স্মৃতি৷ কোনও বক্তব্য বা নীতিকথা আলাদা করে তুলে আনার কোনও অহেতুক তাগিদ দেখাননি পরিচালক৷

তিনি আলাদা করে নাটকে নারীবাদী কথা বলে নাটককে ভারাক্রান্ত করেননি৷ কিন্ত গোটা নাটকে কোনও পুরুষ অভিনেতা নেই৷ বেশ বিস্ময়ের৷ তবে নাটকের গতিটাও এতোই চমৎকার যে অনেকক্ষণ পর্যন্ত ব্যাপারটা চোখেই পড়বে না৷ পিসিমার ভূমিকায় সোহিনী সেনগুন্ত তো বটেই বাকিরাও প্রত্যেকে মাত করে দিলেন গতিময় অভিনয়ে৷ স্টেজক্রাফটও আলাদা করে বলার মতো৷ ভৌতিক রূপে পিসিমার আগমন প্রতিবার বেশ শিহরণ জাগিয়েছে দর্শকের মধ্যে৷ কিন্ত শীর্ষেন্দু-র ভূতের যে নিজস্ব মজা অর্থাৎ ভূত এলেও সে তেমন কোনও ‘ফ্যাটাল ’ ক্ষতি করবে না এই আশ্বাস মিলেছে নাটকেও৷ সম্পূর্ণ এক অন্য সোহিনীকে আবিষ্কার করা গিয়েছে এই নাটকে৷ মাঝে মাঝে তিনি যখন স্টেজের একেবারে সামনে এসে পড়েন , মনে হয় যেন দর্শকের সঙ্গে ভূত সরাসরি ইন্টারঅ্যাক্ট করছে , তাদের সঙ্গে মনের কথা শেয়ার করছে৷ অনবদ্য ! এপাশ ওপাশ দেখে নিয়ে একটা কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো , সিনেমাটিকে বেশ কয়েকখানা গোল দিয়েছে এ নাটক৷ তার কারণ সম্ভবত সারল্য৷ শীর্ষেন্দুর গল্পটির মূল কাঠামো থেকে সরে অন্য কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করার বা অহেতুক সমসাময়িক হয়ে ওঠার কোনও প্রয়াস ছিল না নাটকে৷ তাই নির্মল আনন্দ জয় করেছে মনকে৷


Viewing all articles
Browse latest Browse all 222

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>