Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 222

নতুন পথ খোঁজার ভাবনায় থিয়েটার

$
0
0

সিনেমা বা টিভি পর্দার শুটিংয়ে ‘জমায়েত’ না হয় ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ছবি মুক্তি হতে পারে ওয়েবে। কিন্তু করোনা আবহে বাংলা থিয়েটারের ভবিষ্যৎ কী?

থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত অনেকেই দিশেহারা। কলকাতার থিয়েটার না হয় একদিন উঠে দাঁড়াবে। কিন্তু জেলার থিয়েটার দলগুলোও মুখ থুবড়ে পড়েছে। অনেকেরই সংশয়, এই শিল্প টিঁকবে তো?

কেউ কেউ বলছেন, অন্তত বছর দুয়েকের আগে থিয়েটারের পরিবেশ স্বাভাবিক হবে না। দেবশঙ্কর হালদারের আপত্তি সেখানেই। বললেন, ‘এখন তো অনেক কিছুই স্বাভাবিক হচ্ছে। বাসও চলছে। ট্রেনও চলবে। কলাকুশলীরা এলে দর্শকরাও আসবেন। তবে পরিস্থিতির কারণে পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন আনতে হতে পারে। বলা যায় সেটা হবে সাময়িক।’ তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘সিনেমার মতো পরিস্থিতি থিয়েটারে সম্ভব নয়। নাটক তো জমায়েত ছাড়া হয় না। দর্শক ছাড়াও হয় না।’

মনোজ মিত্র আজও খুব স্পষ্ট বলতে ভালবাসেন। তাঁর গলাতেও আশা, ‘বিধি নিষেধের চক্করে থিয়েটার বাঁচবে না। এই পরিস্থিতিতে কিছুদিন হলেও অল্প দর্শক নিয়ে থিয়েটার চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের শক্তি ও সামর্থ্যের উপরে ভরসা করেই থিয়েটার গড়ে ওঠে। থিয়েটারের স্বার্থে মানুষ অনেক অসুবিধেকেও মানিয়ে নিয়েছে। এখনকার পরিস্থিতি বাংলা থিয়েটারের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।”

এমন আস্থায় পুরোপুরি ভরসা রাখেন প্রবীন নাট্যকার চন্দন সেন। বলছেন ‘যে ফর্মে নাটক হয়, যে জীবন্ত মানুষ মঞ্চে থাকে এর কখনও কোনও বিকল্প হয়নি, হবেও না।”

১৫৭৭ সালে বিশ্ব জুড়ে প্লেগের সময় থিয়েটারের প্ল্যাটফর্ম মুখ থুবড়ে পড়েছিল। একবার লন্ডন মিউনিসিপ্যালিটি বন্ধ করে দিয়েছিল থিয়েটার। সেই সব উদাহরণ তুলে চন্দন বললেন, ‘এর পরেই শেকসপিয়র উঠে এসে পৃথিবীজুড়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। আমাদেরও ধৈর্য্য ধরতে হবে। থিয়েটারের বিষয়বস্তুর উপস্থাপনায় কিছুটা পরিবর্তন হলে তার নিজস্ব ফর্ম ঠিক ফিরে আসবে’।

পরিবর্তনে বিশ্বাস বিভাস চক্রবর্তীরও। তাঁর অভিমত, যখন ঝড় আসে তখন কিছু ভালো-মন্দেরও অবসান হয়। ‘শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্তের ধারা আজও চলছে। কোনও পরিবর্তন হয়নি। শুধু পরিবর্তন হয়েছে দলগুলোর। যে যেখানে যেমন খুশি অভিনয় করছে। বলতে লজ্জা নেই, কিছু দলের লোকজন তো ‘জোগারে' হয়ে খাটছে।” তবে তিনি বিশ্বাস রাখেন করোনা থিয়েটারের সামনে নতুন পথ খুলে দিয়েছে। এই প্রবীণ অভিনেতার মন্তব্য, ‘অনেকেই কাঁদুনি গাইছেন। এ সব না করে থিয়েটারের নতুন পথ খুঁজতে হবে। করোনা আমাদের সেই সুযোগ এনে দিয়েছে।’

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত সহশিল্পীদের কথা আগেই ভেবে রেখেছিলেন। বললেন, ‘বিভাসকে একদিন বললাম, চল ভাই, ঝোলা হাতে বেরিয়ে পড়ি। কাজও হল। সাড়ে তিন লাখ টাকা তুলতে পেরেছি।’ থিয়েটারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি একদমই চিন্তিত নন। কোনও বিকল্প ভাবতেও রাজি নন। এই পরিস্থিতিকে তিনি ব্যাখ্যা দিলেন, ‘কাল নিরবধি’। করোনা নিয়ে উদ্বিগ্নের কারণ আছে, কিন্তু ভেঙে পড়ার কোনও যুক্তি নেই। তাঁর কথায়, ‘পৃথিবীতে মাত্র দুটি জিনিসের অস্তিত্ব প্রতি মুহূর্তেই টের পাওয়া যায়। প্রথমটি ধরা যাক অভিনেতা, দ্বিতীয়টি হল প্রেক্ষাগৃহ। সুতরাং থিয়েটার থাকবে স্বমহিমাতেই।’

বিকল্পের পথে কেউই হাঁটছেন না। হাঁটবেনও না। বরং করোনা আতঙ্ক কাটলে দর্শকদের টানতে একটি টোটকা দিলেন প্রবীণ অভিনেতা ও পরিচালক মেঘনাদ ভট্টাচার্য, ‘আমরা থিয়েটারের দলগুলো একে অন্যের নাটক দেখতে যাব। দর্শকরা সেটা দেখে কিছুটা ভয়মুক্ত হবেন। তাঁরাও ধীরে ধীরে হলেও আবার নাটক দেখতে আসবেন।’ আশাবাদী মেঘনাদ।

এমন আশায় দিন গুনছেন জেলার থিয়েটার পরিচালক ও অভিনেতারাও। প্রদীপ রায়চৌধুরী, আশিস চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীদের মতো অনেকেরই শপথ, ‘থিয়েটারকে বাঁচাব করোনাকে হারিয়ে।’


Viewing all articles
Browse latest Browse all 222

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>