Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 222

শম্ভ‌ু মিত্রের 'বহুরূপী'তে মেয়েদের হেনস্থার অভিযোগ

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: এ বার মেয়েদের শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ উঠল 'বহুরূপী' নাট্যদলের অন্দরে। শম্ভ‌ু মিত্রের বহুরূপী, রবীন্দ্র নাটকের আঁতুড়ঘর বহুরূপী, বাংলার নাট্যমঞ্চের বহু ইতিহাসের সাক্ষী বহুরূপীতে এই গুরুতর অভিযোগ ওঠায় বিস্মিত বাংলার সুধীজন।

আগামী পয়লা মে বাহাত্তরে পড়বে বহুরূপী। তার আগে দলের পঁচিশ জন সদস্য পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমিকে এক চিঠিতে জানান, 'এখানে মেয়েদের কোনও নিরাপত্তা নেই। একাধিকবার মেয়েদের শারীরিক ভাবে হেনস্থা (MOLESTATION) করা হয়েছে।' দলের সুনামের কথা ভেবে এতদিন তাঁরা চুপ থাকলেও এ বার 'বাঁচুক বহুরূপী বাঁচুক থিয়েটার' শীর্ষক চিঠিতে তাঁরা শহরের বিশিষ্ট মানুষদের বিষয়টি জানিয়েছেন। দলের এক তরুণী শিক্ষার্থী ফেসবুক লাইভ করে দলের 'অরাজকতার' বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব অনেকেই।

সিনেমা জগতে মেয়েদের হেনস্থা নতুন কিছু নয়। 'মি টু' আন্দোলনে অনেকেই তাঁদের হেনস্থা হওয়ার কথা সবিস্তার জানিয়েছেন। কিন্তু কলকাতার অন্যতম সেরা নাট্যদলের অন্দরে প্রকাশ্যে এ জাতীয় গণঅভিযোগ নতুন। ডামাডোলের জেরে আরও একবার ভাঙনের মুখে শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্রের দল। বছর খানেক আগে দলের তিন পরিচিত অভিনেত্রী দল ছেড়ে অন্য দল গড়ে নাটক করছেন। এ বার প্রতিবাদ করায় পঁচিশ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী সাধারণ সদস্য বহিষ্কৃত হয়েছেন। মহিলা নাট্যকর্মীদের প্রতি অশালীন আচরণের গুরুতর অভিযোগ ছাড়াও টাকাপয়সা নয়ছয়ের অভিযোগও তুলেছেন বহিষ্কৃতরা। দলের তরুণ সদস্যা সঙ্গীতা সরকার ফেসবুক লাইভে বলেছেন, 'আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার করা হয়েছে। বহুবার বলা সত্ত্বেও মিটিং হয়নি। কর্তৃপক্ষও কোনও ব্যবস্থা নেননি। শেষপর্যন্ত সবাই মিলে চিৎকার করে বলার পর অবশ্য মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।'

দলের সিনিয়র সদস্য পার্থ গোস্বামী, বুলু মজুমদার, শেখর হীরা প্রমুখ বহিষ্কৃত। পার্থবাবু দলের সঙ্গে ৪৪ বছর ধরে যুক্ত। তাঁর সাফ কথা, 'দলে মেয়েদের নিরাপত্তা নেই। অনেক মেয়েকেই শারীরিক ভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে। কিন্তু এতদিন দলের সম্মানের কথা ভেবে আমরা চুপ করে থেকেছি। এই সব অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উল্টে বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছে দলের সম্পাদক প্রবাল মুখোপাধ্যায়, সুশান্ত দাস প্রমুখ।' কিন্তু দলে তো দেবেশ রায়চৌধুরীর মতো নাট্যব্যক্তিত্ব এখনও রয়েছেন। তাঁরা কিছু বলেননি? পার্থর কথা, 'উনি এইসব ঘটনাকে সামান্য ব্যাপার বলে মেয়েদের চুপ করে থাকতে বলেছেন। যারা অভিযোগ তুলেছে তাদের বলেছেন, বড় হয়েছ, এমন ব্যাপার ঘটেই থাকে, মানিয়ে নাও।'

তাঁরা বিষয়টি নিয়ে বিভাস চক্রবর্তী, পবিত্র সরকারদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে বিভাসবাবু বলেন, 'আমি জানি যে, বহুরূপীতে অনেকদিন ধরেই ক্ষমতাসীন ও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর মধ্যে সমস্যা চলছে। দু'পক্ষই আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের আপসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি, দলের বাইরে থেকে এর বেশি কিছু করা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। আর ওই মেয়েটির অভিযোগ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।'

এ নিয়ে বহুরূপীর প্রধান মুখ দেবেশবাবুর কী বক্তব্য? 'ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য কয়েকজন মিলে এটা করছে। আমি বহু বছর দলের সঙ্গে আছি। অনেকবার ভাঙন দেখেছি। অনেকে এসেছে। অনেকে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু দল যে বাহাত্তর বছর ধরে চলছে সেটা তো এমনি এমনি নয়। কিছু সদর্থক ব্যাপার তো দলের ভিতর নিশ্চয়ই আছে, না-হলে তো কবেই দল উঠে যেত।'

বিবাদের প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, 'ঝগড়া, মতান্তর তো বাড়িতেও হয়ে থাকে। কিন্তু সে-সব কথা কি সকলে বাইরে বলে বেড়ায়? সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপারটাকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসে কী লাভ হল? দলের নানা পদক্ষেপে যদি কারও আপত্তি বা অসন্তোষ থেকে থাকে তা নিয়ে তো আলোচনায় বসেই সমাধান করা যেত।'

নাট্যকর্মীদের ক্ষোভের কারণে আগেও বহুবার ভাঙন ধরেছে বহুরূপীতে। বছর কয়েক আগে সুমিতা বসু, তুলিকা দাশ, সুকৃতী লহরী প্রমুখ নাট্যব্যক্তিত্বরা বেরিয়ে এসে 'বহুস্বর' তৈরি করেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে দেবেশ বলেন, 'ওঁরাও কথা বলে সমস্যা মেটাতে পারতেন। আলোচনায় বসার সাহস সবসময় থাকা উচিত। একটা কিছু গড়ে তুলতে অনেক সময় লাগে। ভেঙে দেওয়া যায় এক সেকেন্ডে।' ঘটনা হল, এ বারের অনেক অভিযোগের সঙ্গে তুলিকা, সুকৃতিদের অভিযোগের অনেক মিল ছিল।

বহুরূপীতে এখন পদাধিকারীরা নাটক করেন না। প্রশাসনিক কাজ করেন। সংস্থার কর্তা সুশান্ত দাশের কাজ নিয়ে অনেক অভিযোগ বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর। তাঁদের বক্তব্য, 'উনি বহুদিন বহুরূপীতে থাকার সুবাদে দলকে পৈতৃক সম্পত্তি ভাবতে শুরু করেছেন। পরিচালন সমিতি তাঁর হাতের পুতুল। সদস্য-সদস্যাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। সাধারণ সভা হয় না। আয়-ব্যয়ের হিসাবও দেওয়া হয় না। দলের তহবিল তছরুপ হচ্ছে বলে আমাদের আশঙ্কা!' নামী সংস্থা বলে বহুরূপীতে অনুদান বেশি।

সুশান্তবাবু সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, 'আমাদের বিভিন্ন মিটিংয়ের রেকর্ডিং আছে, যে কোনও দিন চাইলে শোনাতে পারি, কে বলল মিটিং হয় না? আর টাকা তছরুপ কেমন করে হবে? আমাদের তো প্রত্যেক বছর অডিট হয়। সমস্ত টাকার হিসেব আমাদের হাতে আছে। আর আমাদের দলে মহিলাদের খুব সম্মান করা হয়। পুরুষ সদস্যরাই সেট বয়ে নিয়ে যায়। একটা ঘটনা বছর খানেক আগে ঘটেছিল, কিন্তু তার জন্য তো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল।'

আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে ২ মে বহুরূপীর উৎসব হওয়ার কথা। কিন্তু যে নতুন নাটক উৎসবে হওয়ার কথা ছিল, সেই 'অমলকান্তি ও রোদ্দুর'-এর কাজ আপাতত বাতিল করা হয়েছে।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 222

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>