Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 222

আড়ালে চিরবিদায় শাঁওলি মিত্রের, শোকার্ত সতীর্থরা

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: প্রয়াত কিংবদন্তি নাট্যকার শম্ভু মিত্রের কন্যা শাঁওলি মিত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪। বাংলা থিয়েটারের অন্যতম নাম শাঁওলি মিত্র। সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন বারবার। তৈরি করেছেন 'পশুখামারে'র মতো বলিষ্ঠ নাটক। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিল অনাড়ম্বর । আর সেই কারণেই শেষকৃত্যের পরেই তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনা হয়। শাঁওলি মিত্রের মৃত্যুতে শোকের ছায়া বাংলা নাট্যজগতে। স্তম্ভিত সতীর্থরা...

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত

শাঁওলি মিত্র চলে গেলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। লেখালেখি হয়ত চালাচ্ছিলেন। অভিনয় করছিলেন না। কিছুটা নির্বাসনেই চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু, শাঁওলিরা তো আর পুরোপুরি চলে যায় না। না থেকেও তাঁরা থেকে যায় নিজেদের কাজের মধ্যে, আলোচনায়, মননে। শাঁওলির সঙ্গে শুধু সহ অভিনেত্রী হিসেবে সম্পর্ক ছিল না। বরং ব্যক্তিগত স্তরেও সম্পর্ক ছিল। সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করেছি। গ্যালিলিওতে অভিনয় করেছি। খুব হইহই হত। স্বাতীলেখা, শাঁওলি, বিভাস, অরুণ, আমি সবাই একসঙ্গে কাজ করতাম। স্বাতীলেখার পর শাঁওলিও চলে গেলেন। যাঁদের যাওয়ার কথা নয়, তাঁরা চলে যাচ্ছেন। আমার মতো মানুষের কাছে এটা খুবই বেদনাদায়ক। আমার ৮৬ বছর বয়স হয়ে গেল। তাও আমি রয়ে গেলাম। আর যাঁদের অনেক কিছু করার ছিল, তাঁরা রইলেন না।

বিভাস চক্রবর্তী

ভাবতেই পারছি না কী হয়ে গেল। শাঁওলি যে সুস্বাস্থ্যের অধিকারিনী ছিল তা বলতে পারব না। অল্প বয়স থেকেই অসুখ হতো ওঁর। সেটা জানি। তবে এর মাঝেও বহু কাজ করেছে ও। শম্ভু দা তৃপ্তি বৌদির ক্লাস করতে যেতাম যখন, ছোট শাঁওলিকে দেখতাম। আমার চেয়ে ছোটই ছিল। বহুরুপীতে বহুদিন কাজ করেছে। ভালো অভিনয় করেছে। টেলিভিশনে সিলেক্টেড হয়েছিল। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনে কাজ করেছি একসঙ্গে। একদিন খুব অসুস্থ হল। ও টেলিভিশন ছেড়ে দিল। এরপর স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। ওঁর পশুখামার তো খুব বিখ্যাত হয়েছিল। বিভিন্ন কাজ করেছে। কিন্তু, এতটা অসুস্থ ছিল বুঝতে পারিনি। আমাদের নিকট সম্পর্ক ছিল। শুধু থিয়েটার নয়। রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে কাজ করেছি। ওঁর চলে যাওয়াটা আমার কাছে খুবই দুঃখের।

দেবশংকর হালদার

যেদিন থেকে থিয়েটার দেখতে শুরু করেছি, চেনাজানা তো সেদিন থেকেই। ওঁদের থিয়েটার দেখে এবং শুনেই তো শুরু। বিশেষ করে শাঁওলি দির। কারণ, শম্ভু মিত্রের অভিনয় দেখার সুযোগ সেভাবে হয়নি। শাঁওলি দির অভিনয় দেখেছি। ওঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। উনি আমার কিছু কাজের প্রশংসা করেছেন। ওঁর যে ভালো লেগেছে, এটাই বড় প্রাপ্তি। যদিও আমাকে হাতে ধরে হয়ত উনি কিছু শেখাননি। বা ওঁর সঙ্গে অভিনয় করিনি। তবে ওঁর অভিনয় এবং প্রযোজনা থেকে অনেককিছু শিখেছি। এগুলোই মনে পড়ছে। ওঁর অভিনয়ই যেন কানে বাজছে।

দেবেশ চট্টোপাধ্যায়

শাঁওলি মিত্র আমার সঙ্গে অনেক রকম ভাবে ছিলেন। একজন নাট্য অভিভাবক হিসেবে। একজন শিক্ষক হিসেবে। মানুষ হিসেবেও তাঁকে পাশে পেয়েছি। আমার কাছে শাঁওলি মিত্র ছিলেন সারাজীবন মাথা উঁচু করে শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলা একজন মানুষ। জীবনে কখনো আপোষ করেননি। একজন নাট্য শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি, শাঁওলি মিত্রের মৃত্যুর সঙ্গে বাংলা থিয়েটারের একটা যুগের অবসান ঘটল। একটা ঘরানার অবসান ঘটল। নতুন প্রজন্মের মধ্যে শাঁওলি মিত্রের কণ্ঠ থেকে যাবে। শাঁওলি দির শেষ যাত্রায় সঙ্গে ছিলাম। তাই খুব একটা গুছিয়ে কথা বলতে পারছি না। আসলে আমার কাজ দেখে কে কী বলল সেটা যতটা ম্যাটার করত, তার চেয়ে অনেক বেশি ম্যাটার করত শাঁওলি দি কী বললেন। কেমন হয়েছে বলুন, জিজ্ঞাসা করার মানুষটা চলে গেল।

88936662

মনীশ মিত্র


আমি ব্যক্তিগতভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম বেশ কয়েকদিন ধরে। ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে আমার বাবা প্রয়াত। শোকে আচ্ছন্ন রয়েছি আমি এবং আমার পরিবার। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছি। এই সময় শাঁওলি মিত্রের জীবনাবসানের খবরটা খুব যন্ত্রণার। দীর্ঘসময় একসঙ্গে কাটিয়েছি। জমি দখলের বিরুদ্ধে সিভিল সোশ্যাইটি থেকে যে আন্দোলন হয়েছিল, তাঁর মুখ ছিলেন। আমার দল কসবা অর্ঘ্যও আন্দোলনে শামিল হয়। কিন্তু, পঞ্চম বৈদিকের ঘর থেকে শুরু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। বারবার সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, উত্তরবঙ্গ গিয়েছি ওঁর সঙ্গে। অনেক স্মৃতি ফিরে আসছে। বলা চলে, আজ বাংলা থিয়েটার অভিভাবকহীন হল।

সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

হা ঈশ্বর! এছাড়া আর কীই বা বলব! বাংলা নাট্য জগতের শুধু ক্ষতি হল, এমনটা নয়। বরং গোটা শিল্পজগতের বিশাল ক্ষতি হল। এত বড় মাপের নাট্যবিদ হওয়ার পাশাপাশি শাঁওলি মিত্র একজন স্কলার ছিলেন। নাট্য সাহিত্যকে ভারতবর্ষের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেটা কিন্তু ওঁর বাবা মা করেননি। উনি সেই বৈদগ্ধ, শিক্ষা, অভিরুচি এবং পাণ্ডিত্য নিয়ে সেই কাজটা করেছিলেন। মঞ্চে উঠে আমরা যাঁরা পাঠ করি, অর্থাৎ বাচিক শিল্পীদের কাছেও উনি আইকন।


অর্নিবান ঘোষ

খবরটা খুবই বেদনাদায়ক। ওঁর সান্নিধ্যে এসেছি। ওঁর কাজ দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। খবরটা শোনার পর থেকে আমার জীবনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমার কাছে খবরটা খুব দুঃখের। খুব আঘাত পেয়েছি। এই সময়টায় এর চেয়ে বেশি কিছুই বলতে পারব না।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 222

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>